বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা, পঞ্চম পর্ব : ৩-৪

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৮-১০ ০৮:৫৪:২৩

কাজী মাহবুব হাসান:

বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা, পঞ্চম পর্ব  (নির্ভারতা এবং ভার ) : ৩-৪

টমাস যখন জুরিখ থেকে প্রাহাতে ফিরে এসেছিল, সেই একই হাসপাতালেই কাজে যোগ দিয়েছিল, যেখান থেকে সে চলে গিয়েছিল একদিন। তারপর একদিন হাসপাতালের প্রধান সার্জন তার অফিসে তাকে ডেকে পাঠান।

‘তুমি খুব ভালো করেই যেমন জানো, আমিও তেমনটাই জানি’, তিনি টমাসকে বলেন, ‘তুমি কোনো লেখক বা সাংবাদিক বা জাতির রক্ষাকর্তা না, তুমি হচ্ছো ডাক্তার, একজন বিজ্ঞানী, তোমাকে হারাতে আমার খারাপ লাগবে, আমার ক্ষমতায় যা আছে তাই করবো তোমাকে এখানে রাখার জন্য, কিন্তু তোমাকে সেই লেখাটি প্রত্যাহার করতে হবে, যেখানে তুমি ইডিপাসকে নিয়ে লিখেছিলে। লেখাটি কি তোমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ’?

 ‘সত্যি কথা বলতে কি’, লেখাটিকে কিভাবে সম্পাদক কেটে ছেঁটে মাত্র এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট রেখেছিলেন সেই কথা স্মরণ করেই টমাস তার উত্তরে বলে, ‘কিছুতেই লেখাটি অমার কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেনা’।

‘তুমি নিশ্চয়ই জানো, এখানে ঝুঁকির বিষয়টা কি, কোন বিষয়গুলো হুমকির মুখে আছে’, প্রধান সার্জন বলেন।

অবশ্যই টমাস খুব ভালো করে জানতো ঝুঁকিটা কি। দুটি বিষয় এখানে হুমকির মুখে: তার সম্মান ( যেটি মূলত সে যা বলেছিল সেটি প্রত্যাহার না করতে তার অস্বীকৃতি) এবং সেটি, যে বিষয়টিকে সে তার জীবনের অর্থ বলেই গ্রহণ করেছে  ( চিকিৎসা বিজ্ঞান আর গবেষণায় তার কাজ)।

প্রধান সার্জন বলতে থাকেন, ‘অতীতের বক্তব্য প্রকাশ্যে প্রত্যাহার করার জন্য চাপে দেয়ার সাথে এমন কিছু আছে যা অবশ্যই মধ্যযুগীয়।আর যাই হোক না কেন, কেউ যা একসময় বলেছে, সেটি ‘প্রত্যাহার’ করার কি অর্থ হতে পারে? কিভাবেই বা কেউ সুনিশ্চিৎভাবেই বলতে পারে যে একসময় সে যে ভাবনাটি ভেবেছিল সেই ভাবনাটি আর বৈধ নয়? আধুনিক সময়ে ধারণাকে খণ্ডানো বা ভ্রান্ত প্রমাণ করা যেতে পারে, হ্যাঁ, তবে প্রত্যাহার করা যায় না। সুতরাং প্রত্যাহার করার ধারণাটি অসম্ভাব্য, শুধুমাত্র মৌখিক, আনুষ্ঠানিক জাদুবিদ্যা। তাই আমি কোনো কারণ দেখছি না তাদের ইচ্ছা মত কেন তুমি সেটা করা উচিৎ মনে করছো না। যে সমাজ পরিচালিত হয় ত্রাসের দ্বারা, সেখানে কোনো বিবৃতিকেই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিৎ না। সব কিছুই বল প্রয়োগের মাধ্যমে আদায় করা, আর প্রতিটি সৎ মানুষের উচিৎ তাদের উপেক্ষা করা। আমাকে শেষ করতে দাও এই বলে যে, আমার স্বার্থে এবং তোমার রোগীদের স্বার্থেই এখানে আমাদের সাথে তোমার থাকাটা খুবই জরুরী’।

স্পষ্টতই অসন্তুষ্ট টমাস বলে,‘ তুমি ঠিক বলেছো, আমি নিশ্চিত’।

‘কিন্তু?’, প্রধান সার্জন তার চিন্তার প্রবাহটি অনুমান করার চেষ্টা করেন।

‘আমি ভয় পাচ্ছি, আমি লজ্জিত আর অপমানিত হবো এমন কিছু করলে।’

‘লজ্জিত! এর মানে তুমি তোমার সহকর্মীদের এমেই শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছো যে, তারা কি চিন্তা করে সেটা নিয়ে তুমি উৎকণ্ঠিত’?

