রওশন হাসান-এর ৫ কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৮-২২ ২১:৫৬:৫৯

 আপডেট: ২০১৬-০৮-২৩ ১২:০৮:৪৭

রওশন হাসান:

সমান্তরাল বিনিময়ে
তুমি অতি নিকটে যখন ছিলে
এক নির্ভরতায় কেটেছে মেয়াদী ক্ষণ
সময়ের স্বরগুলো ছিলো সুর হয়ে
উপলব্ধিতে ছিলো পার্বণ ঘ্রাণ
ভালোবাসারা ব্যকুল হয়ে
তোমায় আমায় ছিলো ঘিরে
অগণিত আদান-প্রদানেl
দুই দেহে বেঁচে ছিলো এক প্রাণ
দিন যেমন রাতের সাথে সমান্তরাল
একে অপরের পিছু নেয়
তেমনি ছিলো আমাদের বিনিময়l
নির্ঘুম রাত্রি আজ জানে কেন কাঁদে
বিনিদ্র চাঁদ স্পর্শাতীত মেঘে
যে মেঘ ভেসে গেছে দূরে, বহুদূরে!
চোখ জুড়ে লণ্ডভণ্ড ভাবনার পরাজয়
নিউরন থেকে উৎসারিত কত উদ্বেগ,
আবেগের বিষাদি ক্ষয়
আমি রঙহীন ক্যানভাসে কুঠুরি বন্দী
এক একটি প্রহর যেন এখন অর্বুদ যুগl

আসন্ন আষাঢ়ে
রোদবৃষ্টির ধীরতায় আসে জ্যামিতিক দিবস
বৃষ্টির সাথে যে রোদ আসে
ছেলেবেলায় দিনটিকে বলেছি
শেয়ালের বিয়ের দিন
মেঘের সংঘাতে অতিবৃষ্টিতে আসন্ন বর্ষায়
গ্রীষ্ম হবে অতীত মৌসুম
এ দূরত্বকে বলবো, একদিন গ্রীষ্ম ছিলো নিকট আত্মীয়
বলবো দ্যাখোনি, কেমন করে জলের সাগর হলো
আমাদের ভিজিয়ে গেলো আপাদমস্তক
হবো বিপন্ন আমি, বিপন্ন তুমি জল ছলচ্ছলে
বিষাদময় নক্ষত্রহীন আকাশে
খুঁজবো আশ্রয় শরীরের উত্তাল উত্তাপ ত্রিভুজে
তুমি-আমি মিলে হবো আষাঢ়ী নদীl



স্পর্শক নিমগ্নতায়
নিটোল বিকেলের মৃদু আলোয়
রোদছায়ায় দেখেছি তোমার মুখ
উজ্জীবিত চোখের
ধ্যানী রং দৃষ্টি
কাছে আসা প্রজাপতির পাখায় স্পর্শকাতর সুখে
মধ্য পথে সব ক্লান্তি সাঙ্গ করে
থমকে দাঁড়ানোর উদ্যম মোক্ষমে
দিকপাল ভালোবাসারা প্রকোষ্ঠ আবরণ খোলেl
খুঁজে পাই হৃদয়ে হৃদয়ে কদর
গালিবের কাব্য ছুঁয়ে ছুঁয়ে
ছুঁয়েছি তোমার অধর
দিবাশেষে যখন
ফেরারি পাখিরা ফিরে গেছে আকাশের চিহ্নে
নিগূঢ় অসীমত্বে সন্ধ্যা ঘনায়
আমি তখন বসন্ত ফিরিয়ে আনি
অনুল্লেখ অনুভবেl
খামোশী নিমগ্নতায়
বাউরি হাওয়ায় ওড়ে যখন
আমার বাঁধনখোলা চুল
অবাধ্য চুলে তুমি ছুঁয়ে দিও তোমার আকুল আঙুলl

ঝরাপালকে সন্ধ্যা ঘনায়
পৃথিবীর সব ফুল ঝরে যায়
তোমার বিষণ্ণ মুখে
আমার চোখে নামে অঝোরধারা
আকাশের দুঃখেl
দূরে যেতে যেতে ফেলে যাই ছায়া
মাটির বুকে ধূসর রোদের মায়া
একবার হাত বাড়িয়ে দেখো
একটি বর্ণ পরস্পর দৃষ্টিতে লেখো
বিনামেঘেই নামিয়ে দেবো সচ্ছল বৃষ্টিজল
আমার অশ্রুতে যা ছিলো গচ্ছিত সাগর অতলl
এ দহনকালে কাছে আসা এলবাট্রসের ঝাঁক
তরঙ্গ ছুঁয়ে যাওয়া জলের ভাঙনের বাঁক
মৃত্যু ঠোঁটে আমি শুনি অবিনাশী ডাক
একবার ঝরা পালকগুলো ছুঁয়ে দেখো
সমুখের বালুতে পদচ্ছাপ রাখো
সন্ধ্যা ঘনাবৃত যখন শূন্যতা জড়ানো অস্তাচলে
অবসাদে শৈল্পিক কাব্য ভাস্কর হবে শান্ত জলে
তুমিহীন দূরত্বেও কত আপন এ পৃথিবী জেনে নিও
সেদিনের খেলাঘরে আরেকটিবার সন্ধ্যাতারাটি জুড়ে দিওl
 
এত বাঁশি বাজে
কোলাহল দিনের মুখরিত আকাশ
গ্রীষ্মের প্রশস্ত দিন
পাখি, কাঠবিড়ালি, মানবসকল
পোহাচ্ছে সোনালি তাপময় বিকেল
ট্রাফিকের সংকেতে লাল, সবুজ বাতিতে
সিগন্যাল পেরিয়ে এক্সিটে
মাইলের পর মাইল দূরে চলে যাওয়া উদ্দেশ্যহীন
হেলমেটে মোটরসাইকেল আরোহীর তড়িঘড়ি পাশ কেটে যাওয়া
রাস্তার দুধারে সবুজ পাতাদের সমারোহে
টিউলিপ, ডেফোডিলের শির উঁচু সূর্যের পানে চাওয়া
আমার অধীর ভালোবাসারা বাঙময় গোলাপ হয়ে ফোটে
কাজল চোখের ব্যাকুল প্রকৃতি আলিঙ্গনাভিলাষী
গান গায় হাওয়ার সুরে সুরে
'আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে'l

আপনার মন্তব্য