ফিরে দেখা এক জন্মকথা- ১৩

 প্রকাশিত: ২০১৬-০২-২৮ ০১:৪৮:২২

রাজা সরকার:

[পূর্ব প্রকাশের পর...]
৩৭
জীবনে এই প্রথম মা বাবা ছাড়া এই বাড়িতে নিয়তিদের ভোর হলো।  সকালের রোদে তারা একটু একটু করে টের পেল বেঁচে থাকা। মা  নেই, নিয়তির আর বসে থেকে আলস্য করার উপায় নেই। যা হোক কিছু সকালের খাওয়া,--কী হবে---ভাবতে ভাবতে সে রান্না ঘরের দরজা খুললো। এতোটা শূন্য দেখাবে সবকিছু আগে মনে হয়নি। তাই প্রতি ক্ষণেই নিয়তি মনে মনে তার মাকে দেখছে । রান্না  ঘরে উনুনের পাশেও সে তাই দেখছে—তার জায়গায় সে নেই, যেন মা বসে বসে সকালের ভাত রান্না করছে। ঘাট থেকে মুখ ধুয়ে ফিরে এসে দিবাকর রান্না ঘরে উঁকি দিতে দিতে নিয়তির উদ্দেশ্যে বললো—ভাত অইলে দিয়া দিও আমারেও—আমিত্তিপুর যাওন লাগবো—সালাউদ্দিন চাচা ডাকছে, কী কথা আছে যেন---। মিরাজ আলিকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে। মিরাজ আলি আর তার ভাই সুরজ আলি, এই দুই জন হলো রবীন্দ্রবাবুর আধিয়ার। এখন আমন ধান কাটার সময় হয়ে গেছে। দেশজুড়ে অস্থিরতার কারণে চাষবাস এবার খুব ভালোভাবে করা যায়নি। তবে সবাই বলছে উপরওলার দয়ায় ফসল খুব ভালো হয়েছে।  

ঘরে বাইরে সালাউদ্দিনের ব্যস্ততার শেষ নেই। আপাতত তার বাড়িতে সে নিজে এবং তার স্ত্রী । সঙ্গে অবশ্য কয়েকজন কাজের মানুষ আছে। ধান কাটার এই মরসুমে বাড়ির মানুষের ব্যস্ততা একটু বেশিই থাকে। তার মধ্যে রবীন্দ্র’র জমি জমার দায়িত্ব রয়েছে তার উপর। এখন নিজের জমির ধান কাটা চলছে। ক’দিনের মধ্যেই রবীন্দ্র’র জমিতে হাত দেবে। ওর আধিয়াররা আমিত্তিপুরেরই দুইজন। সকালে ওদের ডাকিয়ে কথাবার্তা বললো। দিবাকরকে ডেকে পাঠালো। শ্রীমন্তপুরে রবীন্দ্র’র অন্য শরিকেরা সবাই যার যার জমি জমার বন্দোবস্তো করে গেছে আগেই। সেই অনুযায়ী এখন কাজও হচ্ছে। এদিকে দেশের অবস্থা মোটেই খুব অনুকুল নয়। যা খবরাখবর সালাউদ্দিন রাখে তাতে মিলিটারিদের প্রত্যাঘাত যে কোন সময় হতে পারে। অবশ্য পাল্টা প্রস্তুতিও চলছে। এসব অত্যন্ত গোপনীয় ব্যাপার। দিবাকর এলে ফসল কাটার ব্যাপারে বললো—বাবা ধান কাটার সময় তোমারত মাঝে মইধ্যে এই বর একটু আওন লাগব—এই একটু দেহাশুনা আরকি—মাড়াইয়ের কাজ আমার এই বাইর উডানেই অইবো—ইত্যাদি। জীবনে দিবাকর যদিও এসব কাজ করেনি, তবু সালাউদ্দিন চাচার কথায় তাকে হাজিরা দিতে হবে। কারণ শ্বশুরের অবর্তমানে তিনিই এখন অভিবাবক। কথাবার্তার শেষে দিবাকরকে সালাউদ্দিন কিছুটা সাহস জোগালেন। বললেন—আর বেশিদিন মিলিটারিরা চালাইতে পারতনা—আমরার গ্রামে আর অত ভয় পাওয়ার কিছু নাই। যে কোন বিপদে আগে খবর আসব—চিন্তা কইরনা।

