বহুমাত্রিক অনুষঙ্গে দেশজ আখ্যান উপস্থাপক মহাশ্বেতা দেবী

আদিবাসী অন্ত্যজ শ্রেণীর দলিত মানুষের একান্ত আপনজন ও বাংলা সাহিত্যের বহুমাত্রিক অনুষঙ্গে দেশজ আখ্যান উপস্থাপক মহাশ্বেতা দেবীর মহাপ্রয়াণে শ্রদ্ধাঞ্জলি

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৭-২৯ ২২:১৭:২৬

মনোজিৎকুমার দাস:

মহাশ্বেতা দেবী প্রতিবাদী জীবন ও সাহিত্যের এক স্বতন্ত্র ঘরানার লেখক। তাঁর লেখায় বহুমাত্রিক অনুষঙ্গে দেশজ আখ্যান উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি একজন  অনুসন্ধানী লেখক। তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ইতিহাসের উপেক্ষিত নায়কদেরকে তুলে এনেছেন তাঁর গল্প ও উপন্যাসে ।  এ প্রসঙ্গের জ্বলন্ত উদাহরণ তাঁর লেখা ‘অরণ্যের অধিকার’,  ‘চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’, ‘ হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাস।  ‘অরণ্যের অধিকার’ উপন্যাসের ভূমিকায় তিনি বলেছেন,‘ লেখক হিসাবে, সমকালীন সামাজিক মানুষ হিসাবে একজন বস্তুবাদী ঐতিহাসিকের সমস্ত দায় দায়িত্ব বহনে আমরা সর্বদাই অঙ্গীকারাবদ্ধ। দায়িত্ব অস্বীকারের অপরাধ সমাজ কখনোই ক্ষমা করে না। আমার বীরসা কেন্দ্রিক উপন্যাস সে অঙ্গীকারেরই ফলশ্রুতি।’
 
মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম  ১৪ জানুয়ারি ১৯২৬ সালে ঢাকায়। তাঁর পিতা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল যুগের প্রখ্যাত সাহিত্যিক। মা ধরিত্রী দেবী। তাঁর মা স্কুল কলেজে লেখাপড়া না করলেও কিন্তু তিনি ছিলেন লেখাপড়ার অনুরাগী। তাদের বাড়িতেই ছিল প্রচুর বই। মামাবাড়িতেও ছিল প্রচুর বই।
 
তাঁর কাকা ছিলেন ভারতের চলচ্চিত্রের এক ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী বিখ্যাত চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক।  শিল্প সাহিত্যের ঐতিহ্যমন্ডিত পরিবারে তিনি বড় হন। তাঁর লেখাপড়ার সূত্রপাত হয় ঢাকার ইডেন স্কুলের মন্টেসরিতে। পরবর্তীকালে তিনি চতুর্থ শ্রেণিতে মেদিনীপুরে। মাত্র দশ বছর বয়সে তাঁকে ভর্তি করা হয় শান্তিনিকেতনে। তখন রবীন্দ্রনাথ জীবিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে দুটো কবিতা উপহার দিয়েছিলেন। মহাশ্বেতা পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন।  পিতার বদলীর চাকুরীর কারণে তাঁকে শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় এসে বেলতলা গার্লস স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হয় । তিনি সেখান থেকে ম্যাট্রিক  এবং আশুতোষ কলেজে  থেকে ইংলিশে অনার্স পাশ করেন। পরে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে তিনি এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।

মহাশ্বেতা ১৯৩৯ সালে  অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালে খগেন্দ্রনাথ সেন সম্পাদিত ‘রং মশাল’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত ‘ ছেলেবেলা’ শিরোনামে তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯৪৩ সালে পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময় তিনি আশুতোষ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী থাকাকালে কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্রী সংগঠন ‘ গার্লস স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’ দুর্ভিক্ষকালীন ত্রাণ কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হয়েও পার্টির কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হন। প্রকৃতপক্ষে,সে সময় থেকেই তাঁর কর্মী সত্তার বিকাশ ঘটে।

