বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা, সপ্তম পর্ব : ৬-৭

 প্রকাশিত: ২০১৬-১১-১৩ ০৩:৪২:৫৬

কাজী মাহবুব হাসান:

বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা, সপ্তম পর্ব (কারেনিনের হাসি)

টমাস তার ডেস্কে বসে ছিল যেখানে বসে সাধারণত সে বই পড়ে। এরকম কোনো সময় তেরেজা সাধারণত পেছন থেকে এসে ঝুঁকে পড়ে টমাসের গালের সাথে তার গাল লাগায়। সেদিন, তবে সে তাকে চমকে দিয়েছিল। টমাস বই পড়ছিল না, তার সামনে ছিল একটি চিঠি, এমনকি যদিও সেটি টাইপ করা পাঁচটি লাইনের বেশী নয়। টমাস তার দিকে অনেকক্ষণ ধরে করে তাকিয়ে ছিল।

‘কি এটা’? তেরেজা জিজ্ঞাসা করে, হঠাৎ উৎকণ্ঠার সাথে।

মাথা না ঘুরিয়ে টমাস চিঠিটা হাতে নেয় ও তার হাতে দেয়। চিঠিটি বলছে যে পাশের শহরে এয়ার ফিল্ডে তাকে অবশ্যই রিপোর্ট করতে হবে সেদিন।

যখন অবশেষে সে তার দিকে ঘুরে তাকায়, তেরেজা তার চোখে নতুন অনুভব করা শঙ্কা দেখতে পায়।

‘আমি তোমার সাথে যাবো’, সে বলে।

টমাস তার মাথা নাড়ায়,‘ শুধুমাত্র আমার সাথে তারা দেখা করতে চাচ্ছে’।

‘না, আমি তোমার সাথে যাচ্ছি’, সে পুনরাবৃত্তি করে।

খামারের জন্য টমাস যে গাড়িটি চালায় সেটি তারা নেয় সেখানে যাবার জন্য। আর অল্প সময়ের মধ্যে তারা এয়ারফিল্ডে পৌঁছে যায়। কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল সেদিন। রানওয়ের মধ্য অস্পষ্টভাবে তারা কয়েকটি দাড়িয়ে থাকা উড়োজাহাজের ছায়া দেখতে পায়। প্রতিটার দরজার কাছে যায়, কিন্তু সব দরজাই ছিল বন্ধ। ‘প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত’; অবশেষ তারা একটি উড়োজাহাজের দরজা খুঁজে পায় যেটি খোলা ছিল। সরানো যায় এমন একটি সিঁড়ির ধাপ উঠে গেছে দরজা অবধি। তারা সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠে এবং দরজায় তাদের স্বাগত জানায় একজন স্টিউয়ার্ড । খুবই ছোট একটি উড়োজাহাজ, যেখানে কোনোমতে ত্রিশ জন যাত্রী বসতে পারে। আর এখন সম্পূর্ণ খালি। আসনগুলোর মধ্যবর্তী থালি জায়গা দিয়ে হেটে যায় চারপাশে কোনো কিছুর প্রতি নজর না দিয়ে নিজেদের হাত ধরাধরি করে, পাশাপাশি দুটি সিট তারা বেছে নেয়, এবং তেরেজা টমাসের কাঁধে মাথা রাখে। আতঙ্কের প্রথম ধাক্কাটি অতিক্রান্ত হয়, সেটি প্রতিস্থাপিত হয় দুঃখ দিয়ে।

আতঙ্ক আমাদের ধাক্কা দেয়, সম্পূর্ণ অন্ধত্বের একটি সময় সেটি। আতঙ্কে সামান্যতম সৌন্দর্যের চিহ্ন নেই। আমরা শুধু দেখতে পাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করা অজানা কোনো কিছুর সেই তীক্ষ্ণ আলো। অন্যদিকে, দুঃখ মনে করে নেয় আমরা জানি কি ঘটছে। টমাস আর তেরেজা জানতো তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। আতঙ্কের আলো তার কঠোরতা হারায় এভাবে, এবং সারা পৃথিবী প্লাবিত হয় মৃদু নীলচে আলোয় যা আসলেই একে সুন্দর করে তোলে।

