ফিরে দেখা এক জন্মকথা- ৬

 প্রকাশিত: ২০১৬-০২-০৬ ২০:১২:১৪

রাজা সরকার:

[পূর্ব প্রকাশের পর...]
১৬
এসব নিয়ে রবীন্দ্রবাবুর মাথা ব্যথা খুব একটা ছিল না । সংসারে সক্রিয়তা—বা কৃষিকাজে মনোনিবেশের সময়কাল তার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। একসময় জমিজমা সব আঁধিয়ারদের বুঝিয়ে দিয়ে তিনি উদাসীন, সংসারে এক সন্ন্যাসীর জীবন বেছে নিলেন। তখন থেকেই বন্ধু হয়ে গেল মধু সাধু, ভগবৎ চিন্তা, আর নামকীর্তন। শাশুড়ি বউয়ের কর্ম বা কর্ম-পরিকল্পনার কোন খোঁজ আর রাখলেন না। কিন্তু  সংসার ঠিকই চলতে শুরু করলো। এই দুই মহিলা ক্রমে সংসারের গুরুভারের তলায় জায়গা করে নিলেন। সুপ্রভা দম নেয়ার মত ফুরসত পেলে কখনো সখনো ভাবতেন তার স্বামী পুরুষটির হয়তো অনেক পূণ্যভাগ্য। সবার ভাগ্য এক হয় না। ঈশ্বরই বুঝি ঠিক করে দেন সংসারে কার ভাগ্য কী দিয়ে গড়া থাকবে। সংসারে থেকেও নিরুপদ্রবে ভগবৎ চিন্তা ক’জন করতে পারে! বিষয়ী ভাবনার বাইরে থেকে গিয়ে বিষয়ের সুখ সুবিধে পাওয়াত ভাগ্যের কথা। আর সেই ব্যবস্থার কারিগর যেহেতু সে নিজে, তবে পুণ্যের ভাগ তার নিশ্চয়ই আছে। পতির পূণ্যেইত তার পুণ্য। সুপ্রভার পুরুষতন্ত্র বোঝার কথা নয়।      

তবু একটা জীবন--একটা মানুষ, তার ভেতর সে কোথাও না কোথাও হয়তো তার গড়ে উঠা ব্যক্তিত্বের সন্ধানসুত্রটি রেখে  যায় । রবীন্দ্রবাবু শোন যায় কৈশোরেই পিতৃহারা হয়েছিলেন। তার পিতা তৎকালীন সময়ে বেশ কৃতি পুরুষ ছিলেন। শিক্ষিত আইনব্যবসায়ী মানুষটি ভাল সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। প্রথম স্ত্রী বিয়োগের পর দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। সহায়সম্পত্তি যা সেসবই ছিল তখনকার সামাজিকতায় এক যৌথ পরিবারের দখলে। নিতান্ত অল্প বয়সেই পিতার মৃত্যুর পর তাঁর  একমাত্র পুত্রসন্তান বেশ বিপদে পড়ে গেলো। সংসারে তখন সদ্য বিধবা মায়েরও বয়স তেমন বেশী নয়।

সম্পত্তি নামক  ক্ষমতাটির হাতে তখন একই সংসারে তারা দুজনই কমবেশি নির্যাতিত। একমাত্র উত্তরাধিকারী যেহেতু পুত্র রবীন্দ্র, তাই  সেই হিসেবে তার উপর নির্যাতনের মাত্রাটা অনেক বেশী ছিলো । আর এইসব সহ্য করতে না পেরে পুত্র রবীন্দ্র তখন একদিন বাড়ী  ছেড়ে পালায়। কোথায় পালালো বাড়ীর কর্তা ব্যক্তিরা তার কোন খোঁজও নিলেননা । দিন গড়িয়ে যেতে  থাকে। আর যেতে যেতে যখন তা প্রায় বছর ঘুরতে চলল তখন আর থাকতে না পেরে রবীন্দ্রবাবুর মা একদিন মরিয়া হয়েই মুখ খুললেন। বাড়ীর  কর্তাদের কানে যথারীতি কথাটা গেল। বাড়ীর কর্তা শুনে মন্তব্য শোনালেন যে সৎ ছেলের জন্য এত  দরদের কী আছে—-সংসারে এই সৎ মা’য়েরতো আর খাওয়া-পরার অভাব হবেনা—। কিন্তু মাতৃস্বভাব সংসারে একটি  বিরল জৈবিক অনুভূতি। তখনকার ঐ অনগ্রসরতার মধ্যেও সেই মা ক্রমে বিদ্রোহই করে বসলেন। প্রশ্ন তুলে বসলেন সম্পত্তি নিয়েও। কিছুটা  লোক জানাজানিও হয়ে গেল। তাতে কিছু আত্মীয়স্বজন রবীন্দ্রবাবুর মা তাঁর স্বপক্ষে পেয়ে গেলেন। বাড়ীর কর্তাদের টনকও নড়লো।

