বইমেলার ডায়েরি-৬

 প্রকাশিত: ২০১৮-০২-০৭ ০১:৪১:৪৩

 আপডেট: ২০১৮-০২-০৮ ০২:৪৬:১১

রেজা ঘটক:

অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠ দিনে বইপ্রেমীদের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। বইয়ের স্টলগুলোতে অনেক পাঠক ভিড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় বইয়ের ক্রেতা ভিড়েনি। যে কারণে বইমেলায় এখনো প্রকাশকদের বিকিকিনিও খুব একটা জমে ওঠেনি। প্রতি বছরের মত এবারও বইয়ের ঢিমেতালের বিকিকিনিতে শেষ হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলার প্রথম সপ্তাহ।

অমর একুশে বইমেলায় এবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী'র ইভটিজিংবিরোধী একটি টিম বিশেষ নিরাপত্তা দিচ্ছে। মূলত বখাটেদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেই পুলিশের এই টিম কাজ করছে। ঢাকা মেট্রোপিলটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বইমেলায় যেমন সাধারণ দর্শনার্থী আসে, তেমনি বইমেলা প্রাঙ্গণে হানা দেয় কিছু বখাটের দল। এসব বখাটেরা সময়-সুযোগ বুঝে মেলায় আসা স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়ে ও নারীদের ইভটিজিং করে। সাধারণত বইমেলার যে প্রান্তে বইপ্রেমীদের সমাগম বেশি, সেখানেই এসব বখাটেরা ঘোট পাকায়। পুলিশের এই বিশেষ টিমের কাজ হচ্ছে- বইমেলায় আসা বখাটেদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। পাশাপাশি বইমেলায় আসা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

যে কেউ অভিযোগ করতে পারবে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে:
যে কোনো অভিযোগের জন্য বইমেলায় পুলিশ কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ০১৭১৮-৭১১৮৭৫ (বাংলা একাডেমি চত্বরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম) এবং ০১৭৪২-১৬০০৩২ (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম) নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।

এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো বইমেলা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে মেলার ভেতরে ও চারপাশে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে রাখা হয়েছে ডিএমপির স্পেশাল ইউনিট সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ও ডগ স্কোয়াড। পাশাপাশি বইমেলাকে ঘিরে রয়েছে একাধিক ওয়াচ টাওয়ার। যেখান থেকে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্যরা দূরবীন দিয়ে দর্শনার্থীদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখছেন।

বাংলা একাডেমির বহেরাতলায় লিটলম্যাগ কর্নারও কিছুটা জমে উঠেছে। কবি-সাহিত্যিক ও লিটলম্যাগ কর্মীরা চা ছাড়াই এক ধরনের ঢিমেতালের আড্ডা দিচ্ছেন। দ্রষ্টব্য সম্পাদক কবি কামরুল হুদা পথিক আজ আমাদের বিস্কুট ও গরম সিঙ্গারা দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন। পথিকদা জানালেন খুব শিঘ্রই দ্রষ্টব্যে'র নতুন সংখ্যা বইমেলায় আসছে। পাশাপাশি আসবে করাতকলের নতুন সংখ্যাও।

দ্রষ্টব্য ও করাতকল পরিবারের ঋষি এস্তেবান, শাফি সমুদ্র, চারু পিন্টু, সারা, মাসুম ভাইসহ সবাই আজকের আড্ডায় ছিলেন। মেঘফুল সম্পাদক ও এক রঙা এক ঘুড়ি'র প্রকাশক কবি নীল সাধু আজ বইমেলার পুরোটা সময় আমার সাথেই ছিলেন। সন্ধ্যায় বিদ্যাপ্রকাশে যথারীতি মোহিত কামাল ও জুলফিয়া ইসলাম বাড়িতে বানানো পিঁয়াজু দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করেছেন।

বাংলা একাডেমি থেকে বের হবার সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটিমাত্র প্রকাশনার সাইনবোর্ড সবার চোখে পড়ে। সেটি বিদ্যাপ্রকাশ। কিন্তু উদ্যান অংশে ঢুকতেই বিদ্যাপ্রকাশের স্টল ডানদিকে হওয়ায় বইপ্রেমীরা সোজা বইমেলার ভেতরে ঢুকে যান। আর বের হবার সময় রমনা কালীমন্দির গেট থেকে সবাই চলে যান। ফলে বিদ্যাপ্রকাশের সামনের রাস্তাটি কেবল বইপ্রেমীদের হাঁটার মিছিল। যার প্রভাব পড়েছে বই বিক্রিতে এবার!

অমর একুশে বইমেলার ৬ষ্ঠ দিনে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১৩৮টি। এর মধ্যে কবিতার বই ৪৩টি, উপন্যাস ২৯টি, গল্প ২০টি, প্রবন্ধ ৬টি, ছড়া ১টি, শিশুসাহিত্য ৫টি, জীবনী ৪টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ৫টি, স্বাস্থ্য ১টি, অভিধান ১টি, মুক্তিযুদ্ধ ৩টি, বিজ্ঞান ২টি, নাটক ১টি, সায়েন্স ফিকশন ৩টি ও অন্যান্য ১২টি বই।

সবাইকে অমর একুশে বইমেলার শুভেচ্ছা। বইমেলা অমর হোক। ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করি। জয়তু অমর একুশে গ্রন্থমেলা। জয়তু ভাষার মাস।
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

  • রেজা ঘটক: কথাসাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা।

আপনার মন্তব্য