প্রকাশিত: ২০১৮-০৩-০১ ১২:৩৬:১২
রেজা ঘটক:
বুধবার ছিল আটাশে ফেব্রুয়ারি। অমর একুশে বইমেলার শেষ বুধবার, বইমেলারও শেষ দিন। ছুটির দিন না হলেও তাই বইমেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। বইপ্রেমীরা বই কিনছেন নিজেদের পছন্দে। আমিও কিনেছি। এ বছর মোট (২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ৪৫৯১টি বই প্রকাশিত হয়েছে। মোট বই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার।
অমর একুশে বইমেলা শেষ হলেও শেষ হচ্ছে না বই উৎসব। আগামী ৪, ৫ ও ৬ মার্চ ধানমন্ডির কাকলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১২, ১৩ ও ১৪ মার্চ তেজগাঁও উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে বসবে কৈশোর তারুণ্যের বই উৎসব।
আদর্শ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে তুষার আব্দুল্লাহ'র গণমাধ্যম বিষয়ক বই 'মাঠের গণমাধ্যম: একাল এবং সেকাল'। অমর একুশে বইমেলায় এবার লেখক ও সাংবাদিক তুষার আবদুল্লাহ'র মোট আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে । এর মধ্যে কিশোর উপন্যাস 'স্কুলের নাম ভালোবাসা' প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস। শিল্পী ধ্রুব এষের প্রচ্ছদে বইটির মূল্য ১৩৫ টাকা। 'এক চোখা দৈত্য' প্রকাশ করেছে ইকরি মিকরি। এ বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন শিল্পী মাহবুবুল হক। 'আমার মিডিয়াসমগ্র'-এর প্রকাশক সময় প্রকাশন। শিল্পী ধ্রুব এষের প্রচ্ছদে বইটির মূল্য ৫০০ টাকা। এছাড়া 'মিস্টার এন্ড মিজ ইউটিউব' বইটি প্রকাশ করেছে বাবুই প্রকাশনী। শিল্পী মুস্তাফিজ কারিগরের করা প্রচ্ছদে বইটির মূল্য ১৫০ টাকা।
তুষারের 'অভিভাবক নাকি বন্ধু' বইয়ের প্রকাশক চৈতন্য। শিল্পী দেওয়ান আতিকুর রহমানের প্রচ্ছদে বইটির মূল্য ১৬০ টাকা। এছাড়া সৈয়দ শামসুল হক, শওকত আলী ও দ্বিজেন শর্মার সাক্ষাৎকার নিয়ে 'ত্রি নক্ষত্র' বইটি প্রকাশ করেছে শ্রাবণ প্রকাশনী। শিল্পী রবীন আহসানের প্রচ্ছদে বইটির মূল্য ১৫০ টাকা।
আনন্দম থেকে প্রকাশ পেয়েছে তরুণ কবি খালিদ হাসান ঋভু'র প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অন্ধ পিয়ানিস্ট'। বইটির প্রকাশক মুক্তা মজুমদার শ্রাবণী। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী আল নোমান। বইটির মূল্য ১৬০ টাকা।
অমর একুশে বইমেলার শেষ দিন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একত্রে ছিলাম তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা স্বরূপ আনন্দ আর আমি। বইমেলায় ঢোকার মুখে দেখা আরেক তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা শাখাওয়াত হোসেন মিঠু'র সাথে। বাংলা একাডেমিতে ঢোকার মুখেই দেখা গবেষক ও শিক্ষক প্রিয় বড় ভাই কামালউদ্দিন কবিরের সাথে। কবির ভাই তখন বইমেলা থেকে বের হচ্ছিলেন। আমরা বাংলা একাডেমিতে ঢুকলাম বহেরাতলার লিটলম্যাগ থেকে ছোটকাগজ মাদুলী প্রকাশিত 'তারেক মাসুদ সংখ্যা' কিনতে। বইটি সম্পাদনা করেছেন তরুণ তুর্কি কবি অরবিন্দ চক্রবর্তী।
বাংলা একাডেমির বহেরাতলার লিটলম্যাগ কর্নারে গিয়ে পেলাম লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি শাফি সমুদ্র, শিল্পী চারু পিন্টু, শিমুল ও মেঘ মামাকে। আমরা এক চক্কর দিতেই দেখা হলো বন্ধু কবি শাহেদ কায়েসের সাথে। দেখা হলো তরুণ কবি অজন্তা অনিদ্রিতা'র সাথে। আরেকটু পর দেখা হলো বন্ধু কথাসাহিত্যিক রুখসানা কাজলের সাথে। লিটলম্যাগ কর্নারে একটু সময় কাটিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকেই গেলাম বিদ্যাপ্রকাশে। পথে আমাদের সাথে যোগ দিল সুমি। বিদ্যাপ্রকাশে পেলাম যথারীতি কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল, জুলফিয়া ইসলাম ও ফারহানা আজিম শিউলীকে। আমাদের বইকেনার তাড়া থাকায় দ্রুত বইমেলার ভেতরে ঢুকলাম।