সকালের খাওয়া দাওয়ার পর এঁটো বাসনও ঘরেই ছিল। এই শরীর নিয়ে বাসন মাজার জন্য নিয়তি ঘাটে যাবে কি যাবে না যখন ভাবছে তখনই সাবিত্রীর মা এসে পড়ল। আগেই কথা হয়েছিল সুপ্রভার সঙ্গে। যতদিন দরকার সে থাকবে । মেয়ের দেখাশোনা, প্রয়োজনে রান্না করা এবং এছাড়াও যাবতীয় কাজ করবে। সারাদিন থেকে সন্ধ্যের পর রাতের খাবার খেয়ে অথবা সঙ্গে নিয়ে সে বাড়ি ফিরে যাবে। সাবিত্রীর একজন অভিজ্ঞ ধাত্রীও। নিয়তির অনেক ভরসা। শুনেছে তার জন্মও নাকি ওনার হাতেই। এই বাড়ির কাজ করে সাবিত্রী ভাল  পায়। রাতে এখানে থাকতে পারলে ভাল হতো, কিন্তু নিজের ঘরটাতে রাতে গিয়ে না শুতে পারলে তার ভাল লাগে না। একা থাকতে তার ভয় লাগে না। এ-জন্য সাহসিনী হিসেবে গ্রামে তার খুব নাম ডাক। গ্রামের লোকের সঙ্গেই তার অকাল-বিধবা মেয়ে সাবিত্রীকে কে দুটো বাচ্চাসহ সে পাঠিয়ে দিয়েছে  বর্ডারের ঐ পারে । খবর পেয়েছে তারা বাঘমারা ক্যাম্পে আছে। লোকের মুখে যা শোনা যাচ্ছিল তাতে নিজেও চাইছিলনা মেয়ে এখানে  থাকুক। কখন কী হয়--এমনিতেই পুরুষমানুষহীন বাড়ি তাদের— মেয়ে নিয়ে কত ঝামেলা যায় তার--।      

আমিত্তিপুর থেকে ফেরার পথে দিবাকরের মনে একটা নতুন অনুভুতি জন্মালো। একবার চলে গিয়ে আবার ফিরে আসার পর এই শ্রীমন্তপুর তার কাছে যেন অনেক বেশি কাছের মনে হচ্ছে। একসময় সে চেয়েই ছিল এখানে থেকে যাওয়ার। ঘটনা পরম্পরায় সেটাই হলো। যদিও মাথার উপর এখনও বিপদ, এই অবস্থায় সংসার নিয়ে বেঁচে থাকার পুরো দায়িত্বও এখন তার হাতে। পারুক না পারুক  ঘরের এতগুলো মুখের খোরাকত তাকেই জোগাড় করে রাখতে হবে। ঘরে ধান  বা চাল কী পরিমান আছে তার খোঁজ এখন তাকেই রাখতে হবে। জমির ব্যাপার না হয় কিছুদিন সালাউদ্দিন চাচাই রাখবে। লক্ষ্য রাখতে হবে নিয়তির দিকেও। এসব ভাবতে ভাবতে সে পুকুর পাড়ের কাঁঠাল গাছের নিচে গিয়ে একটা বিড়ি ধরিয়ে বসলো। ভাবছে নিয়তি সুস্থ হয়ে গেলে সে একাই একশ। এসব সাংসারিক বিষয়ে সে যথেষ্ট দক্ষ। সালাউদ্দিনের আশ্বাসে আজ তার মন একটু উৎফুল্ল। ইচ্ছে করছে বড়শি বা জাল দিয়ে মাছ মারার। পর পর নিরামিষ খাওয়া খুব যন্ত্রণার বিষয়।

