ফিরে দেখা এক জন্মকথা- ১৫

 প্রকাশিত: ২০১৬-০৩-০৯ ০০:৩৮:৩১

রাজা সরকার:

[পূর্ব প্রকাশের পর...]
৪১
মৌলভী? কেন মিটিং? উদ্দেশ্যই বা কী?---রেডিওটা বন্ধ করে দিবাকর স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। ঘরে শোয়া নিয়তি এখন আর কিছু জিজ্ঞেস করে না—কে আইলো—কে কথা কইল। দিবাকরও আগ বাড়িয়ে কিছু বলেনা। একসময় তিন ছেলেকে নিয়ে সে পুকুর   ঘাটে গেল স্নান করতে। নিয়তির শরীরটা আজ ভাল না। তার জন্য আরও এক বালতি জল পুকুর থেকে এনে দিতে হবে। সাবিত্রীর মা যদিও কয়েক কলসী জল এনে রেখেছে প্রতিদিনের মত। দিবাকর আজ একটু দমে গেছে। নিয়তির আজ আর তাকে লক্ষ্য করতে পারছে না। কিন্তু বেশি সময় বাড়িতে তার উপস্থিতি টের পেয়ে ভাবছে, আজ আবার কী হলো। রেডিওর আওয়াজও শোনা যায় না।   

সাবিত্রীর মা এ বাড়ীর আঁতুড়-ঘর চেনে, জানে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে আঁতুড় ঘর গুছিয়ে নিয়েছে। মাইয়ার শরীলের রকমসকম ঠিক নাই। তার অভিজ্ঞ চোখে ধরা পড়েছে। দুপুরের খাওয়ার পর রেডিও খুলে ঢাকায় আবার বোমা পড়ার খবর শুনলো দিবাকর। শুনলো আরো কী কী ক্যান্টনমেন্টের পতনের কথা। অন্য সময় হলে ঘর থেকে ডেকেই করিমকে খবরটা শোনাতো। আজ আর তার ইচ্ছা করছে না। সবারই খাওয়া হয়ে গেছে। বারান্দায় বিড়ি ধরিয়ে সে এক মনে টেনে যাচ্ছে। দিন দুই আগে তেলিপাড়ার নকুলকে দিয়ে সে তার অনেক দিনের চুল দাঁড়ি কাটিয়ে সাফ সুতরো হয়েছে। এখন চেহারাটা একটু ফিরেছে।  

একটু আগে করিম এসে বারান্দায় বসেছে। দুলাভাইকে সঙ্গে করে মিটিং এ নিয়ে যাওয়ার জন্য। দিবাকর মিটিং এ যাবে—তবে জব্বার মৌলভী—মিটিং—সেখানে তাকে কেন ডাকা--এই সমীকরণের সমাধান সে খুঁজে পাচ্ছে না। কাচারি ঘরটা তার এক শরিক কাকা  শ্বশুরের। আপাতত বাড়ির দায়িত্ব যাদের হাতে উনারা দিয়ে গেছেন তারাই ঘরটা ব্যবহার করছে। আজ আবার সেখানে মিটিং। বলতে গেলে বাড়ির উপরেই মিটিং। মিটিং মানেইতো গণ্ডগোলের ভয়। গণ্ডগোল করার জন্য মানুষের কতকিছু থাকে—তার কি শেষ আছে? একবার এইসব ঝামেলা লেগে গেলেতো বাড়ির উপরেই বিপদ। ভাবছে সকালের দিকে আমিত্তিপুর গেলে হইত—সালাউদ্দিন চাচার কাছে সব জানা যেত—ব্যাপারটা কী--। মিটিং এ যাওয়া কি ঠিক হবে? মুক্তাগাছার স্মৃতি এখনও টাটকা রয়েছে তার মনে।

করিমের তাড়াতেই একসময় উঠতে হলো। দুজনে কাচারির উঠোনের দিকে রওনা হলো। কাছাকাছি হতেই দেখা গেল কয়েকজন অচেনা মানুষজনও এসেছে। আমিত্তিপুরেরও আছে। ঘরের ভেতর একটা বেঞ্চিতে বসা সেদিনের মৌলভী সাহেব আর তার পাশে আর একজন যুবক, যাকে  কখনো এর আগে দিবাকর দেখেনি। অচেনা একজন বয়স্ক লোক সবাইকে ঘরে ডাকছে। মিটিং শুরু হবে। দিবাকর চোখ বুলিয়ে দেখলো যে সালাউদ্দিন চাচা নেই। জব্বারকেও কাছে পিঠে দেখা গেল না। তার মনে কিছুটা ভয়ও দেখা দিল। মনে মনে সে ভাবলো যে এখানে সে-ই বোধহয় একমাত্র হিন্দু। এখানে হিন্দু মুসলমানের কিছু হলে কে জানে কী হবে--। তবুও এসেই যখন  পড়েছে, করিমকে পাশে রেখে সে ভিড়ের মধ্যে গিয়ে বসেও পড়লো। দেখা যাক কী বলে মিটিং এ। কপালে মরণ থাকলে ঘরে আর মিটিং এ তফাৎ নেই। গত কিছুদিনের মধ্যে তৈরি হওয়া তার  আত্মবিশ্বাসটা সে তেমন খুঁজে পাচ্ছে না এখন।  