‘না’, টমাস বলে, ‘আমি তাদের কোনো বিশেষ মর্যাদা দেইনি’।

‘ওহ, আরেকটা কথা’, প্রধান সার্জন যোগ করেন, ‘তোমাকে প্রকাশ্যে কোনো বক্তব্য দিতে হবে না। আমি তাদের কাছে থেকে সেই নিশ্চয়তা পেয়েছি।তারা সবাই আমলা, তাদের যা দরকার তা হলো তাদের ফাইলে একটি নোট রাখা যে, তুমি এই কমিউনিস্ট সরকারের কোনো বিরোধিতা করো না।তারপর  কেউ যদি তাদের কাছে কখনো দাবী ও আক্রমণ করে জানতে চায় কেন তোমাকে হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ এখনও কেড়ে নেয়া হয়নি, তারা তাদের পিঠ বাঁচাতে পারবে। তারা আমাকে কথা দিয়েছে তুমি যা কিছু বলবে সবই গোপন থাকবে, একটি শব্দ প্রকাশ করতে তারা আগ্রহী না।

টমাস বলে ‘আমাকে এক সপ্তাহ সময় দাও বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবার জন্য।’ এখানেই থেমে ছিল ব্যাপারটা তারপর।


টমাসকেই হাসপাতালের সেরা সার্জন হিসাবে মনে করা হতো, গুজব ছিল, প্রধান সার্জন, যিনি তার অবসর নেবার বয়সের কাছাকাছি পৌঁছেছেন, খুব শীঘ্রই তিনি টমাসকে তার দায়িত্ব নিতে বলবেন। যখন এই গুজবের সাথে যোগ হয়েছিল আরো একটি গুজব যে কর্তৃপক্ষ টমাসের কাছ থেকে আত্মসমালোচনা মূলক বিবৃতি দাবী করেছে।কারো মনেই সন্দেহ ছিলনা যে টমাস এই শর্তটি মানবে।

আর টমাসকে ঠিক সেই বিষয়টি প্রথম একটি ধাক্কা দেয়:  যদিও সে কখনোই মানুষকে তার সততা সম্বন্ধে সন্দেহ করার কারণ দেয়নি ঠিকই কিন্তু তারা সবাই প্রস্তুত তার সততা নয় বরং অসততার উপর বাজি রাখতে।দ্বিতীয় যে বিষয়টি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেটি হচ্ছে, যে অবস্থানটি তারা তার উপর আরোপিত করেছে সেটির প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়াগুলো। আমি সেগুলোকে দুটি মূল ভাগে বিভক্ত করতে পারি:

প্রথম ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে সেই সব মানুষদের কাছ থেকে ( তারা অথবা তাদের আপনজনেরা) যারা নিজেরাই এভাবে তাদের ইতিপূর্বে করা কোনা না কোনো বক্তব্য প্রত্যাহার করেছে। যারা নিজেরাই বাধ্য হয়েছে দখলকৃত শাসকদের সাথে জনসমক্ষে বিরোধ মীমাংসা করতে অথবা সেটি করার জন্য তারা প্রস্তুত হয়েছিল (অবশ্যই, অনিচ্ছাসত্ত্বে - কারণ কেউ চায়নি এমন কিছু করতে)।

এই সব মানুষগুলো তার প্রতি কৌতূহলী অর্থপূর্ণ একটি হাসি হাসতে শুরু করেছিল, যে হাসি সে এর আগে কোনোদিনও দেখেনি। গোপন কোনো ষড়যন্ত্রের সাথে সম্মতি জানানো অপ্রস্তুত স্মিতহাসির মত। পতিতালয়ে  আকস্মিকভাবে দেখা হওয়া দুটি পুরুষের হাসির মত: দুজনেই খানিকটা লজ্জিত। এবং একই সাথে তারা তৃপ্ত যে এই অনুভূতিটি পারস্পরিক এবং তাদের মধ্য ভ্রাতৃত্বের মতো একটি বন্ধনও তৈরি হয়।

