ডাকবাক্সের খোঁজে: লেখক আর রানারের যুগলবন্দি

 প্রকাশিত: ২০২০-০২-০৮ ০১:০৪:৩৩

 আপডেট: ২০২০-০২-০৮ ০১:০৫:৪৪

মাসুদ পারভেজ:

অসংখ্য শব্দের ঝাঁপি নিয়ে রানারের ছুটে চলার আশৈশব আনন্দে মশগুল একজন। প্রিয়তমাদের জন্য লেখা চিঠিসম্ভার নিয়ে সব্যসাচী লিখিয়ে বিমান ধরের প্রথম পত্রকাব্য/পত্রসাহিত্য ‘ডাকবাক্সের খোঁজে’। চিঠিতে প্রকাশ পেয়েছে দেখা আর অনুভবের নানা ভাষা । যাবতীয় যা কিছু লেখক অবলোকন করছেন তাই লিখছেন চিঠিতে। লিখতে-লিখতে চলে যাচ্ছেন নানা গলি পেরিয়ে, কাল হারিয়ে মহাকালে। যেখানে উৎপত্তি লেখকের যত্নেগড়া কল্পনাবিলাস। সেখানে খাবি খায় যত্নে গড়া একজোড়া মন, যারা এক ও অভিন্ন হয়ে যাপন করছে সোনামুখো জীবন। অভিযোগ নয় বরং অনুযোগ। ভালোবাসা সেখানে ফল্গুধারা,বয়ে যাচ্ছে নিরবধি। এই বয়ে যাওয়ার মাঝে চোখেতে লাগছে পাহাড়-পর্বত। সমুদ্রের নোনাপানি। মিঠাপানির ব্যাঙ্গাচি থেকে শিল্পী বাবুইপাখি। লেখকের চোখ এড়ায় নি এ-সবের কোন কিছুই। যেন চোখ মেলেছেন দেখবেন বলে, দেখার জন্য জন্মেছেন বলে।

বিচিত্র সব অনুভূতির বটবৃক্ষ নিয়ে হাজির হওয়ার মধ্যে একধরণের প্রশ্রয় আছে নিশ্চয় ! আর লেখার হাত লেখকের চেয়ে দ্রুত চলে, চোখ জোড়া সাথে নিয়ে। চলে যায় দূরে । আরও দূরে । দিগন্ত পেরিয়ে গেলে নীল আকাশের ডানায় চড়ে ।

অনুপম রায়ের গলায় শুনেছি আমার ঠোঁটে মুখে গালে তুমি লেগে আছো ; ঠিক এমনি করে প্রিয়তমার কোল ঘেঁষে অস্তিত্বের সবটা জুড়ে লেগে থাকার স্বর্গীয় বিবরণ প্রকাশ পেয়েছে চিঠিতে। কখনও আকাশের শাদামেঘ হতে চাওয়া, নরম,তুলতুলে তোয়ালের সুতো হয়ে মুখেতে পরশ দেওয়া কিংবা আস্ত চাঁদে এক নিমিষেই প্রেয়সীর সোনামুখ দেখতে পাওয়া প্রেমিক নিশ্চয় খুব কম। ভাবতে পারাটাই তো ভালোবাসার নিদারুণ বহিঃপ্রকাশ। সেখানে স্বর্গসুখ লুটায়ে আসে প্রেমিকার অধরে । অধর পেরিয়ে গেলে নীল তিলে শোভা হয়ে।

কেউ যদি ভালোবেসে খুনি হতে চান, তাহলে... হেলাল হাফিজের তো বটেই ।এমনকি বাংলা সাহিত্যের অমর কবিতাগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে এই কবিতা অন্যতম । ডাকবাক্সের খোঁজে থাকা লেখক হয়তোবা খুনি হতে চান না। হতে চান আস্ত এক পুকুরপ্রেমিক। না, ঠিক তাও নয়। বরং ভালোবাসতে চান পুকুরের প্রতিটা জলের ফোটায়। জল ফুরোবে না, সহজে ফুরোয় না। ঠিক ফুরিয়ে যাওয়ার আগে চোখের জলে আগুনের শিখা উড়ানোর মত উষ্ণতা জমা হয় মনের গহীন কোণে। ভালোবাসা সেখানে হালকা কিন্তু আরক্তিম লাল টুকটুকে। নানা অলিন্দ পেরিয়ে ঠিকই পেয়ে বসে আরাধনার সৌরভ। সেখানে জগৎবিখ্যাত সুফিগুরু আল্লামা রুমি ধ্যানে বসেছেন আর দেখছেন তৃতীয় চোখে । ভুল-শুদ্ধের বাইরে এসে...

কখনও-কখনও মেঘ হতে, উড়তে-উড়তে বিস্ময় পেয়ে গেলে সোজা মর্ত্যে। সেখানে ভালোবাসা প্রকাশ পায় নানাভাবে। নানা ঢঙে। মানুষ সেখানে নিমিষেই ফানুশ হয়ে যায়। আর ফানুশ, আলতোরাঙা রঙে মন ভুলিয়ে যায় নিত্য। সে কারণে হয়তোবা প্রিয়কে পাওয়ার নানা বাহানা । যেগুলো ডানা রাঙিয়ে ছুটে চলে সীমা পেরিয়ে অসীমে । কেউ ছুঁতে পারুক আর না পারুক; আদতে তা বাসা বাঁধে প্রেমিকের গোপন মনজিলে । সুফিরা যেটাকে বলে মোকাম মনজিল । যেখানে নানা সাধনার শেষে দেখা মেলে দেলকাবার। যার দেখা সবাই পায় না। দেখা মিললেও চোখ থাকে না দেখার। মন থাকে না বুঝার। সে এক ভীষণ বিভীষণ !

কিন্তু এত-এত চিঠির সবটা গন্তব্যে পৌঁছে না। লেখক চিঠি লিখে ফেলে রাখে। যাবতীয় আলসেমি হয়তোবা ঝেঁকে বসে কিংবা রানারের খামখেয়ালিতে যত্নে লেখা চিঠি হারিয়ে যায় । হারিয়ে যায় না ঠিক কিন্তু ভীষণ দেরি করে ফেলে গন্তব্যে যেতে-যেতে । এর মধ্যে প্রেমিকের চোখের জল অঙ্গার হয়ে যায়। ফুল ফুটে ঝরে যায়। ভেসে যায় অচিনপুরের হিম জল। মিশে যায় মোহনায়। হয়তোবা প্রেমিক চিঠি পাওয়ার খানিক আগে হাল ছেড়ে দিল ব্যর্থ প্রেমিক। নতুবা নিজেকে অচ্যুত ভেবে সঁপে দিল যাতনার কোল ঘেঁষে । ভালোবাসা সেখানে ডিঙ্গিনৌকা । যে নৌকায় দুইজন আরোহী না হওয়ায় মাঝি নাও চালাবে না, স্থির হয়ে বসে আছে মাঝ দরিয়ায়; প্রিয় পাঠক, ডিঙি নৌকায় দুইজন থাকা লাগে । প্রিয় মানুষকে নিয়ে উঁচু-নিচু শব্দের কোরাসে পাঠ করুন পবিত্র গ্রন্থ ‘ডাকবাক্সের খোঁজে’। বিফলে ভালোবাসা জলে যাবে, যদি না শুরু করেন এই বলে: শুরু করছি এই গ্রন্থ আমার মহান প্রেমিকার নামে...

আপনার মন্তব্য