নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে কবিতার বরপুত্রের প্রয়াণ দিবস

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৮-১৭ ১৭:৫৪:২৩

 আপডেট: ২০১৬-০৮-১৭ ১৭:৫৮:৪২

সিলেটটুডে ডেস্ক:

নানা আয়োজনে দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বাংলা কবিতার বরপুত্র ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রহমানের দশম মৃত্যুবার্ষিকী।

একাধারে কবি, কথাশিল্পী, সাংবাদিক, গীতিকার ও কলামিস্ট শামসুর রহমান দীর্ঘ ছয় দশক ধরে তার সাবলিল ধারায় লিখনিতে সমৃদ্ধ করেন বাংলা সাহিত্য। দীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবন শেষে ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় ইন্তেকাল করেন তিনি।

তার কবিতায় বাঙালিজাতির স্বাধীনতা প্রাপ্তির চেতনার দীপ্তস্বর উচ্চারিত হলেও কবিতা ও সাংবাদিকতায় মৌলবাদবিরোধীতায় ছিলেন সোচ্চার। ধর্মান্ধতাকে আজীবন প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করেছেন। লিখেছেন প্রেম, দ্রোহ ও বিশ্বজনীনতা বিষয়ে অসংখ্য চিরায়ত কবিতা। যা আজও সকল বয়সের মানুষকে উজ্জীবিত করে। সর্বোপরি কবিতা রচনায় স্বাধীনতার কণ্ঠকে ধারণ করেন। এ কারণেই তার সৃষ্টিশীলতার বিশালতাকে বাংলা কবিতায় তাকে স্বাধীনতার কবি বলা হয়। শামসুর রাহমান বাঙালির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিদের একজন এবং আমাদের চলার পথের পাথেয়।

সৃষ্টি ও মননের দ্যুতিময় উপস্থাপনা তাকে দিয়েছে সমকালীন বাংলা কবিতার প্রধানতম কবির মর্যাদা। কবি হিসেবে দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তাকে নাগরিক কবিও বলা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর তার লেখা দুটি কবিতা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়। বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকের ৫ বিশিষ্ট কবির পর আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে।

শামসুর রাহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলির নানাবাড়িতে। তার পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাড়াতলী গ্রামে। ১৯৫৭ সালে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকায় কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৫৭ সালে রেডিও পাকিস্তানে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে আবার মর্নিং নিউজে ফিরে আসেন এবং ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মর্নিং নিউজের সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালের শেষের দিকে দৈনিক পাকিস্তানে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন শামসুর রাহমান। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ওই পত্রিকাটি দৈনিক বাংলা নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তিনি দৈনিক বাংলা থেকে পদত্যাগ করেন। এর পর সাহিত্য পত্রিকা অধুনার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

১৯৪৯ সালে সোনার বাংলা পত্রিকায় শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় লেখায় নিজের ছদ্মনাম হিসেবে সিন্দাবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে, জনান্তিকে, মৈনাক ব্যবহার করেছেন। একজন প্রতিবাদী কবি হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। তৎকালীন সরকারি পত্রিকায় কাজ করা সত্ত্বেও তিনি আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের প্রতি বিদ্রুপ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাভোগের সময় তাকে উদ্দেশ করে তিনি কবিতা লিখেছেন। রবীন্দ্রসংগীতের ওপর পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। তার লেখা ‘বর্ণমালা’, ‘আমার দুখিনী বর্ণমালা’, ‘আসাদের শার্ট’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’ এসব কবিতার মধ্যে বিদ্রোহী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৮৭ সালে স্বৈরশাসন আমলে পর পর ৪ বছর ধরে ‘শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা’, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা,’ ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’ এবং ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা’ লেখেন তিনি

স্বৈরশাসনের পতন হলে তিনি লেখেন ‘গণতন্ত্রের পে কবিতা।’ শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশুতোষ রচনাসহ তার শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।

সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, সাংবাদিকতার জন্য মিৎসুবিশি পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক ও আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কবিকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি দেওয়া হয়।

শামসুর রাহমান নামটির সঙ্গে বাংলাদেশ ও এদেশের কবিতাপ্রেমীদের নাড়ির যোগ রয়েছে। কারণ তিনি আমাদের স্বাধীনতার কবি। তিনি মৌলবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলেই শ্যামলীর নিজ বাড়িতে তাঁকে কৃষ্ণপক্ষের শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হতে হয়েছিল।

আপনার মন্তব্য