চিঠিটা পড়ার সময়, তেরেজা টমাসের প্রতি কোনো ভালোবাসা অনুভব করেনি। সে শুধুমাত্র অনুধাবন করেছিল এখন সে টমাসকে এক মুহূর্তের জন্য একা ছাড়াতে পারবে না: আতঙ্কের অনুভূতি অন্য সব আবেগ আর সহজাত প্রবৃত্তির জায়গা দখল করে নিয়েছিল। এখন যখন সে তার গায়ে হেলান দিয়ে বেসে আছে ( আর উড়োজাহাজটি যখন ঝড়ো মেঘের মধ্য দিয়ে ভেসে যাচ্ছে), তার ভয়টি কমে যায়, সে আবার তার ভালোবাসাকে অনুভব করতে পারে, এমন একটি ভালোবাসা যার কোনো সীমা পরিসীমা নেই।

অবশেষে উড়োজাহাজটি অবতরণ করে। তারা আসন ছেড়ে উঠে দরজার কাছে যায়, প্লেনের স্টিউয়ার্ড দরজাটি খুলে দেয় তাদের জন্য। দুজন তখনও দুজনের কোমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়ানো, সিঁড়ির সবচেয়ে উপরের ধাপে তারা দাড়িয়ে থাকে। নীচে তারা মাথায় আবরণীসহ তিনজন লোককে রাইফেল হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। সময় নষ্ট করে লাভ নেই, কারণ তাদের পালাবার কোনো উপায় নেই। তারা ধীরে ধীরে নীচে নেমে আসে, তারা যখন এয়ারফিল্ডের মাটি স্পর্শ করে, লোকগুলোর একজন তাদের দিকে রাইফেল তাক করে, যদিও কোনো গুলির আওয়াজ শোনা যায় না, তেরেজা অনুভব করে টমাস- যে কিনা এক মুহূর্ত আগেও তার উপর ভর করে দাড়িয়ে ছিল, তার কোমরে হাত দিয়ে জড়িয়ে – মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে।

তেরেজা চেষ্টা করে টমাসকে তার কাছে চেপে ধরে রাখতে , কিন্তু তাকে সে ধরে তুলতে পারেনা; তার শরীর দিয়ে সে তার শরীরটাকে ঢাকার চেষ্টা করে, তখনই সে হঠাৎ করেই খেয়াল করে একটি অদ্ভুত বিষয়: টমাসের শরীরটি খুব দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে তার চোখের সামনেই। সে এতই বিস্মিত হয় যে সে অনঢ় দাড়িয়ে থাকে হতভম্ব হয়ে। টমাসের শরীরটা যত সংকুচিত হচ্ছে, ততই সেটি তার মত কম সদৃশ হয়ে ওঠে তার, যতক্ষণ না অবধি এটি খুব ছোট একটি বস্তুতে রূপান্তরিত হয়, যা নড়তে শুরু করে, পুরো এয়ারফিল্ড ধরে এটি দ্রুত এদিক সেদিক ছুটতে থাকে।

যে লোকটি তাকে গুলি করেছিল, সে তার মুখোশ খোলে এবং তেরেজার দিকে তাকিয়ে চমৎকারভাবে হাসে। তারপর সে উল্টো ঘুরে, ক্ষুদ্র সেই পালিয়ে যাওয়া বস্তুটার পিছনে দৌড়াতে থাকে, যা এদিক সেদিক দ্রুত ঘুরে বেড়াচ্ছিল যেন মরিয়া হয়ে কারো হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছে আর আশ্রয় খুঁজছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই সেই পিছু দৌড় চলতে থাকে, একসময় লোকটি মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, পেছনে দৌড়ানো শেষ হয়েছে।

লোকটি উঠে দাড়িয়ে সেই জিনিসটাকে তার হাতে করে নিয়ে তেরেজার কাছে আসে, ভয়ে সেটি থর থর করে কাঁপছিল। এটি ছিল একটি খরগোশ। সে তেরেজার হাতে সেটি তুলে দেয়। সেই মুহূর্তে তার ভয় আর দুঃখ দুটোই কমে যায়, সে খুশী হয় প্রাণিটিকে তার হাতে ধরতে, খুশী হয় যে প্রাণিটি শুধু তার এবং সেটিকে তার বুকের মধ্যে সে চেপে ধরে থাকতে পারবে। আনন্দে সে কেঁদে ফেলে। সে কাঁদতে থাকে যতক্ষণ না চোখের অশ্রু তাকে আর কিছু দেখতে না দেয়। খরগোশটাকে বাড়িতে নিয়ে আসে তেরেজা সেই অনুভূতি নিয়ে যে, সে তার লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি পৌছে গেছে, যেখানে সে যেতে চায়, যেখান থেকে সে কখনোই আর কোথাও যাবে না।

