গ্রন্থমেলায় ‘যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের বিচার: রায়ের পূর্ণ বিবরণ’

 প্রকাশিত: ২০১৬-০২-২৩ ১১:৫৮:২৫

ফরিদ আহমেদ:

সাকা চৌধুরীর রায়ের পর এবার বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে মুজাহিদের রায়ের পূর্ণ বিবরণ। প্রকাশ করেছে পাললিক সৌরভ। পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার ১২৫ নম্বর স্টলে।

যে দেশটাতে জন্ম হয়েছে আমার, বড় হয়েছি আমি, মায়ের মতো যে দেশ আমাকে গভীর ভালবাসা দিয়ে পুষ্ট করেছে, তার দায় কোনো দিন শোধ করতে পারবো না জানি। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি যতটুকু সাধ্যে কুলায়।

২.
একাত্তর সালে ঢাকা শহরে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করার জন্য তরুণদের একটা দল ছিলো। এর নাম ক্র্যাক প্লাটুন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে অভিজাত গেরিলা গ্রুপ এটি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ক্র্যাক প্লাটুন ঢাকা শহরে পাকিস্তান আর্মি নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলো। হিট এন্ড রান পদ্ধতিতে আক্রমণ চালাতো এরা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য মূর্তিমান ত্রাসে পরিণত হয়েছিলো এরা। স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের কাছে পরিণত হয়েছিলো কিংবদন্তীতে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঢাকা শহরে বিরাশিটা আক্রমণ পরিচালনা করেছিলো এরা। এলিফ্যান্ট রোড, যাত্রাবাড়ী, আশুগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, উলন পাওয়ার স্টেশন উড়িয়ে দেয় তারা। ঢাকা শহরের বেশ কিছু পেট্রোল পাম্পও বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সারা বিশ্বকে ঝাঁকুনি দিয়ে জানিয়ে দেয় যে তথাকথিত পূর্ব পাকিস্তানে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে না। ফার্মগেটের চেক পয়েন্টেও স্টেনগান এবং গ্রেনেড নিয়ে অকুতোভয় ক্র্যাক প্লাটুন সদস্যরা মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান বাহিনীর। গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো পাকিস্তান আর্মির অহমিকাকে। ক্র্যাক প্লাটুনের দুঃসাহসিকতা দেখে বাঙালিরা আশায় বুক বেঁধেছিল। এরকম দুরন্ত বিচ্ছু বাহিনী যাদের আছে, তাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তিকে আটকাবে কোন শক্ত?

একাত্তর সালের ২৯শে আগস্ট রাতে এক যোগে অভিযান চালিয়ে এই বাহিনীর বেশ কিছু গেরিলা যোদ্ধাকে ঢাকা শহরের নানা জায়গা থেকে গ্রেফতার করে ফেলে পাকিস্তান আর্মি। এদের মধ্যে ছিলো বদি, রুমি, আজাদ, জুয়েল, সামাদ, মাসুদ সাদেকসহ ক্র্যাক প্লাটুনের অনেক গেরিলা।

ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন জহিরুদ্দিন জালাল। তাঁকে বিচ্ছু জালাল বলে ডাকা হতো। নিউ ইস্কাটনের এক বাসায় আর্মি এবং রাজাকারদের মিটিং হবার কথা ছিলো। ৩০শে আগস্ট তাঁর কমান্ডার সেই বাসাতে আক্রমণ করার  জন্য রেকি করতে পাঠানো। দুর্ভাগ্য বিচ্ছু জালালের। আর্মির হাতে ধরা পড়ে যান তিনি। তাঁকে নিয়ে আসা হয় নাখালপাড়ার এক বাড়িতে নির্যাতনের উদ্দেশ্যে। এখানে এসে তিনি আগের  রাতে গ্রেফতার হওয়া ক্র্যাক প্লাটুনের অনেক সদস্যকে দেখতে পান। অমানবিক নির্যাতন করে আটকে রাখা হয়েছে তাঁদের। বিচ্ছু জালালের ভাষ্য থেকেই দেখি কী হয়েছিল সেখানে,