আলোচনা সভা হলো বিস্তর। শেষে ঠিক হলো যে পুত্রের সন্ধানে খোঁজ খবর করা হবে। সেই মতো কাছাকাছি  নানা জায়গায় খোঁজখবরে একসময় জানা গেল যে রবীন্দ্র উত্তর ভারতের দিকে গেছেন। আর সেই সূত্রে এক আত্মীয়কে  সংগে নিয়ে রবীন্দ্রবাবুর মা রওনা হয়ে গেলেন সেই অঞ্চলের দু’একটা তীর্থ স্থানে খোঁজ নিতে। কপাল ভালো যে মাসখানিক ঘোরাঘুরির মধ্যেই পুত্রকে পাওয়া গেল বৃন্দাবনের এক আশ্রমে। প্রায় কংকালসার কালাজ্বরে আক্রান্ত অসুস্থ রবীন্দ্র। কোনমতে তাঁকে নিয়ে বাড়ী ফিরে আসা হলো। তারপর চলল তার দীর্ঘ চিকিৎসা শুশ্রূষা। সেই থেকে ক্ষীণজীবী  পুত্রটির স্বাস্থ্য অনেকদিন পর ফিরলেও হয়তো তার মানসিক স্বাস্থ্যটা আর প্রয়োজন মাফিক কখনো ফেরেনি। একজন সদ্য যুবকের যে ধরণের বিষয়আশয় ঘটিত চিন্তা সেই যুগে থাকা দরকার ছিলো তা তার ছিলোনা। মানসিক গঠনের ঐ ঘাটতিটা আর বাকি জীবনে তাঁর পূরণ হয়েছিল বলে মনে হয়নি।

১৭
বৃটিশ ভারতে স্বাধীনতা, দেশভাগ, বাংলাভাগ এসব খবর সেই সময় এই প্রান্তিক গ্রামে অনেক বাসি হয়ে এলেও তা অনেকদিন যাবত নেহাত গল্পের বিষয় হিসেবেই ছিল। সেই গল্পের আসর কোন সম্প্রদায় মেনে হতোনা। এটাকে খোলামেলা কথা না-বলার মত বিষয় হিসেবে  কেউ মনেও করতো না। হাটে বাজারে বৈঠক খানায় উৎসব পার্বণে সবখানেই সেই গল্প চলতে পারতো। তা নিয়ে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ঠাট্টা রসিকতাও চালু ছিল। হিন্দুদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে এই ভাবনাটাও তেমন জন্মায়নি। অনেকের এমন  ধারণা ছিল যে, কিছুদিন ধৈর্য ধরো সব আবার  ঠিকঠাক হয়ে যাবে। অবশ্য কখনো কখনো দাঙ্গা রায়টের কোন খবরের বীভৎসতা বাতাসে ভাসতে ভাসতে যখন এই অঞ্চলে এসে পৌঁছে যেত তখন কারো কারো মুখ একটু কালো হয়ে যেত বইকি। স্বতস্ফুর্ততা কেমন যেন কমেও যেত।