মিটিং এর শুরুতে মৌলভীর পাশে বসা যুবকটি প্রথম উঠে দাঁড়ালো। এই গ্রামের কথ্য-বাংলা নয়, পরিষ্কার বাংলায় বলা শুরু করলো।- -খুব খারাপ একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশটা যাচ্ছে--এইটা সভা করার মত সময় নয়—তবুও সভা করতে হচ্ছে, কারণ আমাদের এই মৌলভী সাহেব আমাদের এই অঞ্চলে কোন কোন জায়গায় কিছু কিছু ভাষণ দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন—যার আসল কথা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ আমরা আগে যেমন বলতাম এখনও আমাদের তাই বলতে হবে—মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই—নিজেদের বিবাদ নিজেরা মিটিয়ে ফেলব—ইন্ডিয়াযে আজকে আমাদের লগে যুদ্ধ লাগাইছে তার জন্য ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের সবারই লড়াই করতে হবে—আর ইন্ডিয়া মানে কাফেরের দেশ—এই দেশের কাফেররাই কাফেরের দেশ ইন্ডিয়ায় পলাইয়া গেছে—তাদের আর এই দেশে আসতে দেওন নাই—তাদের সহায় সম্পত্তি অহন গনিমতের মাল—আল্লাপাকের বিধান অনুযায়ী অহন থাইক্যা এইসব আমরার অইব।

এতটুকু বলে  যুবকটি মৌলভী সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো—মৌলভী সাহেব, আমি যা যা বললাম তার উপরে  আপনার কিছু বলার থাকলে সবাইকে এখন বলেন--। বলে যুবকটি বসে পড়লো আগের জায়গায়। মৌলভী সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে খুব গুছিয়ে বলা শুরু করলেন। প্রথমে সর্বশক্তিমান আল্লাহতালার নিকট কৃপা প্রার্থনা এবং উপস্থিত সকলকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে তিনি বলতে লাগলেন যে, আমার ভাই লতিফ এতক্ষণ যা যা বললো তা আমারই কথা। আমার কথা ইসলাম সম্মত। আমি আমার ধর্মের বাইরে কোন কথা বলিনা বা বলবোও না। আমার নামে এখানে যে মিটিং আমার এই ভাই ডেকেছে তার উদ্দেশ্য কী আমি জানি না।

আমি মিটিং ডাইক্যা  কাউরে আমার কথা হুনাই না—আমি যেখানে যখন মুসলমান ভাইদের পাই সেইহানেই যা বলার বলি--আমি আল্লার বান্দা। মুসলমান হিসাবে ইমান রক্ষা আমার কর্তব্য। আমার কোন গোপন মতলব নাই—অহন আমি  লতিফ ভাইকেই বলতে বলবো—সে মিটিং ডাকছে ক্যান—কী তার উদ্দেশ্য। বলে মৌলভী সাহেব বসে পড়লেন। দিবাকর ভাবলো এই তাহলে লতিফ—যার কথা অনেক শোনা গেছে—আকবর আলী সাহেবের ছেলে—আমাদের আমিত্তিপুরেরই ছেলে! দিবাকর একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।

