অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি

 প্রকাশিত: ২০২০-০৩-০১ ০১:৫৭:২১

সিলেটটুডে ডেস্ক:

অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ হল শনিবার। এবারের মেলায় বই বিক্রির নতুন রেকর্ড হয়েছে। এবার ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে, যা গতবারের তুলনায় দুই কোটি টাকা বেশি। শুধু তাই নয়, নতুন বই প্রকাশের হিসাবেও এবার রেকর্ড হয়েছে। এবার নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ৪৯১৯টি, যা গতবারের তুলনায় ২৩৪টি বেশি। এরমধ্যে মানসম্পন্ন বই ৭৫১টি।

বই বিক্রির নতুন রেকর্ড ঘোষণা হয় শনিবার মেলার সমাপনী মঞ্চের আলোচনায়। সমাপনী আয়োজনে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জানান, এবারের মেলায় ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং শনিবারের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করে এ হিসাব দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ছিল ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ, ২০১৬ সালে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ও ২০১৫ সালে ২১ কোটি ৯৫ লাখ।

এবারের বই মেলার শেষ দিনে ছিল জনস্রোত। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। এদিন মেলার শুরু থেকেই লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকালের দিকে মেলা রূপ নেয় জনস্রোতে। ছিল হাতে হাতে বই। অনেকে শেষ সময়ে এসে তাদের পছন্দমতো বই কিনেছেন। অনেকে আবার শেষ দিনে মেলায় ছুটে এসেছেন শুধুমাত্র বইয়ের টানে।

মেলায় তিন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন : অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শনিবার তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। বাঙ্গালা গবেষণা থেকে প্রকাশ হয়েছে কাজী সুলতান জাহান রুবির ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ ‘সুদূরের পিয়াসি’, অধ্যাপক দিলরুবা জলিল শাহিনের মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘একাত্তরের কিশোরী সূর্যসারথি’। বই দুইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে একঝাঁক লেখকের আগমন ঘটে।

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাজী সুলতানা জাহান রুবি, অধ্যাপক দিলরুবা জলিল শাহিন, আফজালুল বাশার, কোয়েল তালুকদার, আফাজ উদ্দিন, ইকবাল সোহেল, সবুর আহমেদ, আনোয়ারা শিরিন, আকতারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আশিক আল জলিল, তারিক আল জলিল, হ্যাপী রহমান, মাকসুদা খানম, ইকবাল আজম মোর্শেদ সোহেল, ইফফাত আরা বেগম, শাফিন ও অরণি।

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বইমেলায় অনেক বই-ই প্রকাশ হয়। মুক্তিযুদ্ধ, অভিজ্ঞতা ও চিন্তার আলোকে বইয়ের লেখকরা তাদের লেখা উপহার দিয়েছেন। বইগুলো পাঠ করলে পাঠকের চিন্তার উদ্রেক ঘটবে। তারা বহুল পঠিত হবেন, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

মেলায় মোট বই ৪৯১৯টি : এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে চার হাজার ৯১৯টি। গতবারের তুলনায় ২৩৪টি বেশি। তবে এ হিসাব বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্রে জমা পড়া বইয়ের। এর বাইরেও মেলায় নতুন বই প্রকাশ হয়েছে। শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী দিনে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এ বছর সর্বোচ্চ বই প্রকাশিত হয়েছে কবিতার, এক হাজার ৫৮৫টি। এ ছাড়া গল্প ৬৪৪টি, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধ ২৭১টি, গবেষণা ১১২, ছড়া ১১১, শিশুতোষ ২০৩টি, জীবনী ১৪৯, রচনাবলি ৮, মুক্তিযুদ্ধ ১৫২, নাটক ৩৪, বিজ্ঞান ৮৩, ভ্রমণ ৮২, ইতিহাস ৯৬, রাজনীতি ১৩, স্বাস্থ্য ৩৬, রম্য ৪০, ধর্মীয় ২০, অনুবাদ ৫৭, অভিধান ১৪, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ৬৭, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ১৪৪ এবং বিবিধ বিষয়ে বই এসেছে ২৬৮টি।

চার পুরস্কার প্রদান : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। শনিবার গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’-এর সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।

২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ‘কথাপ্রকাশ’কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত রচিত ‘প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য’ গ্রন্থের জন্য ‘জার্নিম্যান বুকস’, মঈনুস সুলতান রচিত ‘জোহানেসবার্গের জার্নাল’ গ্রন্থের জন্য ‘প্রথমা’ প্রকাশনকে এবং রফিকুন নবী রচিত ‘স্মৃতির পথরেখা’ গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্সকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়।

২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘অভিযান’ (এক ইউনিট), ‘কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড’ (২-৪ ইউনিট) এবং ‘বাংলা প্রকাশ’কে (প্যাভেলিয়ন) শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়।

আপনার মন্তব্য