সমস্যাটা তৈরি হলো পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে। এখন যারা গ্রামের প্রাইমারীতে পড়ে বা যারা হাই ইস্কুলে পড়ে বা যারা সদ্য মেট্রিক পাশ করেছে—এদের ভবিষ্যৎ কী? ৪৭ এর পর অনেকদিনতো কেটে গেল---আর কতদিন ধৈর্য ধরা যায়—আর কীইবা ঠিক হয়ে যাবে— দিন দিনত খবরের  রঙ পাল্টাচ্ছে। একসময় দুপক্ষের মধ্যে দাঙ্গা টাঙ্গা হতো। এখনতো অনেক দিন যাবত শোনা যাচ্ছে, যা হচ্ছে তা  এক তরফা। হিন্দু পালায় জান মান নিয়ে। সম্পদ পড়ে থাকে থাক। আগে মান প্রাণ বাঁচাই। কিছুদিন যাবত এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সুপ্রভার--অরণ্যের বাঘিনীর মত সে সন্তানের নিরাপত্তার জন্য চারদিকের ঘ্রাণ নেয়। গন্ধ ভাল ঠেকে না। একান্তে সে এইসব আলাপ  তার শাশুড়ির সঙ্গেই করে । কখনো সখনো সুযোগ পেলে স্বামীকে শোনায়। স্বামী শোনেন হয়তো, কিন্তু নীরব থাকেন। সন্তানাদি সহ এতবড় ভদ্রাসন তুলে নিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে  চলে যাওয়ার কথা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু মনে হতো না রবীন্দ্রবাবুর। কিন্তু ১৯৬৪ সনের দাঙ্গা যেন তাদের ঘর বাড়ি গ্রামের উপর ঝাপটা দিয়ে গেল। শম্বুক গতিতে হলেও ততদিনে যোগাযোগ ব্যবস্থার খানিকটা উন্নতি ঘটে গেছে।

ম্যাট্রিক পাশের পর কীসের এক ইন্টারভিউ দিতে মেজ ছেলে ঢাকায় গিয়ে সেই দাঙ্গার ভেতরে পড়ে গিয়েছিল এবং কোন ক্রমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছে—এই খবর ছিল একেবারে সদ্য এবং আকাঁড়া । যার অভিঘাত আগের কোনো খবরের মতো সামান্য  ছিল না। ছিল একটু বেশিই। রবীন্দ্র বাবুকে নিঃস্পৃহ দেখালেও সুপ্রভা ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠলেন। কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়ে সন্তানের শেষরক্ষা কীভাবে হবে! উদয়াস্ত এই পরিশ্রম, এই সংসার—সবই যদি এতই অনিত্য হয়---সুপ্রভা এই প্রথমবার যেন সংসারে তার এতদিনকার যাত্রাপথটা পেছন ফিরে দেখতে পায়।

সুপ্রভার আর  সন্তান হবে না। শেষ সন্তানটির বয়স বছর আট। মোট দশটি সন্তানের জননী হলেও আদর করে নাম রাখা গীতা নামের প্রথম কন্যা সন্তানটি বছর দশেক বয়সে মারা যায়। পেটের রোগ হয়েছিল। প্রথম সন্তানের মৃত্যুতে শোকে ভেঙ্গে পড়ার সময় ছিল না তার। কারণ ততদিনে আরো তিনটি সন্তান তার মুখের দিকে চেয়ে থাকতে শুরু করেছে। শিশু সন্তানের অবোধ চোখের সামনে তাকে  অপরাজিত মাতৃত্বের চেহারাটাই তুলে ধরতে হয়েছিল। অতঃপর ধীরে ধীরে শোক চলে গেলে স্মৃতির মণিকোঠায় শুধু থেকে যায় সে। তার আর রোগ বালাই থাকে না—সে আর বড়ও হয়না। শুধু মাঝে মাঝে কুসংস্কারের সুতো ধরে সে আসে । রাতের অন্ধকারে সঙ্গী সাথীর জন্য সে নাকি  ঘুরে বেড়ায়। কে যেন বলে, অ গীতার মা সাবধান হয়ো কই, রাইতের সময় পোলাপানের শিয়রে মুইড়া ঝাডা  রাইক্কো--।