লতিফ উঠে দাঁড়িয়ে কোন ভণিতা না করে বলা শুরু করলো---ভাইসব, আমাদের মৌলভী সাহেবকে আমার ভাল লেগেছে, তিনি তার কথার মধ্য দিয়ে সৎভাবেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু আমি তার কথার সঙ্গে একমত নই। শুধু একমত নই না—আমি তার কথার বিরোধিতা করি। কারণ তিনি আমাদের শত্রুদের কথাই নিজের কথা হিসেবে আমাদের কাছে বলেছেন।‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ আমরা আর বলবো না। কারণ পাকিস্তান আমাদের ছয় দফা মানেনি। নির্বাচনে জয়লাভ করা সত্ত্বেও দেশ বা প্রদেশের কোন ক্ষমতা আমাদের হাতে দেয় নি। এপর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু এই দাবী যাতে আর না ওঠে সে জন্য তারা রাতের অন্ধকারে মিলিটারি নামিয়ে গত ২৫শে মার্চ রাত থেকে ঢাকা সহ সমস্ত দেশে গণহত্যা শুরু করেছে। নিরস্ত্র মানুষ—নারী শিশু বৃদ্ধ—কেউ বাদ যায়নি--যা এখনও চলছে—উনি এইসব জানেন কিনা জানিনা—তবে দেশের মানুষ যখন জানে, তখন উনিও নিশ্চয় জানেন। এত মাস, এত অত্যাচার চলছে সারা দেশ জুড়ে—উনি কোথায় ছিলেন জানিনা—এখন এত দিন পর উনি এই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এই সব কথা বলে বেড়াচ্ছেন যা আসলে শত্রু পক্ষেরই কথা। অথচ আমরা এই দেশের ছাত্র যুবক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ  নিজেদের রক্ষা করার জন্য সেই থেকে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। যে যুদ্ধকে আপনারা মুক্তিযুদ্ধ বলে জানেন। উনি কি আমাদের এই কাজকে না-জায়েজ বলতে চান? উনি ধর্ম নিয়ে আছেন—ভাল কথা কিন্তু আমরা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলবো না ‘জয় বাংলা’ বলবো সেইটা ঠিক করে দেবার উনি কে?  

উনি জানেন কিনা জানিনা, পাক সেনাবাহিনী যে দেশজুড়ে নির্বিচার খুন ধর্ষণ ও লুটপাট করে লক্ষ লক্ষ নর নারীর জীবন যেমন শেষ করেছে, তেমনি প্রাণ ভয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। তারা না পারতে পাশের দেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষা করেছে। তার মধ্যে শুধু হিন্দু নয় অনেক মুসলমানও আছে। তারা মুসলমান হয়ে যদি  মুসলমানদের ভাই-ই মনে করবে তবে আমাদের ঘরের মা বোনদের নিয়ে তারা ব্যারাকে ব্যারাকে আটকে রেখে বলাৎকার কীভাবে করে, আমাদের ভাইদের ধরে ধরে হত্যা কীভাবে করে? মৌলভী সাহেব কাফেরদের কথা বলেছেন। হিন্দু ধর্মের মানুষদের মালাউন বলেছেন। এদের সম্পত্তি দখল করতে বলেছেন। কিন্তু এরা কারা? আমাদের মত এরাও অনেক পুরুষ ধরে এদেশেরই মানুষ। শ’ শ’ বছর আমরা পাশাপাশি কাছাকাছি বসবাস করে চলেছি, আজ শুধু ধর্মের কারণে তার প্রতি আমরা এই উক্তি করতে পারি? আপনাদের ইমান কী বলে? আর উনি মুরুব্বী মানুষ, উনি কি জানেন না যে  পূর্ব পাকিস্তানে যত মুসলমান আছে তার চেয়ে বেশি মুসলমান ইন্ডিয়ায় থাকে। বিখ্যাত বিখ্যাত মসজিদও সেখানে কম নেই।আপনার মত আচরণ যদি ঐপারে মানুষেরা মুসলমানদের সঙ্গে করে তখন আপনার কেমন  লাগবে?তা ছাড়া আমাদের এই বিপদের দিনে তারা যদি আমাদের লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের আশ্রয় না দিত তবে হিন্দুদের সঙ্গে আপনার আমার ভাই অনেক মুসলমানও মারা যেত—সেটা কি ভেবে দেখেছেন? তাই ভাই সব, আমি আপনাদের বলবো মৌলবি সাহেবের কাছ থেকে ধর্মের ব্যাখ্যা শুনবেন, দেশের ব্যাখ্যা শুনবেন না,উনার কথায় দেশ চলবে না। দেশের ব্যাখ্যা আপনারা তাকে শোনাবেন। কারণ দেশ চলবে আপনাদের কথায়। শোনাবেন আপনাদের অঞ্চলে আপনাদের কী অভিজ্ঞতা হচ্ছে দিন দিন, তা। আজ যে উনি ভাষণ দিতে দিকে দিকে যাচ্ছেন—তা উনাকে জিজ্ঞেস করবেন গত ৯/১০ মাস উনি কোথায় ছিলেন--পাক বাহিনীর হাত থেকে কাউকে বাঁচানোর জন্য উনি এগিয়ে গিয়েছিলেন কিনা।

