বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা, পঞ্চম পর্ব: ১১

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৯-১২ ১২:৪৭:৫৪

কাজী মাহবুব হাসান:

বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা পঞ্চম পর্ব ( নির্ভারতা এবং ভার ) : ১১
জিরাফ আর বকের মত দেখতে সেই রমণীটির অদ্ভুত অপ্রতিসাম্যতা,টমাসের স্মৃতিকে উত্তেজিত করা অব্যাহত রেখেছিল: প্রণয় কৌতুক আর অদ্ভুত আড়ষ্টতার মিশ্রণ যে স্মৃতি। খুব বেশী বাস্তব যৌনকাঙ্খাকে যেখানে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল তার শ্লেষাত্মক হাসি, ফ্ল্যাটটির অশ্লীল আটপৌরতা আর এর মালিকের মৌলিকত্ব। সঙ্গম করার সময় কেমন হতে পারে এই রমণীটি? যতই চেষ্টা করুক না কেন টমাস, দৃশ্যটি সে কল্পনা করতে পারেনা। বেশ কিছুদিন টমাস আর কিছুই ভাবতে পারেনি।

এরপরের বার যখন তার ডাকে সেখানে গিয়েছিল টমাস, টেবিলের উপর মদের বোতল আর দুটি গ্লাস আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল। এবার সবকিছুই নিয়ম মতই হয়েছে। বেশী সময় পার না হতেই মুখোমুখি শোবার ঘরে ( যেখানে দেয়ালে লাগানো তৈলচিত্রে বার্চের বনে সূর্যাস্ত হচ্ছিল) দাড়িয়ে তাদের চুম্বনরত অবস্থায় দেখা যায়। কিন্তু যখন টমাস তাকে তার চিরাচরিত ‘কাপড় খোলো’ নির্দেশটি দেয়, সে শুধু মানতেই ব্যর্থ হয়নি, বরং পাল্টা নির্দেশ দেয়, ‘না, তুমি আগে!’

এ ধরনের প্রত্যুত্তরে অনভ্যস্ত টমাস খানিকটা চমকে ওঠে।রমণীটি তার প্যান্টের চেইন খুলতে শুরু করেছে ততক্ষণে। বেশ কয়েকবার কাপড় খোলার নির্দেশ দেবার পর ( ও হাস্যকর ব্যর্থতা সহ), সে বাধ্য হয় একটা সমঝোতায় আসার জন্য। খেলার নিয়ম অনুযায়ী যা সে প্রতিষ্ঠা করেছিল তার আগের বার এখানে আসার সময় ( অর্থাৎযা আমি করছি, তুমিও তাই করো), সে তার প্যান্ট খুলে ফেলে, সে তার স্কার্ট খোলে, তারপর টমাস তার শার্ট খোলে, সে তার ব্লাউজ, যতক্ষণ না তারা দুজনে পুরোপুরি নগ্ন হয়। টমাস তার ভেজা জননাঙ্গে হাত রাখে, এরপর তার আঙ্গুলগুলো নাড়াচাড়া করে চলে যায় রমণীর পায়ুপথ অবধি, নারী শরীরের যে অংশটি টমাসের সবচেয়ে প্রিয়; এই রমণীর সেই অংশটি অস্বাভাবিকভাবেই সুস্পষ্ট, বিশেষভাবে টমাসের হাতে ঠেকে, লম্বা একটি আন্ত্রিক নালীর কথা মনে করিয়ে দেয়, যা খানিকটা বাইরের দিকে উঁচু হয়ে বের হয়ে আছে, পায়ুপথের মুখের স্বাস্থ্যবান বলয়ে সে হাত বোলায়, এই চমৎকার গোলাকার চক্রটিকে ডাক্তাররা স্ফিংক্টার বলে ডাকেন। টমাস হঠাৎ করে তার শরীরের একই জায়গায় রমণীর আঙ্গুল অনুভব করে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ যে আয়নার মত অনুকরণ করছে।

যদিও, যেমন আমি উল্লেখ করেছি আগে, কমপক্ষে প্রায় দুইশ রমণীর নিকটে টমাস এসেছে (এছাড়া জানালা পরিষ্কারক হিসাবে তার কাজ করার সময় এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছেও)। এখনও সে এমন কোনো রমণীর দেখা পায়নি যে কিনা তারচেয়েও লম্বা, তার দিকে চোখ কুচকে তাকিয়েছে এবং তার পায়ুপথের মুখে আঙ্গুল দিয়েছে। বিব্রতকর পরিস্থিতিটি এড়াতে, টমাস তাকে জোরে করে বিছানায় শোয়ানোর চেষ্টা করে।

