মোহাম্মদ হোসাইন-এর একগুচ্ছ কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৬-০১-১১ ১৩:৪৯:২৩

 আপডেট: ২০১৬-০১-১১ ১৩:৫৬:০২

কাব্য : অনুদিত রোদের রেহেল, প্রচ্ছদ : আইয়ূব আল আমিন, অনুপ্রাণন প্রকাশন, ঢাকা। মূল্য : ১৫০ টাকা:

প্রেম নয়, প্রেমে পোড়া চোখ
হয়তো আবার আসবে তুমি
হয়তো চিবুক ছুঁয়ে ছেনে বলবে, ‘এই কি তুমি’?
মাঝখানে ঘোলাজল, অন্তিম যাদুর ঘূর্ণন
আমিও বুক চিতিয়ে খোলা বুকে বলে যাব- এখানে
এইখানে তুমি! দূরে তিরতির বয়ে যাবে নদী, বিশুদ্ধ
গোলাপের আঁটি। প্রেম নয়, প্রেমে পোড়া চোখ, অথই...নিরবধি...


মগ্নতা ভেঙে উড়ে যায় ডিমের কুসুম। ডুবোচরে জড়ো হয় কালের সারস।
মেঘের পালক ঘষে জ্বলে ওঠে দেহের বারুদ, বৃষ্টি তার অস্তিত্ব স্মারক।
মৃত্তিকাই সবুজের প্রাণ, ক্লোরোফিলে ধরে রাখে পাতার গৌরব। বাতাস চিরদিনই
সত্যাশ্রয়ী শব্দকল্পদ্রুম- অনায়াসে লুফে নেয় বিশ্বাসের ভ্রূণ! প্রকৃতির ঠোঁট থেকে
ঝরে পড়া অবিরল ধারা তাবৎ সত্তা জুড়ে ধ্রুপদী শোনায়। মাতালের কাঁধ ছুঁয়ে
যে আঁধার করুণা ঝরায় আমি তার অগম্য তিয়াস। সাপের খোলস হাতে যতবারই
অধিবিদ্যা রচে, মোহক নদীর বাঁকে ততবারই মৃত্যু এসে ঘুঙুর নাচায়। নিবিড় শুশ্রূষা
শেষে ঘুরে গেলে হাওয়া পৃথিবীও কেঁদে ওঠে অনন্তে ঝাঁপায়...


হেমন্তের মেঘ এসে
চেটে নেয় পাতার সবুজ, রেকাবিতে তুলে রাখে
লাবণ্যের ভোজ।
কাচে কাটা ভোর, থরে থরে রোদের মাদুর
নিরিবিলি স্নেহবীজ বোনে
ক্রিস্টাল বলের ফোঁটা অযোনি অহম
দিঘিজলে চুপে চুপে চুমকুড়ি খায়
সোনালী ধানের শিসে হাওয়ার বৈভব
মনোজ বাঁশির সুরে দ্যোতনা ছড়ায়...


যদি ভেঙে যেতে থাকে অযোনি দেয়াল
যদি মেঘ করে আসে চারদিক আর অন্ধকার বুনোহাঁস
যদি প্রেম আসে কুয়াশা মোড়ানো শীতকাল আর নীল পালক রৌদ্রগন্ধময়
আর যদি আলাভোলা এঁকে দেয় পানপাতা ছবি দেহভাজে, কল্লোলে কল্লোলে
আর যদি গানগুলো গাঢ়দুধের সরের আভাস, পাখিরা বীরজারা, সন্ধের আকাশ
আর আমি নিরিবিলি কথা বুনে যাই, সেলাই করা হাওয়া কতবার যে বুকে এসে
পড়ে, কতবার যে সঘন চুমু খায়…


পিঠ খুঁটে দিতে দিতে, নোখ খুঁটে দিতে দিতে--একদিন আমিও মৃত চাঁদের-পিঠে পঙক্তি গুঁজে দিয়েছিলাম; সে কথা লিখে রেখেছিল মুক্তাক্ষরিত ঘাস। বহুদিন সেই সব শব্দের ধুন নিরবে
নিরবে তোমার শরীরে বোনে দিতে দিতে ভোরের রজঃস্বলা দেখেছি। আজ সে সব মমির শ্বেত উচ্চারণ। তবু পৃথিবীতে আজও দেখি, কেউ না কেউ পিঠ খুঁটে দেয়, নোখ খুঁটে দেয় আর ঠোঁট
থেকে তুলে নেয় অস্ফুট দ্রাক্ষারস গোপন সন্ধ্যার বাতাসে...