ভিন্নচোখে দেখা হলো কবি আলী আফজাল খানের সাথে। সব্যসাচীতে যথারীতি শতাব্দী ভব ও শতাব্দী সানজানা ছিল প্রাণবন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি তসলিমা নাসরিনের নতুন কাব্যগ্রন্থ 'গল্প' ইতোমধ্যে দ্বিতীয় এডিশান ফুরিয়ে যাবার উপক্রম তখন। আমার ষষ্ঠ গল্পের বই 'গল্পেশ্বরী'ও বেশ বিক্রি হচ্ছে বলে ভব আমাকে ধূমপান করালো।
বরিশাল থেকে বইমেলায় এসেছেন তরুণ কথাসাহিত্যিক সাদিয়া রহমান মৌ। মৌ-এর এবার প্রথম উপন্যাস 'রণজিৎ' প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে দেখা হলো আমাদের বাচিক শিল্পী মাহমুদুল হাকিম তানভীর ও লায়লা নওশীনের সাথে। এবার মাহমুদুল হাকিম তানভীরের কাব্যগ্রন্থ 'ঘ্রানমাতাল অতলের গান' প্রকাশ করেছে সব্যসাচী। একটু পর দেখা তনুশ্রী'র সাথে। তখন আমাদের সাথে যোগ দিলেন কবি নীলসাধু। আমরা ঘুড়িতে ঢু মারতে যাব, পথে দেখা হলো কবি পরাগ রিচিল ও কবি সেঁজুতি বড়ুয়ার সাথে।
এক রঙা এক ঘুড়ি থেকে এবার নতুন বই প্রকাশ পাবার কথা ছিল ৫৫টি। বইমেলায় শেষপর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে ৩৮টি। তাই ঘুড়ির স্টলে তুলা ভাবীর নেতৃত্বে বসেছিল ঘুড়িদের জমজমাট আড্ডা। আমরা সেখানে পাত্তা না পেয়ে গেলাম বাতিঘরে। সেখানে গিয়ে দেখা হলো বন্ধু কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল ও তারেক অনু'র সাথে। তখন আমাদের সাথে যোগ দিলেন বন্ধু অনুবাদক সোহরাব সুমন।
এরপর গেলাম আমাদের বন্ধু মুক্তা মজুমদার শ্রাবণী'র আনন্দম প্রকাশনীতে। তরুণ কবি খালিদ হাসান ঋভু'র প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অন্ধ পিয়ানিস্ট' কিনলাম। তারপর শ্রাবণে গিয়ে জমজমাট আড্ডা। সেখানে পেলাম ইমরান এইচ সরকারকে। ইমরান বললেন দেশব্যাপী লাইব্রেরির জন্য তাকে সহায়তা করতে হবে। এজন্য প্রকাশকদের সহযোগিতা দরকার। আমরা শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক বন্ধু রবীন আহসান ও আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি ভাই'র সাথে এনিয়ে কথা বললাম। গণি ভাই ও রবীন আমাদের ভরসা দিলেন।
নওশীন আজ আমাদের গরম পুরি খাওয়ালো। সাধুদা কফি খাওয়ানোর কথা বলে কখন যে পালিয়ে গেলেন ঘুড়িতে, আমরা টের পেলাম না। সেবা প্রকাশনী থেকে বই কিনতে গিয়েও আমরা ব্যর্থ হলাম ভিড়ের কারণে। মাঝখানে বন্ধু কবি আসমা অধরা সিগারেট খাওয়ালো। কোত্থেকে উড়ে এসে চিলের মত ছো মেরে ভবাই আমার সিগারেট কেড়ে নিল। তারপর ভব'র অনুরোধে কিছুক্ষণ সেখানে বসে আড্ডা দিলাম। সেই সুযোগে আমার গল্পেশ্বরী'র ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতে বাধ্য হলাম।
বইমেলার মাঠে আমাদের ক্ষুধা লাগলে সাধারণ আমরা বিদ্যাপ্রকাশে হানা দেই। এটা প্রায় বিগত দশ বছরের অভ্যাস। বিদ্যাপ্রকাশের কর্ণধার মজিবর রহমান খোকা ভাই দুই বছর বইমেলায় অনুপস্থিত। তবুও আটলান্টিকের ওপারে সুদূর আমেরিকায় বসে খোকা ভাই আমাদের খাবারের বিষয়টি সুচারুভাবেই তদারকি করেছেন। বন্ধু জুলফিয়া বাসা থেকে পিঁয়াজু বানিয়ে এনেছিল আমাদের জন্য। তা খেতে থেকে জুলফিয়া দিল ওর নতুন উপন্যাস 'জলরঙে আঁকা জগৎ' ও 'হৃদয়ের একূল ওকূল'। আর মোহিত ভাই বইয়ের বদলে বই কিনতে টাকা দিলেন। থ্যাংক ইউ বন্ধু জুলফিয়া অ্যান্ড মাই ডিয়ার মোহিত ভাই। আমরা ভুড়িভোজ করতে করতে বন্ধু সোহরাব সুমন আমার গল্পের বই 'গল্পেশ্বরী' আর উপন্যাস 'বসনা'তে অটোগ্রাফ নিলেন।