১৯৪৭ সালে খ্যাতিমান নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের বিবাহিত জীবন ছিল দারিদ্র ক্লিষ্ট। ১৯৪৮ সালে তাঁর একমাত্র পুত্র নরারুণের জন্ম হয়। তাদের বিবাহিত জীবন পনেরো বছরের বেশি স্থায়ী না হলেও মহাশ্বেতা দেবী কিন্তু  বিজন ভট্টাচার্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এ কথার মাধ্যমে--  Bijan has shaped my talent and given it permanent form. He has made me into what I am today মহাশ্বেতা দেবী বারবার সরকারী চাকুরী পেলেও রাজনৈতিক সন্দেহের বশে তাঁকে বরখাস্ত  করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত পুনর্বহাল করলেও তিনি সরকারি চাকুরীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ পোষণ করে ১৯৬৫ সালে বিজয়গড় জ্যোতিষ রায় কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন।

তাঁর লেখালেখির সূত্রপাত বিয়ের পর থেকে। তিনি এক সময় সুমিত্রা দেবী ছদ্মনামে ‘সচিত্র ভারত পত্রিকায় ফিচার ও গল্প লিখতে শুরু করেন। তিনি ইতিহাস খ্যাত বীরাঙ্গনা ঝাঁসির রাণী উপর লেখালেখির আরম্ভ করেন। ‘ঝাঁসির রাণী ’লেখার মধ্য দিয়ে মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্যজীবনের সূত্রপাত প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেন ,‘ আমার পাগলামিও ছিল  ঝাঁসির রাণীর জীবনী লিখব বলে খুব জেদ হয়। খুব লেখাপড়া করি কষ্ট করে। তারপর একবার মনে হলো শুধু বই পড়লেই হবে না। তখন আমার ছেলে খুব ছোট, তাকে তাঁর বাবার কাছে রেখে আমি গিয়েছিলাম ঝাঁসি- গোয়ালিয়র। এই সব ঘুরে ঘুরে দেখি। এই ভাবেই বই লিখেছিলাম। -- আমার লেখক জীবনের সূচনা সেই বই দিয়ে, প্রথমেই ওই রকম একজন আশ্চর্য রমণীকে আমি নির্বাচন করেছিলাম।’ দেশ পত্রিকায় তা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। ‘ ঝাঁসির রাণী’ ১৯৫৬ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে তাঁকে আর থামতে হয়নি।  তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় বাংলাদেশের কালজয়ী ঔপন্যাসিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সঙ্গে আলাপকালে মহাশ্বেতা দেবী বলেন,‘ আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ঝাঁসির রাণী ১৯৫৬ সালে। বইটি লিখে আমি টাকা পেয়েছিলাম। সেই থেকে আমি প্রফেশনাল লেখাতে বিশ্বাসী।লেখা আমার প্রফেশন, আমার আর কোনো জীবিকা নেই ।’

তাঁর প্রথম পর্বের লেখালেখি প্রসঙ্গে বলতে হয় তিনি গল্প- উপন্যাসে  ইতিহাসের আলোকে রাজনীতি,অর্থনীতির সাথে সাথে লোকায়ত সংস্কৃতি ও লোকায়ত জীবন ব্যবস্থাকে উপস্থাপন করেছেন।  তিনি ‘নটী’( ১৯৫৬) উপন্যাসটি ঐতিহাসিক পটভূমিকায় রচনা করেন খুদাবক্স ও মোতির প্রেমের কাহিনী অবলম্বন করে। তিনি লোকায়ত নৃত্যগীতির আলোকে রচনা করেন ১৯৫৮ সালে ‘মধুরে মধুরে’ উপন্যাস। ১৯৫৯ সালে লেখা ‘প্রেমতারা’ উপন্যাসটি রচনা করেন সার্কাসের শিল্পীদের বিচিত্র জীবনের আলোকে।  এ পর্বে তিনি বিশেষ আঙ্গিকে ‘যমুনা কী তীর’ (১৯৫৮), ‘তিমির লগন ’(১৯৫৯) ‘রূপরেখা’( ১৯৬০),‘ বায়স্কোপের বাক্স ’ (১৯৬৪) ইত্যাদি উপন্যাস রচনা করেন।

