বইমেলায় কর্মকার অনুপ কুমারের গল্পগ্রন্থ ‘পদ্মগামী জলের গল্প’

 প্রকাশিত: ২০২০-০২-২০ ১৬:৫৯:১৫

রিপন দে:

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এ প্রকাশিত হয়েছে তরুণ কবি ও কথাসাহিত্যিক কর্মকার অনুপ কুমারের গল্পগ্রন্থ ‘পদ্মগামী জলের গল্প’। বইটি প্রকাশ করেছে নৃ প্রকাশন।

‘পদ্মগামী জলের গল্প’ গল্পের আড়ালে আবহমান সংস্কৃতির এক নান্দনিক উপমা। কর্মকার অনুপ কুমারের ধ্রুপদী সংস্কৃতির আখ্যানমূলক গল্পগ্রন্থ ‘পদ্মগামী জলের গল্প’। বইটিতে রয়েছে লেখকের বাছাইকৃত ছয়টি গল্প। লেখক ছয়টি মৌলিক বিষয় নিয়ে এসব গল্প রচনা করেছেন।

বইটির প্রথমেই পাঠকরা পাবেন গাল নামের একটি প্রেম প্রথা বিরহের আখ্যানমূলক একটি গল্প। এই গল্পে মোহন মানের প্রধান চরিত্র নিয়ে গল্পের পটভূমি চিত্রায়িত করেছে লেখক। সদ্য পাশ করে চাকুরিতে যোগদান করা মোহন কৃষ্ণকলি নামের এক নারীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। সেই প্রেম এক সময়ে বিরহে পরিণত হয় কোন এক অজানা কারণে। হারিয়ে যায় কৃষ্ণকলি। কিন্তু মোহন কৃষ্ণকলির এই অজানা কারণে হারিয়ে যাওয়াকে মেনে নিতে না পেরে অদম্য এক পণ করে বসে। কী সে পণ? সে পণে কি মোহন কৃষ্ণকলিকে খুঁজে পেয়েছিলো? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে পাঠক এক রহস্যের মধ্যে প্রবেশ করবেন।

বইয়ের দ্বিতীয় গল্প পিশাচসিদ্ধ সন্ন্যাসী। এ গল্পেও লেখক রহস্যে দোলা দিয়েছেন পাঠকের মনে। সমাজের কুসংস্কার ও কান কথায় মানুষের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে যে যেকোনো ধরনের অপকর্ম করা সম্ভব তা এই গল্পে লেখক খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেই সাথে আছে নান্দনিক আবহ বর্ণনা। গল্পটি পাঠে পাঠক যেমন রহস্য উন্মোচনের আনন্দ পাবেন তেমনি সমাজ সচেতনতার বার্তাও পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।

বইয়ের তৃতীয় গল্পের নাম হিতৈষণা। এই গল্পের নামকরণ থেকে শুরু করে গল্পের আবহ, ভাষার প্রয়োগ ও চরিত্র নির্মাণ এক কথায় অসাধারণ। লেখকে এই গল্পটি লিখেছেন তার বাস্তব জীবনে দেখা এক পল্লি চিকিৎসকের মহানুভবতার আখ্যান হিসেবে। একজন সাধারণ পল্লি চিকিৎসক কীভাবে এবং কতটা মহানুভবতার সাথে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন তার বাস্তবতা এখানে খুব সুন্দর ভাবে অঙ্কন করেছেন লেখক।

বইয়ের চতুর্থ গল্প পোড়া নটীবাড়ি। এটি মূলত একটি প্যারানরমাল কাহিনী ভিত্তিক গল্প। কয়েকজন বন্ধু তাদের শখের বশে আনন্দ করে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন এক প্যারানরমাল গোলকধাঁধায়। গল্পটিতে মুহুর্মুহুর রহস্যের পট পরিবর্তন ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেবে পাঠকদের।

বইয়ের পঞ্চম গল্প কল্যাণেশ্বরী। কল্যাণেশ্বরী একটি আধ্যাত্মবাদের গল্প। বিশ্বাসই যে মানুষের আপদ মুক্তির কারণ হতে পারে সে সম্বন্ধীয় একটা চমৎকার ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে গল্পটিতে। গল্পটিতে পুষ্প নামের একটি শিশু চরিত্রের অবতারণা করেছন লেখক। একটি শিশুর নিষ্পাপ বিশ্বাস যে কতটা গভীর হতে পারে এবং এখান থেকে মানুষ কীভাবে আপদ মুক্তির পথ খুঁজে পেতে পারে তা জানতে পাঠক জানতে পারবে এই গল্প পড়লে।

বইয়ের সর্বশেষ গল্প অন্তর্জাল। অন্তর্জাল গল্পটি একটি প্রযুক্তি সচেতনতা মূলক গল্প। একটি কিশোর বয়সী ছেলের মনে কিশোর বয়সে কী কী ভালো লাগতে পারে এবং সেই ভালো লাগার প্রভাব তার জীবন ও পরিবারের জন্য কতটা প্রভাব ফেলে তা এই গল্পে লেখক বর্ণনা করেছেন। গল্পটির বিষয়বস্তুর প্রধান আলোচ্য হচ্ছে বর্তমান সময়ের কিশোর থেকে সব বয়সী লোকজন যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে তার কুপ্রভাব সম্পর্কে।

লেখক কর্মকার অনুপ কুমার প্রয়োজনীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অত্যন্ত চমৎকার ভাবে তার গল্পে বর্ণনা করেছেন। পাঠক এই গল্প পাঠে গল্পের আনন্দ লাভের পাশাপাশি ইন্টারনেটে আসক্তির কুপ্রভাব সম্পর্কে চমৎকার কিছু তথ্য পাবেন।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে নৃ প্রকাশনের স্টলে (স্টল নং ৩৮৪) এবং লিটলম্যাগ চত্বরে নৃ সাহিত্যপত্রের স্টলে (স্টল নং ৩৯)। বইটির মূল্য ২০০টাকা। কমিশন বাদে পাঠকরা বইটি কিনতে পারবেন ১৫০ টাকায়।

আপনার মন্তব্য