তাদের হাসিগুলো আরো বেশী আত্মতুষ্ট কারণ টমাসের কখনোই সুনাম ছিল না প্রথানুবর্তী হিসাবে। প্রধান সার্জনের প্রস্তাবের প্রতি তার কথিত সম্মতি সেকারণে আরো বাড়তি একটি প্রমাণ যে ভীরুতা ধীরে, তবে নিশ্চিতভাবেই আচরণের আদর্শের রূপান্তরিত হচ্ছে সেই সময়ে এবং শীঘ্রই এটি আসলেই এটি মূলত যা, সেই হিসাবে আর গৃহীত হবে না। কখনোই সে এই সব মানুষদের বন্ধু ছিলনা এবং হতাশার সাথে সে অনুধাবন করে, যদি বাস্তবিকভাবেই সে এমন কোনো বক্তব্য প্রদান করে, যেমনটি তার প্রধান সার্জন অনুরোধ করেছেন তার কাছে, তাহলে তারা তাকে তাদের দাওয়াতে নিমন্ত্রণ করা শুরু করবে এবং তাদের সাথে তার বন্ধুত্বও করতে হবে।

দ্বিতীয় ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে সেই সব মানুষদের কাছে যারা নিজেরাই ( তারা অথবা তাদের আপনজনরা) নিগৃহীত হয়েছেন, যারা দখলদার ক্ষমতাসীনদের সমঝোতা করতে অস্বীকার করেছিলেন অথবা দৃঢ় সংকল্প ছিলেন কোনো সমঝোতা করতে তারা অস্বীকৃতি জানাবেন (কোনো বিবৃতিতে স্বাক্ষর দেয়া) এমনকি যদিও কেউই তাদের কাছে সেটির করার জন্য কোনো অনুরোধ করেনি (যেমন, তারা বয়সে অনেক তরুণ ছিল এসব বিষয়ে সত্যিকারভাবে সংশ্লিষ্ট থাকার জন্য।)।

পরের গ্রুপের মানুষদের একজন, ডাক্তার এস,  প্রতিভাবান তরুণ চিকিৎসক, টমাসকে একদিন জিজ্ঞাসা করে, ‘বেশ, আপনি কি তাদের জন্য বিবৃতিটি লেখা শেষ করেছেন’?

টমাস উত্তরে তাকে পাল্টা জিজ্ঞাসা করে, ‘তুমি কোন বিষয়ে কথা বলছো’?

‘কেন, আপনার মন্তব্য প্রত্যাহার’ সে বলে। তার কণ্ঠে কোনো বিদ্বেষ নেই। সে এমনকি হাসেও, সেই সমষ্টিগত হাসির আরো একটি হাসি: সেই নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করা দৃষ্টিকটুভাবে আত্মতৃপ্ত হাসি।

টমাস বলে, ‘আমাকে বলো, আমার এই প্রত্যাহার সম্বন্ধে তুমি কতটুক জানো? তুমি কি পড়েছো’?

‘না’ বলে, ডাক্তার এস।

‘তাহলে তুমি আবোল তাবোল কথা বলছো কেন’?

তারপরও আত্মতৃপ্ত, তখনও মুখে হাসি নিয়ে, এস উত্তর দেয়, ‘দেখুন, আমরা সবাই জানি বিষয়টি কিভাবে হয়। আপনি প্রধান সার্জনকে লেখা চিঠিতে সেটি যুক্ত করে দেবেন, নয়তো কোনো মন্ত্রী অথবা অন্য কাউকে, এবং সে প্রতিজ্ঞা করবে এটা কখনোই প্রকাশ হবে না এবং এর লেখককে অপমান করবে না। আমি ঠিক বলছি না’?