আমার বক্তব্যের উপর কারোর প্রশ্ন থাকলে বলবেন—উত্তর দিব। তবে তার আগে মৌলভী সাহেবের যদি কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন। এই বলে যুবকটি বসে পড়লো। নিস্তব্ধ কাচারি ঘরে কেউ টু শব্দটিও করলো না। কেউ কেউ ভাবছে এই বুঝি মৌলভী সাহেব কিছু বলতে উঠে দাঁড়াবেন। কিন্তু না—বরং এর মধ্যে  দূরাগত একটি কলরব ক্রমে নিকটবর্তী হচ্ছে টের পাওয়া গেল। কলরবটি একদম কাছাকাছি হতেই লতিফ উঠে কাচারির দরজার কাছে এলো। অবশ্য তার আগেই চারপাঁচজনের একটি দল, সব অচেনা মুখ, গায়ে চাদর জড়ানো, এসে লতিফের গা ঘেঁসে দাঁড়ালো। তারা এতক্ষণ মিটিং এর মধ্যেই বসে ছিল মনে হয়। ভিড়টি  কাচারির সামনে আসাতে দেখা গেল  তাদের মধ্যে একজন জব্বারের হাত চেপে ধরে আছে। জব্বারের কপাল থেকে রক্তও ঝরছে।  

অন্যদিনের মতো আজও সরিষার খালের দিকে পাহারা ছিল আর এদিকেও গ্রাম শেষের জঙ্গলের ধারে। লতিফের ইউনিট যখন যেখানে অবস্থান করে পাহারার বিষয়টা পরিকল্পিতই থাকে। তবে আজ সবাইকে বলা ছিল যে বড় কোন গোলমাল না হলে গুলি না চালাতে। জব্বারের কাজ ছিল আমিত্তিপুর থেকে শ্রীমন্তপুর পর্যন্ত সরকারী রাস্তাটার উপর নজর রাখার। বোঝা যাচ্ছে জব্বারের সঙ্গে এদের একটা ঝামেলা একটা হয়েছে। লতিফ ইশারায় জব্বারকে ডাকলো। কিন্তু যে হাত ধরে আছে  সে বললো—না অরে ছাড়তাম না। লতিফ বললো--কেন, ও কী করেছে। লতিফকে উত্তর কেউ দিল  না।বরং অগ্রাহ্য করে দুতিন জন একসঙ্গে বলে উঠল—হুনলাম মৌলভী  সাবরে নাহি এইহানে আটকায়া রাখছে কারা—শ্রীমন্তপুরে কারার এত সাহস—দেহি  কুন হালার পুতেরা মৌলভী সাবরে আটকায়— বলতে  বলতে কজন কাচারি ঘরে ঢুকতে গিয়ে প্রবল ধমকের মুখে থমকে গেল। লতিফ পাশের একজনের হাত থেকে একটা রাইফেল নিয়ে আবার বলল—এক পা এদিক অদিক লড়বানা কেউ। লতিফ ঘরের দিকে তাকিয়ে মৌলভী সাহেবের উদ্দেশ্যে বললো—মৌলভী সাব এইদিকে আসেন—আইসা বলেন আফনেরে আটকানো অইছে কিনা। ইতিমধ্যেই চোখমুখ লাল হওয়া মৌলভী সাব দরজার কাছে এসে একটা স্মিত হাসি দিয়ে বললেন—তুমরারে কেডায় কইছে আমারে আটকানোর কথা—বেক্কলের লাহান কী কও—এইহানে মিটিং অইতাছে --হেষ অইলেই যাইয়াম—তুমরা যাও গিয়া--আমি আইতাছি।

লতিফ বললো--না সাহেব অরা এখন কেউ যাইতনা—এরার লগে কাম  আছে আমরার। আগন্তুকদের  উদ্দেশ্যে লতিফ আবার বললো যে যেখানে খাড়োয়া আছ সেখানেই থাক—লড়ার চেষ্টা  কইরোনা। চেষ্টা তারা  করবেওনা । কারণ তারা টের পেয়ে গেছে  বেশ কজন রাইফেলওলা যুবক দ্বারা তারা বেষ্টিত। লতিফ  ঘরে ঢুকে মিটিং এর  সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বললো—আমরার মিটিং এইহানেই শেষ--জয় বাংলা—বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। ঘর থেকে একটা মৃদু আওয়াজ উঠলো—জয় বাংলা, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। মৌলভী সাহেব এরপর উঠে দাঁড়ালেন। তাকে বিদায় জানিয়ে লতিফ বললো আবার দেখা হইবো। নিরুত্তর মৌলভী ধীরে ধীরে বাইরে গেলেন। কাচারি ঘর ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে গেল। অবাক মিটিং এর শ্রোতারা। কীয়ের থাইক্যা কী অইলো—। তারা পুরো ব্যাপারটা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না। পারছে না নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে কথা বলতেও। কাচারির বাইরে কিছুটা তফাতে গিয়ে তারা নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করলো। লতিফ বাইরের দিকে গলা বাড়িয়ে একজনকে বললো—এদের ভিতরে নিয়া আস।  

