যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর রায়ের বাংলা অনুবাদ বই আকারে

 প্রকাশিত: ২০১৫-১২-০৮ ০২:৪৩:৩৭

 আপডেট: ২০১৬-০১-২৭ ১৪:৪৯:২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায়ের বাংলা অনুবাদ করে একে সর্বস্তরের মানুষের পঠন উপযোগী করে তুলেছেন কয়েকজন তরুণ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার এ তরুণেরা চান একাত্তরের ঘাতক সাকা চৌধুরীর অপরাধের বিস্তারিত বর্ণনা পাঠকের কাছে সহজ ভাষায় তুলে দিতে। কারণ মহামান্য আদালতের রায় ইংরেজিতে হওয়ার কারণে ইতিহাসের এ অমূল্য দলিলের মর্মোদ্ধার করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন- আরিফ রহমান, আহমদ রনি, সাব্বির হোসাইন, সুবর্ণা সেঁজুতি, দেব প্রসাদ দেবু, কেশব কুমার অধিকারী এবং ফরিদ আহমেদ।

অনুবাদের পাশাপাশি সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন- সাব্বির হোসাইন, দেব প্রসাদ দেবু, শারমিন আহমেদ, ইরতিশাদ আহমদ এবং ফরিদ আহমেদ।

এর বাইরে উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন ইরতিশাদ আহমদ এবং সমন্বয়ক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ফরিদ আহমেদ।

"যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর বিচার/ রায়ের পূর্ণ বিবরণ" শিরোনামের বইটি প্রকাশ করছে পাললিক সৌরভ প্রকাশনা সংস্থা, এবং ২০১৬ সালের অনুষ্ঠিতব্য একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি পাঠকের কাছে পৌঁছাবে।

বইটি প্রসঙ্গে অনুবাদ ও সম্পাদনা প্যানেলের সমন্বয়ক ও প্রধান সম্পাদক ফরিদ আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছিলো যে, রায়গুলো যদি বাংলায় অনুবাদ করা যেতো, তবে এই সকল মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি মানুষের যে সামান্য সহানুভূতি জন্মেছে, তা জমতো না। বরং ঘৃণার আগুনটা আরেকটু বেশি জ্বলতো। এই দায়বদ্ধতা থেকেই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের অনুবাদ করা শুরু করি আমরা। আমাদের এই দলে মোট বারো জন সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে দশ জন সরাসরি অনুবাদ করেছেন। পাঁচজন (যাঁদের মধ্যে তিনজন অনুবাদও করেছেন) সম্পাদনার কাজ করেছেন। এবং একজন উপদেষ্টার ভূমিকায় ছিলেন। ইনি আবার চুড়ান্ত সম্পাদনাতেও যুক্ত ছিলেন।

অনুবাদের কাজটি খুব কঠিন ছিলো, কারণ এটা আইনের একটা বিষয়। পরিভাষাগত সমস্যা ছাড়াও, আইনের ইংরেজির সাথে আমাদের সম্যক ধারণা না থাকাতে কাজটা আয়াসসাধ্য হয় নি মোটেও। যেহেতু দশ জনে মিলে অনুবাদ করা হয়েছে, ভাষাগত ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক ছিলো। হয়েছেও তাই। সেগুলোকে সম্পাদনার মাধ্যমে সমন্বিত করাটা কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ কাজ ছিলো একটা।

ফরিদ আহমেদ আরও বলেন, এটি একটি যৌথ কাজ, একক কোনো ব্যক্তি অনুবাদকর্মটি করেন নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গভীরভাবে বিশ্বাসী কিছু মানুষকে একসাথে করে, একটা দল গঠন করে ভাগ ভাগ করে এই বিশাল রায়টিকে অনুবাদ করা হয়েছ। তারপর, সুসমন্বিত করার জন্য সম্পাদনা সম্পন্ন করা হয়েছে কয়েক স্তরে।

তিনি আরও জানান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এই রায় একটি ইতিহাস, যেখানে উল্লেখ আছে তার নৃশংসতা, উল্লেখ আছে গুডস হিল নামক নরকের বর্ণনা, আছে প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য, আছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ইতিকথাও। যা জানা দরকার আপামর জনগণের। সেই জানানোর তাগিদ থেকেই আমরা আইনের ছাত্র না হয়েও দুঃসাহস দেখিয়েছি এই রায় অনুবাদ করার। আইনি পরিভাষা জানা না থাকায় প্রকৃত শব্দ চয়ন হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে হয়নি, কিন্তু আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করেছি মূল বক্তব্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে সাবলীল ভাবে অনুবাদ কাজ তুলে আনতে। সফলতা ব্যর্থতা পাঠক ঠিক করবেন। সকল ধরণের পরামর্শ আমরা সাদরে গ্রহণ করে ভবিষ্যতে ঋদ্ধ করবো আমাদের এই অনুবাদকে।

আমরা আশা করছি যে, মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসেবে এটি বাংলাদেশের পাঠক সমাজে সাদরে গৃহীত হবে এবং রেফারেন্স হিসেবে বাংলা না পাওয়া যাওয়ার দুষ্প্রাপ্যতাকে অনেকখানি দূর করবে। এটি ইতিহাস বিকৃতিও ঠেকাতে সাহায্য করবে বলেই, আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অনুবাদক, সম্পাদক টিমের পক্ষে ফরিদ আহমেদ প্রকাশনা সংস্থা পাললিক সৌরভের প্রকাশনার দুই কর্ণধার মেহেদি হাসান শোয়েব ও তামান্না সেতু এবং প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য