মহাশ্বেতা দেবীর তাঁর লেখা উপন্যাসগুলো সম্বন্ধে বিশেষভাবে সচেতন ছিলেন। তাঁর প্রথম পর্বের দুটো উপন্যাস ‘ তিমির লগন’ ও  ‘ রূপরেখা’ এই দুটো উপন্যাস সম্পর্কে এক সময় তিনি ভাবেন যে এগুলোতে ব্যক্তির সুখ দু:খ যতটা তুলে ধরা হয়েছে তাতে সামাজিকতার অনুষঙ্গ তেমনটা তুলে ধরা হয়নি ভেবে তিনি বইদুটো পুনরায় আর ছাপাতে চান না। প্রথম প্রকাশের কুড়ি বছর পরেও ওই উপন্যাস দুটোর বিয়ষবস্তুর চিরকালীনতা বর্তমান আছে বলে মহাশ্বেতা দেবী মনে করেন।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে মহাশ্বেতা দেবী যে সব  উপন্যাস রচনা করেন সেগুলোকে তাঁর দ্বিতীয় পর্বের সাহিত্যকর্ম বলা যেতে পারে। এ পর্বে তিনি রাজনৈতিক চেতনায় ঋদ্ধ ইতিহাস নির্ভর কহিনীর আলোকে ব্যতিক্রমধর্মী বেশ কয়েকটি উপন্যাস রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে ‘ আঁধার মানিক’ (১৯৬৬), ‘কবি বন্দ্যঘটি গাঞির জীবন ও মৃত্যু’ (১৯৬৭) ইত্যাদি।

মহাশ্বেতা দেবীর সুদীর্ঘ সাহিত্য- জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে সাধারণ মানুষের সান্নিধ্যে বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষিজীবী,শ্রমিক,ও অরণ্যবাসী দলিত শ্রেণীর নারী, পুরুষদের সাথে।  তিনি তাঁর তৃতীয় পর্বের সাহিত্য কর্মে অন্ত্যজ শ্রেণীর দলিত মানুষের ইতিহাস, যাপিত জীবন ও দলিত হওয়ার কাহিনী তুলে ধরেছেন। আর এই কাহিনী তুলে ধরার জন্যে তিনি  অন্ত্যজ শ্রেণীর লোকেরা কেন দলিত তার ইতিহাস অনুসন্ধানে ব্রতী হন। সে অনুসন্ধান লব্ধ জ্ঞানের আলোকে তিনি তাঁর তৃতীয় পর্বের গল্প উপন্যাসে অন্ত্যজ শ্রেণীর আদিবাসীদের জীবনের নানা দিক উপস্থাপন করেছেন।

 তিনি এ পর্বের উপন্যাসে বৈশ্বিক, ভৌগলিক ও ভারতীয় রাজনীতির পরিবর্তনের ধারায় আদিবাসী জীবনের পরিবর্তনকে তুলে ধরেছেন। ), ‘হাজার চুরাশীর মা’(১৯৭৪), ‘ অরণ্যের অধিকার’(১৯৭৫) ‘চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’(১৯৮০), ‘বিরসা মুন্ডা ’ (১৯৮১), ‘অক্লান্ত কৌরব’(১৯৮২)‘সুরজ গাগরাই’ (১৯৮৩), ‘টেরোডাকাটিস, পূরণসহায়ও পিরথা ( ১৯৮৭), ‘ক্ষুধা’ (১৯৯২), কৈবর্ত খন্ড (১৯৯২),  ‘মার্ডারারের মা’ (১৯৯২) ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । এই উপন্যাসগুলো ছাড়াও আদিবাসীদের ওপর আরো কিছু উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখেছেন। তাঁর লেখা ছোটগল্পের সংকলনগুলোর মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ‘শালগিরার ডাকে’ (১৯৮২),‘ ইটের পরে ইট’ (১৯৮২), ‘হরিরাম মাহাতো’ (১৯৮২), ‘সিধু কানুর ডাকে’ (১৯৮৫) ইত্যাদি। এ সব গল্প উপন্যাসে তিনি সাম্রাজ্যবাদী  ও এদেশীয় সামন্ততান্ত্রিক শক্তির শোষণের চিত্রের সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে  প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছেন। এ কথা বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে ১৯৮০ সালে বাবা মনীশ ঘটক মারা যাবার পর মহাশ্বেতা দেবী তাঁর বাবা’র বিকল্পধারার লিটল ম্যাগাজিন ‘বর্তিকা’ সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তিনি  ‘বর্তিকা’ লিটল ম্যাগাজিনের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে সক্ষম  হন।