প্রাহার রাস্তা ঘুরে ঘুরে সেই বাসাটা খুঁজে বের করতে কোনো সমস্যা হয়নি তেরেজার; যে বাসায় তার বাবামার সাথে সে শৈশবে থাকতো। কিন্তু তার বাবামা আর নেই। দুজন বৃদ্ধ মানুষ তাকে স্বাগত জানায়, যাদের সে কখনোই দেখেনি এর আগে, যাদেরকে সে জানতো তার প্র-পিতামহ আর প্র-পিতামহী হিসাবে। গাছের বাকলের মত তাদের দুজনের মুখের চামড়ায় ভাজ হয়ে আছে, তেরেজা খুশী হয় তাদের সাথে থাকতে পেরে। কিন্তু এখন, সে তার প্রাণিটিকে নিয়ে একা থাকতে চায়। সে সাথে সাথে তার সেই কক্ষটা খুঁজে পায়, যা তাকে দেয়া হয়েছিল তার পাঁচ বছর বয়সে, যখন তার বাবামা ঠিক করেছিলেন, তার এবার খানিকটা আলাদা থাকার জায়গা দরকার।

সেখানে একটি বিছানা, একটি টেবিল আর একটি চেয়ার ছিল। টেবিলের উপর একটি ল্যাম্প ছিল, সে ল্যাম্পটি কখনোই তার ফিরে আসার আশা নিয়ে তার জ্বলা বন্ধ করেনি। ল্যাম্পের উপর বসে আসে একটি প্রজাপতি, তার ছড়িয়ে থাকা ডানায় দুটো বড় চোখ আঁকা। তেরেজা জানতো সে তার গন্তব্যে পৌঁছেছে। সে বিছানার উপর শুয়ে পড়ে তার মুখের সাথে খরগোশটাকে চেপে ধরে।


টমাস তার ডেস্কে বসে ছিল যেখানে বসে সাধারণত সে বই পড়ে, খোলা একটি খাম, একটি চিঠিসহ তার সামনে পড়ে আছে। ‘মাঝে মাঝে আমি কিছু চিঠি পাই, যে কথা আমি তোমাকে বলিনি কখনো’, সে তেরেজাকে বলে, ‘সেগুলো আমার ছেলের লেখা চিঠি। আমি চেষ্টা করেছি তার আর আমার জীবনটাকে পুরোপুরিভাবে আলাদা করে রাখতে, কিন্তু দেখো কিভাবে নিয়তি আমাকে এক হাত দেখে নিলো। কয়েক বছর আগে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন সে কোনো গ্রামে ট্রাক্টর চালায়। আমাদের জীবন হয়তো আলাদা, কিন্তু তারা সেটি একই দিকে দৌড়াচ্ছে সমান্তরাল রেখার মত’।

‘তুমি কেন আমাকে কখনো চিঠিগুলোর সম্বন্ধে বলোনি’? তেরেজা জিজ্ঞাসা করে, স্বস্তির একটি অনুভূতি নিয়ে।

‘আমি জানিনা, বিষয়টা আমার তেমন ভালো লাগেনা, আমার মনে হয়, হয়তো সে কারণে’।

সে কি প্রায়ই চিঠি লেখে?

‘মাঝে মাঝে’।

‘কি বিষয়ে’?

‘মূলত তার নিজের সম্বন্ধে’।

‘আর সেগুলো কি আগ্রহ সৃষ্টি করার মত’?

‘হ্যাঁ, বলতে পারো।তোমার মনে আছে যে, তার মা ছিল উৎসাহী কমিউনিস্ট। বেশ, সে বহুদিন আগে তার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তারপর সেই সব লোকদের সাথে যুক্ত হয়েছিল যাদের আমাদের মত সমস্যা আছে, এবং তাদের সাথে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সে জড়িত হয়ে পড়েছিল। তাদের কেউ কেউ এখন জেলখানায়। কিন্তু সে তাদের সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তার চিঠিতে সে তাদেরকে বলেছে ‘চিরন্তন বিপ্লবী’।

‘তার মানে সে কি সরকারের সাথে সমঝোতা করে নিয়েছে’?

‘না, মোটেও না। সে ঈশ্বর বিশ্বাস করে, মনে করে সেটাই হচ্ছে সব সমস্যা সমাধানের উপায়। সে বলে যে আমাদের সবার উচিৎ ধর্মের নির্দেশিত নিয়ম মেনে জীবন কাটানো, সরকারের কথা না ভেবে, পুরোপুরি উপেক্ষা করে। যদি আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, সে দাবী করে, আমরা যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবো, এবং আমাদের আচরণের মাধ্যমে, সেটিকে রূপান্তরিত করতে পারবো, যাকে সে বলছে ‘পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজত্ব’। সে আমাকে বলেছিল যে চার্চ হচ্ছে আমাদের দেশে একমাত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকে এড়াতে পেরেছে। আমি ভাবি, সে কি চার্চে যুক্ত হয়েছে সেই কারণে যে এটি তাকে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করতে সাহায্য করবে নাকি সে আসলেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে’।

‘তুমি কেন তাকে জিজ্ঞাসা করছো না’?