সুপ্রভা এইসব কথা শুনে ভয় পায়। বিছানা ভরা পোলাপানের অসুখ বিসুখ হলেত কথাই নেই—রাত বিরেতে উঠে উঠে শিয়রের ঝাঁটা টেনে নিয়ে সে অন্ধকারে অশীরী তাড়ায়। আবার পরক্ষণেই গীতার পাণ্ডুর মুখ মনে ভেসে উঠলে বুক ঠেলে কান্নাও আসে। কার হাত থেকে সে কাকে বাঁচায়। ঘুমন্ত স্বামী সন্তান নিয়ে অন্ধকারে সে প্রকৃতই  অসহায় ও একা। অলৌকিকের বিরুদ্ধে টিকে থাকার এই যুদ্ধে তাকে সাহায্য করার কেউ থাকে না।

১৮
কাজ আর কাজ। কাজ দিয়েই নারীকে বেঁধে রাখার এই এক সংসারী কৌশল। একদিন বুঝে গেলেও আর ফেরার পথ থাকে না তখন।   কেননা ততদিনে সে পরিত্রাণহীন এক মা। হয়তো তখন গর্ভের সন্তানের পৃথিবীর আলো দেখার তাড়া তৈরি হয়েছে। ভোর রাত থেকেই সুপ্রভা টের পাচ্ছেন। অন্য দশটা কাজের মধ্যেই এটাও যেন পড়ে--এমন স্বাভাবিক। যেমন হয়তো একদিন আগে নিজেদের ঢেঁকি-ঘরটাকে  নিজেই একটু ঠিকঠাক করে নিয়েছেন। ওটাই আঁতুড় ঘর। বড় মেয়েটার সময় বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরেরগুলো সব এখানে এই  ঢেঁকি-ঘরের আঁতুড়েই পৃথিবীর আলো দেখেছিল। কাঁথা কাপড় খড় ও আরো টুকিটাকি কিছু এনে রাখা হয়েছে  সেখানে। সকালে শাশুড়ি গিয়ে ও পাড়ার সাবিত্রীর মাকে সঙ্গে করেই নিয়ে এলেন। উনিই ধাত্রী। বসে আছেন বারান্দায়।  চোখের সামনে প্রসূতি  কাজ করে চলেছেন। মাঝে সুপ্রভার উদ্দেশ্যে বলছেন—অ বউ আর ঘুইরো না—আহ অহন--।

সুপ্রভা কোনমতে সকালের রান্নাটাও করে দিলেন।  একসময় হয়তো টের পেলেন আর সময় নেই। শাশুড়িকে বললেন—মা পুলাফানডিরে খাইতে দিয়া দিয়েন। আমি  যাইতাছি-। হ-যাও বৌ—আর দেরি কইরোনা শোও গিয়া। হয়তো ঘন্টাখানিক বাদে একটা নতুন গলার কান্না বাড়িতে ছড়িয়ে পড়লো । কান্না শুনে সচকিত আশেপাশের বৌ ঝিরা ছুটে এলো—উলু দিল--। সুপ্রভা কষ্ট করে একবার দেখে নিল সন্তানের মুখ—তারপর একটা শ্রান্তির ঘুম। সন্তান প্রসবের জন্য কোন আতিশয্য লাগে না। রবীন্দ্রবাবু সন্তানের মুখ দেখলেন। দেখতে হয় তাই দেখা। আঁতুড় ঘরের আড়াল সরিয়ে ধাইয়ের কোলে নিয়ে আসা কাঁথা কাপড়ের পুটুলিতে জড়ানো একটা মানুষের ছানা--দেখলেন। তারপর হয়তো ধীরে সুস্থে পশ্চিম পাড়ায় সাধুর বাড়ির দিকে চলে গেলেন।

এভাবেই সুপ্রভা আর তার সন্তানেরা পৃথিবীর একটি কোণে এসে ভিড়েছিলেন। এখন যেখানে প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর হুমকি।  কী করা  উচিত, কিছুই ঠিক করে উঠতে পারছেন না। আর এই সময় তারই এক কন্যা; নিয়তি, যে কিনা নিজেও আজ তিন সন্তানের মা, তার মতই মৃত্যুর হুমকির মুখে পড়ে ভয়ে আতঙ্কে নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে তার কাছে এসে উপস্থিত, সঙ্গে আপাত অদৃশ্য গর্ভে আরেকটিকে  নিয়ে। একান্তই প্রাণে বাঁচার আশায়। অথচ যখন যে কোন মুহূর্তে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হতে পারে, যখন মৃত্যুকে একটু অপেক্ষা করতে বলে মনে হয় একবার সেই অল্প বয়সে দেশান্তরী করে দেয়া সন্তানকটিকে একটু দেখে আসি। এত প্রাণের আধার সুপ্রভা প্রাণ রক্ষার কথা ভেবে ভেবেই না এতদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে তর্ক বিতর্ক করে যাচ্ছেন।

