গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে ধুলোমুক্ত রোমান্টিক বইমেলা

বইমেলার ডায়েরি-২৪

 প্রকাশিত: ২০২০-০২-২৬ ১০:৪৩:৫৬

রেজা ঘটক:

২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার চব্বিশতম দিন। দুপুর থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। আর আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা একটু একটু করে প্রকাশক ও কবি-লেখক-বইপ্রেমীদের মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছিল। আমরা জানি- চিরকাল টেস্ট ক্রিকেটের সাথে বৃষ্টির যেমন শত্রু শত্রু খেলা। তেমনি প্রকাশকদের সাথে লেখকদের! কিন্তু ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ততক্ষণে সফরকারী জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশ এক ইনিংস ও ১০৬ রানে পরাজিত করেছে। ফলে টেস্ট ক্রিকেটকে বাধা দিতে আসা ওই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির যেমন প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে, তেমনি বইমেলার জন্য অপেক্ষারত বইপ্রেমীরাও পাঁচটার পর থেকে বইমেলাকে সরগরম করে তুলেছেন।

গতকাল বইমেলা প্রাঙ্গণ ছিল এবছরের সবচেয়ে সুন্দর রোমান্টিক পরিবেশ। বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় পরিবেশ ছিল ধুলোমুক্ত। প্রকৃতি যেমন সদ্যস্নাত করে দ্যুতি ছড়িয়েছে, তেমনি রোমান্টিক এক পরিবেশ ছিল গোটা বইমেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে। ফলে আমাদের সাহেদ ভাই তো হুট করেই তার বান্ধবীদের নিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন! অগত্যা আমরা খালিদ ভাই'র নেতৃত্বে চা না পেয়ে কফি খেলাম। তার আগে পর্তুগাল প্রবাসী রানা ভাই'র নেতৃত্বে আমরা অবশ্য পিঠা খেয়েছি। পরে আকরাম ভাই এসে আমাদের ষোলোকলা পূর্ণ করেছেন।

বাতিঘরের সামনে রিটন ভাই (লুৎফর রহমান রিটন)'র থাকার কথা থাকলেও তার টুটি দেখা যায়নি। এজন্য রিটন ভাইকে আমরা ফাইন করেছি। কিন্তু সেখানে খালিদ ভাই গং এবং অন্যান্য বন্ধুরা ছিল বটে। বন্ধু কবি আলফ্রেড খোকন তো দেখা হওয়া মাত্র গালিবদের দল ছেড়ে আমাদের দলে যোগ দিল। কিন্তু আমাদের অগ্রবর্তী দলে লোপা থাকায় পরে কফি খাওয়া শেষে লোপাকে নিয়ে খোকন আবার কোথায় যেন হারিয়ে গেল!

এর আগে বিদ্যাপ্রকাশে মোহিত ভাই ও খোকা ভাই'র সাথে গল্প করার সময় জানা গেল ধ্রুবদা'র অভিনব ফটোগ্রাফি'র খবর। সুফি বাংলার পান্থ দুপুরে খোকা ভাই ও ধ্রুবদার সাথে ছবি তুলতে চেয়েছিল। ধ্রুবদা জবাবে বলেছিলেন নগদ ৫০ টাকা না দিলে ছবি তুলবেন না। পরে ৫০ টাকা নগদ পেয়ে ধ্রুবদা ছবি তোলায় সম্মত হয়েছেন। ধ্রবদার এই কৌশলটা কেন যে আমি বইমেলার শুরু থেকে অ্যাপ্লাই করলাম না! সেই দুঃখে এখন নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করতেছে! কী লোকসানটা যে হয়ে গেল এবার। কাল থেকে আমার সাথেও ছবি তুলতে টাকা লাগবে! হ! ধ্রুবদার সূত্র কাল থেকে শতভাগ মেনে চলবো বলে দিলাম।

ইউপিএল থেকে বই কেনার সময় আমাদের সাথে যোগ দিলেন কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর এবং কবি নীলসাধু। বইমেলায় আরামে ঘুরে ঘুরে গতকাল অনেক বই কিনলাম। এরমধ্যে এই প্রথম অসীমদা'র সাথে দেখা। কবি অসীম সাহা। গুণদা হাসপাতালে থাকায় অসীমদাও এতদিন বইমেলায় আসেননি। কিন্তু এমন রোমান্টিক ওয়েদারের মধ্যে অসীমদার মত চিরপ্রেমিক কী করে ঘরে বসে থাকবেন!

দীর্ঘদিন ধরে অসীমদা বাংলা ভাষার সবচেয়ে সহজ অভিধান লিখছিলেন। সেই পরিশ্রমী বইটি 'আধুনিক ব্যবহারিক সহজ বাংলা অভিধান' নামে প্রকাশ করেছে আগন্তুক। অসীম সাহা সম্পাদিত এই অভিধানটি সংগ্রহ করার সময় অসীমদা বললেন, রেজা পড়ার সময় হাতে একটা লাল কালির কলম নিয়ে বসবা। কোথাও কোনো ভুল চোখে পড়লে নোট করবা। তারপর আমাকে জানাবা। তারপর অসীমদার সাথে ফ্যাকাসে গ্রুপছবি তুলে আমরা যাই পেন্ডুলামে। আর অসীমদা তার ষোড়শী বান্ধবীকে নিয়ে অন্যদিকে হারিয়ে গেলেন!

বইমেলায় রোমান্টিক পরিবেশ থাকায় জুটিদের ছিল দেখার মত অন্যরকম ভিড়! মিথুন-রুম্মান, খোকন-লোপা, হামিম-পার্লিয়া, সাহেদ-সোনিয়া, নীলসাধু-শিমুল, সবাই জোড়ায় জোড়ায়! অগত্যা আমরা বান্ধবীদের না পেয়ে বাবু ভাইকে নিয়ে নয়টা নাগাদ বইমেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে টিএসসি গিয়ে আকরাম ভাই'র নেতৃত্বে চা খেলুম।

বৃষ্টি হোক বা না হোক, বইমেলার এমন সুন্দর রোমান্টিক পরিবেশ গতকাল যারা মিস করেছেন, তাদের ঢাকায় বসবাস করার কোনো মানে নাই। বইমেলায় আসুন। ভালো বইয়ের খবর নিন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বইমেলা থেকে ফিরে।
     রেজা ঘটক: নির্মাতা ও কথাসাহিত্যিক।

আপনার মন্তব্য