অভিধানের ‘অসংগত’ ঈদ বানানই লিখল বাংলা একাডেমি

 প্রকাশিত: ২০২২-০৫-০৪ ২৩:১০:১৪

সিলেটটুডে ডেস্ক:

বাংলা একাডেমির ‘আধুনিক বাংলা অভিধান’ বলছে ‘ঈদ’ বানানটি ‘অসংগত’। এই অভিধানে বলা হয়েছে ‘ঈদ’-এর সংগততর বানান হলো ‘ইদ’। অভিধানে যা ‘অসংগত’ সেটাই লিখে কার্ড ছাপিয়েছে বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি।

কেবল বাংলা একাডেমিই নয়, প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা এবারের ঈদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে স্ট্যাটাস লিখেছেন সেখানে প্রতিষ্ঠানটির অভিধানে উল্লেখ ‘অসংগত’ বানান ‘ঈদ’ ব্যবহার করেছেন।

নুরুল হুদার এই ‘ঈদকার্ড’ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই সমালোচনা করে বলছেন, বাংলা একাডেমির অভিধানের বানান নির্দেশনা মানছেন না খোদ প্রতিষ্ঠানেরই মহাপরিচালক।

কবি নুরুল হুদাও বলছেন, ঈদ প্রশ্নে জামিল চৌধুরী সম্পাদিত বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’-এর অবস্থানের সঙ্গে তিনি একমত নন। নিজের একক সিদ্ধান্তেই তাই কার্ডে ‘ইদ’-এর পরিবর্তে ‘ঈদ’ ব্যবহার করেছেন তিনি। বিষয়টি সুরাহার জন্য শিগগিরই অভিধান সম্পাদনা পরিষদের সঙ্গে বসবেন বলেও গণমাধ্যমকে জানাচ্ছেন নুরুল হুদা।

এদিকে, বাংলা বানান বিষয়ে অভিধানে ‘অসংগত’ উল্লেখ করেও একাডেমি আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগেই মহাপরিচালক হিসেবে এমন কার্ড ছাপাতে পারেন কি না, এনিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

মুহম্মদ নুরুল হুদা কার্ডটির সত্যতা নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি নিজেও ফেসবুকে কার্ডটি পোস্ট করেছি। এ বিষয়ে আলোচনাও দেখছি। আমিও চাচ্ছিলাম এসব কথা হোক। যদি সবাই মিলে বলে যে ‘ঈ’ লিখব, তাহলে ঈদই লিখব। এ রকম আরও অনেক শব্দ আছে, কিন্তু ঈদ শব্দটা মোস্ট পপুলার শব্দের একটা তো।’

ঈদের দুটি বানানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, আরেকটা কন্ট্রোভার্সিয়াল ব্যাপার আছে- ইংরেজিতে কিন্তু ‘ঈ’ উচ্চারণ নেই। আবার ইংরেজিতে আমরা ‘আই’ দিয়েও ঈদ লিখি না, ‘ই (E)’ দিয়ে লিখি। অনেকগুলো ব্যাপার আছে এখানে। আমি যেটা বলব, সেটা হলো ঈদ, ইদ দুটোই চালু রাখা যেতে পারে। আর অভিধানে ‘ঈদ’-এর পরে ‘অসংগত’ যেটা লেখা আছে, সেখানে শুধু লিখব প্রচলিত বানান।

তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি এ পর্যন্ত যত বানানরীতি করেছে, কোনোটার জন্য কোনো বাইন্ডিংস (বাধ্যবাধকতা) দেয়নি। বাংলা বানানের ভেরিয়েশন প্রচুর। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে আরম্ভ করে রবীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব বসু আমাদের পর্যন্ত বিভিন্ন শব্দের বানানে পরিবর্তন এসেছে। কিছু শব্দ আছে, এখনও যা আমাদের মধ্যে পপুলার। সেদিক থেকে বাংলা একাডেমি মনে করে, যে সমস্ত বানান বাংলা ভাষায় বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত হয়েছে, সেখান থেকে কোনো বানান কেউ ব্যবহার করলে তা ভুল বলার কোনো সুযোগ নাই।

বাংলা বানানের ‘একেবারে লাস্ট ফর্মুলা’ এখনও তৈরি হয়নি বলেও মনে করছেন নুরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘আসলে ফাইনাল কখনও হয় না, চলতে চলতে ফাইনাল হয়। যেমন বাড়ি বানান এখন ‘ই’ হয়ে গেছে, বাঙালি ‘ই’ হয়েছে।’

আপনার মন্তব্য