বইমেলার ডায়েরি-৫

 প্রকাশিত: ২০২০-০২-০৭ ০০:১২:৪১

রেজা ঘটক:

বৃহস্পতিবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার পঞ্চম দিন। বইমেলায় আজ একটু আর্লি ঢুকেছি। বিকাল চারটায়। টিএসসি থেকে আমার আর অনন্ত উজ্জ্বলের সাথে যোগ দেয় সুস্মিতা আর মাধবী। সাড়ে চারটায় 'লেখক বলছি' মঞ্চে শুরু হয় অনুষ্ঠান। আজ অনুবাদক অনন্ত উজ্জ্বল মুখোমুখি হয়েছিলেন সঞ্চালক আরেক অনুবাদক মোজাফফর হোসেনের। সেই প্রাণবন্ত আলোচনা শেষ না হতেই উদ্যানের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ডাক পড়লো আমার।

সুপর্ণা এলিজ গোমেজের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'মালঞ্চ'। বইটি প্রকাশ করেছে স্বদেশ শৈলী। বইটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচনে উপস্থিত ছিলেন কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আকতার হুসেন, কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা ঘটক, সুপর্ণা'র মা মলঞ্চ, স্বামী পিউস রোজারিও ও সুপর্ণা নিজে। পরে বইটি নিয়ে আলোচনার শেষদিকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বদেশ শৈলী'র বাংলাদেশ প্রতিনিধি অনন্ত উজ্জ্বল। সেখানে দেখা হলো আমার প্রিয় জাহীদ ভাই'র সাথে। কথাশিল্পী জাহীদ রেজা নূর।

এরপর শুরু হয় লিটলম্যাগ কর্নারে আমাদের নিয়মিত আড্ডা। আজ সৃষ্টি বইমেলায় এসে একটু উকি দিয়েই ভেগেছে। সেজন্য ও কী লস করেছে সুস্মি ভালো বলতে পারবে। এরপর আমাদের সাথে যোগ দেয় ডেসপারেট মারিয়া'র লেখক মারিয়া রিমা। আমরা কবি নীল সাধু'র নেতৃত্বে ঘুড়িতে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে 'ডেসপারেট মারিয়া'কে দেখলাম জনান্তিক-এ। ডেসপারেট ছেলেরা কিন্তু সাবধান। শহরে এখন ডেসপারেট মারিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। বইটি পাওয়া যাচ্ছে জনান্তিক-এ।

এরপর আমাদের সাথে যোগ দিলেন শ্যামদা। শ্যামসুন্দর দা ফাল্গুনের জাদু পকেটবন্দি করে একা একা ঘুরে বেড়ান। আমরা বইমেলায় আছি জানতে পেরে কোথা থেকে উড়ে এসে আবার কোথায় হারিয়ে গেলেন! এই সময় কথা এসে হাজির। আমরা দলবেঁধে চা খেতে গেলাম রমনা কালীমন্দিরে। তারপর পুকুরের সিঁড়িতে বসে আড্ডা।

আবার বইমেলায় ঢুকে দেখি শ্রাবণী গ্লাস টাওয়ারের লেকের পাড়ে বসে পা দুলিয়ে প্রেম করছে। আমাদের বাহিনী আসা মাত্রই প্রেম বন্ধ করে আমাদের সাথে আড্ডা শুরু হলো। বাতিঘর থেকে মেলায় এসেছে ফাতেমা আবেদীনের গল্পের বই 'মৃত অ্যালবাট্রস চোখ'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সব্যসাচী মিস্ত্রি। আলতাফের সাথে দেখা হলে ভালো লাগতো।

বিদ্যাপ্রকাশের প্রকাশক শ্রদ্ধেয় মজিবর রহমান খোকা এসেছেন সুদূর আমেরিকা থেকে। খোকা ভাইয়ের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে বিদ্যাপ্রকাশে পেয়ে যাই কথাশিল্পী মোহিত কামালকে। আজকে বইমেলায় এসেছিল ছোট্ট বন্ধুদের প্রিয় লেখক মীম নোশিন নাওয়াল খান। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে এসেছে মীমের কিশোর উপন্যাস 'বেলুন মামা'। তারপর আবার লিটলম্যাগ কর্নারে মিঠা মামুনদের সাথে গানের আড্ডা। পিন্টু গংদের সাথে আড্ডার পর আমরা রুম্মানের পেন্ডুলামে বিশাল আড্ডা দিতে দিতেই ঘড়ির কাঁটায় নয়টা।

বইমেলা থেকে বের হবার সময় আমাদের সাথে যুক্ত হলো রঞ্জনা বিশ্বাস-রেপ্লিকা ঋদ্ধিতা-শাপলা সপর্যিতা-শহীদ ভাই গ্যাং। রোকেয়া হলের উল্টোপাশে এসে আমরা আচার খেলুম। আর কথা-সুস্মি-কৃষ্ণরা গেল হাকিমচত্বরে হারিয়ে। এই সময়ে কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুরের ফোন। ওদের থেকে ছুটি নিয়ে আমি চলে গেলাম আজিজে। গিয়ে দেখি সেখানে রয়েছে আরেক নির্মাতা মুকতাদির।

বইমেলায় আসুন। নতুন বইয়ের সাথে মিতালী করুন। যাচাই বাছাই করে ভালো বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা।

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বইমেলা থেকে ফিরে

  • রেজা ঘটক: কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

আপনার মন্তব্য