প্রকাশিত: ২০২০-০২-১২ ০৩:৩৩:৪৬
রেজা ঘটক:
মঙ্গলবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিন। বইমেলায় লোকসমাগম বেশ ভালোই ছিল। গতকাল পর্যন্ত বইমেলায় নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে ১৮৭০টি। প্রতি বছর প্রায় ৪/৫ হাজার নতুন বই বইমেলায় প্রকাশ পায়। কিন্তু তার মধ্যে হয়তো ৫০টি থাকে ভালো বই! ভালো বইয়ের সংখ্যা যতদিন না বাড়বে ততদিন কাগজ নষ্ট করে বইমেলার আকার বড় করাটা কেবলই লোক দেখানো মনে হয়!
বাংলা একাডেমি অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজক। অথচ এই কাজটি করা উচিত প্রকাশকদের। বাংলা একাডেমি'র কাজ হওয়া উচিত বইমেলায় আগত নতুন বই থেকে ভালো বই বাছাই করে সেটি বইপ্রেমিদের নোটিশ করা। বাংলা একাডেমি'র পিয়ন থেকে শুরু করে ডিজি পর্যন্ত সবার বই প্রকাশ পায়। এটা একটা জাতি গঠনে কোনো ভূমিকাই পালন করছে না।
বরং যদি ভালো বই বাছাই করার জন্য বাংলা একাডেমি'র একটি বই বাছাই কমিটি থাকতো, প্রতি বছর প্রতি সপ্তাহে সেই কমিটি প্রেস কনফারেন্স করে ভালো বইয়ের তালিকা প্রকাশ করতো, তাহলে গণহারে বই প্রকাশের ঝুঁকি যেমন কমতো, তেমনি পাঠক অখাদ্য বই কিনে ঠকতো না। কিন্তু বাংলা একাডেমি আয়োজকের ভূমিকায় বসে আছে। তারা মাতুব্বরি করতে পছন্দ করে। সারা বছর একাডেমিতে কোনো গবেষণা হয় না। এরা এগারো মাস নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় আর ফেব্রুয়ারি মাসে তর্জন গর্জন করে।
খোদ বাংলা একাডেমি'র গঠনতন্ত্রের কোথাও তাদের অমর একুশে বইমেলার আয়োজনের কথা বলা হয়নি। কিন্তু তারা এই কাজটি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে করছে। কারণ এখানে ব্যবসা হচ্ছে। বাংলা একাডেমিকে কেন ব্যবসা করার ফন্দি করতে হবে? সারা বছর কয়টি গবেষণা বই তারা জাতিকে উপহার দেয়? আমি এই রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে বাংলা একাডেমি'র মত নিষ্কর্মা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আর দেখি নাই। অথচ আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় বাংলা একাডেমি'র কর্মকর্তাদের বেতন হয়। অন্তত বেতন হালাল করার জন্য হলেও এই প্রতিষ্ঠানটির কিছু কাজ করা উচিত।
আগে অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজক ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের নেতৃত্বে প্রকাশকদের হওয়া উচিত বইমেলার আয়োজক। বাংলা একাডেমি এখানে একটি মিশন রাখবে। যারা ভালো বই বাছাই করার কাজ করবে। সেখানে খোদ সকল নীতিমালা ভঙ্গ করে বাংলা একাডেমি নিজেদের আসল কাজ ফেলে এই বইমেলার আয়োজক হয়ে বসে আছে। বাংলা একাডেমি'র যেন কোনো জবাবদিহি নাই। এভাবেই এই রাষ্ট্র চলছে। যেন কারো কিছু বলার নাই!
কেউ কি বলতে পারবেন গত এক বছরে বাংলা একাডেমি গবেষণায় উল্লেখযোগ্য কী কী ভূমিকা পালন করেছে? জাতি সেই ইতিহাস জানে না কেন? জাতির মননের প্রতীক অথচ জাতি গঠনে যার ন্যূনতম কোনো ভূমিকা নাই। এ কেমন একাডেমি! এটা আর কতকাল এভাবে চলবে? আমরা চাই বাংলা একাডেমি নিজেদের আসল কাজটা করুক। শুধু বার্ষিক পিকনিক আর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজন করা ছাড়া বাংলা একাডেমির আর কোনো কাজ আমাদের নজরে পড়ে না কেন?
বইমেলায় অন্বেষা প্রকাশন প্রকাশ করেছে জাপান প্রবাসী লেখক জুয়েল আহসান কামরুলের উপন্যাস 'দ্বীপদেশের জেলখানা'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী কামরুল হাসান মিলন।
চৈতন্য প্রকাশ করেছে কবি মামুন খানের কাব্যগ্রন্থ 'জলসায়রের পলি'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। সু্টডেন্ট ওয়েজ প্রকাশ করেছে রাব্বী আহমেদের গদ্যের বই 'রাজহাঁসের চিঠি'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী নির্ঝর নৈঃশব্দ। বিদ্যাপ্রকাশ প্রকাশ করেছে পিয়াস মজিদের গদ্যবই 'কবিতার কায়া ও কুসুম'।