টমাস কাঁধ ঝাঁকায়, এস’কে কথা বলার সুযোগ দিয়ে।

‘কিন্তু এমনকি বিবৃতিটি নিরাপদে ফাইলে সংরক্ষিত হবার পরও এর লেখক কিন্তু জানেন যে এটিকে প্রকাশ করে দেওয়া হতে পারে যে কোনো মুহূর্তে। সুতরাং এরপর থেকে সে আর তার মুখ খুলবে না, কখনোই কিছুর সমালোচনা করবে না, বিন্দুমাত্র কোনো প্রতিবাদ করবে না। কারণ তার থেকেই বের হওয়া সামান্য বিচ্যুতি, এটিকে প্রকাশ করে দেবার কারণ হবে, যা তার সুনাম চিরকালের মতই ধ্বংস করবে সবক্ষেত্রে।সার্বিকভাবে, এটি বরং বেশ ভদ্র কৌশল। এর চেয়ে আরো খারাপ পদ্ধতি কল্পনা করা সম্ভব’।

‘হ্যাঁ, আসলেই ভালো পদ্ধতি এটি’, টমাস বলে, ‘কিন্তু তুমি কি আমাকে বলবে, কে তোমাকে এমন ধারণা দিল যে আমি এমন কিছু করতে রাজি হবো’?

এস এবার কাঁধ ঝাঁকায়, কিন্তু তার মুখ থেকে হাসিটা হারিয়ে যায় না।

হঠাৎ করেই টমাস একটি অদ্ভুত সত্য উপলব্ধি করতে পারে। সবাই তার দিকে তাকিয়ে হাসছে, সবাই চাইছে সে তার মন্তব্য প্রত্যাহার করা বিবৃতিটি লিখুক।এটা সবাইকে খুশী করবে! প্রথম ধরনের প্রতিক্রিয়াসহ মানুষগুলো খুশী হবে কারণ তার এই কাজটি তাদের কাপুরুষতাকে স্ফীত করবে, সে তাদের কাজগুলোকে খুব স্বাভাবিক হিসাবে প্রতীয়মান করবে এবং এভাবে সে তাদেরকে তাদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দেবে। দ্বিতীয় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো মানুষগুলো যারা তাদের সম্মানকে মনে করে বিশেষ সুবিধা, যা কখনোই সমর্পণ করা উচিৎ না, তারা কাপুরুষদের প্রতি একটি গোপন ভালোবাসা অন্তরে ধারণ করে, কারণ এই কাপুরুষরা না থাকলে তাদের সাহস খুব দ্রুত ক্ষয় পাবে তুচ্ছ, একঘেয়ে কাজে. যা কেউ প্রশংসা করেনা।

টমাস এই হাসিগুলো সহ্য করতে পারেনা। তার মনে হতো সব জায়গায় এই হাসি তাকে দেখতে হচ্ছে, এমনকি রাস্তায় কোনো আগন্তুকের মুখেও। অনিদ্রায় ভুগতে শুরু করে টমাস। এমন কি হতে পারে? আসলেই কি ঐসব মানুষদের মতামতগুলোকে এত মূল্য দেয় সে? না, তাদের জন্য ভালো কিছু বলার মত নেই তার, নিজের উপরেই রাগ হয় তার, এসব মানুষগুলোকে তার দিকে তাকানোর আর তার মনের শান্তি নষ্ট করতে দেবার সুযোগ দেবার জন্য। এটি পুরোপুরিভাবে অযৌক্তিক একটি বিষয় তার কাছে। কিভাবে এমন কেউ, যে কিনা এই সব মানুষগুলোর প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধা ধারণ করেনা, সেই আবার এত বেশী নির্ভর করছে তারা কি বলছে সেটার উপর?

হয়তো তার মনের গভীরে প্রোথিত মানুষের প্রতি অবিশ্বাস ( তাকে বিচার আর তার নিয়তি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাদের অধিকার নিয়ে তার সন্দেহ) খুব সামান্যই ভূমিকা রেখেছিল তার পেশা নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে, যে পেশা তাকে উন্মুক্ত কোনো প্রদর্শন থেকে রেহাই দিয়েছে। ধরুন যে মানুষটি রাজনীতিবিদ হতে চেয়েছে, সে নিজেই স্বেচ্ছায় জনগণকে তার বিচারক হিসাবে মেনে নিয়েছে সরল বিশ্বাসে যে এর বিনিময়ে সে তাদের সমর্থন পাবে। এবং যদি জনগণ তাদের অসম্মতি জ্ঞাপন করে এটি তাকে তাড়িত তরে আরো বড় আরো ভালো কিছু করার জন্য, অনেকটাই টমাস যেভাবে প্রণোদনা পায় কোনো কঠিন অসুখ শনাক্ত করার চ্যালেঞ্জের মুখে।