দিবাকর কাচারি ঘরের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়ের দিকে এগোল। খেয়াল করেনি পেছন পেছন করিমও আসছে। পুকুর পাড়ের কাঁঠাল তলাতে গিয়ে বসে  বিড়ি বার করতে গিয়ে দেখলো করিমও আসছে। করিম এসে পাশেই বসে পড়লো। করিম এসে প্রথম কথা বললো যে কাচারি ঘরের দরজা বন্ধ কইরা দিছে হেরা—কী অইব দুলাভাই? দিবাকর নীরবে বিড়ি টানতে থাকলো আর লতিফের কথা ভাবতে লাগলো। আজ তার অনেক অভিজ্ঞতা হলো। এই প্রথম সে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে কাছ থেকে দেখলো। আজ এমন একজন কে দেখলো যে দেখতে সাধারণ মানুষের মত, কিন্তু কী তেজ তার কথায় আর আচরণে। এই রকম মানুষ দিবাকর তার জীবনে আগে কখনো দেখেনি। তার প্রতিটি কথা সে মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছে। সে মনে মনে আবার বেশ সাহস পাচ্ছে। বিড়ির শেষটা ছুড়ে দিয়ে সে করিমের উদ্দেশ্যে বললো –কী কইতাচছ ক। করিম অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে দুলাভাইয়ের উত্তরে বললো –লইন যাই বাড়ির দিকে---আন্ধার অইতাছে।---হ, ল যাই। বলে দুজনই উঠে দাঁড়ালো।

মৌলভী সাহেবরে আটকানোর কথা কে গিয়ে মামুদপুর মসজিদে বললো বোঝা গেল না। আদৌ এই খবর কেউ দিয়েছিল কিনা  তাও বোঝা গেল না। কিন্তু  কিছু লোকজন এইরকম একটি খবর সঙ্গে নিয়ে সরিষার খাল পার হয়ে সাধারণ মানুষের মতই আমিত্তিপুর হয়ে শ্রীমন্তপুরের দিকে রওয়ানা হলো। পথে জব্বারের সঙ্গে দেখা হতে দলের একজন জব্বারকে জিজ্ঞেস করে—হুনতাছি আমরার মৌলভী সাবরে নাহি শ্রীমন্তপুরে কারা আটকাইয়া রাখছে—তুই জানছনি ছেরা? জব্বার কইলো—আটকাইব কেন—হ্যায়ত মিটিং করতাছে –কাচারিতে।--কই কাচারি, ল আমরার লগে। জব্বার তার কাজ ছেড়ে আসতে অরাজি হওয়ায় প্রথমে তর্কাতর্কি এবং পরে একজন তাকে  দু ঘা বসিয়ে দেয়। এবং একজন সঙ্গে করে টানতে টানতে নিয়া আসে।–এই বর্ণনাতেও কোন ক্লু পেল না লতিফ। আমিত্তিপুরের ঘাটে পাহারা থাকা দলটির কেউ মৌলভী সাহেবকে আটকানোর খবর জানে না । জানলে এতক্ষণে তার কাছে খবর চলে আসতো। মামুদপুরের এই দলটির উদ্দেশ্যও তাই ওরা ধরতে পারেনি । পারলে দলটির খুব বিপদ হতে পারতো। লতিফ ওদের সতর্ক করে জানিয়ে দিল যে যে-ই এটা করে থাকুক আমরা খুঁজে ঠিক বের করবো। আর আফনেরাত বাইচ্যা গেছেন যে ঘাটে এইডা নিয়ে কোন রাওটাও করেন নাই। করলে আফনেরারই ক্ষতি অইত। যাকগে এই সময় কারোর উস্কানিতে কোন রকমের গোলমাল  করতে সাবধান। আমরা সাধারণ মানুষের জন্য এই সব অস্ত্র রাখি না। সাধারণ মানুষের শত্রুদের জন্য রাখি।  

