গ্রন্থমেলায় অমিত গোস্বামীর উপন্যাস ‘যখন বৃষ্টি নামলো’

 প্রকাশিত: ২০১৬-০২-১৮ ০০:৫৮:০৭

সাহিত্য ডেস্ক:

কলকাতার কবি অমিত গোস্বামীর প্রথম উপন্যাস ‘যখন বৃষ্টি নামলো’ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে।

উপন্যাসের উৎস দার্জিলিংয়ে হলেও কলকাতা ঘুরে তা শেষ হয়েছে ঢাকায় এবং এই উপন্যাসে সময়কে বাস্তবোচিত করার জন্যে কোন বাস্তব চরিত্রের নাম পালটানো হয়নি যা সাহসী সিদ্ধান্ত।

উপন্যাস প্রসঙ্গে প্রকাশক বি ভি রঞ্জন জানান, 'ভারত ও বাংলাদেশ ভিত্তিক উপন্যাস আগে অনেক লেখা হয়েছে কিন্তু এই উপন্যাসে লেখকের স্পষ্টবাদিতা দ্রুত জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে বইটিকে। যেমন ‘আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আজ যেভাবে এগোচ্ছে তার হদিশ অনেকেই রাখেন না। শিল্পে, কারিগরি উৎকর্ষে, আর্থ সামাজিক অবগঠনে যে মুনশিয়ানা এই দেশ দেখাচ্ছে তা ভবিষ্যতে অন্য অনেক দেশের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।‘ অথবা “পৃথিবীব্যাপী মৌলবাদী গোষ্ঠীরা যেভাবে হাত মেলাচ্ছে তাতে পশ্চিমবঙ্গ নিজেদের যতই মরূদ্যান বলুক না কেন সে রাজ্যে নিশ্চিন্তে বাসা বাঁধছে মৌলবাদীরা। সাম্প্রতিক প্রমাণ তো সে রাজ্যে মৌলবাদীদের বোমার গুদামে বিস্ফোরণ।‘

তিনি আরও বলেন, 'এত স্পষ্ট করে বোধহয় কোন উপন্যাসে সত্যিটা লেখা হয়নি।গীতিময়তা এই উপন্যাসের আরেক চরিত্র। লেখক মূলত কবি ও গীতিকার হওয়ায় লিরিক এসেছে স্বাভাবিক ছন্দে। যৌনতা এ উপন্যাসে এসেছে ধ্রুপদী উপাচারে। যেমন “ অর্কর খুব কাছাকাছি চলে এল বৃষ্টিলেখা। কাছে আসতেই ওর চুলের গন্ধে সব গোলমাল হয়ে গেল। মাথার মধ্যে তারার ফুলকি জ্বলে উঠল। এক ঝটকায় হাত বাড়িয়ে অর্ক টেনে আনল বৃষ্টিলেখাকে ওর বুকের মধ্যে। আচমকা। একটু দেখা, একটু ছোঁয়া মানুষের জীবনে কত কীই যে ঘটিয়ে ফেলে। পুরুষ মানুষের মতো ভঙ্গুর করে খুদাহ আর কোনো পুরুষ জীবকে তৈরি করেননি।'

প্রকাশক আরও বলেন, কবি হিসেবে অমিত গোস্বামীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কারণে প্রথমে কিছু বিক্রি হলেও উপন্যাস হিসেবে বিক্রির রেখচিত্রের উর্ধগামিতা নজরে পড়ছে গত সাত আট দিন। আশা করছি মেলাশেষে একটিও বই অবিক্রিত থাকবে না।

উপন্যাসের গল্পটা অনেকটা এরকম – কলকাতার কবি ও প্রকৌশলী অর্ক বসু চেয়েছিল ঢাকার কবি বৃষ্টিলেখা ওর স্ত্রী হোক। ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে যেতে চেয়েছিল একটি দুরন্ত লাফে। পারিবারিক আপত্তি ছিল না দুদিক থেকেই। অর্ক বিশ্বাস করত মনন সাংসারিক সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। সে সূত্রে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রতিবেশী দেশের নাগরিক ভিন ধর্মের বৃষ্টিলেখার সঙ্গে ঘর বাঁধবে। ঘটনাটি না ঘটার কোন কারণ নেই। কিন্তু প্রশ্ন এলো বৃষ্টিলেখার মনে। সংস্কার বা ধর্মীয় বেড়াজাল নয়, কী হবে তার ভবিষ্যতের আত্মপরিচয়? কী পরিচয়ে বাঁচবে সে? ভারতীয়? বাংলাদেশি? হিন্দু? মুসলমান? কি পরিচয় বহন করবে তাদের উত্তরাধিকার?

টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে আছে সম্পূর্ণ উপন্যাসে। সময়কে প্রশ্ন করা হয়েছে বারবার– ধর্ম নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, মূল্যবোধ নিয়ে এবং প্রজন্মের ব্যবধান নিয়ে। এককথায় এই মুহূর্তে সময়োপযোগী এক সাহসী উপাখ্যান।

অমিত গোস্বামী জানান, বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত আবেগ ছোট বয়স থেকেই। গত ৩ বছর তার লেখালিখি বাংলাদেশের কাগজগুলিতে। সেই প্রেক্ষিতে উপন্যাস লেখার আমন্ত্রণ এত দ্রুত পাবেন ভাবেন নি। সুযোগ আসতেই গুরু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপদেশ স্মরণ করে লিখে ফেললেন উপন্যাসটি। আজ এ কথা জেনে খুব ভাল লাগছে যে পাঠক গ্রহণ করছেন উপন্যাসটি।

গত ৩১ শে জানুয়ারি বিশ্বসাহিত্যে কেন্দ্রে কাজী রোজী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, আবু হাসান শাহরিয়ার প্রমুখের হাতে এই বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়েছিল।

উপন্যাস প্রসঙ্গে কলকাতার কবি রেহান কৌশিক জানালেন, 'উপন্যাসটি মনের ব্যারিকেড ভাঙার গল্প। অমিত গোস্বামীর উপন্যাস আমাদের ভিন্নতা বোধের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। জীবনের সুখ দুঃখের আরোহণ অবরোহণের মধ্যে দিয়ে চলা সময়ের এক আশ্চর্য দলিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই ব্যারিকেড ভাঙার প্রয়াসের জন্যে লেখককে কুর্ণিশ। আশা করি জনপ্রিয়তার শিখর ছোঁবে এ উপন্যাস'।

উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে নন্দিতা প্রকাশন (স্টল নং ২৩১ ও ২৩২)।

আপনার মন্তব্য