‘বিশ্বাসীদের প্রতি আমার একধরনের মুগ্ধতা ছিল একসময়’, টমাস বলে, ‘আমি ভাবতাম তাদের একটি অদ্ভুত সংজ্ঞালব্ধ উপায় আছে সেইসব বিষয়গুলো অনুভব করার যা আমার খুব কাছের। ভবিষ্যতদ্রষ্টার মত, তুমি বলতে পারে। কিন্তু আমার ছেলের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করছে যে, ধর্ম বিশ্বাস আসলেই খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। তার পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল, ক্যাথলিকরা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল, এবং সে নিজেই জানার আগে, তার ভিতরে ধর্মবিশ্বাস এসেছে। সুতরাং খুব সম্ভবত কৃতজ্ঞতা ছিল এখানে নির্ধারণী বিষয়। মানুষের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো খুবই ভয়ানকভাবেই সরল’।

‘তুমি কখনো তার চিঠির উত্তর দাওনি’?

‘সে কখনোই ফিরতি ঠিকানা দেয়নি’, টমাস বলে, ‘যদিও, পোস্ট মার্ক বলছে কোন জেলায় সে আছে। আমি স্থানীয় সমবায় খামারের ঠিকানায় চিঠিটা পাঠিয়ে দিতে পারি’।

টমাসকে নিয়ে সন্দেহ করার জন্য তেরেজা লজ্জা পেয়েছিল, আর সেই অপরাধবোধটি কিছুটা লাঘব করতে পারবে এমন আশায় টমাসের ছেলের প্রতি হঠাৎ শুভকামনায় সে পূর্ণ হয়।

‘তাহলে তাকে লিখে দাও না কিছু, এখানে আমাদের সাথে দেখা করতে আসার জন্য ওকে নিমন্ত্রণ করো।’

টমাস বলে ‘সে আমার মত দেখতে। যখন সে কথা বলে তার উপরের ঠোট আমার মতই বেঁকে যায়। আমার নিজের ঠোট ঈশ্বরের রাজত্ব নিয়ে কথা বলছে সেটি দেখার ভাবনা মনে হয় খুব বেশী অদ্ভুত’।

তেরেজা জোরে হেসে ওঠে, টমাসও তার সাথে হাসে।

‘বাচ্চাদের মত করো না, টমাস’! তেরেজা বলে, ‘অনেক পুরনো কাহিনী, যাইহোক, তুমি ও তোমার প্রথম স্ত্রী, তার সাথে ওর কি সম্পর্ক? সে কি করেছে? কেন ছেলেটিকে কষ্ট দেবে শুধুমাত্র অল্প বয়সে তোমার বাজে রুচির জন্য’?

‘আসলে, আমার ভয় হচ্ছে তার সাথে দেখা করার ভাবনায়। সেটাই প্রধান কারণ এই বিষয়ে কিছু না করার জন্য। আমি জানি না কি আমাকে এত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছিল তার সাথে কখনোই দেখা না করার জন্য। কখনো কখনো আমরা মনস্থির করি সে বিষয়ে কোনো কিছু না জেনেই, আর সেটি সিদ্ধান্তের জড়তার শক্তিতে টিকে থাকে। প্রতি বছর এটি আরো কঠিনতর হয় পরিবর্তন করার জন্য’।

‘ওকে নিমন্ত্রণ করো, এখানে বেড়াতে আসতে বলো’, তেরেজা বলে।

সেদিন বিকালে, গরুর খামার থেকে বাসায় ফিরে আসার পথে সে রাস্তা থেকে আওয়াজ শোনে। আরো কাছে আসলে সে টমাসের পিক আপটা দাড়িয়ে থাকতে দেখে। টমাস কুঁজো হয়ে মাটিতে বসে গাড়ির চাকা বদলাচ্ছিল, আর কয়েকজন লোক তার চারপাশ ঘিরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে কাজটি শেষ হবার জন্য।

তেরেজা টমাসের দিক থেকে চোখ সরাতে পারে না: টমাসকে দেখতে বৃদ্ধ মানুষের মত লাগছে। তার চুল সব পেকে গেছে, তার হাতের সমন্বয়হীনতা আর শল্যচিকিৎসকের মত নেই, যে কিনা ড্রাইভারে রূপান্তরিত হয়েছে, বরং আর তরুণ নয় এমন কোনো মানুষের মত।