কাচারি ঘরের দরজা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। এর মধ্যে মামুদপুর থেকে আসা লোকদের নাম ধাম সবকিছু লিখে নেয়া হলো কাগজে।  কাচারি ঘরের দিকে আসতে আসতে জব্বারকে কেন মারা হলো, জেনে নিয়ে তার সংক্ষিপ্ত বিচারও হলো।  দরজা খুলে গ্রামের দু চার জন লোকের সামনে জব্বারের হাত ধরে তাদের ক্ষমা চাইতে হলো।অবশ্য দরজা বন্ধ করে তাদের কিছু নির্দেশ আগেই দেয়া হয়ে গিয়েছিল। তার একটা হলো মামুদপুরে এক রাজাকারের বাড়ির সন্ধান জানা গেছে, যার কাছে একটি দুনলা বন্দুক আছে, তা উদ্ধার করে নিজেদের কাছে রাখতে হবে। কে রাখবে লতিফ তার নাম বলে দিল। সময় সুযোগ মত সেটা মুক্তিবাহিনী গিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেবে। আর একটা হলো আগামী কাল খুব সকালে নৌকা নিয়ে একজন আমিত্তিপুরের ঘাটে অপেক্ষা করবে। জানানো হলো কোন রকম বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি কিন্তু মৃত্যুদণ্ড। মামুদপুরের দলটি সব শুনে নিঃশব্দে বেরিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেল। জব্বারকে আজ ছুটি দেয়া হয়েছে। সে আজ আমিত্তিপুরেই রাতে  থাকবে। বিশ্রাম নেবে।  

মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি যখন অন্ধকারে রাস্তায় নেমে এলো তখনই একটা বড় কেটলি হাতে সালাউদ্দিনের বাড়ির এক কাজের লোক ছুটতে ছুটতে এসে উপস্থিত।–আফনেরার লাইগ্যা চা আনছি ভাই সাব—খাইয়া যান। পেছন পেছন দেখা গেল সালাউদ্দিনও আসছে। দলটি আর ঘরে না ঢুকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই চা খেল, মুড়ি খেল। একটু তফাতে দাঁড়িয়ে লতিফের সঙ্গে সালাউদ্দিনের কিছু কথাও হলো। এবার তারা আর রাইফেলগুলোকে চাদরঢাকা অবস্থায় রাখলো না। প্রকাশ্যেই কাঁধে ঝুলিয়ে নিল। মিলিটারিরা পিছু হটছে—সব ঢাকার দিকে ফিরতে চাইছে--লতিফ ঘোষণা করলো পশ্চাদপসরণ করা মিলিটারি কিন্তু ভয়ংকর। খবর পাওয়া গেছে দেশ জুড়ে মারাত্মক হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। সুতরাং সবাই খুব সাবধান। গ্রামে গ্রামে রাত পাহারা থাকবে। দলটি অন্ধকারের মধ্যে সরিষার খালের দিকে রওনা হয়ে গেল।  যেতে যেতে লতিফ আজ রাতের জন্য একটি বিশেষ প্ল্যান সাজিয়ে ফেললো। দুপুরের দিকে মোহনগঞ্জ থেকে আসা খবরও বিবেচনায় রাখলো।

৪২
নিয়তি কোন রকমে বিছানা থেকে উঠে রাতের খাবার খেল। দিবাকরই অনভ্যস্ত হাতে বেড়ে দিল। ছেলেদের নিয়ে বসে একসঙ্গে তারা  খেল। খাওয়া দাওয়ার পর দিবাকর বাইরে বারান্দায় এসে রেডিওটা খুলে কানে চেপে ধরে  বসলো। বিড়ি খেতে খেতে সে রেডিও শুনে চলেছে । একটু পরেই রাত-পাহারার জন্য বের হওয়ার কথা। কিন্তু আজ মনে হয় যাওয়া হবে না। নিয়তির শরীর—কখন কী হয় বলা যায় না। সাবিত্রীর মা আজ রাতটা এখানে থেকে গেলেই পারতো।

