‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই

 প্রকাশিত: ২০২২-০১-১৯ ১৯:৩৫:২০

সিলেটটুডে ডেস্ক:

জনপ্রিয় রহস্য উপন্যাস ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

কাজী আনোয়ার হোসেন একাধারে ছিলেন অনুবাদক, প্রকাশক, চিত্রনাট্যকার, শিল্পী। তবে সব পরিচয় ছাপিয়ে তার পরিচয় ছিল সেবা প্রকাশনীর প্রকাশক এবং এই প্রকাশনার সিরিজ মাসুদ রানার লেখক। আর পাঠকের কাছে তিনি ছিলেন ‘কাজীদা’।

গণিতজ্ঞ, দাবাড়ু অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের ছেলে কাজী আনোয়ার হোসেন দুই ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন ও কাজী মায়মুর হোসেন এবং মেয়ে শাহরীন সোনিয়াকে রেখে গেছেন। তার বোনদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক সনজীদা খাতুন।

কাজী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন আগেই মারা যান। ফরিদার এক বোন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। তাদের আরেক বোন সংগীতশিল্পী নীলুফার ইয়াসমিন মারা গেছেন।

গত বছরের অক্টোবর থেকে তিনি প্রোস্টেট ক্যান্সারে ভুগছেন। শরীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১০ দিন তাকে ‘লাইফ সাপোর্টে’ রাখা হয়েছিল। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় একটা ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয় তার।

মরদেহ বুধবার বারডেরমে হিমঘরে থাকবে। বৃহস্পতিবার সকালে সেগুনবাগিচার মরদেহ বাসায় নেওয়া হবে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাদ আসর বনানী কবরাস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।

কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন ও সাজেদা খাতুনের ঘরে। তিনি সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাসের পর আইএ ও বিএ পাস করেন জগন্নাথ কলেজ থেকে। এরপর বাংলায় এমএ ডিগ্রি নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পড়াশোনা শেষ করে গানে মনোযোগী হয়েছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। তার তিন বোন সনজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন তখন শিল্পী হিসেবে পরিচিত।

১৯৫৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বেতারের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সিনেমায় প্লেব্যাকও করতেন। ১৯৬২ সালে বিয়েও করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে। গান ছেড়ে গত শতকের ষাটের দশকে প্রকাশনা ব্যবসায় নামেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সেগুনবাগিচায় নিজেদের বাড়িতে গড়ে তোলেন সেগুনবাগান প্রেস। সেটাই পরে নাম পাল্টে হয় সেবা প্রকাশনী। সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই পেপারব্যাক বই বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পায়। গোয়েন্দা সিরিজ কুয়াশা দিয়ে সেগুনবাগান প্রকাশনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপরে আসে মাসুদ রানা।

১৯৭৪ সালে মাসুদ রানার প্রথম চলচ্চিত্রায়ন ঘটে সিরিজের ‘বিস্মরণ’ বইটি নিয়ে। কল্পনার মাসুদ রানার ভূমিকায় এসেছিলেন সোহেল রানা, সেটাই এই চিত্রনায়কের প্রথম সিনেমা। আর মাসুদ রানার জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতার বাচসাস পুরস্কার জেতেন কাজী আনোয়ার হোসেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্যাকেজ নাটকের শুরুতেও জড়িয়ে মাসুদ রানা। সিরিজের পিশাচ দ্বীপ নিয়ে আতিকুল হক চৌধুরী তৈরি করেন নাটক প্রাচীর পেরিয়ে, যাতে মাসুদ রানার ভূমিকায় ছিলেন নোবেল, তার সঙ্গী সোহানা হয়েছিলেন বিপাশা হায়াৎ।

মাসুদ রানার পাশাপাশি অনেক বই অনুবাদও করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। তার সম্পাদিক রহস্য পত্রিকাও বেশ জনপ্রিয় সাময়িকী। পরে বের করেন কিশোর পত্রিকা।

আপনার মন্তব্য