কবিগুরু'র জন্মদিন আজ

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৫-০৮ ০০:৫৬:২৫

 আপডেট: ২০১৬-০৫-০৮ ০১:০৭:৪২

সিলেটটুডে ডেস্ক:

আজ ২৫ বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। ২৫ বৈশাখের গুরুত্ব আমাদের জীবনে অপরিসীম। এককথায় রবীন্দ্রনাথ বাঙালীর জীবনে এমনভাবে জড়িয়ে আছেন, যাতে প্রতিদিন তাঁকে স্মরণ করতে হয়। এবারের ১৪২২ সনের আজকের ২৫ বৈশাখ পালিত হচ্ছে তাঁর জন্মের ১৫৫তম বার্ষিকী।

রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করা হচ্ছে বহুকাল ধরে। রবীন্দ্রনাথ যখন জীবিত তখন থেকে শান্তিনিকেতনে তাঁর জন্মদিন উদযাপন করা হতো। তারপর ধীরে ধীরে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন স্থানে এই উৎসব হতে থাকে। দুই বাংলার নানা শহরে, গ্রামে, স্কুলে, ক্লাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হতে থাকে। ভারত বিভক্তির পর তৎকালীন পূর্ববাংলায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হতে থাকে। এভাবেই ১৯৬১ সালে আসে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী। সে সময় পাকিস্তানী শাসক শ্রেণীর বিরোধিতার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও এ দেশের মানুষ পালন করেছে প্রিয় কবির শততম জন্মদিন। একপর্যায়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় সকল শ্রেণীর মানুষের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ওঠে। মানুষ এই নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়।
 
এ দেশের মানুষ তাদের সুখ-দুঃখে, আন্দোলন-সংগ্রামে যে কবিকে কাছে পেয়েছে, যাঁর কবিতা, গান ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত-উদ্দীপ্ত করেছে এবং সান্ত্বনা যুগিয়েছে, এ দেশের মানুষ সে কবিকে কখনও ছাড়তে পারেনি। বিশেষ করে জাতীয় জীবনের নানা বিপর্যয়ে, ঘোর দুর্বিপাকের দিনে তাঁকে সঙ্গে রেখেছে, তাঁর সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেছে, রেখেছে অন্তরের ভালবাসায়। শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরের এই দেশে বিশাল মর্যাদার আসন পান রবীন্দ্রনাথ।
 
তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা’কে জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রাণের উচ্ছ্বসিত আবেগের সঙ্গে প্রতিবছর নানাভাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়েছে ও হচ্ছে রবীন্দ্র জন্মোৎসব। একই সঙ্গে পালিত হচ্ছে তাঁর প্রয়াণ দিবস বাইশে শ্রাবণও।
 
সমালোচকদের মতে, রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি। এই ভাষার উন্নয়নে তাঁর অবদান তুলনাহীন। রবীন্দ্রনাথ এ ভাষাকে বিশ্ব অঙ্গনে পরিচিত করিয়েছেন। চিন্তায়-মননে, আনন্দে, বিষাদে তিনি বাঙালীর নিত্যসঙ্গী। আমাদের জীবনে আলোর পথে, জ্ঞানের পথে, শিক্ষা তথা আনন্দের পথে চলার প্রেরণা তিনি। তিনি উৎসাহ যোগান অন্ধকার দূর করার পাশাপাশি কূপমূণ্ডকতা ও সঙ্কীর্ণতা দূর করতে। তিনি আমাদের চেতনাকে আলোকিত আনন্দময় সত্যের পথে চলার সাহস যোগান। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। এ উপলক্ষে কবির জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান আজ ২৫ বৈশাখ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে সংষ্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ৮ মে রোরবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকতারী মমতাজ।

ঢাকাছাড়াও কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওঁগার পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তার জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। 

জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিনদিনব্যাপী কবির চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করবে। যথাযোগ্য মার্যাদায় কবির জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বাংলা একাডেমি। ঢাকাসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি যথাযোগ্যভাবে উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। 

যেসব জেলায় জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে না, সেসব জেলার জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়।

বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি বিভিন্ন চ্যানেলগুলো জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী ও অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।

রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা ভাষার একজন কবি, লেখক, গীতিকার, দার্শনিক বা অন্য আরও বিশেষণে অভিহিত মহাপুরুষই নন, তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, আমাদের সবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা তিনি নিজেই বলে গেছেন। তাঁর সে কথাটি হলো- ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক/আমি তোমাদেরই লোক।’ আসলেই তাই। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে তাঁকে প্রতিদিন একবার নয়, বহুবার স্মরণ করতে হয়। আমাদের প্রাণে, চিন্তায়, চেতনায়, মননে, রুচিতে তিনি সর্বক্ষণ উপস্থিত। আমাদের প্রাণের ভালবাসার এই কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

 

আপনার মন্তব্য