প্রকাশিত: ২০১৬-০২-১১ ২৩:৩১:৪১
আপডেট: ২০১৬-০২-১২ ১৪:০৭:২৬
অপুর্ব সোহাগ:
এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কবি ও গল্পকার আকমল হোসেন নিপুর গল্পগ্রন্থ ‘রাতটা পূর্ণিমার ছিল'। এটি লেখকের পঞ্চম গল্পগ্রন্থ।
এই শক্তিমান গল্পকার আগের গল্পগ্রন্থগুলো দিয়ে বাঙলা সাহিত্যে নিজের শক্ত একটি জায়গা করে নিয়েছেন। আকমল হোসেন নিপু’র গল্পগুলোর সাথে পাঠকের পরিচয় যদিও ৮০ দশক থেকেই তবু লেখক কোন দশক বন্দী হতে চান না।
‘রাতটা পূর্ণিমার ছিল’ গ্রন্থটিতে ২৩টি গল্পকে মলাটবন্দী করা হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বের হলো তাঁর ‘রাতটা পূর্ণিমার ছিল’ বইটি। বইটির প্রত্যেকটি গল্পের ধরণই আলাদা। কোন গল্পটিতে পাঠক আরেক গল্পের রেশ পাবেন না। নিপুর গল্পে সেটা থাকেও না, তবে গল্পগুলো যে নিপুর, গল্পের ভাষাটির মধ্যে চিরচেনা নিপুকে পাব আমরা পাঠকরা।
গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে হলো, নিপু যেন শব্দগুলো গেঁথে গেঁথে গল্পের মালা করেন। সেই গাঁথুনি এতোই মসৃন এবং মুগ্ধকর যে আমাদের বাধ্য করে ওপর পৃষ্ঠায় যেতে। নিপুর গল্পে উঠে আসে মানুষের নিত্য দিনের কথাগুলো, মানুষের দিন যাপন, জীবন যাপন, অভাবের সংসারে রঙিন ঈদের চাঁদটাও যে কতটা মলিন, সময়ের সাথে কিভাবে বদলে যায় মানুষ, প্রকৃতি, কিভাবে ভদ্র ঘরের ছেলে প্রবেশ করে নেশার গহ্বরে, এইসব নিত্যদিনের কথাগুলোকেই গল্প করে তুলে ধরেন আমাদের সামনে আকমল হোসেন নিপু।
প্রতিদিন আমরা যা আমরা দেখি, জানি সেই সবকিছুই নিপুর কলমে গল্প হয়ে ওঠে! আমরা নিপুর মত করে ভাবতে জানি না, নিপু যে চোখে দেখেন আমরা সেভাবে দেখি না তাই নিপু আমাদেরকে গল্পের মধ্য দিয়ে সেটাই দেখিয়ে দেন, সেটাই জানান। নিপুর গল্পের মধ্যে আমরা জীবনকে পাই অথবা অথবা নিপু জীবনের গল্পগুলোই লিখেন।
শুধু গল্পের জন্য গল্প লিখেন নি নিপু তাঁর বইটিতে। আমরা নিপুর বইয়ের প্রত্যেকটি গল্পে, গল্পের ভেতরে বার্তা পাই, নিপু তাঁর গল্পর মধ্যদিয়ে আমাদেরকে কোন না কোন বার্তা দেন, গল্প বলার ঢঙে আমাদের বেঁচে থাকা, সমাজ ব্যবস্থা, পরিস্থিতির নানান দিক তোলে ধরেছেন।
আকমল হোসেন নিপুর গল্পে শব্দের যে কোমল গাঁথুনি সেটা আমরা সব সময়ই পেয়ে থাকি, ‘রাতটা পূর্ণিমার ছিল’ বইটিতেও পাবো।
“করিমুল্লার ঘাড়ের ওপর দিয়ে একঝাঁক মুনিয়া ডানায় শিস তোলে উড়ে যায়। করিমুল্লা ঠাওর করতে পারে না, এটা পাখির ডানার শিস, না মরিয়ম বেগমের শ্বাস টানার শব্দ...” (ভাসানহাট)
এরকম অসংখ্য কোমল শব্দের গাঁথুনি দিয়ে নিপু লিখে গেছেন নদী ভেঙে দেয়া এলাকার মানুষের দুর্দিনের কথা কিংবা চোখে আঙুল দিয়ে পাঠকদের দেখিয়ে দিয়েছেন জীবনের অর্থ কখন কিভাবে বদলে যায় অথবা খুঁজেছেন জীবনের অর্থ কী। শুনিয়েছেন ডুমুরের ফুলের কথা।
আকমল হোসেন নিপুর গল্পের মধ্যে যে রহস্য তৈরি করেন সেটা চমৎকার টেনে নেয় পাঠককে শেষ পর্যন্ত। নিপুর গল্প কোথায় বাঁক নেয় সেটা ধরতে হলে পাঠককে অবশ্যই গল্পের শেষ পর্যন্ত যেতে হবে, নিপুর গল্প পাঠ করার সময় পাঠক মাঝপথে কখনওই তার গল্পকে ধরতে পারবেন না।
নিপুর এই চালাকিটা সুন্দরভাবে দাগ কাটে। নিপু পারেন সুন্দর করে পাঠককে আগ্রহী করে তুলতে, সেটা আমরা তার এই বইয়ের ‘কাটামুন্ডু কাটা দেহ’ গল্পটি পড়লেই বুঝতে পারবো পরিস্কার ভাবে।
আকমল হোসেন নিপুর গল্প নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বেশি করে বলারও কিছু নেই। বাংলা সাহিত্যে আকমল হোসেন নিপু গল্প দিয়ে কিভাবে নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছেন সেটা তাঁর ‘রাতটা পূর্ণিমার ছিল’ বইটি পড়েই নতুন পাঠক বুঝে নিতে সক্ষম হবেন। যে সকল নতুন পাঠকরা আকমল হোসেন নিপুর ‘রাতটা পূর্ণিমার ছিল’ বইটির গল্পগুলো পড়ে শেষ করবেন তাঁরা লেখকের অন্যান্য বই যে খোঁজবেন সেটা প্রায় আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি।
আকমল হোসেন নিপু যেন এত দীর্ঘ সময় পাঠককে অপেক্ষা না করান সেই আবদারও করছি। তাঁর গল্প আরো বেশি করে পাঠ করার সুযোগ যেন তিনি আমাদের দেন। ‘রাতটা পূর্ণিমার ছিল’ বইটির সফলতা কামনা করছি।
আপনার মন্তব্য