প্রকাশিত: ২০১৬-০২-১১ ২০:৫৬:৪৩
কে এম রাকিব:
গল্পকার মিশু মিলন’র প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অন্ধকারে খোদাই ঘাম ও শরীরের উপাখ্যান’ প্রকাশিত হয়েছে এ বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।
মিশু মিলন সেইসব গল্পকারদের একজন যার গল্পের বিস্তৃত বয়ানে ঘৃণা ও প্রেম, ক্ষোভ ও স্বপ্ন শুধু নয়, জীবনের যাবতীয় ক্লেদ-ক্লান্তি-দুঃখ-দুর্দশা আর জীবনানন্দ-কথিত সেই বিরল ‘অমোঘ আমোদ’ নিয়ে হাজির হয় রক্তমাংসের সব নরনারী। শুধু গল্পের বিষয় নয়, প্রকরণেও নিরীক্ষাধর্মী গল্পকার। নিখুঁত বর্ণনায় গল্পের ভাষা, বয়ান-ভঙ্গি, কিংবা জীবনবোধে প্রথাগতকে খুব ঠাণ্ডা স্বরে তিনি আঘাত করে চলেন।
সাড়ে তিনপাখি জমি, ইলিশের ঘোর আর দুর্দমনীয় অক্ষমতা নিয়ে নটবর যখন উপলব্ধি করে, ‘দুজনেরই ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও বাবা হিসেবে তার চেয়ে তার বাবার সফলতা অনেক বেশি’ তখন আমরা, পাঠকেরা, ক্রমশ ক্ষীয়মাণ অগণন শোষিত মানুষ ও ক্ষুদ্রায়তন প্রবল শাসকের দুই মেরু শনাক্ত করতে বাধ্য হই।
কল্পভুবন হয়েও তাই মিশু মিলনের গল্পে সত্যান্বেষণ ও মানুষের প্রতি দরদ প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ফলে পাঠক গল্প পড়তে গিয়ে কখনও অস্বস্তির ভেতরেও পড়ে যায়- যা লেখকের কাঙ্ক্ষিতও। নিজের স্ত্রীর শরীরের লেনদেনে চলে যার সংসার সেই আফসার মিয়াকে এমন মুহূর্তে এনে ফেলে দেন লেখক যখন- ‘দরজায় ক্রমাগত শব্দ করে নিচু গলায় ডাকতেই থাকে চেনা স্বর। অসহায় আফসার মিয়া একবার দরজার দিকে তাকায়, আবার ময়নার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকায়। দরজার ওপাশে চেনা স্বর ডেকেই চলে, আফসার ভাই, আফসার ভাই, দরজা খোল আফসার ভাই...’
আমরা এরকম বিবিধ রকম ‘আফসার মিয়া’র বিচিত্র মুহুর্তযাপনের আয়নায় নিজেদের মুখ দেখে উঠি না? দরজায় ক্রমাগত শব্দ কি বাজে না আমাদের শ্রুতিকেন্দ্রেও?
বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইপত্র প্রকাশনীতে। স্টল নং ১২৭-১২৮।
আপনার মন্তব্য