“আর্মিরা জিপে চড়ে বাংলা মোটর মোড় দিয়ে ডানে সোজা তেজগাঁ এম,পি, হোস্টেল গলি দিয়ে কিছুটা সামনে গিয়ে হাতের ডানে একটি গলির ভিতর দেড় তলা একটি দালানে আমাকে ঢুকাল। পরে জেনেছি এই বাড়ীটি পশ্চিম নাখাল পাড়ার ১১২ নম্বর বাড়ী ছিল। সন্ধ্যা ৭টায় একটি বাসের শব্দ কানে ভেসে এলো। আর্মির জুতার খট খট শব্দে আমার রুমের সামনে কিছু আর্মি এলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার বন্দী রুমে আট দশ জন লোককে কুঁজো বাঁকা অবস্থায় ঢুকাল। তাদের দিকে চোখ ফেরাতেই আমি চমকে উঠলাম। আমি বোবার মত হয়ে গেলাম। দেখলাম ঐ ৮/১০ জন লোক সবাই মুক্তিযোদ্ধা, যাদের সাথে আমি মতিনগর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম।

তাদের মধ্যে বদি, জুয়েল, আজাদ, রুমি ভাইকে দেখতে পেলাম। পাশে আরেক জন ছিল যার নাম আলতাফ মাহমুদ যিনি একুশে ফেব্রুয়ারির গানের সুরকার। সবার চেহারা ছিল বীভৎস, ক্ষত-বিক্ষত। বদি ভাইকে দেখলাম তার দুহাতের আঙুল কেটে দিয়েছে এবং তার পুরো চেহারায় আঘাতের চিহ্ন ফুলে উঠেছে। কোন ভাবেই সে মাজা সোজা করতে পারছিল না। আজাদ ভাইয়েরও আঙুল কেটে নিয়েছিল এবং তার বাম কানে তখনও  রক্ত জমে ছিল। দেখলাম বদি ভাইয়ের ডান চোখ কমলার মত ফুলে উঠেছে, চোখের মনি দেখা যাচ্ছিল না, তার বাম চোখ ক্ষত-বিক্ষত ফুলানো ছিল, তার আঙুলও কেটে ডান হাত বাঁকা করে দিয়েছিল।

আলতাফ মাহমুদের ঠোট দুটো পুরো শশার মত ফুলানো ছিল। তারও ডান হাত বাঁকা করে দিয়েছিল। জুয়েল ভাইয়ের কাছে কথা বলার সময় দেখলাম তার দুহাতের আঙুল নেই। তারও বাম দিকের কানের নিচে রক্তের জমাট ছিল।“

এখানেই বিচ্ছু জালাল এই সব অত্যাচারের নেপথ্য ব্যক্তিদের দেখতে পান। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যদের এরকম পৈশাচিক নির্যাতন, এমন ছিন্ন-ভিন্ন অবস্থার পিছনে দুইজন ব্যক্তি ছিলো। এরা জন্মসূত্রে বাঙালি, কিন্তু মানসিকতায় পাকিস্তানি। আলবদর বাহিনী গঠন করে বাঙালিদের স্বাধীনতার স্পৃহাকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল তারা। এরা হচ্ছে মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। বিচ্ছু জালাল এ বিষয়ে আরো বলেন:

“ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের সাথে মতিউর রহমান নিজামী ও মুজাহিদ সহ ৩/৪ জন লোক অস্ত্র হাতে আমার রুমের সামনে দিয়ে ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের রুমে গেল। জুয়েল ভাই মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে দেখিয়ে বললো এরাই এবং আরো কয়েকজন তাদেরকে এইভাবে টর্চার করেছে। আরো বললো যে কোন সময় মুজাহিদ, নিজামী তাদের মেরে ফেলতে পারে। ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের কাছে তখন দুজন সৈনিক এসে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিল। ক্যাপ্টেন কাইয়ুম আমাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য হাবিলদার গুলকে পাঠাল। হাবিলদার গুল আমাকে নিয়ে ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের সামনে দাড় করাতেই সাদা কাগজে নাম লিখে দস্তখত নিলো এবং মাদারচোৎ বাইনচোৎ বলে  গালি দিয়ে সত্য কথা বলার জন্য চাপ দিতে থাকল। তখন নিজামী তার কোমরে রাখা ফাইভ স্টার পিস্তল হাতে নিয়ে মাদারচোৎ গালি দিয়ে জিজ্ঞাসা করল ভিতরে থাকা বন্দীদের সাথে কি কথা বলেছিস, তুই কিভাবে ওদের জিনিস, কতদিন যাবৎ ওদের সাথে পরিচয় জানতে চেয়ে পিস্তল দিয়ে আমার দুহাতের কব্জির উপর জোরে একের পর এক আঘাত করতে থাকল। পিস্তলের আঘাতে আমার দুহাতের আঙ্গুল চামড়া ছিঁড়ে রক্ত বের হতে থাকল। তারপরও আমি মুখ না খুল্লে আমাকে হুমকি দিল বাসা থেকে আমার মাকে, বোনকে তুলে আনবে। তখনই পাশে দাড়িয়ে থাকা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ওই সময় মইনউদ্দিন নামে একজনকে ডাকলে অস্ত্র হাতে সে ঘরে ঢুকল। মুজাহিদ তখন মইন উদ্দিনের হাত থেকে স্টেনগান টেনে নিয়ে আমাকে মাদারচোৎ গালি দিয়ে আমার মাথার পিছনে বাট দিয়ে আঘাত করল। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে মাথা রক্ত ঝরছিল। তারপর প্রচণ্ড জোরে লাথি মেরে আমাকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে মারতে থাকল। আমাকে মাটি থেকে নিজামী, মুজাহিদ দুজনে গর্দান টেনে তুলে বন্দীদের রুমে নিয়ে গেল। মুজাহিদ বন্দীদের হাল দেখিয়ে আমাকে বলল যে- সত্য কথা না বললে তোকেও এই হাল করব। মুজাহিদ জিজ্ঞাসা করছিল ২৫ আগস্ট ধানমন্ডি আর্মিদের বিরুদ্ধে যে অপারেশন করেছিল সেই অপারেশনে তোর সাথে কে কে ছিল এবং তোদের হাতে কি কি অস্ত্র ছিল। আমি কথার জবাব না দিলে  আবার আমাকে লাথি, গুঁতা মেরে ফ্লোরে ফেলে দেয়। তখন মুজাহিদ রুম থেকে বের হয়ে ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের রুমে গিয়ে নিজামী ও মুজাহিদ দুজনেই বলতে থাকে ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে সেই সাধারণ ক্ষমার আগেই ২/৩ দিনের মধ্যেই ঐ হারামজাদা, গাদ্দার বদি, রুমি, জুয়েল, আজাদ, আলতাফদের সাথে এই পিচ্চিকেও (আমাকে) গুলি করে লাশ গুম করে দিতে হবে।“

শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা-নির্যাতনই নয়, যুদ্ধকালীন সময়ে মুজাহিদের আরো অপকর্মও রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের ঠিক শেষের দিকে, বিজয় যখন ঘরের  দুয়ারে কড়া নাড়ছে, সেই সময় বাঙালি জাতিকে চিরতরে পঙ্গু করে দেবার উদ্দেশ্যে এর সেরা সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা পরিকল্পনা করে পাকিস্তান বাহিনী। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার এই নীল নকশা আরো আগেই করা হয়েছিলো বলে অনেকের বিশ্বাস। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সেই শুরুর দিন থেকেই বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করে হত্যা করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তবে, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে এটা ভয়াবহরূপ ধারণ করে। ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত, বিশেষ করে ১৪ তারিখে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, সাহিত্যিক এবং সাংবাদিককে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় আল-বদর এবং আল শামস বাহিনীর বাঙালি এবং বিহারি গুণ্ডারা। এঁদের গলিত, অর্ধ-গলিত, হাত-পা বাঁধা এবং চোখ ঢাকা বিকৃত লাশ পাওয়া যায় বিজয়ের পরে মুক্ত দেশে রায়েরবাজার, মিরপুর এবং  নাখালপাড়ার বধ্যভূমিতে।

এই আল-বদর বাহিনীর অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলো আলী আহসান মুজাহিদ।

৩.
একাত্তরের এইসব মর্মান্তিক এবং বেদনাদায়ক স্মৃতিকে একজন বাঙালি হিসাবে ভুলে থাকা যায় না। ক্ষমা করে দেওয়া যায় না এই সব বর্বরতা এবং পৈশাচিকতাকে। তিরিশ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা বোনের ইজ্জত চিৎকার করে জানিয়ে দেয়, বিচার করতে হবে এইসব বিবেকহীন বরাহদের, যারা বাঙালি হয়েও সাহায্য করেছে পাকিস্তান আর্মিকে, তাদের সাহায্য নিয়ে একের পর একে  হত্যা করেছে মুক্তিকামী বাঙালিদের।  অনেকেই পরামর্শ দেয় অতীতকে ভুলে যেতে। কিন্তু অতীত ভুলে কেউ কখনো সামনে এগোতে পারে না। সভ্যতা কেবল বিস্মৃতির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আমরা অনেক কিছুই ভুলতে রাজি আছি, কিন্তু ভুলতে রাজি নই এমন কিছু, যার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন, আমাদের জাতিগত মর্যাদার বিষয়টি।