বিদ্যাপ্রকাশ থেকে আবার মেলায় ঢুকতে যাচ্ছি এবার কাগজ প্রকাশনে দেখা হলো বন্ধু কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা ও কবি শামীম রেজার সাথে। একটু পর যোগ দিল বন্ধু আহমাদ মোস্তফা কামাল। সেখানে শামীমের নেতৃত্বে চললো ফটোসেশান। তখন ঘড়ির কাঁটায় সোয়া নয়টা। কিন্তু বইমেলা তখনো সরগরম। আমরা আবার আগামী প্রকাশনীতে গেলাম আলমগীর কবিরের চলচ্চিত্রের বই কিনতে। সেখান থেকে আবার শ্রাবণে।
বন্ধু রবীন কইলো- আজ যে পূর্ণিমা, বইমেলার লাইট বন্ধ করলেও যতক্ষণ মানুষ আছে, ততক্ষণ শ্রাবণে বই বিক্রি চলবে। অন্ধকারেও চাঁদনী রাতের আলোয় ধুমছে বই বিক্রি হচ্ছিল তখনো শ্রাবণে। শ্রাবণ থেকে আমার 'চলচ্চিত্রের দেশ বিদেশ' বইটি মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রকাশ পাচ্ছে বলে জানালো বন্ধু কবি রবীন আহসান।
তারপর আমরা বইমেলা থেকে বের হলাম। এক পা আগাই তো এক পশলা আড্ডা জমে। টিএসসি পর্যন্ত আসতে রাত দশটা বাজলো। দেখা হলো আমার অত্যন্ত প্রিয় বড় ভাই, কবি ও অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ ভাই'র সাথে। টিএসসি'র রাজু স্কয়ারে দাঁড়িয়ে সবুজ ভাই তখনো নিজের বইয়ে ভক্তদের অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন। শেষপর্যন্ত পুলিশ এসে সেই জটলা ছোটানোর অনুরোধ করলো। সবুজ ভাইয়ের সাথে আগেরদিন দেখা তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা মোক্তাদির ইবনে সালামের 'রঙের দুনিয়া' ছবি নিয়ে কথা বলতে বলতে আমরা শাহবাগ পর্যন্ত আসলাম। সবুজ ভাই ছবিতে বাউল শাহ আবদুল করিমের বৃদ্ধ বয়সের চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন।
সবুজ ভাই জানালেন, শিঘ্রই একজন কমিউনিস্ট কমরেডের বায়োগ্রাফি চরিত্রে একটি সিনেমায় তিনি অভিনয় করতে যাচ্ছেন। সবুজ ভাই চলে যাবার পর আমরা আবার পূবালী ব্যাংকের সামনে এসে আড্ডা দিলাম। তারপর আর কী। আড্ডা কী আর শেষ হয়? বইমেলা শেষ কিন্তু আড্ডা তো আর শেষ হয় না। এরমধ্যে তুলা ভাবী রাগ করে বাসায় চলে গেছেন কিন্তু কবি নীলসাধু আমাদের সাথে থেকে গেলেন।
অমর একুশে বইমেলায় এবার প্রায় ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। আর নতুন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এবার সাড়ে চার হাজার নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় এক হাজার বেশি। মেলায় প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ছিল বইপ্রেমী পাঠকের ভিড়। আর ভিড়ের সঙ্গে ছিল দারুণ বিক্রিও।
এবারের বইমেলায় একাডেমি ও উদ্যান মিলে রেকর্ডসংখ্যক অর্থাৎ ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির বহেরাতলায় ১৩৬টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এবারের বইমেলায় মেলার নীতিমালা ও নিয়মাবলী লঙ্ঘন করায় টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে একটি বই জব্দ করা হয়েছে। বইটির নাম এখনো জানতে পারিনি।