বইমেলায় পুলিশের মাস্তানির ‘হোক প্রতিবাদ’!

বইমেলার ডায়েরি ১৯-২০

 প্রকাশিত: ২০২০-০২-২২ ০১:৩৭:১৯

রেজা ঘটক:

বইমেলায় আজ (শুক্রবার) একটু দেরিতে ঢুকেছি। কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর আর আমি মানুষের বিশাল মব ঠেলে বইমেলায় ঢুকে প্রথমে যাই লিটলম্যাগ চত্বরে। সেখানে গিয়েই দেখি সবাই ফুঁসছে। সবাই বিক্ষুব্ধ। সবাই খুব বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। কথাশিল্পী স্বকৃত নোমান আমাদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলেন। শিল্পী চারু পিন্টু ও পেন্ডুলাম প্রকাশক রুম্মান তার্শফিককে পুলিশ লিটলম্যাগ চত্বরে গায়ে হাত দিয়ে নাজেহাল করেছে!

পুলিশ ওদের তুলে নেবার চেষ্টা করলে, কবি-লেখক-লিটলম্যাগ সম্পাদকদের বাধার মুখের পুলিশ লিটলম্যাগ চত্বরে উল্টো ঘেরাও হয়ে আটকা পড়ে যায়। পরবর্তীতে লিটলম্যাগ চত্বরের দায়িত্বে থাকা বাংলা একাডেমি কর্মকর্তা সুলতান ভাই পরিস্থিতি সামাল দেন। আমরা সুলতান ভাইয়ের কাছে এই ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ করেছি। এবং পুলিশের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য দুঃখপ্রকাশ করতে বলেছি।

সুলতান ভাই আমাদের কথা দিয়েছিলেন, সন্ধ্যায় এর একটি আনুষ্ঠানিক সমাধান করবেন। পরে আমাদের অনুরোধে টোকন ঠাকুর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী সাহেবের সাথে ফোনে কথা বলেন। সিরাজী ভাই বিষয়টি সন্ধ্যায় মিটিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। আমরা শান্ত হয়ে নিয়মিত আড্ডায় মেতে উঠলাম। ঘণ্টাখানেক পর সুলতান ভাই এসে আমাদের জানালেন, আগামীকাল (শনিবার) বিকাল তিনটায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে নিয়ে বসবেন। আমরা সবাইকে আগামীকাল বিকাল তিনটা পর্যন্ত সবাইকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেছি।

আমরা সুস্পষ্টভাবে বাংলা একাডেমিকে বলতে চাই- অমর একুশে গ্রন্থমেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রীয় পুলিশকে আমরা আর দেখতে চাই না। আগামী বছর থেকে বইমেলায় বাংলা একাডেমি'র নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করুক, এটা আমাদের দাবি। বইমেলায় পুলিশ কবি-লেখক-শিল্পী-প্রকাশকদেরকে সম্পূর্ণ চোর/সন্ত্রাসী হিসেবে ট্রিট করে। যা খুবই দৃষ্টিকটু। পুলিশ থাকবে গোটা বইমেলার বাইরে। ভেতরে সবাইকে চেক করে ঢোকানো হয়। তারপর বইমেলায় পুলিশ এভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সাথে এরকম আচরণ করে কোন যুক্তিতে? এদেশটা কি পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেল?

কবি-লেখক-শিল্পী-প্রকাশকদের সাথে ভালো আচরণ করার মত যোগ্যতা রয়েছে এমন পুলিশ কি আমাদের পুলিশ বাহিনীতে নাই? তাহলে বাংলা একাডেমি এমন অসভ্য পুলিশকে এরকম একটি প্রাণের বইমেলায় দায়িত্ব দেয় কী করে? বইমেলায় ঢোকার সময় পুলিশ গায়ে হাত দিয়ে চেক করে। তাহলে গেটের মেটাল ডিটেকটরের কাজটা কী? আজকে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে গেটে পুলিশ কাউকে চেক করেনি কেন? তাহলে অন্য দিনগুলোতে চেক করার কারণ কী? বইমেলায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা তো এমন ভিড়েই আশংকা বেশি থাকে। অথচ আমরা দেখেছি, ভিড় বেশি হলে পুলিশ আর চেক করে না। কিন্তু ভিড় না থাকলে পুলিশের এমন বাজে আচরণ?

আমরা পুলিশের থেকে এরকম অপমানকর আচরণ কোনোভাবেই প্রত্যাশা করি না। এই দেশ আমাদের সবার। এই প্রাণের বইমেলাও আমাদের সবার। পুলিশকে আমাদের সাথে সহযোগিতার মনোভাব নিয়েই বইমেলায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর পুলিশের এমন আচরণের জন্য আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি পুলিশকে এজন্য দুঃখপ্রকাশ করার অনুরোধ করছি।

আশা করি বাংলা একাডেমি বইমেলায় একটি সুন্দর পরিবেশ রাখার জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সুন্দরভাবে সমাধান করবে। বইমেলায় পুলিশের কোনো ধরনের মাস্তানি আমরা সহ্য করবো না। পুলিশ বাহিনীকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই, কিন্তু এজন্য তাদেরও সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। লিটলম্যাগ চত্বরে স্থাপিত পুলিশ টাওয়ার নিয়ে আমরা শুরু থেকেই আপত্তি করেছি। বাংলা একাডেমি আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। অথচ শেষ পর্যন্ত আমরা পুলিশের সেই আচরণ দেখলাম।

আগামী দিনের তুর্কি লেখকদের আড্ডা হয় লিটলম্যাগ কর্নারে। বাংলা একাডেমিকে বুঝতে হবে এরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। এদেরকে পুলিশ লেলিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান দাবি করছি। আশা করি, সিরাজী ভাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন। বাংলা একাডেমি এবং আমাদের পুলিশ ভাইদের সুচিন্তা উদয় হোক।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০; বইমেলা থেকে ফিরে।
              রেজা ঘটক: নির্মাতা ও কথাসাহিত্যিক।

আপনার মন্তব্য