পশ্চিম বাংলার উপজাতি জনগোষ্ঠী এবং নারীদের ওপরে কাজের জন্য মহাশ্বেতা দেবী এক সময় খ্যাতিলাভ করেন ‘নৈর্ঋতে মেঘ’, ‘অগ্নিগর্ভ, ‘হাজার চুরাশীর মা’, ‘নীলছবি, ‘বন্দোবস্তী’,’ ‘সাম্প্রতিক’,‘ প্রতি চুয়ান্ন মিনিট,’‘ মুখ’, ‘কৃষ্ণা দ্বাদশী,’ ৬ই ডিসেম্বরের পর’,‘ বেনে বৌ,’ ‘মিনুর জন্য’ ‘স্তন্যদায়িনী,’ ‘ আঁধার মানিক’ ,‘ যাবজ্জীবন’, ‘শিকার  পর্ব ,’ ‘ অগ্নিগর্ভ,’‘ তিতুমীর,’ ‘ঊনত্রিশ নম্বর ধারার আসামী’, ‘প্রস্থানপর্ব, ‘ ইত্যাদিতে মহাশ্বেতা দেবী বিশেষ ভাবে উপজাতি জনগোষ্ঠী ও মেয়েদেরকে নির্যাতন ও শোষণ বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন ।

মহাশ্বেতা দেবীর মতে তার লেখা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’ ও ‘বিবেক বিদায় পালা’ । প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় ‘চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’ বাংলাদেশের খ্যাতনামা পত্রিকা বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। লালমাটির দেশ ম্যাকলাঞ্জিগঞ্জ জনজীবনের পটভূমিকায় তিনি এই বিখ্যাত উপন্যাসটি লেখেন। ম্যাকলিঞ্জি নামে একজন এ্যালো ইন্ডিয়ান ভদ্রলোকর ওখানে গিয়ে প্রথম বসবাস শুরু করেন। জায়গাটা বিহারের পালামৌয়ে। ওখানকার নদীর পাশে ছোট একটা রেলস্টেশন। প্রচুর এ্যালোইন্ডিয়ানের বসবাস ওখানে, তারা ভারতীয় রেলে কাজ করত। রেলের চাকুরী থেকে রিটায়ার করার পর তারা ওখানেই কলোনি গড়ে তোলে। কোন ফান্ডেড এজেন্সিতে কাজ না করেও ওই অঞ্চলটা ছিল মহাশ্বেতা দেবীর কর্মক্ষেত্র। ওই অঞ্চলে বাঙালিদের যোগাযোগ ছিল না।  ওই নির্জন জায়গার মাটি , নদী , জঙ্গল- গাছপালা ও কলোনির বাসিন্দাদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা দৃঢ় হয় এবং কলোনির বাসিন্দাদের সঙ্গে  বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি ‘চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’ লেখার আগে প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক বুদ্ধদেব গুহ ওই অঞ্চলের ওপর কিছু লেখা লিখেছিলেন।                                                                                                                                   

মহাশ্বেতা দেবী কিন্তু ‘চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’ উপন্যাসে ওখানকার বাসিন্দাদের জীবন সংগ্রামের কথা বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বিস্তারিত আঙ্গিকে তুলে ধরেন। তাঁর লেখা ‘চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’ উপন্যাসটি পড়ে অভিভূত হতে হয়। এই উপন্যাস সম্বন্ধে মহাশ্বেতা দেবী নিজেই বলেন,“ এইখান পাঠকদের খুব প্রিয় বই। আর চোট্টিমুন্ডা সম্পর্কে বলতে তো ভাল খুব ভাল লাগে এই জন্য, যে আমার লেখার এনার্জি, দম সব কিছুই খুব বেশি ছিল।

