শুভ্রজিৎ-এর একগুচ্ছ কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৮-২৪ ২৩:৩৩:৩৮

শুভ্রজিৎ:

বৃষ্টির কথা
মুষল বৃষ্টির মাঝে যাচ্ছে না তোমার অশ্রু দেখা,
তুমুল অভিমানে এখনো কিভাবে তুমি আছো একা!


অজানা
বিগত দিনে তুমি বুঝেছিলে আমাকে
যার প্রত্যুত্তরে তুমি বারংবার বলেছো-
'জানি না।'


অনুভব
আমি মৃত্যুকে উপেক্ষা করে চেলে যাবো
অথচ সে ডাকবে আমাকে
আমি তবু পিছু ফিরবো না,
সে থামাবে আমাকে
অতঃপর আমি চলতে অক্ষম;
লোপ পাবে আমার অমরত্ব
অনন্তকালের অহংকার লুটাবে মৃত্তিকায়
ভালোবাসার ঘ্রাণে মৃত্যু হবে আমার।


মৃত্যু
এদেশ তোমার নয়
পালাও, শিঘ্রি পালাও
এদেশ তোমার নয়।

বেশ্যারা পতিত পেশার
দালাল বুক ফুলায়
কবিদের কি বুক নেই?
তবে তাঁদের কেন দম নেই!

মগডালে খুনিরা বসে
ছক কষে জন-জীবিকার
দোষ নেই কোন;
তাদের কি দোষ হতে পারে?

আমার জন্য ৫৭-র 'খ'
নইলে রাশিয়ান ৪৭-র কালো পোশাক।


প্রতীক্ষার বচন
আনুষ্ঠানিক অনুভূতি আসে বেদনার প্রসবে
ধমনি নিশ্চুপ হয় আচারিয় সমাধিস্থলে
অনমনীয় হৃদয় জিজ্ঞাসে- কোন ছেদনে
অতীতকে ফিরিয়ে নিবো আমার অন্দরমহলে।

সমস্ত দূরত্ব, যান্ত্রিকতা আমাকে বিতাড়িত করে
কাষ্ঠের পথে, সবুজের মাঠে, বাতাসের স্নেহে
আমার চিরায়ত লোক-জাগানিয়ার কর্তব্যে
অমনোযোগী সময়ে সেনাকক্ষের নির্বোধ পাথরে।

একটি মুহূর্তের নেতৃত্ব, স্মরণের একটি জীবন
হিমাগারের প্রহরী পথে পথে খুঁজে তুষার
অর্জন করতে ব্যর্থ হয়- শান্তির আবরণ।


বেদনার প্রসব
এসো না শ্মশানে মোর, কেঁদো না অমন করে,
সেখানে আমি নেই, হারিয়েছি শুধু ঘুমের ঘোরে।

আমি ঝড়ো হাওয়ার মৃদু হাসির একটি ক্ষণ
আমি হীরক ঝলকা উল্কা, নিষ্পাপ-শুভ্র মন
আমি সৌর হাস্যে শস্য, ফুটেছি তব প্রান্তরে
আমি বসন্তের সভ্য বর্ষণ, ভিজাই অন্তরে।

যখন তোমাকে জাগায় রাত্রির খুনি- প্রভাতের নিস্তব্ধতা
তুমি ভয় পেয়ে ক্ষিপ্রগতির হাসিতে বাঁধো মহাভিড়
শান্ত পাখিরা হাওয়া চক্রমনে তখন খুঁজে নীড়
আমি তখনো অন্ধকারের কোমল নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা।

এসো না শ্মশানে মোর, কেঁদো না অমন করে,
সেখানে আমি নেই, মরি নি কোন তৃষ্ণার জ্বরে।


বৃষ্টি
আমার চোখে জমে মেঘ, ঝরে না হয়ে বৃষ্টি,
বাষ্প হয়ে ভেসে যায়, ধোঁয়াটে হয় দৃষ্টি।
অবশেষে তোমাকে ভেজায় আকাশ থেকে নেমে,
তুমিও উল্লাস নিয়ে ভিজো, গান গাও নব্য প্রেমে।


প্রতিবাদ
আমি বাম-ডান সব নিকুচি করি
শত্রুর সাথে কোন আপোষ নয়,
বিরোধের সাথে বিরোধিতা করছি
'প্রতিবাদ' এভাবেই করতে হয়।