এরমধ্যেই হঠাৎ উঠোনে কাউকে দৌড়ে আসতে দেখে দিবাকর রেডিওটা কান থেকে সরাতেই বেশ কিছু গুলির আওয়াজ শুনতে পেল।–তার মধ্যেই মনে হলো যেন করিমের গলা ।--দুলাভাই শিগগির ঘরে যান—গুলি করতাছে--। দিবাকর ঝট করে ঘরে ঢুকতে গিয়ে চৌকাঠে পা ঠেকে পড়ে গেল। চমকে উঠলো ঘরের সবাই। নিয়তি বিছনায় উঠে বসে পড়েছে। সে কাঁপছে। চাপা গলায় বলছে—এই তুমি এই কয়ডারে লইয়া পালাও—শিগগির পালাও—হায়  ভগবান— । কোনমতে দিবাকর মাটি থেকে উঠে শুধু বললো--চুপ চুপ—রাও কইরোনা—শুইয়া পড়—গুলি চলতাছে।  বাচ্চাগুলো একটা জিনিস বুঝে যে এইসময় কান্নাকাটি করা যাবে না। দিবাকর তিনটাকেই তক্তপোশের নিচে চালান করে দিল। নিভিয়ে দিল কমিয়ে রাখা হ্যারিকেনটা। শুনতে পারছে তাদের উঠোন দিয়ে ছোটাছুটি,পায়ের শব্দ। কিন্তু কোন কথা নেই, চীৎকার নেই। মাঝে মাঝে শুধু কান ফাটানো  শব্দ—গুলি না বোমা কে জানে। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই আর খুব কাছে মনে  হচ্ছে না। দূরে সরে যাচ্ছে মনে হলো। এরমধ্যেই শোনা গেল করিমের  গলা খুব আস্তে—অ দুলাভাই পানি আছে--এট্টু পানি লাগবো—দরজাটা খোলেন—ভয় নাই--। দরজা খোলা উচিত কি উচিত না—এসব না ভেবে দিবাকর আচ্ছন্নের মত দরজাটা খুলে দিল। দেখলো তাদের বারান্দায় অন্তত বেশ ক’জন যুবক। অন্ধকারে বোঝা না গেলেও মনে হলো সবারই  হাতে অস্ত্র। তারমধ্যে একজন বারান্দায় শুয়ে আছে---অন্ধকারে ভাল করে দেখতেও পারছে না দিবাকর—হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে একজন বলে উঠলো---কিছুটা কাপড় হবে—পরিষ্কার কাপড় –।দিবাকর বুঝে গেল কারোর চোট লেগেছে।সে ঘরে ঢুকে আবছা অন্ধকারে আস্তে আস্তে নিয়তিকে বললো পুরনো কাপড় লাগবে—বাইরে একজনের মনে হয় চোট লাগছে। নিয়তি তখনও কাঁপছে—তবু বলে দিল তার পায়ের দিকের পুরনো ট্রাঙ্কটা খুলে নিতে ।  

দিবাকর খুব তাড়াতাড়ি একটা পুরনো কাপড়ের অনেকটা অংশ ছিঁড়ে নিয়ে বাইরে এনে একজনের হাতে দিল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই শায়িত যুবকটির পায়ে কাপড়টা জড়িয়ে তাকে দুজন মিলে কাঁধে তুলে নিয়ে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেল। কথাবার্তায় বোঝা গেল যোগেশ ডাক্তারের বাড়ি যাচ্ছে। যারা রয়ে গেল তাদের একজন দিবাকর আর করিমের উদ্দেশ্যে বললো ভয় পাবেন না—আমরা আছি এখানে। এরমধ্যেই করিম তাদের ঘর থেকে আরো জল নিয়ে এলো—সবাই ঢক ঢক করে জল খেয়ে এদিক ওদিক অন্ধকারে ছড়িয়ে গেল। তাদের বারান্দায় খালি দু’জন বসে থাকলো। দিবাকর তাদের বিড়ি দিতে চাইলো। বললো,--দিলে  ঘরের ভিতর থাইক্যা  ধরাইয়া আনেন । এইখানে আগুন জ্বালবেন না। দিবাকর তাই করলো। করিমও বসে আছে। তাকেও একটা জ্বলন্ত বিড়ি দিল।

কথাবার্তায় ইতিমধ্যে যুবকরা জেনে গেছে এদিকে এই একটাই  হিন্দু বাড়ি। দিবাকরকে একজন জিজ্ঞেস করলো—আফনে ওইপারে গেলাইন্যাযে—সবাই যহন গেছে গিয়া---। দিবাকর কী বলবে যখন ভাবছে তখনই নিয়তি দরজা ঠেলে আস্তে আস্তে বাইরে বারান্দায়  পা দিল। আবছা অন্ধকারে কেউ কাউকে পরিষ্কার না দেখলেও আন্দাজ করা যাচ্ছে যে নিয়তির ভরা মাস। দিবাকর চট করে উঠে কাছে আসতেই নিয়তি বললো –বাইরে যাওন যাইব--? নিয়তির এক হাতে জলের ঘটি। দিবাকর তার হাত ধরে ধরে ঘরের পেছনের দিকে  নিয়ে গেল। তারা ফিরে আসতেই দেখে বসা দুজন যুবক উঠে দাঁড়িয়েছে। একজন বলছে –আমরা না জেনে আপনাদের অসুবিধা করলাম বোধহয়। উত্তরে দিবাকর—না না অসুবিধা কিয়ের—আফনেরা থাহনেত সাহস পাইলাম--। না অইলেত ভয়েই শেষ অইয়া  যাইতাম।যুবকদের একজন বললো–ঠিক আছে আফনে বরং ঘরে থাহেন—আমরা এদিক ওদিক আছি—দরকার লাগলে ডাকবেন।  