একজন চিকিৎসককে (রাজনীতিবিদ অথবা একজন অভিনেতার ব্যতিক্রম) বিচার করে তার রোগী এবং খুব কাছের সহকর্মীরা, অর্থাৎ, সেটি বন্ধ দরজার পেছনে, একান্তে ব্যক্তিগত পর্যায়ে। যারা তাকে বিচার করবে তাদের দৃষ্টির মুখোমুখি হয়ে, তাৎক্ষনিকভাবে সে তার নিজস্ব দৃষ্টি দিয়ে যার উত্তর দিতে পারে তার নিজেকে ব্যাখ্যা আত্মপক্ষ সমর্থন করার মাধ্যমে। এখন (তার জীবনে প্রথমবারের মত) টমাস তার নিজেকে এমন একটি  পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করে যেখানে তার উপর নিবদ্ধ দৃষ্টি সংখ্যায় এত বেশী যে, সে ব্যর্থ হয় সেগুলো শনাক্ত করতে। তার নিজের দৃষ্টি কিংবা শব্দ কোনোটার দ্বারাই সে তাদের উত্তর দিতে পারেনা।সবার আক্রমণের নিশানা এখন সে। হাসপাতালের ভিতরে বাইরে মানুষ তাকে নিয়ে কথা বলে ( সেটা এমন এক সময় যখন কারো বিশ্বাসঘাতকতার খবর,কারো ধরা পড়ার খবর, যারা প্রতিপক্ষকে সহায়তা করছে তাদের খবর উৎকণ্ঠিত প্রাহায় গুজবের সেই অদ্ভুত দ্রুততায় ছড়িয়ে পড়তো)।যদিও সে সেটি জানতো, তার পক্ষে কিছুই করার ছিল না এসব থামানোর জন্য। সে অবাক হয়েছিল কি পরিমাণ অসহ্য মনে হয়েছিল বিষয়টি তার কাছে সেটি অনুধাবন করে, ঠিক কতটা আতঙ্কিত করেছিল বিষয়টি তাকে।তার প্রতি দেখানো তাদের আগ্রহ ততটাই অপ্রীতিকর যেমন কনুই দিয়ে ধাক্কা দেয়ার মত মানুষের ভিড়, সেই মানুষগুলোর হাতের থাবা মত, যারা দুঃস্বপ্নের সময় আমাদের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।

টমাস অবশেষে প্রধান সার্জনের সাথে আবার দেখা করে ও তাকে জানায় একটি শব্দও সে লিখবে না।

সাধারণ পরিস্থিতির তুলনা প্রধান সার্জন আরো বেশী তীব্রতার সাথে তার হাত ঝাঁকুনি দেয় এবং বলেন তিনি আগে থেকেই টমাসের সিদ্ধান্তটি প্রত্যাশা করেছিলেন।

টমাস বলেছিল,  ‘হয়তো আপনি কোনো রাস্তা বের করতে পারেন কোনো ধরনের বিবৃতি ছাড়াই আমাকে কাজে রাখার জন্য’, আভাস দেবার চেষ্টা করে সে, তাকে বরখাস্ত করলে সহকর্মীরা সব একযোগে পদত্যাগ করবে এমন একটি হুমকি হয়তো এখানে তাকে চাকরীতে অব্যাহত রাখার জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

কিন্তু তার সহকর্মীরা কেউই কখনোও কল্পনা করেনি পদত্যাগের হুমকি দেবার জন্য।সুতরাং খুব বেশী সময় পার হবার আগেই (আগের চেয়ে আরো উদ্যমের সাথে তার হাত ঝাঁকিয়ে ছিলেন প্রধান সার্জন- বেশ কিছুদিন হাত যন্ত্রণাও করেছিল টমাসের) তাকে হাসপাতাল ত্যাগে বাধ্য করা হয়।
(চলবে)

আপনার মন্তব্য