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অমর একুশে বইমেলায় নতুন বই এসেছে চার হাজার ৫৯১টি। গত বছর নতুন বই এসেছিল ৩ হাজার ৬৪৬টি। গত বছরের চেয়ে এবার ৯৪৫টি বই বেশি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবছর কবিতার বই বেশি প্রকাশিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবার কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে ১ হাজার ৪৭২টি। এ ছাড়া এ বছর গল্পের বই ৭০১টি, উপন্যাস ৬৪৩টি, প্রবন্ধ ২৫৭টি, গবেষণার বই ১২২টি, ছড়ার বই ১১২টি, শিশুতোষ বই ১২৫টি, জীবনীগ্রন্থ ১০৭টি, রচনাবলী ১৫টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ৯১টি, নাটক ২৩টি, বিজ্ঞান বিষয়ক বই ৭৬টি, ভ্রমণ বিষয়ক বই ৯১টি, ইতিহাস বিষয়ক বই ১১০টি, রাজনীতি বিষয়ক বই ২২টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক বই ৩৩টি, রম্য বিষয়ক বই ২১টি, ধর্মীয় গ্রন্থ ২৬টি, অনুবাদ বই ৪৮টি, অভিধান ৭টি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ৬৫টি এবং বিবিধ বিষয়ে বই প্রকাশ পেয়েছে ৪২৪টি।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলার মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জানান, এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে ৪৮৮টি বই মানসম্পন্ন হয়েছে। তার মানে এবার প্রকাশিত প্রায় চার হাজার একশো তিনটি বই মান উত্তীর্ণ হতে পারেনি। আমাদের প্রকাশকদের আরও মানসম্পন্ন বই প্রকাশে উদ্যোগী হতে হবে। এটাই এই তথ্যের মেসেজ। গণহারে বইপ্রকাশের এই যে ফলাফল পাওয়া গেল, তা কী আমাদের প্রকাশক সমাজ মনে রাখবে? এটাই এখন দেখার বিষয়! অমর একুশে বইমেলায় এবার বেস্ট সেলার বই ছিল ক্রিকেটার শাকিব আল হাসানের জীবনীগ্রন্থ 'হালুম'।
আবার একটি বছরের জন্য আমরা গভীর আগ্রহ নিয়ে কেবল অপেক্ষা করব। বই বেশি প্রকাশ পাক কিন্তু মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়ুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো বন্ধুদের সাথে সারা বছর দেখা না হলেও প্রাণের এই মিলনমেলায় সবার সাথে দেখা হয়। সেই আনন্দের প্রহর শেষ হলো। আমার বইমেলার ডায়েরি লেখাও ফুরালো। আগামীকাল থেকে আবার নিজ নিজ ক্রিয়েটিভ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়।
বইমেলা শেষ কিন্তু বই কেনা তো আর থেমে থাকবে না। আমাদের প্রকাশকদের উচিত সারা বছর মানসম্পন্ন বই প্রকাশের দিকে মনোযোগী হওয়া। আগামী বছর একই ভেন্যুতে বইমেলা চাই। বইমেলায় টিকিট সিস্টেম চালু হোক। মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান অবশ্যই দিতে হবে। আমরা সারা বছর কফি খাই না। আমরা চা খেয়ে অভ্যস্ত। অথচ বাংলা একাডেমি ব্যবসা করতে জোর করে কফির দোকান দিয়ে আমাদের পকেট কাটতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে। যা ছিল এবারের বইমেলার সবচেয়ে জঘন্য দিক। এই ব্যবসা চিরতরে বন্ধ হওয়া উচিত।
আশা করি, বাংলা একাডেমি স্টল বরাদ্দ ও বইমেলার ডিজাইনে একটু প্রফেশনালিজম আনবে। একজন স্থপতি দিয়ে বইমেলার ডিজাইন না করালে অনেক প্রকাশকের ব্যবসায় আবারো লালবাতি জ্বলবে। সবচেয়ে বেশি মার খাবে ছোট প্রকাশকরা। বড় পুঁজি ছোট পুঁজিকে খেয়ে ফেলবে। বিষয়টির দিকে বাংলা একাডেমি আরও যত্নবান হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
বন্ধুরা বইমেলা শেষ। তাই বলে বই কেনা বন্ধ করবেন না। নিজের পছন্দের বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। সবাইকে অমর একুশে বইমেলার শুভেচ্ছা। বইমেলা অমর হোক। ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করি। জয়তু অমর একুশে গ্রন্থমেলা। জয়তু ভাষার মাস।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
আপনার মন্তব্য