সমবায় খামারের সভাপতির সাথে তার সাম্প্রতিক কথোপকথনটি তেরেজার মনে করতে পারে। তিনি তাকে বলেছিলেন, টমোসের যে পিক-আপটি চালায় তার অবস্থা চূড়ান্ত খারাপ। ‘কোনো যন্ত্রের চেয়ে মানুষের শরীরের ভিতর সম্বন্ধেই ভালো জানে টমাস’, হাসতে হাসতে তিনি বলেছিলেন। তিনি অভিযোগ করে না বরং ঠাট্টা করেই কথাটা বলেছিলেন, কিন্তু তেরেজা বুঝতে পেরেছিল বিষয়টি তাকে বেশ ভাবাচ্ছে। তারপর তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি বেশ কয়েকবার যাতায়াত করেছেন আবেদন নিয়ে, টমাস যেন আবার ডাক্তারি শুরু করতে পারে, এমনকি যদিও সেটি শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে। পরে তিনি জানতে পারেন, পুলিশ কখনোই সেটি করার অনুমতি দেবে না।

একটি গাছের কাণ্ডের পেছনে এসে দাড়ায় তেরেজা, পিক-আপের পাশে দাঁড়ানো মানুষগুলো যেন তাকে দেখতে না পায়। সেখানে দাড়িয়ে টমাসকে দেখার সময় আত্ম-অভিযোগে আক্রান্ত হয় সে: তারই অপরাধ এটি, তার কারণেই টমাস জুরিখ থেকে প্রাহায় ফিরে এসেছিল। তার দোষের কারণে সে প্রাহা ছেড়েছে, এমনকি এখানেও সে তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি, যখন কারেনিন মারা যাচ্ছে তখনও সে তাকে সন্দেহ করে যন্ত্রণা দিয়েছে।

সে সবসময়ই গোপনে তাকে অভিযুক্ত করেছে তাকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালো না বাসার জন্য।আর তার নিজের ভালোবাসাকে সে ভেবেছে সে সব অভিযোগের উপরে, যখন সে টমাসের ভালোবাসাকে সে ভেবেছে শুধুমাত্র করুণা হিসাবে।

এখন সে বুঝতে পারে সে আসলে সুবিচার করেনি। যদি সত্যি টমাসকে সে ভালোবাসতো অনেক বেশী ভালোবাসা দিয়ে, সে তাহলে দেশের বাইরে তার সাথেই থাকতো। টমাসও সেখানে সুখী ছিল, একটি নতুন জীবন তার জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল সেখানে। আর সে কিনা তাকে ছেড়ে এসেছিল। সত্যি, সেই সময় সে নিজেকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিলে সে অনেক বেশী মহানুভবতার পরিচয় দিচ্ছে, টমাসকে তার স্বাধীনতা দিয়ে। কিন্তু তার সেই মহানুভবতাটি কি শুধুমাত্র একটি অজুহাত ছিল না? সে তো খুব ভালো করেই জানতো, টমাস তার জন্য প্রাহায় ঠিকই ফিরে আসবে। ক্রমেই আরো গভীর থেকে গভীরে সে টমাসকে টেনে নিয়ে গেছে নীচে, যেমন করে রূপকথার জলপরীরা সরল গ্রামবাসীদের জলায় প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যায় শুধুমাত্র তাদেরকে সেখানে ডুবিয়ে মারার জন্য। টমাসের পেটে ব্যথার এক রাতে সে সুযোগ নিয়েছিল গ্রামে আসার জন্য তাকে প্ররোচিত করতে। কত ধূর্তই না সে হতে পারে! সে তাকে অনুসরণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে যেন সে বার বার তাকে পরীক্ষা করে দেখছে, তার জন্য তার ভালোবাসা পরীক্ষা করে দেখছে। সারাক্ষণই সে তাকে ডেকেছে এবং অবশেষে এখন এখানে সে ক্লান্ত আর ধূসর, শক্ত আড়ষ্ট আঙ্গুল সহ যা আর কখনোই পারবে না অস্ত্রোপচারের ছুরি ধরতে।

এখন তারা এমন একটি জায়গায় সেটির কোনো গন্তব্য নেই, এখান থেকে তারা কোথায় যাবে? তাদেরকে আর কখনো দেশের বাইরে যাবার অনুমতি দেয়া হবে না। আর কখনোই তারা প্রাহায় ফেরত যেতে পারবে না: তাদের আর কেউই কাজ দেবে না সেখানে। তাদের এমনকি আর কোনো কারণ নেই এই গ্রাম থেকে অন্য কোনো গ্রামে যাবার। হায় ঈশ্বর, তারা কি সব দূরত্ব অতিক্রম করেছে শুধুমাত্র তাকে বিশ্বাস করাতে যে টমাস তাকে ভালোবাসে?

