চেন্নাই ভ্রমণ বৃত্তান্ত-১

 প্রকাশিত: ২০২০-০৬-০৪ ২১:৫৯:০৬

 আপডেট: ২০২০-০৬-০৪ ২৩:২৩:২২

দিলীপ রায়:

দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা। চেন্নাই (মাদ্রাজ) ভ্রমণে যাব।

এমসি কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক সাগর বিশ্বাস এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক নিরুপম চৌধুরী (বর্তমানে এমসি কলেজে কর্মরত) সফরসঙ্গী। তারা দু'জনই অত্যন্ত কাছের এবং প্রিয় মানুষ।

ভ্রমণ শুরু করার দিন ধার্য হলো। তাই, সাগরের এক বন্ধুর ভাই যিনি ট্রাভেলস ব্যবসায়ী, জল্লারপাড়, সিলেট অফিস, তার মাধ্যমে গোয়াহাটি থেকে চেন্নাই যাবার বিমান টিকেট করে নিলাম ০২.০৬.১৯ খ্রি. তারিখ রাতে। দাম একটু বেশিই নিল। প্রতিটি টিকেট ১০৩০০/-

০৩.০৬.১৯ খ্রি. সোমবার,

নতুন জায়গায় ভ্রমণের উত্তেজনায় রাতে একেবারেই দু'চোখের পাতা এক হয় নি।

টিলাগড় থেকে সকাল ৭.৪৫ এ তামাবিলের উদ্দেশ্যে বাসে উঠি। জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়ায় বেশ আরামে ৯.৪৫ এ তামাবিল চেকপোস্টে পৌঁছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমিগ্রেশনের আনুষঙ্গিক কাজগুলো শেষ হয়। ইন্ডিয়ার ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে শিলং যাওয়ার জন্য অনেকগুলো জীপ দাঁড়িয়ে থাকে। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে জানা ছিল এদের সাথে দরদাম করতে হয়। তিনজন বহন করতে পারে এরূপ একটা মাইক্রো ভাড়া চাইল ২০০০ টাকা। আমরা ১২০০ টাকা বলায় সংঘবদ্ধ ড্রাইভারগুলো একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে ঠাট্টাচ্ছলে হাসাহাসি করলো। পাত্তা দিলাম না।

ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ডাউকির দূরত্ব দেড়/দুই কিলোমিটার হবে। আমরা পীঠে ব্যাগ চাপিয়ে হাঁটা শুরু করে দিলাম। কারণ যেকোনো ধরনের ভ্রমণে একটি টাকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ এটি প্রিয়জনেষু সাগরের বক্তব্য। তবে, আশার কথা হলো ডাউকি বাজারে অনেক গাড়ি দাঁড়ানো থাকে।

একটু আগানোর পরই পেছন থেকে মাইক্রোর ড্রাইভারকে আসতে দেখা গেল। শেষ পর্যন্ত ১৩০০ টাকা ভাড়া সাব্যস্ত হলো। ড্রাইভার ছেলেটির নাম বিভিষণ। ভীষণ ভালো ছেলে। ডাউকি গাড়ি থামিয়ে আমরা সকালের নাস্তাটা সেরে নিলাম। ১০.৪৫ এ শিলং এর উদ্দেশ্যে মাইক্রো ছাড়ল। বিভিষণের ফোন ব্যবহার করে যার যার বাসায় কথা বলে নিলাম।

ডাউকি থেকে শিলং এর উচ্চতা প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার ফুট উপরে হবে। গাড়ি যখন একেকটা উঁচু পাহাড়ের বাঁকা রাস্তায় বাঁক নেয় তখন ভেতরে ভেতরে একধরনের রোমাঞ্চ অনুভব হয়। কী অসাধারণ পিচঢালা রাস্তা! সর্পিলাকারে এঁকেবেঁকে চলেছে। আসলে রাস্তাগুলো পাথরের পাহাড় কেটে ইন্ডিয়ার সেনাবাহিনী দীর্ঘ সময়ের শ্রম আর ঘামের বিনিময়ে তৈরি করেছে। মিলিয়ন-বিলিয়ন পরিমাণ সম্পদের একেকটি পাহাড় বিধাতার অপূর্ব সৃষ্টি। ভারত পাকিস্তান সীমানা নির্ধারণকারী ব্যক্তি স্যার শেরিল র‌্যাডক্লিফকে গালি দিতে ইচ্ছে হয়, কেন যে এ রকম একটি পাথরের পাহাড় বাংলাদেশের ভাগে পড়ল না! রাস্তায় এতটুকুন ভাঙা নেই কোথাও। নেই কোনো ময়লা-আবর্জনা। ঝকঝকে রাস্তায় চেরাপুঞ্জির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো, মেঘগুলো এত কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে যে হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করা যায়। গাড়ির কাচ নামিয়ে দিতেই তুলোর পশমের মতো মেঘ হাত-মুখ ভিজিয়ে দিয়ে গেল। একটা হিমশীতল আবেশে চঞ্চল মনে যে কী অনন্য অনুভূতির সৃজন হলো তা কোনো ভাষা দিয়ে ব্যাখ্যা করা প্রায় অসম্ভব। ছোট ছোট টিলা, পাহাড়, বিরানভূমি, মাঠ, গ্রাম আর বাজার ভেদ করে গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে। দু'পাশে যে বাজার কিংবা বাড়িঘরগুলো দেখা যাচ্ছে সেখানে কোনো বিল্ডিং চোখে পড়ল না। তবে, অনেকগুলো কাঠের তৈরি দোতলা বাড়ি মন কেমন করা সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

