ফারিহা নোশীন বর্ণী’র চারটি কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৫-০৭-১৭ ০২:০৬:৩৪

 আপডেট: ২০১৫-০৭-১৭ ০২:১৩:৫২

বৃথা পাড়ি দিয়েছি আমি ভীষণ পাথুরে পথ, চুড়ান্ত বোকা হৃদয়ে- এক ফালি; শুধু এক ফালি সাদা আলোর ঠিকানা না প:

দূরের দোসর
হয়তো আমাদের মধ্যকার যাবতীয় মিল শুধুই কাকতালীয়;
যেমন হলদে পাখির সাথেও থাকে কলাবতীর সাদৃশ্য,
গোল পূর্ণিমার চাঁদকেও যেমন রূপার থালা বলে হয় ভ্রম
তেমনভাবে ভিখারীরও যদি একদিন অকস্মাৎ
পেতে ইচ্ছে করে বিলাসী, পেলব কোনো গোলাপের ঘ্রাণ?
যতোই থাকুক সে ফুটপাতে, হোক না যতোই নিঃস্ব!

সমস্ত আকর্ষণ উপেক্ষা করতে শিখেছি দেখে শালিকজোড়ার চোখ;
যদিও ওদের জীবনের নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই,
এমনকি ছিলও না পৃথিবীর ইতিহাসে কোনোদিন-
তাতে ওদের মনে জন্মায় নি গভীর আক্ষেপ, ক্ষোভ কিংবা অনুযোগ।
সবুজের মধ্যেই যারা নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে জানে
আস্ত একখানা পরিপূর্ণ এবং আশাব্যঞ্জক জীবনকাল,
তাদের দিকে মুহূর্তের জন্যও চায় না বিলাসী মানবসন্তান-
ভালোবাসাহীন হৃদয়ের নিরস যন্ত্রে বুনে চলে অর্থকড়ির জাল।

প্লুটোনামা
প্লুটোকে নিয়ে রাশি রাশি তথ্য আমার মস্তিস্কে ধারন করতে চাই না।
এ গ্রহের কোলে যখন অনাবশ্যক নীলচে মনখারাপ আর হাহাকার,
বাধাবিপত্তির বেড়াজালে যখন ক্ষতবিক্ষত আমার যৌক্তিক মনবিহার,
তখন জীবনক্লান্তি ধুয়ে নিতে আমার শুধু এটাই জানা দরকার-
প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতা আর উন্নতির টানাপোড়েনে যেসব প্রাণ এখানে নিতান্ত অসহায়,
আলোকবর্ষ দূরের ওই ক্ষুদ্র গ্রহান্তরে কোনোভাবে তাদের মিলতে পারে কি পরম আশ্রয়?
পৃথিবীর ধূসর-হয়ে-আসা ঘাসে পা ফেলে নীরব বেদনা বয়ে বেড়ানো মানব
অচিরেই প্লুটোর অব্যবহৃত মৃত্তিকায় লাভ করবে কি তার চিরআকাঙ্ক্ষিত মুক্তি?
অন্যসব চমকপ্রদ তথ্যাবলী আমার কাছে আজ সত্যিই অপ্রাসঙ্গিক;
হাজারখানা না হোক, এই একটি প্রশ্নের উত্তরই আমায় দিক বিজ্ঞানজ্যোতি!

শুভ্রতার সন্ধানে
সহস্র দিবস কাটিয়ে দিয়েছি না-ফোটা চোখে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নয়ন যেদিন দৃষ্টিপ্রাপ্ত হলো,
তন্নতন্ন করে কী যেন ওরা ভীষণ খুঁজতে চাইলো-
তখনও তো জানি নি, কতোটা কদর্য রূপ লুকিয়ে আছে
আপাতসুন্দর এই পৃথিবীরই ভিন্ন গোপনতর মুখে।

হলুদ পেলাম, নীলও সাজানো ছিলো গ্রহসীমানার একপাশে,
অথচ কালান্তর পেরোতেই হাজির বিদ্যুচ্চমকের মতো অনুভূতি!
বর্ণালীর সব রঙ জুড়েও কেন প্রকৃত শুভ্রতার নামগন্ধ নেই?
এমন কালিমাময় গ্রহেই কি জন্মেছিলো মানবিক যতো আকুতি?

বিচারদৃষ্টি অর্জনের ঐ লালকালিতে দাগানো দিনটি থেকে
একনিষ্ঠ অনুসন্ধান চালিয়ে গিয়েছি মৌনব্রতী নিঠুর বুকে,
বৃথা পাড়ি দিয়েছি আমি ভীষণ পাথুরে পথ, চুড়ান্ত বোকা হৃদয়ে-
এক ফালি; শুধু এক ফালি সাদা আলোর ঠিকানা না পাবার শোকে!

যাযাবর পঙক্তি
একগুচ্ছ প্রেমের কবিতার ফসিল
তৃতীয় নয়নের স্থানে খুঁজে পাই,
লেখা হয়েছিলো নিবিড় সুখের আতিশয্যে
কিংবা অসহ্য গহীন কোনো বেদনায়।

কাঁটাচামচের মতো বিঁধে থাকে
সে কবিতা আমার হৃদয়ে-
বুলবুলির শিষেও শুনি
চিন্তিত মায়ের সাবধানবাণী,
বিস্মিত চোখের ছন্দ নাচে
দেয়ালজোড়া পিঁপড়ের প্রণয়ে।

যাযাবর সেই পঙক্তিমালায়
আমি সাজাই নতুন ফ্রেম,
সেপিয়া পাণ্ডুলিপির গায়ে
ইচ্ছেমতো কাটি কলমের আঁচড়;
এই চরণেই লুকিয়ে রয়েছে
আমার একলা থাকার প্রেম,
ওই-ই শুধু চেনে বিপন্ন পাঁজর।

আপনার মন্তব্য