বাংলাভাষার ব্যতিক্রমধর্মী লেখক মহাশ্বেতা দেবী ‘চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’ উপন্যাসটি লিখতে কীভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন সে প্রসঙ্গে বলেন,‘ চোট্টিমুন্ডা খুব গুরুত্বপূর্ণ বই। আর আশ্চর্য হচ্ছে চোট্টি লোকটিকে আমি দেখেছিলাম। তার নাম চোট্টি নয়, তো ওই রকম একজন আশ্চর্য মুন্ডাকে দেখেছিলাম।’   এই উপন্যাসের নায়ক যার আদলে চিত্রিত করেছেন তাকে কোথায় দেখেছিলেন সে প্রসঙ্গে তিনি আরো  বলেন,‘ আমি যেখানটায় দেখেছিলাম সেটা আজকের ঝাড়খণ্ড সেই অঞ্চলেই একটা জায়গায় গ্রামীণ মেলায়। তীর ছোঁড়ার মেলা হয়। সে বসে আছে, দেখছে, কিছু বলছে না। তারপর দেখা গেল যখন দরকার সে কী নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করল। আর আমি তো ওদের মাঝে মিশেছি। কাজেই এসব জিনিস খুব ভেতর থেকে দেখেছি। দুই বাংলার আদিবাসী মানুষগুলো অস্টিক-মঙ্গোলদের বংশধর। তারা চিরকালই নিগৃহীত হয়েছে অস্পৃশ্য হিসাবে। তদের অধিকাংশই আজও এখনো  মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি। এদের মধ্যে যারা বনে জঙ্গলে পালিয়ে যায় তারাই হচ্ছে সাঁওতাল, গারো, খাসিয়া ইত্যাদি আদিবাসী। ’                                                                                                         

মহাশ্বেতা দেবী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অলিখিত ইতিহাস তাঁর সাহিত্যে তুলে এনেছেন । কিন্তু সাহিত্যিক হিসাবে মহাশ্বেতা দেবী তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাঝে প্রকৃত অর্থে ইতিহাসের লেখক হয়ে উঠেন। তিনি স্বাধীন ভারতে বসবাস করে পরাধীন ভারতের ইতিহাস লিখেছেন বীরসার উলগুলনের তাৎপর্যময় ব্যাখ্যা করে। তিনি দেখতে পান স্বাধীন ভারতেও মুন্ডারীরা ভূমিহীন পড়তে দেখেন, তাই তিনি ইতিহাসের মাঝ দিয়ে তাদের দিয়ে জাগাতে চান।  

তিনি বীরসার কথা সবাইকে জানাতে চান।  অরণ্যের অধিবাসীদের বেঁচে থাকার লড়াইকে তিনি ‘অরণ্যের অধিকার’   উপন্যাসে তুলে ধরেছেন।  তিনি ইতিহাসের আলোকে অরণ্যের আদিবাসী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন সংগ্রামের ইতিবৃত্ত বর্তমান প্রজন্মের মানুষদেরকে শুনিয়েছেন গভীর মমতায়। মহাশ্বেতা দেবী ইতিহাসের আদিবাসী বীরকে সামনে নিয়ে আসেন। তিনি  মুন্ডা জনগোষ্ঠী থেকে তাঁর উপন্যাসের নায়ক বীরসাকে সৃষ্টি করেন এবং তাকে সমগ্র ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসের বীরের কাতারে এনে তাকে দাঁড় করিয়ে শ্রেণি সংগ্রামের বীজকে ছড়িয়ে দেন। মহাশ্বেতা দেবী  শুধুমাত্র বীরের কাহিনী বীরসা চরিত্রের মাঝে সীমাবদ্ধ করে রাখেননি। আদিবাসী জীবন কেন্দ্রিক তাঁর  উপন্যাসগুলোতে তিনি আরো আরো চরিত্র এঁকেছেন। উদাহরণ স্বরূপ‘ চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর’ এর চোট্টি একজন তীরন্দাজ , সে বীর। ‘সুরজ গাগরাই’ এর সুরজ চরিত্রটিতেও আমরা বীরের উপস্থিতি দেখতে পাই।  প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে মহাশ্বেতা দেবী বীরসা চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন ইতিহাসের পটভূমিকায়, ঠিক তেমনি ভাবে ‘সুরজ গাগরাই’ উপন্যাসের চরিত্র বিনির্মাণের ক্ষেত্রও তিনি ইতিহাসের সত্যি ঘটনাকে আশ্রয় করে সৃষ্টি করেছেন। মহাশ্বেতা দেবী নিজেই বলেছেন,‘সুরজ গাগরাই অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। সুবর্ণরেখা নদী প্রকল্প সত্যি, ব্যাপক আদিবাসী মালিকানা জমি অধিগ্রহণ সত্যি। ওই বড়ো প্রকল্পের অঙ্গ খড়কাই নদী বাঁধ প্রকল্প। খড়কাই বাঁধ সংঘর্ষ সত্যি, তা ১৯৮২/১৯৮৩ তে ঘটে। ওই সংঘর্ষের নেতা ছিলেন, চাইবাসার কাছাকাছি ইলিয়াড নিবাসী গঙ্গারাম কালুরিয়া। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন। শর্ট সার্ভিস কমিশন এর পর ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন।তাঁর কথা থেকে সহজেই বুঝতে পারা যায়, ১৯৮২ -৮৩ তে ঘটে যাওয়া সুবর্ণরেখা বাঁধ প্রকল্পবিরোধী নেতা গঙ্গারাম কালুরিয়া মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাসের নায়ক হয়ে যান যান সুরজ গাগরাই নামে।