শিলং শহরটিতে ঢোকার সময় প্রচণ্ড জ্যাম। শয়ে শয়ে গাড়ি প্রাণহীনভাবে জ্যামে আটকা। ট্রাফিক রুল ভাঙার কোনো দৃশ্য চোখে পড়ল না। আমাদের গাড়ি ঠিক দুপুর ১.৪৫ এ শিলং এর প্রাণকেন্দ্র পুলিশ বাজারে গিয়ে পৌঁছল। আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। একি অবাক কাণ্ড! গ্রীষ্মের দুপুরে প্রচণ্ড শীতে ঠকঠক করে কাঁপছি। কিন্তু আমাদের সাথে তো শীতের কোনো কাপড় নেই।

এখন উপায়?
উপায় একটা বের করলো আমাদের নিরুপম। সে ব্যাগ থেকে একটা একটা করে শার্ট বের করে গায়ে দিত থাকলো। আর আমরাও তাকে নকল করতে থাকলাম। আর এ যাত্রায় এভাবেই অসময়ের বেরসিক পৌষালিমার্কা শীত থেকে বেঁচে গেলাম খানিকটা। গেলাম অরুণ হোটেলে। এটি একটি বাঙালি হোটেল। সেখানে চমৎকার নিরিবিলি পরিবেশে পাহাড়ি মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। আহা! অপূর্ব স্বাদের সেই মাছ। ভুলা কি যায় এত সহজে? যেহেতু কয়েকদিনের সফর তাই সিম কেনাটা জরুরি। পুলিশ বাজারের সবচে বড় শপিংমলে গিয়ে ঢুকলাম। সেখানে রিলায়েন্স গ্রুপের সুপারমল। কথা বলে জানা গেল নেট ইউজের জন্য জিইও সিম বেশ কার্যকর। সেটা কেনার জন্য তিনজনে আবেদন করলাম। অফিসের শাড়িপরা সুশ্রী প্রাণচঞ্চল মেয়েগুলো আমাদের কাগজপত্র দেখল। সাথে পিটপিট করে চোরাচোখে দেখল ফুলহাতার তিনটি শার্ট পরিহিত সুদর্শন নিরুপমকে। মেয়েগুলোর ভেতরে ভালোলাগার কোনো আক্ষেপ তৈরি হয়েছিল কি না কে জানে? ভিসা চাইল। কিন্তু আমাদের কাছে তো কোনো ভিসা নেই। আমরা তো বাংলাদেশ থেকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে একটা জিইও নিয়ে গিয়েছি। তাদেরকে সেটা বোঝাতে বেশ বেগ পেতে হলো। শেষ পর্যন্ত তাদের ঊর্ধ্বতন অফিসে যোগাযোগ করে প্রায় সন্ধ্যার দিকে আমাদেরকে সিম দিল। যেটা একটিভ হতে প্রায় ৭২ ঘণ্টা সময় নেবে।

আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ মিশন শেষে বিজয়ীর বেশে অফিস থেকে বের হলাম। তখন ছোট ছোট উঁচু-নিচু টিলা বেষ্টিত শিলং শহরটির উপর দিয়ে কেবল সন্ধ্যা নেমেছে। পুলিশ বাজারে নানা বয়সী রঙ- বেরঙের মেয়েগুলো তাদের বিবিধ ব্যবসার পশরা সাজিয়ে বসেছে।

উল্লেখ্য যে, মেঘের রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরটি আদিবাসী অধ্যুষিত। তাদের পরিবারগুলো মাতৃতান্ত্রিক। মেয়েরা সংসার চালায় আর ছেলেরা গৃহের কাজকর্ম করে। স্বত:স্ফূর্ত মেয়েগুলো মনের আনন্দে বেচাকেনা করছে। জিনিসপাতির দাম বেশ বেশিই মনে হলো। শপিংমলে টয়লেট ব্যবহার করতে ছোটটায় ২০ টাকা লাগে।