চোখের সামনে গ্রাম খালি হয়ে গেলেও তার স্বামীকে নড়ানো  গেলনা। মনে মনে এই স্বামী-পুরুষটির উপর তার অসহায় ক্রোধ যখন পূর্ণমাত্রায় তখনই নিয়তির আসা--। একান্তে একসময় নিয়তিকে বললেনও—এক বিপদ থাইক্যা বাঁচনের লাইগ্যা আরেক বিপদের মধ্যে আইয়া পরছস—আইসাত অহন বেকটিরে ফালাইছস আরেক বিপদে--। মাথা না তুলে নীরবে এইসব কথা শুনতে শুনতে নিয়তি মনে মনে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো—আমারোতো তুমার মতন দশা—তুমরার এই জামাইত বর্ডারের কথা হুনলেই ভয়ে কাঁপে—সেই মানুষরে লইয়া কীবায় যাওনের কথা ভাবি—।একসময় হয়তো এসব অসহায়তার কথা মাকে সে বলেও। সুপ্রভার ক্রোধ হয়তো তাতে আরো বর্ধিত হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। সংসারের এই অকামের পুরুষগুলোর উদ্দেশে মেয়ের কাছেই কিছুক্ষণ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে নিজের ভাগ্যকেই দোষারোপ করতে থাকেন।

এই সময় সুপ্রভার তার শাশুড়ির কথা খুব মনে পড়ে। দীর্ঘ দিন সংসারে পরামর্শ করার মত একজন মানুষইতো ছিলেন। ছেলেদেরকে  সময়মতোত ইন্ডিয়ায় পাঠিয়ে দেয়ার পরামর্শত তার সঙ্গেই করে ছিলেন। এক সময় মানে ৬৪ সনে মেজ ছেলের সঙ্গে এগার বার বছরের ছোট দুটো ছেলে যাবে বলে শাশুড়িও সঙ্গে  গেলেন। আর এই যাওয়াত যাওয়াই—বছর দুইয়ের মধ্যে তিনি স্বর্গে গেলেন—আর  একবার দেখাও হলোনা। দেশের মতি গতি বোঝার ভার যেন তখন তাদের মত প্রায় লেখাপড়া না জানা  দুই মহিলার উপরেই বর্তেছিল। একসময় সংসারের যাবতীয় ভার তারা তুলে নিয়েছিলেন বটে, কিন্তু এই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার তাদের উপর আসে কি করে  একজন জলজ্যান্ত পুরুষ বাড়িতে থাকতে!

এ যাবত এই জীবনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মূল্য তার এই হতাশা। স্বামীর নির্লিপ্ততাকে তিনি আর তার আধ্যাত্মিকতার ছায়ায় দেখতে রাজি হননা। একান্তে মায়ের এই ক্ষিপ্ত রূপ নিয়তি আগে কোনদিন দেখেছে বলে মনেও পড়েনা। বাবার উপর এত রাগ ! তবু সে মাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলো। বলল—অত চিন্তা কইরনা মা  পথ একটা ঠিকই বাইরবো।  এরপর পথের সন্ধান যে নিয়তিই করবে একটা, সেটা প্রথমে সুপ্রভা ভাবতে পারেন নি। এরপরই নিয়তি যেমন  একদিন অধীর কাকুর  সঙ্গে দেখা করে তেমনি একদিন সালাউদ্দিন চাচার বাসায়ও যায়। সালাউদ্দিন চাচাই ঠাকরোকোনা পর্যন্ত খবর নিয়ে অধীর মাঝিকে বাড়িতে ডেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন ।

ওখান থেকে পরবর্তী পথের খোঁজখবর যার কাছ থেকে নিতে হবে তার নামও বলে দিলেন। অধীর অভিজ্ঞ । নিজেও সে জানে।
[চলবে...]

আপনার মন্তব্য