মহাশ্বেতা দেবী শুধু বীরসা মুন্ডা আর সুরজ গাগরাই চরিত্রই নয়, তাঁর ক্ষুধা উপন্যাসটির চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে ঘাটে যাওয়া সত্যি ঘটনা থেকে চরিত্র নিতে দেখা যায়। তিনি ক্ষুধা উপন্যাস লেখা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ আশির দশকে বিহারের তরুণ সাংবাদিকরা ‘মানাতুর মানুষ খেকো ’ লিখে পাঠক ও প্রশাসনকে কাঁপিয়ে দেয়। মানাতুর জমিদার( নামটা লিখব না) মৌয়ার--- সিং তাঁর নিজস্ব চিড়িয়াখানার খাঁচার বন্দি চিতাবাঘকে তাঁর বনডেড লেবার বা ভূমিদাসদের মাংস মাঝে মাঝে খাওয়াতেন।------ ঘটনা সত্যি।  একটি নতুন মা ও তার শিশুকে বাঘের খাঁচায় ছুড়ে ফেলার ঘটনা যে সত্যি তা মালিকেরা বা ভূমিদাসরাই বলে ।... ডালটনগঞ্জে যে সাংবাদিকের ঘরে থাকতাম সে ঘর, ওই শিবাজী ময়দান, গান্ধী হলো, পালামৌয়ের পথঘাট, সেদিনের তরণ বুদ্ধিজীবী সহ সাথিরা জানে ‘ক্ষুধা’র প্রতিটি  অক্ষর সত্যি।’

মহাশ্বেতা দেবী  তাঁর এ উপন্যাসের কৌয়ার, তেতরি ভূঁইন ও কসিলা চরিত্রগুলোকে বাস্তব ঘটনার আলোকে চিত্রায়িত করেছেন।  ঘটে যাওয়া ঘটনাই এক সময় ইতিহাস হয়ে যায়, আর  সেই ইতিহাস থেকে সংগৃহীত চরিত্রগুলো নিয়ে মহাশ্বেতার রচিত উপন্যাস ও আর এক ইতিহাস ।

মহাশ্বেতা দেবী তাঁর দীর্ঘ সাহিত্যিক জীবনের  সাহিত্য ও জীবনকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তাঁর সাহিত্যে বাস্তব জীবনের শৈলী স্পষ্ট হয়ে ওঠে শিল্পসম্মতভাবে। সে আখ্যান অতীতেরও হতে পারে , আবার  বর্তমান সময়ের হতে পারে। তিনি লেখক হিসেবে প্রতিবাদী, আবার  ব্যক্তি জীবনেও তিনি প্রতিবাদী।  