লাল-নীল-বেগুনি রঙের বাতিগুলো পুলিশ বাজারের চাকচিক্যকে শতগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

এবার শিলং ত্যাগ করবার পালা।

গেলাম জীপ কিংবা মাইক্রোর সন্ধানে। এখানে একদল টাউট আর বাটপারে ভরপুর। সাবধানী হয়ে জনপ্রতি ৪০০ টাকা ভাড়ায় মাইক্রো ঠিক হলো। আমাদের তিনজনের সাথে সংযুক্ত হলো গোয়াহাটির একজন ভদ্রলোক।

সন্ধ্যা ৭.২০ এ ঝলমলে শিলং শহরটিকে পেছনে ঠেলে মাইক্রো গোয়াহাটির দিকে এগিয়ে চলল। সন্ধ্যায় কিছু খাওয়া হয় নি। খিদেয় পেটে ভাঙচুর চলছে। গোয়াহাটি যাওয়ার এই রাস্তাটি আবার সমতল এবং বেশ প্রশস্ত। রাস্তায় রাজত্ব বিস্তার করা একরাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে গমনকারী আট চাকার একেকটি ট্রাককে দৈত্যের মতো মনে হচ্ছে। রাস্তার পাশের টিলার পাদদেশে খাসিয়া মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের ফ্রুটস বিক্রি করে। একেবারে তরতাজা। ড্রাইভারকে বললাম আমাদের কিছু খেতে হবে। 'সামনে ভালো রেস্তোরাঁ আছে' এই বলে ড্রাইভার গাড়ির গতি বেশ বাড়িয়ে দিল। কিন্তু তার রেস্তোরাঁর নাগাল তো আর পাওয়া যাচ্ছে না। সাথে থাকা লোকটি প্রথম দিকে খুব চুপচাপ ছিল। ইতোমধ্যে একটু-আধটু কথা বলছেন। তার বাড়ি আসামের রাজধানী গোয়াহাটি শহরে। তাদের ভাষা অসমীয়া। বাংলা ভাষার সাথে প্রচণ্ড মিল। ব্যাংকে জব করেন। কর্মস্থল শিলং এ। ছুটি নিয়ে বাসায় যাচ্ছেন। তিনি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাও বেশ বলতে পারেন। আরও কয়েকটি ভাষা দখলে রয়েছে। আমরা বাংলাদেশী জেনে তিনি উৎফুল্ল চিত্তে জানালেন যে, তার পূর্বপুরুষেরা বাংলাদেশের আজমিরিগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন। একদল ভূমিদস্যুর কারণে চিড়েচ্যাপটা হয়ে তার পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তবে, তার কখনও বাংলাদেশে যাওয়া হয় নি। লোকটির কাছ থেকে জানা হলো অনেক কিছু। তিনি জানালেন, তাদের এখানে ব্যাংকে দু'ধরনের নিয়োগ হয়। একটা রাজ্যভিত্তিক আরেকটা কেন্দ্রীয়। তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটা রাজ্যে কাজ করতে হয়েছে। আরও জানা গেল শিলং শহরে খ্রিষ্টান মিশনারিজ কয়েকটি খ্যাতিনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোতে বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষার্থী এমনকি বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে।

পথ চলতে চলতে আমরা যখন ধরেই নিয়েছিলাম যে খানিকটা মাতাল ড্রাইভার আজ আমাদের কিছু খাওয়ার সুযোগ দেবে না ঠিক তখনি সে এসে থামলো একটা আলো জ্বলমলে রেস্তরাঁর সামনে।
নাম 'Pure Veg Restaurant'।

আমরা গাড়িতে ব্যাগ রেখে রেস্তোরাঁর ভেতরে ঢুকব কি না এ ব্যাপারে আমাদের ইতস্তত ভাব দেখে সাথের লোকটি শতভাগ অভয় দিলেন। বললেন, গুরুতর ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো ড্রাইভার কখনই এ রকম হীন কাজ করবে না। ভেতরে গিয়ে দেখলাম। শান্ত, স্নিগ্ধ, মনোমুগ্ধকর নিরিবিলি পরিবেশ। অগুনতি খাবারের আইটেম এর মধ্যে আমাদের পছন্দের খাবার নেই বললেই চলে। টুকটাক কিছু খেলাম। সাথের ভদ্রলোক তার পছন্দমতো খেলেন এটা ওটা। ভাবছিলাম বিলটা উনাকে কিছুতেই দিতে দেয়া যাবে না। কিন্তু হায়! উনি খেয়ে দিব্যি বের হয়ে গেলেন। সৌজন্যতাটুকুর ঘাটতি দেখে মনে একধরনের দুঃখ হলো।