নির্জন জায়গায় হঠাৎ কারোর গলা আওয়াজ শুনলে একটু চমকে ওঠা আস্বাভাবিক নয়। দিবাকরেরও তাই হলো । পাশের বাড়িতে এসে ওঠা আমিত্তিপুরের পরিবারটির এক ছেলে, নাম বোধহয় করিম, হাতে একটা তিনকোনা জাল নিয়ে পুকুর পাড়ে এসে উপস্থিত। তারই গলা শুনে দিবাকর কিছুটা চমকে ওঠে।–কী দুলাভাই একলা একলা কিতা করুইন--। বলে সে কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে হাসি হাসি মুখ করে জলেও নেমে পড়ে ।  

পাশাপাশি অন্যশরিকদের বাড়িগুলোতেও ক’দিন হলো আমিত্তিপুরের কয়েকটা পরিবার এসে উঠেছে। এইসময় নাকি তাদের কারো কারো ঘর সারাবে বা নতুন করে বাঁধবে। সঙ্গে ছোট বাচ্চাকাচ্চাও আছে বেশ কিছু। সুবিধে হয়েছে নিয়তির ছেলেদের। তারা খেলার সঙ্গী পেয়ে খুশি। নিয়তি এদের এই বাড়ি ঘরে এসে ওঠে পড়ার ব্যাপারে কোন দিক চিন্তা না করে বরং খুশিই হলো। প্রতিবেশী পাওয়া এখন শ্রীমন্তপুরে অনেক কিছু পাওয়া। মানুষের অবর্তমানে বাড়ি ঘরের শূন্যতা যেন আগাছার জঙ্গল দিয়ে ভরাট হচ্ছিলো। এরা এসে প্রথমেই বেশ কিছু পরিষ্কার করে নিয়েছে। নিয়তির দুটো কথা বলার মত বা শোনার মত লোক পেয়ে খালি বাড়ির চাপটা এখন সহ্য করতে পারছে। করিমের বউ এসে তার সঙ্গে মাঝে মাঝে গল্পও করে।

দিবাকর আমিত্তিপুর থেকে পুকুর পাড় হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে কিছুক্ষণ আগে। কিন্তু এখনও  ঠিক করতে পারছে না মাছ মারতে যাবে কি যাবে না। নিয়তির সঙ্গেও এনিয়ে কথা হলো। নিয়তির মত খুব স্পষ্ট। যাওয়ার আগে কাকারা ঘরবাড়ি জমিজমা সবই তাদের হেফাজতে রেখে গেছে—তারা পুকুরে মাছ মারলে কার কী বলার আছে।–তুমি এইতা নিয়া ভাইব্য না। বিষয় আশয় সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ দিবাকরের ভাবনা হচ্ছিলো যে, কোনদিন কাকারা ফিরে এসে যদি এই নিয়ে কথা শোনায়! নিয়তির কথায় সে আশ্বস্থ হলো। এর মধ্যেই  আবার শোনা গেল করিমের গলা, উঠানে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটা মাঝারি আকারের রুই মাছ ।—আফা কই--এইডা রাখুইন— দুলাভাইয়ের লাইগ্যা আনছি—বলে হাসতে হাসতে সে  রান্না ঘরের বারান্দায় মাছটা নামিয়ে দিয়ে চলে গেল ।