তিনি জঙ্গলের অভিজ্ঞতা নিয়ে রচনা করেন ‘ অরণ্যের অধিকার’ এর মতো  উপন্যাস। বিশ্ব মুন্ডার কথা  এই উপন্যাসে আছে, যদিও ওটা বিশ্ব মুন্ডার এলাকা নয়। অরণ্যজীবীদের মধ্যে বিশ্বর জনপ্রিয়তা ছিল। তাঁর এ উপন্যাস লেখার পেছনে  জঙ্গলে অরণ্যজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল তার উদ্দেশ্য। সরকার কাগজে কলমে তাদেরকে অরণ্যের জমির অধিকার দান করলেও বাস্তবে তাদের জমির উপর অধিকার নেই , তারই বাস্তব চিত্র তিনি এই উপন্যাসে উপস্থাপন করেছেন। তিনি মহারাষ্ট্র, গুজরাট প্রদেশের আদিবাসীদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন । ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট ১৮৭১ সালে যে সব আদিবাসী ছিল কিন্তু চাষাবাদ করত না সেই সমস্ত লোকদের ‘ জন্ম থেকেই অপরাধী’, বর্ণ ক্রিমিনাল’ বলে জানিয়ে দেয়। ফলে তাদের বশংধররা যুগ যুগ ধরে নিগৃহীত হতে থাকে এবং এক সময় অরণ্যের অধিকার হাতে থাকে লেখিকা তাদের বঞ্চনার কথা সরেজমিনে জ্ঞাত হয়ে রচনা করেন ‘ অরণ্যের অধিকার’ এর মতো  উপন্যাস।  

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশক আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে  তিনি  উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লেখেন। ১৯৯২ সালে মহাশ্বেতা দেবী জেনেভা মহিলা সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে তিনি ভারতবর্ষের কৃষক সমাজকে দলিত আদিবাসী ও উপজাতিদের মতোই অসহায় বলে উপস্থাপন করেন।

মহাশ্বেতা দেবী  বাংলা উপন্যাসে  ষাটের দশকের শেষ দিকের পশ্চিম বাংলার রাজনীতির অন্ধকার দিকগুলোকে তাঁর নিঃস্ব: ঘরানায় উপস্থাপন করেছেন। ‘ হাজার চুরাশির মা’ তিনি লেখেন তখনকার নকশাল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। এই উপন্যাসে নকশাল আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছেলেরা পথেঘাটে বীভৎসভাবে নিহত হবার কাহিনী তিনি বাস্তবতা নিরিখে তুলে ধরেছেন। মহাশ্বেতা দেবী তাঁর ‘ হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাস প্রসঙ্গে বলেছেন,‘ আমি লিখেছি একটা উচ্চবিত্ত ঘরেরই নারীর কথা; ‘ হাজার চুরাশির মা’ লেখার পর কত মা আমাকে বলেছেন যে, এ তো আমার ছেলের গল্প। আপনি লিখলেন কী করে । তার মানে এই অভিজ্ঞতা অনেকেরই, তখন কিন্তু কলকাতাতেই বেশি দেখেছি, পশ্চিমবাংলায় অন্যত্রও হয়েছে। কীভাবে ছেলেরা নিহত হয়েছে। এবং বহু ছেলের নাম, ছেলে না হয়ে নম্ব হয়ে গিয়েছিল। এই এক, দুই, তিন, চার করে আসছে যখন এখানে পৌঁছাবে তখন, আপনার ছেলের নাম হয়ত এখানে আছে। এটা আমি শুনেছিলাম।’ তিনি এই উপন্যাসের সুজাতার প্রসঙ্গে বলেছেন,‘ সুজাতা নামটা এরকম যে কোন উচ্চবিত্ত ঘরের নারী, মানে মায়ের কথা। ’ ‘ হাজার চুরাশির মা’ মহাশ্বেতা দেবীর ক্লাসিক ধর্মী রাজনৈতিক উপন্যাস , যা সবচেয়ে পঠিত ও নন্দিত উপন্যাস। সত্যি কথা বলতে হয় , তাঁর সাহিত্য কর্মে মোড় পরিবর্তনের আভাস পরিলক্ষিত হয়।। এই পরিবর্তনের আভাস আমরা দেখতে পাই ‘ ঘরে ফেরা (১৯৭৯) উপন্যাসে, যাতে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন- সাহিত্য ও দর্শনের নতুন দিক দর্শনের প্রকাশ ঘটান। তিনি তাঁর পরবর্তী ছোটগল্পগুলোতেও এই ভাবধারার প্রকাশ ঘটান।

