আবদুল হাসিব-এর স্বাধীনতার দুই কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৫-১২-১৫ ১৩:৫০:১৩

আমার চোখে যে স্বাধীনতা জ্বলে সে স্বাধীনতা আমার বাবার ভিটায় একমাত্র মাথা গোজাবার ঠাঁই দুচালা ঘরের ভস:

মূর্ত স্বাধীনতা
আমার চোখে যে স্বাধীনতা জ্বলে
সে স্বাধীনতা- আমার সহযোদ্ধা অমরের
বুকের উষ্ণ রক্তে রঞ্জিত
সবুজ ঘাসের আগুন শরীর।

আমার চোখে যে স্বাধীনতা জ্বলে
সে স্বাধীনতা- মুক্তিযুদ্ধে যাবার অপরাধে
আমার সাত বছরের শিশুর
ব্যায়নেটবিদ্ধ রক্তস্নাত আড়ষ্ট শরীর।

আমার চোখে যে স্বাধীনতা জ্বলে
সে স্বাধীনতা- আমার প্রিয়তমা স্ত্রী’র
পাশবিক অত্যাচারের শিকার
ধুলায় লুন্ঠিত বিবস্ত্র শরীর।

আমার চোখে যে স্বাধীনতা জ্বলে
সে স্বাধীনতা- আমার বাবা’র ভিটায়
একমাত্র মাথা গোজাবার ঠাঁই
দু’চালা ঘরের ভস্মীভূত ছাই।


অনন্ত যৌবনা এক প্রতিক্ষা
আমার ভালোবাসার চূড়ান্ত পর্বে হিলারী
তেনজিং’এর কষ্টার্জিত আনন্দের মতো
আমার আনন্দ ছিলো। আমার ফুলশয্যার ঘরে
খুশীর ফল্গুধারায় মদিরা আবেশ, স্পর্শে স্পর্শে
আমরা দু’জন যখনই ভুলে যাব পৃথিবীর আর সব,
ঠিক সেই সময় দিড়িম দিড়িম গুলির শব্দে
আচম্ভিতে নিদ্রা টুটে যাওয়া মানুষের ভয়ার্ত আর্তনাদে
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় মাথা লোকালাম তারই বুকে,
যার বুকখানা আজীবন প্রশান্তির তীর্থস্থান হবে।

ভয়ে বিচলিত নির্বাক দৃষ্টি রাখলাম জানলার বাইরে
দেখলাম, জঘন্য হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে
মহানগরী ঢাকা। পিচঢালা পথে রক্তের স্রোত,
চারিদিকে আগুনের লেলিহান শিখা,
রুদ্ররোষে বাহুমুক্ত করে যুদ্ধে যাবে বলে
সেই যে গেলো চলে অন্ধকারে, আর এলোনা।

কত বসন্ত চিতায় পুড়ে আমি প্রৌঢ়া আজ
অথচ, আমার আশা আমার বিশ্বাস একটুও
বয়বৃদ্ধ হয়না, যেখানেই যখন কোন জনসমাবেশ দেখি,
চোখের তারারন্দ্র বড় বড় করে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করি
হারিয়ে যাওয়া আমারই আনন্দ সুন্দরের সন্ধানে।

আমার চোখে রঙের বাহার নেই, বর্ণালী সন্ধ্যাকে বিবর্ণ লাগে,
পূর্ণিমার উদ্ভাসিত চাঁদকে আমি ধূসর দেখি.
ভোরের কাকলী, কামিনী শেফালি, সোনালী রোদ্দুর
কিছুই এখন আর ভালো লাগেনা। ভালো লাগে কেবল
তার জন্যে পথ চেয়ে থাকা। আমার সেই নিরন্তর প্রতিক্ষা
নিঃশেষ হবার নয়; সে প্রতিক্ষা- এক অনন্ত যৌবনা।

আপনার মন্তব্য