প্রকাশিত: ২০২১-০২-২১ ২১:৩২:০০
এখলাসুর রহমান:
পিজি হাসপাতালের দিনগুলো মনে পড়ে খুব
নিঃসঙ্গতার অথৈ পাথারে কেটেছে রাতদিন
সুমনকে নিয়ে লিফটে নিচে নেমে
ঘুরে বেড়ানো, ফুটপাথ হতে ফল কেনা
সেইসব দিনগুলোর কথা মনে পড়ে খুব
সুমন থাকতো ভাঙা ব্রিজের মোড়ে
একজনের খালি বাসায় একা একা
দিনভর আমাকে সঙ্গ দিয়ে
রাতে ফিরে রান্না করে ভাত খেতো সে
আমি প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকতাম
কখন আসবে সুমন
ও আসলে আমি গোসল করতাম আর
ও ছাদে কাপড় শুকাতে যেতো
বাড়িওয়ালার ছেলে বউ যাবে বাসায়
সময়টা ছিলো করোনাকালের
সুমন হাসপাতালে যায় আসে
যদি করোনা নিয়ে আসে
সেই ভয়েই মূলত বাড়িওয়ালা
নিষেধ করলো সুমনকে
বলল, অন্য কোথাও চলে যেতে
আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে
টেনশনে পড়ে গেলাম কোথায়
থাকতে পাঠাব সুমনকে?
সহসা টেনশন দূর করে দিলো
কাঞ্চন পাঠান, বললো:
আমার ওখানে পাঠিয়ে দিন সুমনকে
আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম
শুক্রবার ছুটির দিনে কাঞ্চন হাসপাতালে এলো
৯/এ ওয়ার্ডের কমন ভাতিজা রাতুল
তাকে বসতে বলে আমায় ডাকলো
আমি বাথরুমে স্নানরত ছিলাম
অতঃপর কাঞ্চনের সাথে
কথা বলা, করোনাকালে হাসপাতালে
রোগী দেখতে আসাও ছিল খুব ভয়ের
আরও আসলো কলিন্স ভাই
মিনার ভাই, সানি ভাই
সেনা ভাই ও তরুণ
আরও আসলো মীরপুর হতে
কামরুল ভাই, যাত্রাবাড়ির মামুন ভাই
ছবি তুললো রাহিম ও সেনা ভাই
আরও আসলো তৌহিদ ভাই
কায়সার ভাই ও রুবেল
আরও আসলো মোহনগঞ্জের এমদাদ খোকন,
মুক্তাদির, নীহার শাহবাগের স্বপন
পিজি হাসপাতালের সি ব্লকের ৯ তলার
দিনগুলোর কথা মনে পড়ে খুব
আসলো আকবর সুজন প্রশান্ত
সুজনের বাসার খাবার খেলাম
বড় তৃপ্তিতে, খেলো আমার স্ত্রী শামীমাও
সুজন প্রশান্ত দু ভাই ছিলো বলেই
নিরাপদে যেতে পেরেছিলাম অপারেশনে
ওর জন্যই করাতে পেরেছিলাম আলট্রাসনোগ্রাম
বুকের এক্সরে, ইসিজি, বেতার ভবন হতে
কোভিড টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে এল প্রশান্ত
এমনিই আরও কত কথা
আরও কত স্মৃতি
নারায়ণগঞ্জের জামান ভাই
কুমিল্লার আনোয়ার ভাই
নোয়াখালির আফসার ভাই
দিনাজপুরের রেজ্জাক ভাই
তারাও রোগী আমিও রোগী
রোগীর সাথে রোগীর
সখ্যতা গড়ে উঠেছিল খুব
লিফটে চড়ে ৯ তলা হতে
নিচে নামতাম
লাইন বেঁধে দাঁড়িয়ে পানি আনতাম
আজিজ মার্কেটে গিয়ে চা খেতাম
সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে খুব
বড় বেশি মনে পড়ে৷
আপনার মন্তব্য