তাঁর লেখা ছোট্ট উপন্যাস ‘ বিবেক বিদায় পালা’ নি:সন্দেহে অসাধারণ। এই উপন্যাসটি তিনি লেখেন শ্রীচৈতন্যের সময়ের পটভূমিকায়। সে সময় বহু সামাজিক প্রশ্ন দেখা দেয়। অনেক লেখক ইউরোপীয় নবজাগরণের কথা লিখলেও শ্রীচৈতন্যের ধর্মীয় অনুষঙ্গের মধ্যে মানবিকতার জয়জয়কার ছিল সে কথা খুব কম লেখকই তুলে ধরেছিলেন। তাই তিনি ‘ বিবেক বিদায় পালা ’ উপন্যাসে শ্রীচৈতন্যের সবার উপরে মানবিক মূল্যবোধের চিত্র অঙ্কন করেন।

মহাশ্বেতা দেবী আদিবাসী সমাজের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে তাদের সম্পর্কে অনেক লিখেছেন। তিনি তাঁর লেখা গল্প -- উপন্যাসে আদিবাসী সমাজের রীতিনীতির বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করেছেন। তাঁদের সমাজের সাথে আমাদের সমাজের বিশাল পার্থক্যের কথা উঠে এসেছে তাঁর গল্পে। তাঁর গল্প--উপন্যাসে আদিবাসী সমাজে নারীর অধিকারের  চিত্রে আমরা দেখতে পাই। আদিবাসী সমাজে সন্তান জন্মালে ছেলে জন্মাল না মেয়ে তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। বাবার জমিজমা , গাছপালার উপর ছেলে ও মেয়ের সমান অধিকার। তাদের সমাজে যৌতুক প্রথা নেই, বিয়ে বিচ্ছেদ অনুমোদিত। পুনর্বিবাহ করতে পারে। একটা ছেলে ও একটা মেয়ে নিজেদের পছন্দ মত বিয়ে করতে পারে। এটার স্বীকৃতি সমাজ দেয়। তারা স্বাধীন ভাবে জীবনযাপন করতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে শিক্ষিতের হার কম। তবে তারা তাদের ভাষাতে পারদর্শী। তারা নিজস্ব ভাষা নিয়ে চর্চা করে।

 মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্যকর্ম ইংরেজি, জার্মান, জাপানি, ফরাসি এবং ইতালীয় ভাষার অনূদিত হয়েছে।  তাছাড়া তাঁর অনেক সাহিত্যকর্ম ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার মধ্যে হিন্দি, অসমীয়া, তেলেগু, গুজরাটি, মারাঠি, মালয়ালম, পাঞ্জাবী, ওড়িয়া এবং আদিবাসী  ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
 
মহাশ্বেতা দেবীর  তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্যে নানা পুরস্কারে  ভূষিত হন। তিনি ১৯৭৯ সালে অরণ্যের অধিকার উপন্যাসের জন্যে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। তিনি  লাভ করেন ভুবনমোহিনী দেবী পদক, নিখিল ভারত ভারত বঙ্গ সাহিত্য স্বর্ণপদক এবং ভারক সরকারের পদ্মশ্রী পদক পান। এছাড়া জগত্তরিণী পুরস্কার, বিভূতিভূষণ স্মৃতি সংসদ পুরস্কার লাভ করে।  জ্ঞানপীঠ পুরস্কার,কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত লীলা পুরস্কারও লাভ করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে ম্যাগসাসাই পুরস্কার পান আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করার জন্যে। ১৯৯৮ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে। ২০০১ সালে ভারতীয় ভাষা পরিষদ সম্মাননা লাভ করেন।

মহাশ্বেতা দেবী আমাদের তথাকথিত ভদ্রসমাজের গণ্ডি পেরিয়ে বর্ণ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে  নিপীড়িত দুঃখী সংগ্রামী মানুষকে আপনজন ভেবে তাদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করে তাদের কথাই প্রকাশ করেছেন তাঁর লেখা গল্প উপন্যাসে। তিনি আদিবাসী অন্ত্যজ শ্রেণীর দলিত মানুষের সঙ্গে অবস্থান করে তাদের জীবন সংগ্রামের ইতিবৃত্ত বর্তমান প্রজন্মের মানুষদেরকে শুনিয়েছেন গভীর মমতায়।৥

আপনার মন্তব্য