আঙুল সরব হলে ধনেশ পাখির ঠোঁটের মত নিরুত্তাপ দুপুরও লকলকে
জিভ বের করে আনে; প্রাচীন গুহাচিত্র থেকে আনে ব্রীড়ারত সাপের মন্থন
হয়তো বিরচিত গানের কলি কোন কোন সিক্তা রাত্রিকে আনমনা করে দেয়
মৃত আস্তাবল থেকে ছিঁড়ে কুরে আনে নাগলীলা, ধ্রুপদ ঘুঙুরের ছলাকলা; চাঁপাকলি
ভোরের স্তন তার, বলকে বলকে লাভার গীরণ, আমিও কি পুড়ে যাই না? সত্য
তো তাই-বুকের ভেতরে যা চিরকাল রোদের কণিকা ফোঁটায়। অথচ, কী আশ্চর্য
দ্যাখো- আমার এ লতানো হাত, এ অন্ধ ঠোঁট, বারবার কালো পোড়া চাঁদনিকেই চায়...


আমরা আসলে কেউ কারও দিকে তাকাই না
আমরা আসলে আমাদের নিজেদেরকেই নিজেরা দেখি
কিংবা বলা যায় প্রত্যেকেই প্রত্যেককে অবলোকন অথবা
প্রত্যক্ষ করি। এই যেমন তোমার মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে
প্রতিদিন আমি যাকে দেখি, সে তুমি নও, আমিই! আমিই
আসলে আমাকে প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে নির্মাণ করি, ভাঙি আবার
গড়েও তুলি। তোমার কররেখা, চুল, চুলের অনিন্দ্য ঘ্রাণ, মুখচ্ছবি
কিংবা এই যে ছায়া, এই আলো- হাওয়া এ আমাদেরই রূপতত্ত্বের
ভিন্ন ভিন্ন নাম--বিমূর্ত উচ্চারণ! আমরা কি আসলেই কেউ কাউকে
দেখি? নাকি একে অন্যের শুধু জাগরণ দেখি, মর্ষকাম দেখি?
বিলোড়িত মোহনা দেখি না...


পোড়া ছাই বর্ষাজলে ভাসিয়ে দিয়েছি। যা কিছু শুদ্ধতা—সবই অলিক সবই অন্ধকার; এই সব
আপাত গূঢ় রসিকতা- কেউ কেউ শীত রাত্রির তামাশা বলে উড়িয়ে দিতে পারে। কিংবা সফল সঙ্গম শেষে যে কোন কামার্ত নারীও কেঁদে নিতে পারে, আল্পস পর্বতের উঁচুতে দাঁড়িয়ে যেমন কেঁদে নিতে
পারে কোন নিঃসঙ্গ শেরপা...


শ্লীল, অশ্লীল তুমি ঠিকই বোঝো, পর্ণোচিত্রও বোঝো ভাল। আমি শুধু ফিদা’ কে দেখি।
তার লীলাচিত্র দেখি, সৌরভটুকু দেখি। রহস্য দানা বেঁধে গেলে সর পড়ে যায় আর সর
নিঙড়ে মাখনটুকু নিলে—থাকে শুধু জল; সে জলে ভালবাসা - পেখম মেলে না…

১০
তুমি বলেছিলে
যারা মাটি দিয়ে মানুষ বানায়
আর যারা আগেও মানুষ ছিল
এ দু’য়ের তফাত কতটুকু?
আমি বললাম
একজন মাটিতে মিশে যায়
আরেকজন কেবলই মাটি...মাটি...মাটি...

আপনার মন্তব্য