কয়েকটি নিঃসঙ্গতার অণুগল্প

 প্রকাশিত: ২০১৮-০৭-২৫ ১৩:৩৫:৪৫

জহিরুল হক মজুমদার:

শীতের রাতে একটা ছোট কাঁথার টানাটানি ছিল নিজেদের মধ্যে। কখনো আমি নিজের দিকে টানতাম, আবার কখনো তুই তোর দিকে। তুই অনেক আগে ঘুম থেকে উঠে গায়ে রোদ লাগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতি, যা তোকে পুষিয়ে দিলাম। আজ তুই নেই। পুরো কাঁথাটাই আমার। তবু অনেক শীত করে।


বইটা অর্ধেক পড়ে টেবিলে খোলা অবস্থায় উপুড় করে রেখে তুই চলে গেলি ক্লাস করতে। আর ফিরে এলি না। আমি এখন বাকিটা পড়ছি। তুই কান পেতে শোন। তাহলে শুনে শুনে তোর পড়া হয়ে যাবে। আমি জানি তুই এখনো জেগে আছিস। আমার পড়া শেষ হলে তুই ঘুমিয়ে পড়িস। চলে যাওয়ার পর অতৃপ্ততা নিয়ে অন্যলোকে জেগে থাকা অনেক কষ্টের।


আই ড্রপটা একা একা দিতে হয়। অভ্যাস হয়ে গেছে। ঠিক ঠাক চোখের মধ্যে পড়ে। অনেক দিন প্র্যাকটিস করতে হয়েছে। আগে একজন কেউ দিয়ে দিক এই ভাবনায় চোখ ভেসে যেত লোনা জলে। আজকাল আর হয়না। আইড্রপ থেকে যখন এক ফোঁটা চোখের দিকে এগিয়ে আসে তখন তাকে আকাশ থেকে পড়া বিশাল অশ্রুবিন্দু মনে হয়।

আর কান্নার দরকার কি?


মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর বিছানায় উঠে বসি। আলো জ্বালি। তুমি বললে আবার ঘুমিয়ে পড়। হঠাৎ দেখি তুমি নও। তোমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় আমার প্রতিচ্ছবি। সে আমাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলছে।

...কতদিন এই আয়নায় তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে তোমার মুখখানি দেখেছি। সেটাই ছিল অভ্যাস। আজ তুমি নেই। তবুও সেই পুরনো অভ্যাসের জমা স্মৃতির প্রভাবে আজ নিজের মুখখানিকে তোমার মুখ বলে মনে হল।

ভালবাসা কী?

...মধ্যরাতের ঘুম ভাঙা বিভ্রান্তি? না কি ছায়া হয়েও কায়ার মত প্রিয়জনকে যত্ন করা?

আপনার মন্তব্য