এত দ্রুত সে কাজটি করে যে রমণীটি চমকে যায়। তার বিশাল শরীর বিছানায় পড়ে পিঠ আগে দিয়ে। টমাস তার মুখের লালচে দাগগুলোর মধ্যে ভারসাম্য হারানো শঙ্কিত অভিব্যক্তি দেখতে পায় কিছুক্ষণের জন্য। এখন সে তার উপর দাড়িয়ে আছে, সে তার হাঁটু দিয়ে তাকে শক্ত করে ধরে তার খানিকটা দুই পাশে ছড়িয়ে থাকা পা গুলো উপরে তুলে ধরে, সুতরাং হঠাৎ করেই সেগুলো দেখতে হয় তাক করা বন্দুকের সামনে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দুই হাত ছড়িযে থাকা কোনো সৈন্যর মত।

তীব্র আগ্রহের সাথে যুক্ত আনাড়িপনা, উৎসাহের সাথে আনাড়িপনা, চূড়ান্তভাবে টমাসকে উত্তেজিত করে সেটি, অনেকক্ষণ ধরে তার সাথে সে সঙ্গম করে, সারাক্ষণই তার লাল দাগ সহ মুখের ভয়ের অভিব্যক্তি খুঁজতে খুঁজতে, যে কিনা এই মাত্র ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে এবং যে নীচে পড়ে যাচ্ছে। অনুকরণ করা সম্ভব নয় এমন যে অভিব্যক্তিটি কিছুক্ষণ আগেই তার মস্তিষ্কের উত্তেজনার বার্তা বহন করে নিয়ে গিয়েছিল।

এরপর সে বাথরুমে যায় গোছল করতে, সে তাকে অনুসরণ করে এবং লম্বা বিবরণ দেয় কোথায় সাবান আছে কোথায় স্পঞ্জ আর কিভাবে গরম পানি চালাতে হয়। টমাস খুবই অবাক হয় একটা তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে তার এত দীর্ঘ বিবরণ দেয়া দেখে। অবশেষে সে তাকে বলতে বাধ্য হয় সবকিছুই খুব ভালোভাবে বুঝেছে, তাকে বাথরুমে একটা থাকতে দিতে বলে ইঙ্গিত দেয়।

সে মিনতি করে বলে,‘ তুমি আমাকে দেখার জন্য এখানে থাকতে দেবেনা’?

অবশেষে সে সক্ষম হয় তাকে সেখান থেকে বের করতে। টাবের মধ্যে গোছল আর প্রস্রাব করে (চেক ডাক্তারদের মধ্যে খুবই পরিচিত আচরণ), তার মনে হলো রমণীটি বাথরুমে দরজার সামনে পায়চারি করছে, ভিতরে ঢোকার কোনো পথ খুঁজছে। যখন সে পানির কলটি বন্ধ করে, পুরো ফ্লাটটি হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে যায়, সে বুঝতে পারে তাকে কেউ দেখছে। সে প্রায় নিশ্চিত কোথাও না কোথাও ছিদ্র আছে বাথরুমের দরজায় এবং তার সুন্দর চোখটি সেখানে চোখ কুচকে তাকিয়ে দেখছে।

খুব ভালো মেজাজ নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসে টমাস, তার স্মৃতিতে রমণীটির মূলসারটি নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করে, চেষ্টা করে সেই স্মৃতিকে একটি রাসায়নিক সূত্রে পরিণত করতে, যা তার অনন্যতাকে ব্যাখ্যা করতে পারে ( তার সেই এক মিলিয়ন অংশের একভাগে অংশের ভিন্নতা)। এর ফলাফল হচ্ছে একটি সূত্র যার তিনটি মূল বিষয় আছে

১) তীব্র উৎসাহ সহ অপটুতা

২) শঙ্কিত মুখ, যে তার ভারসাম্য হারিয়েছে এবং পড়ে যাচ্ছে

৩) তাক করা বন্দুকের দিকে হাত তুলে আত্মসমর্পণ করা সৈন্যর মত দুই পা উঁচু করে তোলা।

তালিকাটি ভালো করে দেখার পর, সে আনন্দ অনুভব করে আরো একটি পৃথিবীর অংশ অর্জন করার জন্য, তার সেই কাল্পনিক স্কালপেল হাতে নিয়ে মহাবিশ্বের অনন্ত ক্যানভাস থেকে আরেকটা টুকরো কেটে নেবার জন্য।
(চলবে)

আপনার মন্তব্য