প্রকাশিত: ২০১৬-১১-১৬ ১২:৪০:৩৯
আপডেট: ২০১৬-১১-১৬ ১২:৪৮:৩০
রাজেশ পাল:
একটানা বেজে চলেছে কলিং বেলটা। সাত সকালে কার না মেজাজ খারাপ হয়। গতকাল বাসা শিফট করেছি। তাও আবার আন্তঃজেলা। ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। ক্লান্ত শরীরে ঘুমটা বেশ জাঁকিয়ে এসেছিল তাই। বিছানা থেকে উঠতেই ইচ্ছে হচ্ছিল না। এর মধ্যে এমন উৎপাত কার ভালো লাগে?
কয়েকবার বেল বাজার পড়ে শুরু হলো দরজায় টোকা দেয়া। প্রথমে মৃদু মৃদু। তারপর রীতিমতো ধাক্কানো। বুঝতে পারলাম আগন্তুকের বিশেষ প্রয়োজন। তাই এভাবে নাছোড়বান্দার মতো আচরণ করে যাচ্ছে। খুব সম্ভবত টয়লেটের চাপ পড়েছে পেটে। বাধ্য হয়েই উঠতে হলো। বলাতো যায়না, চাপ সামলাতে না পেরে যদি আবার দরজার সামনেই কারবার সেরে ফেলে, তাহলে কেলেঙ্কারির আর শেষ থাকবে না।
অনেক কষ্টে বিছানা থেকে নেমে চোখ কচলাতে কচলাতে দরজার দিকে এগোলাম।
-- কে?
--- ম্যা ………
শুনেই চমকে উঠলাম। ছাগলের ডাক শুনলাম বলে মনে হলো। মনের ভুল মনে করে আবারো জিজ্ঞেস করলাম।
--- কে?
--- ম্যা …………………………আ
এবার রীতিমতো টাসকি খাওয়ার অবস্থা। ছাগল আবার কলিংবেল টেপা শিখলো কি করে? কেউ ফাজলামো করছে নাতো? এবার তো দেখতেই হচ্ছে ব্যাপারটা।
দরজা খুলে রীতিমতো হতভম্ব অবস্থা আমার। সামনে দাড়িয়ে আছে এক বিশাল দেহী লোক। নাকের নীচে বিশাল গোঁফ। পড়নে পাঞ্জাবি-পায়জামা। সামনে হাতজোড় করে দাড়িয়ে আছে অসহায় কাঁচুমাচু মুখে।
-- কি চাই?
--- সাব, ম্যা পাকিস্তান সে আয়া হু।
সক্কাল সক্কাল বাসিমুখে পাপীস্তানের নাম শুনেই মেজাজ বিগড়ে গেল। তবুও কিছু বললাম না। শত হউক আমার দরজায় এসেছে। বাঙালির অতিথিপরায়ণতার সুনামটা তো আর নষ্ট হতে দিতে পারিনা।
-- এখানে কি চাও?
-- হুজুর ম্যা পাকিস্তানি মিসকিন হু। কুছ ভিখ মাঙতা। কুছদিন ভুখা ভু।
বলেই একটা শূন্য থালা এগিয়ে দিল।
মনে মনে ভাবলাম, শালা ভিক্ষা চাওয়ার আর জায়গা পেলিনা। সাত সকালে আমার ঘুমটাই ভাঙাতে হলো। তবুও কি আর করা! পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের করে থালাটায় ছুড়ে দিয়ে বললাম ,"যাও ভাগো হিয়াসে"
-- নেহি বাবু , স্রেফ পাঁচ রুপিয়া নেহি হোগা।
-- পাঁচ টাকা হবেনা মানে? ফাজলামো পেয়েছো? কত দিতে হবে?
-- ৭০০ ক্রোড় দেনা পারেগা বাবু।
রাগে চোখে মুখে অন্ধকার দেখলাম। শালা পাগল না মাথা খারাপ? ৭০০ কোটি টাকা ভিক্ষা চাচ্ছে!!
--- কি হে মাথা ঠিক আছে তো? ৭০০ কোটি টাকা ভিক্ষা চাইছো কোন সাহসে? মাল কি বেশী টেনে ফেলেছো নাকি?
-- নেহি বাবু নেহি। ইয়ে একাত্তর সালকা পাওনা হে। বহুত ভুখা আছি বাবু। দিয়েনা প্লিজ।
এতক্ষণে বুঝলাম মিসকিনটা একাত্তরের পাওনা চাইতে এসেছে। পাওনা আসলেই কিছু বাকি আছে। দিয়ে দেবো বলেই মনস্থির করলাম।
-- ঠিক আছে দিচ্ছি। তুমি এক কাজ করো। আমি না আসা পর্যন্ত আমার দরজার উল্টো দিকের ফ্ল্যাটের দিকে নজর রাখো। ওখানে একজন ম্যাডাম থাকেন। উনি অফিসের জন্য বের হলে আমার জন্য একটু ওয়েট করতে বলো।
-- জরুর রাখেগা বাবু। বাঙালি আওরৎ বহুত আচ্ছি আইটেম হ্যায়।
দেখলাম চোখ দুটো চকচক করছে তার। ঠোঁটের কোণ দিয়ে লালাও বেরিয়ে যাচ্ছে একটু একটু। আর বদলালোনা বরাহগুলো।
ভেতরে চলে গেলাম। আমার কিচেনের দরজার পাশ থেকে বাঁশের লাঠিটা তুলে নিলাম। এই বাঁশের লাঠিই একদিন ওদের শায়েস্তা করেছিল। কুকুর যেমন মুগুর তো তেমনি হওয়া উচিৎ!
দরজার কাছে ফিরে দেখলাম, বেটা পেছন ফিরে তাকিয়ে আছে সামনের ফ্ল্যাটের দরজার দিকে কল্পিত ম্যাডামের পথ চেয়ে। ভেবেছিলাম বাঁশটা দিয়ে মাথায় বাড়ি লাগাবো। হঠাত পরিকল্পনা বদল করলাম। শরীরে যত শক্তি আছে, সব এক করে দুহাতে ধরে দিলাম ঢুকিয়ে বাঁশটা ওর ব্যাকসাইডে।
"ইয়া আলী, মেরা পুটু বরবাদ হো গ্যায়া" বলে আকাশ বাতাস কাপিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো সে। তারপর সেই অবস্থাতেই দৌড় লাগালো নীচের দিকে। জানালা থেকে নীচে তাকিয়ে দেখলাম, আমাদের পাড়ার পাহারাদার কুকুরের দল ফুল স্পীডে ধাওয়া করছে তাকে। সুযোগ পেলেই কামড় বসাচ্ছে তার স্থূল পশ্চাদদেশে। লালেলাল হয়ে যাচ্ছে তার। আর রাস্তার দুপাশের পথচারীরা করে চলেছেন সোৎসাহে স্যান্ডেল বৃষ্টি।
ভিক্ষা চাইনা কুত্তা সামলা বোধহয় একেই বলে।
আপনার মন্তব্য