দীর্ঘকাল আমরা পরাজিত হয়ে থেকেছি নিজ দেশে। আমাদের অক্ষমতা এবং অসহায়ত্ব নিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে থেকেছি আমরা। এই পরাজয়ের গ্লানি আমরা ভুলতে পারি নি হাজার চেষ্টা করেও। আসলে ভুলে থাকতে চাই নি কখনো আমরা। অন্তরের গহনতম কোণে জমা রেখে দিয়েছি ।

সেই ভুলে না যাওয়ার অঙ্গীকার থেকেই যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রায়ের পূর্ণাঙ্গ বেসরকারি অনুবাদ করেছি আমরা। এটি একটি যৌথ কাজ। আমি (ফরিদ আহমেদ), দেব প্রসাদ দেবু এবং সাব্বির হোসাইন, এই তিনজন ভাগাভাগি করে নিয়ে রায়টি অনুবাদ করেছি। পরবর্তীতে পুরো কাজটার সম্পাদনা হয়েছে আমার মাধ্যমে।

৪.
একাত্তরের ইতিহাস এক রক্ত স্নানের ইতিহাস। রক্তের এতো দাম দিয়ে আর কোনো জাতিকে স্বাধীনতা কিনতে হয় নি। এই রক্তস্নান এবং অকাতর প্রাণহানির মাঝে বাঙালিকে মুখোমুখি হতে হয়েছে আরেক ভয়ংকর ঘটনার।
মুক্তিযুদ্ধের ঠিক শেষের দিকে, বিজয় যখন ঘরের দুয়ারে কড়া নাড়ছে, সেই সময় বাঙালি জাতিকে চিরতরে পঙ্গু করে দেবার উদ্দেশ্যে এর সেরা সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা পরিকল্পনা করে পাকিস্তান বাহিনী। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার এই নীল নকশা আরো আগেই করা হয়েছিলো বলে অনেকের বিশ্বাস। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সেই শুরুর দিন থেকেই বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করে হত্যা করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তবে, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে এটা ভয়াবহরূপ ধারণ করে। ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত, বিশেষ করে ১৪ তারিখে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, সাহিত্যিক এবং সাংবাদিককে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় আল-বদর এবং আল শামস বাহিনীর বাঙালি এবং বিহারি গুণ্ডারা। এঁদের গলিত, অর্ধ-গলিত, হাত-পা বাঁধা এবং চোখ ঢাকা বিকৃত লাশ পাওয়া যায় বিজয়ের পরে মুক্ত দেশে রায়েরবাজার, মিরপুর এবং নাখালপাড়ার বধ্যভূমিতে।

একাত্তরে শহীদ হওয়া বাঙালি জাতিসত্তার প্রতি অনুগত এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র বুকে ধারণ করা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত এই গ্রন্থ।

অন্ধকারের বুক ফুড়ে যখন আকাশ চাদরে
ঝিকমিক করে ভেসে উঠে অনন্ত নক্ষত্র জোনাকি
বারুদের গন্ধ ভরা অন্ধকার আকাশগঙ্গার পথে
সূর্যস্নানের স্বপ্নকে সাথী করে হেঁটে চলে সশস্ত্র বাঙালি।
কত ঝোপঝাড় আর পাহাড়, কত আনাচ-কানাচ,
কত অলি-গলি, পথ-প্রান্তর;
ধূসর এ ভূমি একদিন ঢাকা পড়েছিলো
ঘন মেঘের ছায়ায়!
বন্ধ সমুদ্রের ও প্রান্ত থেকে প্রবল তেজ বর্ষণে
বেরিয়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে সশস্ত্র সুনামি,
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, জাফলং থেকে সুন্দরবন
ভেসে যায় সমুদ্রস্নানের উল্লাসে।
(সমুদ্রস্নানের উল্লাস - আফসারা মীম)

আপনার মন্তব্য