জলপদ্মরেখা: শব্দশিল্পীর দৃশ্যের কারুকাজ

 প্রকাশিত: ২০১৬-০২-০৭ ১৫:৫৫:০৬

 আপডেট: ২০১৬-০২-০৮ ১২:৫৭:৫৯

আমিনা আইরিন:

শূন্য দশকের কবি অপূর্ব সোহাগের ৩য় কাব্যগ্রন্থ 'জলপদ্মরেখা' বের হয়েছে এবারের বইমেলায়। তরুণ এই কবি তাঁর নতুন বইয়ে অনেকটা বদলিয়ে নিয়েছেন লেখার ধরণ। অপূর্ব সোহাগের আগের বইগুলোর সাথে এই বইটির লেখার ভাষা পুরোটাই আলাদা।

কবি অপূর্ব সোহাগের লেখার যে ভাব-ভঙ্গি আছে জলপদ্মরেখায় আমরা তার পরিবর্তন দেখতে পাবো। আমরা যারা পাঠক কবির আগের বইগুলোর সাথে পরিচিত; আমরা খুব ভালো করেই এই পরিবর্তনটি ধরে নিতে পারবো। কবির এই পরিবর্তনের কারণটা কি শুধু লেখার ভাষা পরিবর্তন,না কবিতাও! এটা বুঝতে হলে আমাদের পড়তে হবে জলপদ্মরেখার কবিতাগুলো।

জলপদ্মরেখার কবিতাগুলো পাঠ করলে আমরা দেখতে পাই কবিতায় চিত্রকল্পের কারুকাজ। কবিতার ক্ষেত্রে কবির কোমল ভাষার কাজ। কবিতার প্রতিটি শব্দে লেগে আছে আবেগের ছোঁয়া। বলতে না পারা কথাগুলো বলার একটি মাত্র মাধ্যম যে কবিতা সেটা অপূর্ব সোহাগের জলপদ্মরেখা পাঠ করে পাঠক খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।

জলপদ্মরেখায় কবি নীরবতাকে ভাষা দিয়েছেন, কখনো সুর করে বাজিয়েছেন আবার কখনো জল ও আগুনকে এক করেছেন জলপদ্মরেখার পৃষ্ঠায়। শব্দ নিয়ে যে চাষবাস খুব ভালো পারেন এই কবি সেটা তার কবিতা পড়লে পরিষ্কার ভাবেই পাঠক বুঝতে পারবেন।

আর একটা জিনিস- সেটা হলো কবি অপূর্ব সোহাগের কবিতার ভাষা খুবই সহজভাবে পাঠকের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে পারবে। জটিলতা এড়িয়ে যান কবি? না জটিলতার দিকে যেতে চান না? কবিতা পাঠ করলে আমরা বুঝতে পারি অপূর্ব সোহাগের কবিতা সবার জন্য। সবাই নিজের মত করে প্রবেশ করতে পারবে তার কবিতার ভেতরে। জলপদ্মরেখা বইটি এর একটি উদাহরণ হতে পারে।

জলপদ্মরেখার কবিতাগুলো পাঠকের মনে দাগ রাখবে এইটা আমি বলতে পারি। বলতে পারি জলপদ্মরেখায় আমরা যে অপূর্ব সোহাগ কে পাই সে অপূর্ব সোহাগ কখনও প্রেমিক, কখনও পথ হারা পথিক কখনও রহস্য গল্পের চরিত্র হয়ে, কখনও রাতের পাখি, কখনও অন্ধকারে স্বপ্ন জড়িয়ে থাকেন।

অপূর্ব সোহাগ তার কবিতায় লিখেছেন- "রহস্য গল্পের চরিত্রের মত হেঁটে চলি পথ থেকে পথে।..." এরকম ভাবে কবি খুব সহজেই তার কবিতায় পাঠককে প্রবেশ করানোর রাস্তায় মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে রেখেছেন। জলপদ্মরেখায় আমরা দেখতে পাই স্মৃতিতে ডুবে আছেন কবি। হারানো কোন একটা সময়কে ধরতে চান ফের, সেই আকুলতা তাঁর কবিতায় স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।

কতকাল আমি তোমায় লিখি না

শব্দেরা পালিয়ে বেড়ায়

নিঃসঙ্গ কলমটি পড়ে থাকে অবহেলায়;

সাদা পৃষ্ঠাটিও চায়

শব্দেরা মাতলামি করুক তার বুকে!

- প্রাত্যহিকী

অধিকার হারানো সম্পর্কের ব্যথায় কাতর কবি, কবির কবিতায়ও সেই ব্যথাগুলো পাই তবে সেই ব্যথা পাঠকের মধ্যে কোন ক্ষত তৈরি না করে বরং ভাবায়।

শুধু যে ব্যথায় ডুবিয়ে রাখবে জলপদ্মরেখার কবিতাগুলো তা শুধু নয়। প্রেমের জোয়ারেও আমাদেরকে ভাসিয়ে নিবে জলপদ্মরেখার কবিতাগুলো। আমি মনে করি এখানেই কবির অনেক বড় কাজ কবিতা নিয়ে।

প্রেম, বিরহ, দ্রোহ, বাস্তবতা, মৃত্যু, দুঃখ-কষ্ট, পাল্টে যাওয়া সময়কে মুঠোয় বন্দী করে কবিতায় রূপ দেয়া কবির কৃতিত্ব। সবকিছুকে জড়ো করেছেন জলপদ্মরেখায়। বড়দিনের উৎসবে কবি চান তার শহর প্রিয় কোন মানুষের আগমন। অন্য কারো মধ্যেও নিজেকে ফোটানোর কথা জানিয়েছেন কবি তার এই বইটিতে। 


স্মৃতিকাতরতা ছাড়াও জলপদ্মরেখার কবিতায় আমরা জীবনমুখী কবিতা পাই, পাই হারিয়েও নিজেকে খুঁজে পাওয়ার মত সাহসী বার্তা। এরকম অসংখ্য দৃশ্য আমরা পাবো জলপদ্মরেখা গ্রন্থটিতে। শব্দের কারুকাজ দিয়ে যে কি নিখুঁত সুন্দর করে কবি দৃশ্য রচনা করেন, করে সাজিয়ে পাঠকের সামনে তুলে ধরছেন সেটা জলপদ্মরেখা পাঠ না করলে আমরা কখনও জানতে পারবো না।

সফল কবিতার পাশাপাশি কয়েকটি দুর্বল কবিতাও আছে জলপদ্মরেখায়। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবেন তরুণ এই কবি আগামীতে এই প্রত্যাশা করি। তবে জলপদ্মরেখার কবিতাগুলো যে পাঠকের অনেক গভীরে নিয়ে যাবে ভাবাতে ভাবাতে এইটুকু বলতে পারি।

আপনার মন্তব্য