টাক

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৭-১১ ১৫:০৮:০০

 আপডেট: ২০১৬-০৭-১১ ১৫:১০:৫৮

ফরিদ আহমেদ:

টাক

“আচ্ছা, আমার টাকটা কি বোঝা যায়?”

ধূসর সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি নেমে এসেছে শহরের বুকে। লেক ভিউ রোড ধরে হেঁটে চলেছেন তাঁরা দুজন। প্রায় সমবয়সী বন্ধু দুজন। একজন লম্বামত, ঢ্যাঙা গড়ন। সৌম্যদর্শন। আরেকজন বেঁটে মানুষ। মেদবহুল শরীর তাঁর। চেহারাটা বিশেষত্বহীন। আর দশজন সাধারণ বাঙালির মতোই সাদামাটা।

অনেক পথ হেঁটেছেন সেদিন দুজন। এটা তাঁদের নিয়মিত অভ্যাস। ক্লান্ত ভঙ্গিতে লেক ভিউ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে খাটো মানুষটি মৃদু কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন অন্যজনকে।

লম্বা মানুষটার নাম সুবোধ রায়। বন্ধুর কাছ থেকে এই প্রশ্ন প্রতিদিন একাধিকবার পেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তিনি। এই প্রশ্নের উত্তর ‘না’বললে তাঁর বন্ধুটি যে বেজায় খুশি হোন, সেটা জানেন তিনি। হ্যাঁ বললে বিষম চিন্তায় পড়েন সেটাও জানেন ভালো করেই। তারপরেও সত্যিটা বলা থেকে বিরত থাকলেন না তিনি।

“তা একটু বোঝা যায় বই কি?”হাঁটতে হাঁটতেই উত্তর দেন তিনি।

বরাবরের মতোই তাঁর বন্ধুটির মুখে চিন্তার ছাপ পড়ে যায়। চিন্তিত কণ্ঠে তিনি বলেন।

“কী যে করি বলেন তো। টাক জিনিসটা আমার দুই চোখের বিষ। মাথার পিছনটা কেশবিরল হয়ে যাচ্ছে খেয়াল করেছি। এর জন্য ভাইটেকস, বলডেকস, বলড এন্ড মিলভি ক্রিম, মহাভৃঙ্গরাজের মতো টাকা নিবারণের কোবরেজি ওষুধ, এমন কিছু নেই যা ব্যবহার করি নি আমি। তারপরেও টাক পড়াটা মোটেও থামছে না।”

“কবিতায় সূর্য বন্দনা তো আর আজ পর্যন্ত কম করেন নাই। এবার ঠ্যালা সামলান।”রসিকতা করেন সুবোধ রায়।

“তার মানে?ঠ্যালা সামলানোর কী হলো?”

“মানে তো স্পষ্ট। ভর দুপুরে রাস্তায় যখন বের হবেন, আপনার ওই টেঁকো চাঁদি ফাটিয়ে ছাড়বে জ্বলন্ত সূর্য।”কৃত্রিম রোষে কথাগুলো বলে হাসতে থাকেন সুবোধ রায়।

“না, না, সূর্যকে আমার ভয় নেই। সব ভয় রাত্রিকে।”

“রাত্রিকে ভয় পাবার মানে কী?রাতে তো আর আপনার টাক দেখা যাবে না।”অবাক হয়ে সুবোধ রায় শুধান।

“রাত্রিকেই তো আসল ভয়। কিছুদিন পরে তো লাইটপোস্টের তলা দিয়ে আর হাঁটতে পারবো না।”

সুবোধ রায় থামকে দাঁড়ান। এই বক্তব্যের আগামাথা কিছুই বোঝেন নাই তিনি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,

“লাইটপোস্টের তলা আবার কী দোষ করলো?”

“চাঁদনি রাতে কোনোদিন পদ্মার ইলিশকে ডিগবাজি খেতে দেখেছেন?আমার টাকে লাইটপোস্টের আলো পড়লে সেই ইলিশের ডিগবাজিই দেখা যাবে ওখানে।”

নিজের রসিকতায় নিজেই মজা পেয়ে যান জীবনানন্দ দাশ। সারা শরীর দুলিয়ে উদ্দাম এবং উচ্ছ্বসিত হাসিতে ফেটে পড়েন তিনি।

অন্য এক ভুবন থেকে এক গুচ্ছ মায়াবী জোছনা এসে পড়ে তাঁর মুখের উপরে।

আপনার মন্তব্য