দেশ-বিদেশের তিন ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক

 প্রকাশিত: ২০২১-০২-১৯ ০২:৩৯:০১

 আপডেট: ২০২১-০২-১৯ ১৭:৫৮:০৪

জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

সিলেটটুডে ডেস্ক:

নিজ নিজ মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদানে স্বীকৃতির জন্য প্রথমবারের মতো ‘আন্তজর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ ঘোষণা করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. শাফীউল মুজ নবীন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে অবদানের জন্য খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা ও উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ এবছর প্রথমবারের মতো পুরস্কার পাচ্ছেন।

এর বাইরে প্রতিষ্ঠান হিসেবে আদিবাসী ভাষা নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইন উদ্যোগ অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস এ বছর বাংলাদেশ সরকারের এ সম্মাননা পাচ্ছে।

২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক দেবেন।

পদকের মূল্যমান জাতীয় ক্ষেত্রে চার লাখ টাকা, আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার ডলার।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের যে দিনটিতে বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ, সেই ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় সারা বিশ্বে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায়।

শাফীউল মুজ নবীন বলেন, সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এ বছরই প্রথম এ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। এখন থেকে প্রতি দুই বছর পর পর জাতীয় পর্যায়ে দুটি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুটি পদক দেওয়া হবে।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম
নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক। ৮৭ বছর বয়সী এই ভাষাবিজ্ঞানী, লেখক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সেই সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্রও ধারণ করেছেন তিনি। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেইসব ইতিহাস গ্রন্থিত করেছেন তার লেখায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বই লিখেছেন তিনি। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের সাবেক এই উপাচার্য এক সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক বলে স্বীকৃতি দেয়। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এর আগে একুশে পুরস্কার ,স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা
প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকের জন্য মনোনীত আরেক বাংলাদেশি মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ ও এসব ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়নে কাজ করেছেন। দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার চিত্র, মাতৃভাষায় শিক্ষা পরিস্থিতি, মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, উজবেকিস্তানের নাগরিক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ তার মাতৃভাষার গবেষণায় অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। উজবেক ভাষার চর্চার প্রসার, সংরক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে তার ভূমিকা অগ্রগণ্য। ভাষাবিজ্ঞানের বিষয়গুলো ছাড়াও আর্থ-সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটগুলো তার কাজে গুরুত্ব পেয়েছে। বিশ্বে মাতৃভাষা হিসেবে উজবেক ভাষার অবস্থান সংহত করতে বিভিন্ন প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ।

অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস
লাতিন আমেরিকার স্থানীয় ভাষাগুলোকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে বলিভিয়ার অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস। এ সংস্থার কোনো অফিস নেই, এ উদ্যোগে জড়িত সবাই কাজ করেন ভার্চুয়ালি। ২০১৪ সালে মেক্সিকোতে ইনডিজেনাস ল্যাঙ্গুয়েজ ডিজিটাল অ্যাক্টিভিস্টসদের প্রথম সম্মেলনের পর অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াসের যাত্রা শুরু হয়। আমেনিকার লাতিন ভাষাভাষী অঞ্চলের আদিবাসীদের মাতৃভাষা এবং পুরনো ভাষাগুলোর সংরক্ষণ, প্রসার ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এ সংস্থা।

আপনার মন্তব্য