বেরিয়ে এসে দেখি ড্রাইভার নেই। আশপাশ খুঁজে অস্থিরভাবে অপেক্ষা করছি। সাথের লোকটির ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেল না। তিনি নির্বিকারভাবে সিগারেট ফুঁকছেন।

কিছুক্ষণ পড়েই একটা মাচার পেছন থেকে হেলেদুলে ড্রাইভারকে বের হতে দেখা গেল।

আমরা গাড়িতে চেপে বসলাম।

গোয়াহাটি চলে এসেছি। সাধারণত রাত ১০টার মধ্যে শহরটি নীরব হয়ে যায়। একসময় এখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপদ্রব ছিল ভীতিকরভাবে। এখন তেমনটি নেই। আমাদের কিছু নির্দেশনা দিয়ে সাথের লোকটি রাস্তায় নেমে গেলেন। রাস্তাগুলো খুবই পরিচিত ঠেকছে। ঠিক যেন আমাদের সিলেটের মতো। একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে। বেসামাল বৃষ্টিতে রাস্তাগুলো তাই অনেকটাই কাদা আর পানির দখলে।

গোয়াহাটির পল্টনবাজার হোটেলের জন্য খ্যাত। আমরা যখন এখানে এসে পৌঁছাই তখন রাত্র ১০.৩০। হোটেল খোঁজা শুরু হলো। নিদারুণ এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হলো। কোনো হোটেলেই বাঙালি পারমিট নেই। যেও একটা ফাইভস্টার হোটেল পাওয়া গেল সেখানে কোনো রুম খালি নেই। সারাদিনের কর্মক্লান্তির পর আমরা যখন রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছি তখন এক রিক্সা ড্রাইভার জানতে চাইলেন, আমরা কোথায় যেতে চাই।

বললাম, বাঙালি হোটেল।

তিনি আশ্বস্ত করলেন। দু'টি রিক্সা নিয়ে এগিয়ে চললাম। একটিতে আমি আর অপরটিতে তারা দু'জন। মনে কিছুটা ভয় যে কাজ করছে না তা বলা যাবে না। অন্যদিকে আমাদের সাথে কোনো মোবাইল নেই। হারিয়ে গেলে ঝামেলায় পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। চলতে চলতে আতংকটা অচিরেই গাড় হয়ে এল। সামনে তাদের রিক্সাটা নজরে পড়ছে না। বাংলাদেশের হোটেল ব্যবস্থাপনা নিশ্চয়ই এতটা জটিল নয়। আর এখানে...। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই রিকশাওয়ালা একটা হোটেলের সামনে গিয়ে থামলেন। আমরা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলাম। ঠিক হোটেল নয় যেন একটা খুপরি ঘর। কোনোমতে ২ জন থাকা যাবে। কিন্তু আমরা তো তিনজন। এ জন্যই লোকে বলে, 'তিন মরবার চিন'।

একবুক হতাশা নিয়ে নীচে নেমে এলাম। চরম অসহায় লাগছে। কারণ রাতটা যে বেশি হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ড্রাইভাররা খুব ব্যতিব্যস্ত হয়ে এখানে ওখানে ফোন করছেন। শেষ পর্যন্ত এক জায়গায় রুম খালি থাকার খোঁজ মিলল। হোটেল ড্রীমল্যান্ড, ল'বাড়ি, মনিবাড়ি বস্তি। আর্ঘ হাসপাতালের পাশে যেটির অবস্থান। গিয়ে উঠলাম। গড়পড়তা একটা হোটেল। নামের সাথে কামের কোনো মিল নেই। তবে, থাকা যাবে এটাই বড় নিশ্চয়তা। টাকা দিয়ে এক রিকশাওয়ালাকে পাঠানো হলো কিছু খাবার আনার জন্য। সে জানালো আশেপাশে কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। যে দু'একটি ছিল, তা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। তাই, সে অনেক খুঁজেটুজে তিনটা ডিম মামলেট আর আধপুড়া কয়েকটি রুটি ম্যানেজ করতে পেরেছে। ফ্রেশ হয়ে ক্ষুধার্ত মুখে বুভুক্ষুর মতো এগুলোই পেটের ভেতর চালান করবার চেষ্টা করলাম। উল্লেখ্য যে, গোয়াহাটি শহরে রেস্টুরেন্ট একেবারেই হাতেগোনা।

রাত ২ টা। বিছানায় দেহটা এলিয়ে দিলাম।

(চলবে; আগামী পর্বে চেন্নাইয়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা)

দিলীপ রায়: প্রভাষক, গণিত, মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজ, সিলেট।

আপনার মন্তব্য