প্রকাশিত: ২০১৬-০২-১৫ ২২:২০:২১
আপডেট: ২০১৬-০২-১৬ ০০:৩৯:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী তুহিন মালিক, জামায়াত-শিবিরের ফেসবুক পেজ 'বাঁশেরকেল্লা', ফেসবুকে নয়ন চ্যাটার্জি নামক ইসলামধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী আইডি এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের দাবির মুখে একুশে গ্রন্থমেলার 'ব-দ্বীপ প্রকাশন'-এর স্টল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
তাদের দাবি ব-দ্বীপ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘ইসলাম ও বিতর্ক’ নামক বইয়ে ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটাক্ষ করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগ থানা পুলিশ ইসলাম ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ব-দ্বীপ প্রকাশনের স্টলটি বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ওই প্রকাশনীর বেশ কয়েকটি বইও জব্দ করে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, "সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ব-দ্বীপ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত "ইসলাম বিতর্ক" বইটির বিষয়ে আমরা জানতে পারি যা ধর্মানুভুতিকে আহত করছিল।" তবে বইটির কোন বিষয় ধর্মানূভুতি আহত করেছে তা জানাতে পারেন নি তিনি।
এদিকে, একুশে গ্রন্থমেলার ব-দ্বীপ প্রকাশনের স্টল বন্ধ করে দেওয়ার আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির হাফেজ মাওলানা ক্বারি শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর এবং মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ জাফরুল্লাহ খান যৌথ বিবৃতিতে নিষিদ্ধ, লেখক ও প্রকাশকদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার না করা হলে বইমেলা ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
একুশে বইমেলায় ব-দ্বীপ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘ইসলাম ও বিতর্ক’ নামক বইয়ে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর চরিত্র নিয়ে জঘন্যতম কটাক্ষ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, মানবতার মুক্তির দূত প্রিয় নবী (সা.) কে মহান আল্লাহ তা’আলা সর্বোত্তম চরিত্র দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।
তারা বলেন, বিশ্ব নবী (সা.) এর চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ করে বই প্রকাশ, শতকরা ৯২ শতাংশ মুসলমানের বাংলাদেশে একুশের বইমেলায় প্রকাশ্যে এ বই বিক্রির ঘটনায় বিশ্বের দেড়শ কোটি মুসলমানের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। এ ধরনের দুঃসাহস ইহুদি-খ্রিস্টানরাও দেখায়নি।
তারা আরো বলেন, বিশ্ব নবী (সা.)-এর চরিত্র নিয়ে কটাক্ষকারীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে বিচার করতে হবে। অন্যথায় তাওহীদী জনতার ঈমানী আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং একুশে বই মেলাকে ঘেরাও করতে বাধ্য হবে।
নেতারা আরো বলেন, বইমেলা নীতিমালা ২০১৩-এর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ ধরনের বই বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম ধর্ম অপমানকারী এই বইটি কিভাবে বই মেলায় বিক্রি হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। প্রশাসনের অবহেলা নয়তো ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। অবিলম্বে মুহাম্মাদ (সা.) কে অবমাননাকারী সেই লেখককে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, বইটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, প্রকাশ, বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্টদেরকেও গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এর আগে গত বছর (২০১৫) ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের হুমকির মুখে ইরানী লেখক আলী দস্তির 'নবী মুহাম্মদের ২৩ বছর' বইটি প্রকাশের কারণে রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দিয়েছিল বাংলা একাডেমি। তখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান জানিয়েছিলেন তারা অভিযোগের ভিত্তিতে স্টল বন্ধ করেছেন, বই পড়েন নি।
অনুবাদ সংকলন "ইসলাম বিতর্ক" বইটি ব-দ্বীপ প্রকাশনের প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিক সম্পাদনা করেছেন।
উল্লেখ্য, এবারের বইমেলা শুরুর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান 'উসকানিমূলক' বই প্রকাশ না করার জন্যে প্রকাশকদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
আপনার মন্তব্য