মুদিতা: অপরের সুখে সুখী হবার মন্ত্র

 প্রকাশিত: ২০২১-০৫-১৭ ১৩:৩২:৪০

 আপডেট: ২০২১-০৫-১৭ ২১:১১:৫২

বৈশাখী বড়ুয়া:

‘মুদিতা’, যার অর্থ অপরের সুখে সুখী হওয়া, এ এক নির্মল সুখের নাম। ধরুন আপনি কাউকে প্রাণ-খুলে হাসতে দেখলেন, আর তা দেখামাত্রই নিজের অজান্তে আপনি নিজেও হেসে ফেললেন। এটাই মুদিতা। কাউকে সম্মানিত হতে দেখে আপনার ভালো লাগাটাই মুদিতা। অপরের উন্নতি দেখে তৃপ্তি পাওয়া, অন্যের আনন্দে আনন্দিত হওয়া এটাই মুদিতা।

ভাবলে আশ্চর্য হতে হয় যে, আমরা প্রত্যেকেই এই গুণ ধারণ করি। কিন্তু তা শুধু আমাদের প্রিয় মানুষের জন্য, আপনজনদের জন্য। ভেবে দেখুন তো, এই অনুভূতি যদি আমরা সবার প্রতি অনুভব করি তবে পৃথিবীটা কতো সুন্দর হয়ে উঠতে পারে! হয়তো ভাবছেন সবাই কি মুদিতার যোগ্য? হ্যাঁ, সবাই তা নয়। একজন তার বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থ করে ব্যাপক আনন্দ পেতে পারে। কিন্তু, মানুষ হিসেবে আমরা কি তার সে আনন্দে আনন্দিত হবো? হতে পারবো? পারবোনা। তবে কী করবো আমরা?

এবার তাহলে আসতে হয় আরেকটি অর্থবোধক শব্দের কাছে, উপেক্ষা যার নাম। এ এমন এক অদ্ভুত শক্তিশালী অনুভূতি যা আপনাকে অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারে। ধরা যাক, কেউ আপনাকে চরমভাবে অপমান করলো, আপনি খুব লজ্জা পেলেন। কেউ আপনাকে দারুণভাবে ঠকালো, আপনার মনের গভীরে সৃষ্টি হলো এক গভীর ক্ষত। সেই সাথে তৈরি হলো প্রবল ক্ষোভ। আপনি সবকিছু ভেঙেচূড়ে দিতে চাইলেন। পালটা আঘাত করার জন্য বিষিয়ে উঠলো আপনার মন। ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার মনে হলো, যে বিপুল পরিমাণ কষ্ট বুকে পুষে আপনি হাঁসফাঁস করছেন তার আসলে কোনো মূল্যই নেই। আপনার মনের দায়িত্ব শুধুই আপনার, আর কারো নয়। কারো মিথ্যা কথা, কারো নিকৃষ্ট আচরণ কেন আপনার মনের সুস্থতা অসুস্থতার দায়িত্ব নিতে যাবে? এই মনে হওয়াটাই উপেক্ষা।

সাধারণভাবে চিন্তা করলে উপেক্ষা মানে অবহেলা, এড়িয়ে যাওয়া। কিন্তু যে উপেক্ষা আপনাকে বঞ্চনার ব্যথা ভুলিয়ে দিতে পারে তা শুধুই বঞ্চনাকারীর প্রতি অবহেলা বা তাকে এড়িয়ে যাওয়া নয়। বরং এই উপেক্ষা এক ধরনের নির্মোহ অনুভূতির নাম। যখন কারো প্রতিই কোন আশা, আকাঙ্ক্ষা, কামনা, বাসনা আপনার থাকবে না, তখনই বুঝবেন আপনি যথার্থভাবে উপেক্ষা নামক গুণটি অর্জন করতে পেরেছেন।

তখন আপনার মনের মধ্যে খুব সংগোপনে মুদিতার জন্ম হবে। আপনি মানুষের প্রতি এক অপার মায়া অনুভব করবেন। পরম শান্তিময় এক অনুভব এই মায়া, যার আরেক নাম মৈত্রী। মৈত্রীময় চেতনা আপনাকে নিয়ে যাবে করুণার দ্বারপ্রান্তে। যে করুণা আপনাকে অপরের দুঃখ লাঘবে অনুপ্রাণিত করবে। আপনার হৃদয়, মন ভরে উঠবে অপরের মঙ্গল চিন্তায়। অপরের দুঃখে আপনি কেঁদে উঠবেন।

এ পৃথিবীতে কত মানুষ কত রকম কষ্টে দিনাতিপাত করছে। কতজন জীবন যুদ্ধে এতোটাই জর্জরিত যে ভাবারও সময় পাচ্ছেনা। সে আসলে কী ভাববে? একের পর এক ধেয়ে আসা তীর বিদ্ধ করছে কতজনকেই। পালটা আঘাত দূরের কথা ব্যথার তীব্রতা অনুভবের সুযোগও হয়তো সে পাচ্ছে না। একবার ভাবুন, 'অপরের দুঃখ করিলে চিন্তন, আপনার দুঃখ থাকে কতক্ষণ?'

আপনার মন্তব্য