অবশেষে টমাস সফল হয় গাড়িতে চাকা লাগাতে। সে গাড়িতে উঠে বসে, লোকগুলো পেছনে উঠে বসে, এবং ইঞ্জিন গর্জন করে ওঠে।

সে বাসায় ফিরে গোছল করে। গরম পানিতে শুয়ে সে নিজেকে বলতে থাকে সে তার সারাজীবনের দুর্বলতাগুলোই সাজিয়েছে টমাসে বিরুদ্ধে। আমাদের সবার প্রবণতা আছে শক্তিকে অপরাধী আর দুর্বলতাকে নিরপরাধ শিকার ভাবার। কিন্তু এখন তেরেজা অনুধাবন করে তার ক্ষেত্রে এর বিপরীতটাই সত্যি। এমনকি তার স্বপ্নগুলো, অন্যথায় শক্তিশালী একটি মানুষের একটি মাত্র দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে তেরেজার কষ্টগুলোকে টমাসের জন্য বিশেষ প্রদর্শনী করেছে, আর এভাবেই তাকে বাধ্য করেছে নতি শিকার করতে। তেরেজার দুর্বলতা আগ্রাসী এবং তাকে বাধ্য করেছিল পরাজয় মানতে যতক্ষণ না অবধি টমাস তার শক্তি হারায়,এবং তার বাহুতে একটি খরগোশে রূপান্তরিত না হয়। কিছুতে তার মন থেকে সে স্বপ্নটাকে সে সরাতে পারে না।

তেরেজা তার গোছল শেষ করে সুন্দর করে কাপড় পরে, নিজেকে সে সুন্দর করে সাজাতে চেয়েছিল সে টমাসকে সন্তুষ্ট করার জন্য, তাকে সুখী করার জন্য।

যখন সে তার শেষ বোতামটি কেবল লাগিয়েছে. টমাস আর সমবায় খামারের চেয়ারম্যান আর অস্বাভাবিক অসুস্থ চেহারার একটি তরুণ খামার শ্রমিককে নিয়ে ঘরে ঢোকে।

‘তাড়াতাড়ি’! টমাস চিৎকার করে, ‘শক্ত কিছু পানীয় ওকে পান করার জন্য দিতে হবে’। তেরেজা দৌড়ে গিয়ে তার জন্য এক বোতল সিলোভিৎস ( প্লাম ফল দিয়ে বানানো এক ধরনের পানীয়) নিয়ে আসে। গ্লাসে সেটা কিছুটা ঢেলে তাকে এগিয়ে দেয় তেরেজা, তরুণটি এক ঢোকে তা গিলে ফেলে।

তারপর তারা তেরেজাকে বলে কি ঘটেছিল। তার কাঁধের সন্ধিটি তার জায়গা থেকে সরে গিয়েছিল এবং ব্যথায় সে চিৎকার করতে শুরু করে। কিন্তু কেউ জানেনা কি করতে হবে, সেকারণে তারা টমাসকে ডাকে, সে এক টানে তার সেই কাঁধটা জায়গামত বসিয়ে দেয়।

আরেক গ্লাস সিলোভিৎস পান করার পর, তরুণটি টমাসকে বলে, ‘তোমার স্ত্রীকে আজ খুব বেশী সুন্দর লাগছে’।

সভাপতি বলেন, ‘গাধা, তেরেজা সব সময় সুন্দর’।

‘আমি জানি সে সবসময়ই সুন্দরী’, তরুণটি বলে, ‘কিন্তু তার উপর আজ সে সুন্দর জামাও পরেছে । আমি তোমাকে এই জামা কখনো পরতে দেখিনি, তোমরা কি বাইরে কোথাও যাচ্ছো’?

