সরকারি কর্মকর্তাদের বঙ্গবন্ধুর নামে বই প্রকাশের প্রতিযোগিতা চলছে

বইমেলার ডায়েরি: ১৭ ও ১৮

 প্রকাশিত: ২০২০-০২-২০ ০০:৩৩:৩৭

রেজা ঘটক:

মঙ্গলবার ও বুধবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার সপ্তদশ ও অষ্টাদশ দিন। ইতোমধ্যে টুকটাক বাছাই বই কেনা শুরু করেছি। এবছর বই কেনায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে, ইতিহাস, দর্শন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই। পাশাপাশি আমার সমকালীন বন্ধু কবি-লেখক ও নতুন প্রজন্মের যাদের লেখা আমার প্রিয়/পছন্দ, তাদের বই কিনছি। মহিবুল আলমের 'তালপাতার পুঁথি' বইটির প্রকাশক কে কেউ কী একটু বলবেন?

পেন্ডুলাম থেকে কিনেছি জুয়েল মোস্তাফিজের 'হোয়াট আ বিউটিফুল ডেড বডি', ইমতিয়ার শামিমের 'আমরা হেঁটেছি যারা', রিচার্ড ব্রটিগানের 'ইন ওয়াটারমেলন সুগার' (ভাষান্তর শুভঙ্কর দাশ), জাকির তালুকদারের 'কন্যা ও জলকন্যা', আহসান হাবিবের 'হোমো স্যাপিয়েন্স' এবং রাজু আলাউদ্দিনের 'ভাষার প্রতিভা বিকৃতি ও বিরোধিতা'। পাঠক সমাবেশ থেকে টোকন ঠাকুরের 'ক্যাপ্তেন, গভীর সমুদ্রে চলো', বাতিঘর থেকে আলফ্রেড খোকনের 'নির্বাচিত কবিতা' ও স্যামুয়েলের ডায়েরি, ঐতিহ্য থেকে শাহেদ কায়েসের 'নির্বাচিত কবিতা', চন্দ্রবিন্দু থেকে মাহবুব ময়ূখ রিশাদের 'আরিমাতানো' ও হামিম কামালের 'জাদুকরী ভ্রম'।

বইমেলায় প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে, আড্ডা হচ্ছে, মাস্তি হচ্ছে, ব্যাপক কোলাকুলি হচ্ছে। এসবই ভালো লাগছে। কিন্তু খারাপ লাগছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অধিকাংশ প্রকাশনীতে গণহারে খারাপ বইয়ের স্তূপ দেখে। যিনি বঙ্গবন্ধুকে দশ লাইনও পড়েননি, তিনিও বইমেলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা বই করেছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু'র নামে বই প্রকাশের প্রতিযোগিতায় রীতিমত হিড়িক চলছে। আজ স্বয়ং বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়তো এত তোষামোদি সহ্য করতেন না!

আমার নিজের লেখা বই টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে উপন্যাস' মা' এবং 'বসনা'। 'মা' উপন্যাসে রয়েছে বাংলাদেশের ৭০ বছরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে একুশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও পরিবর্তনসমূহের স্ন্যাপশট। আর উপন্যাস 'বসনা' হলো বসনিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ ও সংগ্রামের রক্তাক্ত ইতিহাস, বলকান যুদ্ধ এবং তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতিতে পূর্ব-পশ্চিম মেরুকরণ নিয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।

আমার ছোটগল্পের বইয়ের মধ্যে অন্যপ্রকাশে এখনো পাওয়া যাচ্ছে 'ভূমিপুত্র' ও ছায়াবীথিতে পাওয়া যাচ্ছে 'পঞ্চভূতেষু'। সব্যসাচী থেকে 'গল্পেশ্বরী'র দ্বিতীয় মুদ্রণ শিঘ্রই আসবে। এছাড়া ত্রয়ী প্রকাশনে 'মুজিব দ্য গ্রেট' এবং এক রঙা এক ঘুড়িতে 'বাংলা গানের এপার ওপার' পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া এক রঙা এক ঘুড়ি থেকে দু-একদিনের মধ্যে আসবে ছোটদের গল্প 'গপ্পো টপ্পো না সত্যি' ও আমার সম্পাদনায় একটি চিঠির সংকলন 'চিঠির ডায়েরি'। আর বইমেলা'র বাইরে রকমারি ডট কম থেকে (ফোন: ১৬২৯৭) ঘরে বসে সংগ্রহ করতে পারেন শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত আমার লেখা 'ফিদেল দ্য গ্রেট কমরেড' ও চলচ্চিত্রের দেশ বিদেশ'।

বইমেলা'র ডায়েরিতে নিজের লেখা বইয়ের কথা বলতে একটু লজ্জাও লাগছে বটে। কিন্তু গোটা বইমেলায় আমি হলপ করে বলতে পারি- প্রতিবছর অন্যের বইয়ের যতটুকু প্রচার করি, তারচেয়ে নিজেরটা করতে একটু বরং লজ্জাই লাগে। তবুও আমার যারা দু-চারজন একনিষ্ঠ পাঠক রয়েছে, তাদেরকে জানানো আমার কর্তব্য মনে করেছি বলেই জানালাম।

এবছর প্রকাশকরা বিশাল লোকসানের ঝুঁকিতে আছেন। কারণ খুব কম বই বিক্রি হচ্ছে। অনেকে ঘরে পুঁজি পর্যন্ত তুলতেই পারবেন না। তারমধ্যে মৌসুমি লেখকদের উৎপাত তো রয়েছেই। ভালো বই কিনুন। আমাদের ভালো বইয়ের সন্ধান দিন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০; বইমেলা থেকে ফিরে
          রেজা ঘটক: নির্মাতা ও কথাসাহিত্যিক।

আপনার মন্তব্য