এই ঘটনার পর ঘুমের আর সুযোগ নেই। সারা গ্রামই জাগছে। বাড়ির উঠোনে লোক যাওয়া আসারও বিরাম নেই। ধীরে ধীরে লোকজনের কথা বার্তাও শোনা যাচ্ছে। রাত-পাহারার দল গ্রামের এ মাথা ও মাথা করে যাচ্ছে। জানা গেল সন্ধ্যে বেলাতেই আজ মোহনগঞ্জের শান্তিবাহিনীর একটি দল দক্ষিণ বরাবর অভিযানে বেরিয়েছিল। তাদের কাছে খবর ছিল যে এই অঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর দলটি আমিত্তিপুর শ্রীমন্তপুরের কোথাও আছে। সম্প্রতি তারা নেত্রকোনার মিলিটারি ক্যাম্প থেকে প্রচুর গোলাবারুদ পেয়েছে। নির্দেশ পেয়ে মিলিটারিরা এখন ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকার পথে পাড়ি দিচ্ছে। বোঝা হাল্কা করার কারণে তারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র  গোলা বারুদ বিতরণ করেছে । স্থানীয় লোক জন নিয়ে গড়া শান্তিবাহিনী এসব পেয়েই উল্লাসে আশেপাশের অঞ্চলে  বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। আজ এখানে একটা ধাক্কা খেয়ে পরিষ্কার হয়ে গেল যে ওরা চলে গেলেও আবার আসতে পারে। ওদের ফিরে যাওয়ার পথে বাঁধা দেয়া হবে না। বরং যেতে দিয়ে আগামী কাল সকাল থেকে ওদেরকে মোহনগঞ্জেই অবরুদ্ধ করা হবে। এ বাবদ একটা সংক্ষিপ্ত মিটিং দিবাকরদের বারান্দাতেই হয়ে গেল। ঘরে বসে দিবাকর আন্দাজ করে নিল। কিন্তু লতিফ ছিল কিনা বোঝা গেল না।

শেষ পর্যন্ত আর একটা সকাল ঠিকই হলো। দিবাকরও অনুভব করলো যে তারা বেঁচে আছে। মুখ না ধুয়েই সে ঘরে বসে বসে একবার  রেডিও খুলে কানে চেপে খবর শুনতে গিয়ে অবাক হয়ে গেল যে বিশেষ বুলেটিন চলছে। বলা হচ্ছে যে  অবরুদ্ধ ঢাকার পতন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ আজ। উৎসাহের চোটে  সে বাইরে বেরিয়ে খবরটা দিতে গিয়ে দেখলো কাউকে দেখা যাচ্ছে না। রেডিও নিয়ে সে উঠানে নেমে এলো—কোথায় কি---কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। গলা চড়িয়ে ডাকলো –অ করিম, করিম ঘরে আছো নাহি। ঘোমটা দেয়া করিমের স্ত্রী বারান্দায় এসে বললো—জী না , হ্যাঁয় ত বাড়িত নাই। দিবাকর বাইরের রাস্তায় গিয়ে দেখে সেখানেও লোক বেশি নাই। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো যে সবাই নাকি বিক্রমপুরের দিকে গেছে। ঐখানে নাকি কয়টা লাশ পড়ে আছে। সন্দেহ করা হচ্ছে গত রাতের লড়াইয়ের ফল। সবাই আন্দাজ করছে এইসব রাজাকারের লাশ না হইয়া পারেনা। হালার পুতেরা লাশ ফালাইয়া পলাইছে। দিবাকর মনে মনে ভাবছে ঢাকার পতন যেখানে আসন্ন সেখানে রাজাকারের লোকজন কার ভরসায় লড়াই করল কাল—দিবাকর বুঝতে পারছে না।–হেরায় কি খবর রাহেনা? ঘাট থেকে মুখ ধুয়ে এক বালতি জল নিয়ে এসে দিবাকর বারান্দায় শুকিয়ে যাওয়া গত রাতের রক্তের দাগ ধুয়ে পরিষ্কার করতে লাগলো। কেউ ওঠেনি এখনও। ফলে কারোর চোখে পড়েনি।
[আগামী পর্বে সমাপ্য...]

আপনার মন্তব্য