‘না, কোথাও যাচ্ছি না, টমাসের জন্য আমি এটা পরেছি’।

‘ভাগ্যবান তুমি টমাস’, হাসতে হাসতে বলে টমাস।আমার বৃদ্ধ মহিলাটি শুধু আমার জন্য সাজার কথা স্বপ্নেও ভাববে না’।

‘সে কারণে আপনি আপনার স্ত্রীকে বাদ দিয়ে শূকর নিয়ে হাটতে বের হন’, তরুণটি বলে, তারপর সেও হাসতে শুরু করে।

‘যাই হোক মেফিস্তো কেমন আছে’? টমাস জানতে চায়, ‘তাকে দেখিনি’, কিছুক্ষণ ভেবে সে বলে, ‘অন্তত এক ঘণ্টা হলো’।

‘সে নিশ্চয়ই আমার কথা ভাবছে’, চেয়ারম্যান বলে।

‘তোমার কাপড় দেখে আমার নাচতে ইচ্ছা করছে’ তরুণটি তেরেজাকে বলে। তারপর টমাসের দিকে তাকিয়ে সে জিজ্ঞাসা করে, ‘তুমি কি ওর সাথে আমাকে নাচতে দেবে’?

‘চলো, আমার সবাই নাচতে যাই কোথাও’, তেরেজা বলে।

‘তুমি আমাদের সাথে আসবে’? তরুণ টমাসকে জিজ্ঞাসা করে।

টমাস জিজ্ঞাসা করে, ‘কোথায় যাবার পরিকল্পনা করছো’?

পাশের একটি শহরের নাম বলে তরুণটি, যেখানে হোটেলে একটি বার ও নাচার ব্যবস্থা আছে।

‘আপনিও চলেন’, সমবায় খামারের সভাপতিকে সে বলে খানিকটা কর্তৃত্বের স্বরে, আর যেহেতু ততক্ষণে তিন গ্লাস সিলোভিৎস সে পান করে ফেলেছে, সে যোগ করে,‘ যদি মেফিস্তো আপনাকে খুব মনে করে তাহলে আমরা তাকেও সাথে নিয়ে নেবো। তাহলে আমাদের দুজনের ছোট একটি শূকর থাকবে সবাইকে দেখানোর জন্য।মহিলারা সব হুমড়ি খেয়ে পড়বে যদি দুজনকে তারা একসাথে দেখতে পায়’! আবারো সে হাসতে থাকে, ‘যদি আপনি মেফিস্তোকে নিয়ে লজ্জা পান, আমি পুরোটাই আপনার’।

তারা সবাই টমাসের পিক-আপে উঠে বসে। চালকে আসনে টমাস, তার পাশে তেরেজা আর অর্ধেক খালি স্টিলোভিৎস এর বোতলসহ দুজন পেছনের সিটে। গ্রাম থেকে বের হবার পর কেবল সভাপতি বুঝতে পারে সে তার মেফিস্তোকে ফেলে এসেছে। সে টমাসকে গাড়ি ঘোরাতে বলে চিৎকার করে।

‘চিন্তা করো না’, তরুণটি বলে, ‘একটি ছোট শূকরই আপনার কাজ করে দেবে’। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবশেষে শান্ত করে।

তখন অন্ধকার হতে শুরু হয়েছে। রাস্তাটি ক্রমশ চুলের কাটার মত আঁকাবাঁকা হয়ে পাহাড়ে উঠতে থাকে।

যখন শহরটিকে পৌছায় গাড়িটি, সরাসরি তারা হোটেলে যায়। তেরেজা ও টমাস এর আগে কখনোই এখানে আসেনি। তারা নীচে বেসমেন্টে যায়, যেখানে তারা একটি পানশালা, নাচের জায়গা আর আর কিছু টেবিল খুঁজে পায়। ষাট বছরের কাছাকাছি বয়সের একজন ব্যক্তি সেখানে পিয়ানো বাজাচ্ছিল, সেই একই বয়সী একজন মহিলা তার সাথে বাজাচ্ছিল বেহালা। যে গান তারা বাজাচ্ছিল, তা প্রায় চল্লিশ বছরের পুরনো। নাচের মেঝেতে নাচছিল পাঁচ কিংবা সে সংখ্যক যুগল।

‘আমার জন্য এখানে কিছু নেই’, বললো তরুণটি তার চারপাশটা ভালো করে জরিপ করে, এবং সাথে সাথে সে তেরেজাকে তার সাথে নাচার অনুরোধ জানালো।

সমবায় খামারের সভাপতি টমাসের সাথে একটি খালি টেবিলে বসে এক বোতল মদের অর্ডার দেন।

‘আমি মদ পান করতে পারবো না’, টমাস তাকে মনে করিয়ে দেয়, ‘আমি গাড়ি চালাবো’।

‘বোকার মত কথা বলেন না, আমরা রাতে এখানে থাকছি’। তারপর সে রিসেপশনে গিয়ে দুটি রুম বুক করে।

যখন তেরেজা নাচের ফ্লোর থেকে ফিরে আসে তরুণটির সাথে, চেয়ারম্যান তাকে নাচের জন্য আহবান করে, এরপর শেষে টমাসের পালা আসা তার সাথে নাচার জন্য।

‘টমাস’, সে নাচার সময় বলে, ‘তোমার জীবনের যা কিছু খারাপ ঘটেছে তার জন্য সব দোষ আমার। আমার দোষে তুমি এখানে, তোমার পক্ষে যতটুকু নীচে পড়া সম্ভব’।

‘নীচে, কি বিষয়ে কথা বলছো তুমি’?