ব্যবধান
তব চাওয়াতে এখন শ্রাবণের গান
আমার আকাশে উড়ে স্বপ্নের শঙ্খচিল,
এভাবে বাড়ছে মোদের অন্তঃব্যবধান
তবুও সফেদ মেঘের ফাঁকে ভাসে নীল।


দহন
যদি পারো আমার নাম লিখে রাখো শীঘ্র
আমি আজ চলে যাবো চিলের ডানায়,
তোমার শহরের অবাঞ্ছিত প্রেমিককে মনে রেখো
তুমি দেখেছিলে যখন হৃদয়ে ত্রাস করছিলো শূন্যতা,
আমি চলে যাব আজ
তোমাদের ইটের প্রাচীর ভেঙে
ঘন গরম নিশ্বাস ভুলে
আমি চলে যাবো ওই দূরে
আকাশ ছোঁয়া চিলের ডানায়।

দ্যাখো- আজ কাঁদছে হাওয়া
কাঁদছে দীঘির দোসর মাছরাঙা
শুধু হাসছে তোমার ঠোঁট
মনের খবর নিই নি, তাই জানি না।


রাত্রি সমাচার
গত দুইটি রাত কেমন কেটেছে
তা তোমার ঈশ্বর জানে না,
গত দুইটি রাত কেমন কেটেছে
তা তোমার আকাশ জানে না,
গত দুইটি রাত কেমন কেটেছে
তা আর তোমার বোঝার কথা নয়।

তুমি ওপাশ ফিরে শুয়েছিলে
প্রথম প্রহরে চোখে জল জমিয়েছিলে,
আর আমি সবটুকু শুষে নিলাম;
তারপর প্রচণ্ড মাইগ্রেনে কাতরেছিলে,
গা'টাও বেশ গরম হয়ে উঠেছিলো
কিন্তু তুমি আমার স্পর্শ নাও নি।

অভিমান জমিয়ে তুমি ওপাশ ফিরে শুয়েছিলে
আমাদের মাঝে টেনে এনেছো এক নিরেট দূরত্ব
একটু ফাঁক-ফোঁকর পেলে আমিতো চলেই যেতাম
তোমার হৃদয় গহিনে।
তোমার হৃৎস্পন্দনকে আমি আলতো অনুভব করতাম
আর জেনে নিতাম তোমার হৃদয়-বার্তা।

গত দুইটি রাত কেমন কেটেছে
তা আমার চাঁদ দেখেছে,
দূরের অগণিত চঞ্চল নক্ষত্র দেখেছে,
শুধু তুমিই বোঝ নি, বুঝবেও না;
কবিদের তো চোখের ভাষা নেই,
স্পর্শের অনুভূতি নেই,
হাসিতে বিদ্রূপ নেই,
অহংকারের অতীত নেই,
শুধু নিজেকে পোড়ানোর গন্ধে মুগ্ধ করা
ভালোবাসার প্রতিশব্দ কবিতা আছে
যার ভাষা সকলে বোঝে না,
বুঝতেও চায় না।


ভাঙনের অভিমান
সুযোগ পেলে এটা ভাঙি, ওটা ভাঙি;
কই! কারো মনতো ভাঙি না।
ইচ্ছে হলে খুব করে আঘাত করি,
ভালোবাসি বলে খেয়াল রাখি,
যত্ন করে অযত্ন করে;
তবু কারো মনতো ভাঙি না!
তোমার কি অমন ইচ্ছে করে?
ইচ্ছে হলে যেও দূরে
ডাকবো না আমি করুণ সুরে
পড়ে রবো একলা একা;
বৃক্ষের মতো বেদনা বক্ষে
হরিৎ করবো হলুদ,
শ্রাবণ এলে ভিজবো একা;
রুক্ষ মাটির দুঃখ হবো
বাষ্প-জলে শীতল রবো
তবু চাইবো না তোমার দেখা।
ইচ্ছে হলে ফিরে এসো
যতটা পারো ভালোবেসো
ছায়ার মতো কাছের এসো
আরো চাইলে জড়িয়ে রেখো
আমাকে গড়ো, আমাকে ভাঙো;
তোমার অলীক ইচ্ছে মতো।

আপনার মন্তব্য