গ্রন্থমেলায় রেজা ঘটকের তিন বই

 প্রকাশিত: ২০১৯-০২-১৫ ০৯:১৬:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শ্রাবণ প্রকাশনী প্রকাশ করেছে কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা ঘটকের প্রবন্ধ সংকলন 'চলচ্চিত্রের দেশ বিদেশ'।

চলচ্চিত্র এমন একটি বিশাল মাধ্যম যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও চলচ্চিত্রের প্রেমে পড়েছিলেন এবং একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৩২ সালের ২২ মার্চ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিচালিত ‘নটীর পূজা' সবাক চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। তার আগে ১৯৩১ সালে বিদ্রোহী কবি ও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ধূপছায়া’ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। সেই ছবি’র সংগীত পরিচালনাও করেন কাজী নজরুল। এছাড়া তিনি বিষ্ণু’র ভূমিকায় অভিনয়ও করেন। ১৯৬৬ সালে সৈয়দ শামসুল হক পরিচালনা করেন উর্দু সিনেমা ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’।

চলচ্চিত্রে এই তিনজনের অবদানসহ চলচ্চিত্রনির্মাতা সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক কুমার ঘটক, আন্দ্রেই তার্কোভ্স্কি, জহির রায়হান, ঋতুপর্ণ ঘোষ, কেতন মেহতা ও আসগার ফারহাদিকে নিয়ে ‘চলচ্চিত্রের দেশ বিদেশ’ বইটি। এছাড়া মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ও মহানায়ক রাজ্জাককে নিয়ে রয়েছে দুটি আলাদা নিবন্ধ। পাশাপাশি বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস ও বাংলাদেশের সিনেমার বাজার নিয়ে রয়েছে নাতিদীর্ঘ আলোচনা। চলচ্চিত্রের স্টুডেন্ট, গবেষক, শিক্ষক, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষজন ও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বই ‘চলচ্চিত্রের দেশ বিদেশ’।

এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশ করেছে কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা ঘটকের প্রবন্ধ সংকলন 'বাংলা গানের এপার ওপার'।

মধ্য ত্রিশের দশক থেকে মধ্য আশির দশককে (১৯৩৮ থেকে ১৯৮৩) বলা হয় বাংলা গানের স্বর্ণযুগ। এই সময়ের মধ্যে যেমন ছিল বাংলা গানের লিরিক, তেমনি ছিল মনোহরি সুর। পাশাপাশি ছিল তেমনি দরদি কণ্ঠ। গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী মিলিয়ে এই সময়ে ছিল বাংলা গানের জয়জয়কার। এই সময়টা ছিল বাংলা গানের মিডাস টাসের মত। সবকিছুতেই তখন ছিল একটা আকাশছোঁয়া সাফল্য।

ডিভোশনাল সঙ, ফিল্ম সঙ, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, অতুল প্রসাদের গান, দ্বিজেন্দ্রগীতির বাইরেও তখন বিশাল একটা গানের জগত সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলা গানের স্বর্ণযুগের সেসব গান এখনো আমাদের প্রাণে উথাল হাওয়ার মত দোলা দেয়। আমাদের এক নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত করে। বাংলা গানের সেই স্বর্ণযুগের অনেক অন্তরালের ঘটনা পরম্পরাকে নিয়েই রেজা ঘটকের 'বাংলা গানের এপার ওপার' সংকলন। বইটি বাংলা গানের শ্রোতাদের এবং গান পাগল মানুষদের আবারো সেই নস্টালজিয়ায় আবারো আক্রান্ত করবে।

এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশ করেছে রেজা ঘটক সম্পাদিত 'চিঠির ডায়েরি'।

চিঠি ছিল একসময় দূর-যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তখন চিঠির গুরুত্ব ছিল প্রত্যেকের কাছেই অপেক্ষার অবসানের অপর নাম। ডাক পিয়ন যখন 'চিঠি আছে, চিঠি...' বলে চিৎকার দিতেন, তখন আমরা হাতের সব কাজ ফেলে সেই চিঠি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতাম। সদ্য পাওয়া সেই চিঠি'র প্রতিটি অক্ষরের মধ্যে লুকিয়ে থাকতো সেই নিকটজনের জন্য আমাদের আবেগ, ভালোবাসা, প্রেম, বিরহ ও কামনার এক একটি মানসচিত্র।

আমাদের জীবদ্দশাতেই চিঠি লেখার প্রচলন ধীরে ধীরে উঠে গেল। তাহলে কী আমরা ধীরে ধীরে যন্ত্রমানবে পরিণত হচ্ছি? আমরা যন্ত্রমানব না হলেও যন্ত্রের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা অনেক বেড়েছে। আর সেই নির্ভরতার ফাঁক গলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের চিঠি লেখার অভ্যাস।

হারানো সেই অভ্যাসকে মলাটবন্দি করার প্রয়াস থেকেই এই চিঠি সংকলনের চিন্তা। 'চিঠির ডায়েরি' সংকলনের জন্য রেজা ঘটক সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ঘোষণা দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের মধ্যে চিঠি লেখার নতুন একটি অভ্যাসকে আবার একটু উসকে দেওয়া। 'চিঠির ডায়েরি' সংকলনটিতে বেশ কিছু ঐতিহাসিক চিঠি যুক্ত করে কিছুটা বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া সমকালীন নানান বিষয়আশয় নিয়ে সাজানো হয়েছে 'চিঠির ডায়েরি'।

এছাড়া অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে রেজা ঘটকের বেশ কিছু বই। বিদ্যাপ্রকাশে পাওয়া যাচ্ছে বসনিয়া যুদ্ধের উপর ঐতিহাসিক উপন্যাস 'বসনা'। উপন্যাসটিতে বসনিয়ার যুদ্ধ ও তখনকার বিশ্বরাজনীতির কূটকৌশল অত্যন্ত নিপুণভাবে উঠে এসেছে। অন্যপ্রকাশে পাওয়া যাচ্ছে রেজা ঘটকের গল্পের বই 'ভূমিপুত্র'। ছায়াবীথিতে পাওয়া যাচ্ছে গল্পের বই 'পঞ্চভূতেষু'। সব্যসাচীতে পাওয়া যাচ্ছে গল্পের বই 'গল্পেশ্বরী'। শ্রাবণ প্রকাশনীতে পাওয়া যাচ্ছে 'ফিদেল দ্য গ্রেট কমরেড'। এবং ত্রয়ী প্রকাশন-এ পাওয়া যাচ্ছে রেজা ঘটকের বেস্ট সেলার বই 'মুজিব দ্য গ্রেট'। বইটির এবছর পঞ্চম সংস্করণ বের হয়েছে।

আপনার মন্তব্য