‘আমরা যদি জুরিখে থাকতাম, তুমি তাহলে এখনো সার্জন থাকতে’।

‘আর তুমি ফটোগ্রাফার’।

‘খুবই বোকার মত তুলনা হলো’, তেরেজা বলে।‘তোমার কাজ তোমার কাছে সবকিছু। আমি কিছু যায় আসে না আমি কি করি। আমি সব কিছু করতে পারি। আমি কোনো কিছু হারাইনি, তুমি সবকিছু হারিয়েছো’।

‘তুমি লক্ষ্য করোনি আমি এখানে সুখে আছি’, তেরেজা? টমাস বলে।

‘কিন্তু সার্জারি তোমার জীবনের উদ্দেশ্য’।

‘উদ্দেশ্যগুলো খুব নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ’, তেরেজা, ‘আমার কোনো লক্ষ্য নেই, কারোই থাকেনা। এবং চমৎকার স্বস্তির একটি বিষয় হচ্ছে অনুধাবন করা যে, তুমি স্বাধীন, সব লক্ষ্য পূরণ করা থেকে স্বাধীন’।

কোনো সন্দেহ ছিলনা টমাসের সেই দ্বিধাহীন কণ্ঠে । তেরেজার মনে পড়ে সেই দৃশ্যটি যার সাক্ষী সে হয়েছিল যখন টমাস পুরনো পিক-আপটি মেরামত করছিল, এবং তাকে দেখতে খুবই বয়স্ক মনে হয়েছিল। সে তার লক্ষ্যে পৌছাতে পেরেছিল, সে সবসময়ই চেয়েছে টমাস বৃদ্ধ হোক। আবারো সে খরগোশটির কথা ভাবে, তার ছোটবেলার সেই ঘরে যেটিকে সে তার মুখের সাথে চেপে ধরেছিল।

এই খরগোশে রূপান্তরিত হবার অর্থ কি? এর মানে সব শক্তি হারানো। এর মানে একজন আরেকজনের চেয়ে আর শক্তিশালী নয়।

পিয়ানো আর বেহালার সুরে তারা নাচতে থাকে। তেরেজা টমাসের কাঁধে মাথা রাখে। ঠিক যেমন করে সে রেখেছিল যখন তারা সেই উড়োজাহাজে একসাথে উঠেছিল ঝড়ো মেঘের মধ্য দিয়ে। সেই সময়ের মত আবারো তেরেজা অনুভব করে সেই একই অদ্ভুত সুখ আর দুঃখ । এই দুঃখ মানে আমরা এখন শেষ গন্তব্যে। আর সুখ মানে, আমরা এখন একসাথে ।দুঃখ হচ্ছে সেই কাঠামো, আর সুখ হচ্ছে এর ভিতরের আধেয়। সুখ দুঃখের ভিতরের শূন্যস্থানটি পূর্ণ করেছে।

তারা তাদের টেবিলের দিকে ফিরে যায় নাচ শেষে। তেরেজা আরো দুবার নাচে সমবায় খামারের সভাপতি আর একবার সেই তরুণটির সাথে, যে এত বেশী নেশাগ্রস্থ ছিল যে নাচের সময় তেরেজাকে নিয়ে মেঝেতে পড়ে যায়।

তারপর সবাই উপরে তাদের পৃথক পৃথক কক্ষে চলে যায়।

টমাস চাবি ঘোরায়, ছাদের লাইটটি জ্বালায়। তেরেজা দেখে দুটি বিছানা একসাথে লাগানো, তাদের একটির পাশে ল্যাম্পসহ ছোট টেবিল । মাথার উপর হঠাৎ করে জ্বলে ওঠা আলোয় চমকে গিয়ে ল্যাম্পশেড উড়ে বেরিয়ে আসে একটি বড় নিশাচর প্রজাপতি, যা সারা ঘর জুড়ে বৃত্তাকারে উড়তে থাকে। পিয়ানো আর বেহালার সুর তখন দুর্বলভাবে ভেসে আসছিল নীচ থেকে।

  •                                                                    সমাপ্ত

আপনার মন্তব্য