৩৮
ধান কাটার কাজ শুরু হওয়ার পর মনে হচ্ছিল দেশটা যেন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু না, গতরাত থেকে কেন্দুয়াতে ভীষণ গোলমাল। মানুষজন সেখান থেকে পালাচ্ছে। চলছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিটারিদের ব্যাপক লড়াই । নেত্রকোণার সঙ্গে কেন্দুয়ার সড়কটা মেরামত করেই তারা মোহনগঞ্জের বদলা নেয়ার জন্য মনে হয় ঝাঁপিয়ে পড়েছে।  শ্রীমন্তপুর থেকে অনেকটা দক্ষিণে কেন্দুয়া।  এদিক থেকে তাড়া খেয়ে রাজাকারদের দলবল সব ওইদিকেই ঢুকে গেছিল কিনা কে জানে। শোনা যাচ্ছে প্রথম লড়াইটা হচ্ছিল রাজাকারদের সঙ্গেই। পরে খবর পেয়ে মিলিটারিরা নেত্রকোণা থেকে এসে  যোগ দেয়।  আমিত্তিপুরের যারা পরিবারের লোকজন কিছু ওদিকে পাঠিয়ে ছিল তারা তাদের আজ সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এইসব নিয়ে সালাউদ্দিন চাচা খুব চিন্তিত। চাচা  আরো চিন্তিত কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের দলটা উনি সন্দেহ করছেন লতিফের। আমিত্তিপুরের  অনেকের বাড়িতেই এখন খেত থেকে কেটে আনা ধানের স্তুপ। কিছু মাড়াই হয়েছে, কিছু এমনি রয়েছে। আগুনটাগুন লাগলে সাঙ্ঘাতিক বিপদ। বছরের খোরাক আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। তাই আজ রাতে আবার রাত-পাহারার দল তৈরি হয়েছে।  সেই দলে আজ দিবাকরও আছে। দিবাকর নিজেকে আর আলাদা ভাবতে পারছে না। সেও রাতে খাওয়ার পর ঘর থেকে একটা পুরনো জংধরা বল্লম নিয়ে বেরিয়েছে। দিবাকরের এই রূপ নিয়তির কাছে অচেনা। নিয়তি বাঁধা দেয়নি। বরং যাওয়ার সময় হাত ধরে বলে দিয়েছে যাতে সাবধান সতর্ক থাকে।

মাঝরাতের দিকে শোনা গেছে ব্যাপক গুলিগোলার শব্দ। রাত-পাহারার দলের মতে মনে হয়েছে ওটা মোহনগঞ্জের দিক থেকে আসছে। রাত পাহারার দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে বড় একটা দল রয়েছে দিবাকরদের বাড়ির পরে যে জঙ্গল আছে তার আশ পাশে। অন্য ছোট দলটা আমিত্তিপুরের ঐদিকে সরিষার খালের নৌকা-ঘাটে। নিয়তি রাতে টের পেয়েছে তাদের বাড়ির কাছাকাছি লোকজনের উপস্থিতি। আশ্চর্য,অনেক দিন পর নিয়তি রাতটা খুব নির্ভয়ে কাটালো। কিছুটা ঘুমলোও। অবশ্য সারা গ্রাম প্রায় জেগে জেগেই পার করলো রাত। ভোরবেলা দিবাকর ফিরে এলো। তখনও তার খুব উৎসাহ। যেন যুদ্ধজয় করে ফিরেছে। বললো যে উত্তর দক্ষিণ দুই দিকেই বুঝলা মুক্তিযোদ্ধারা জিততাছে।  ছেলেরা সাঙ্ঘাতিক ফাইট দিতাছে । নিয়তি অবাক হয়ে শুনে তার কথা । কোনদিন তার মুখে কোন উজ্জীবিত বাক্য-কথা শুনেছে বলে মনে পড়ে না। শুনে মনে হয় যেন মুক্তিযোদ্ধারা তার খুব চেনাজানা লোকজন।   

সত্যি সত্যি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আনাগোনা কথাবার্তায় মনে হলো যেন ভাল কিছুই হয়েছে। গত কয়েকমাসে যে মানুষগুলো একটানা মৃত্যুভয়ে চুপসে গিয়েছিলো তারাই এখন চওড়া করে হাসছে—চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে রাইফেল নিয়ে মিলিটারি এলেও তারা তাদের লাঠিপেটা করে সাবার করে দেবে। মুরুব্বীরা কম বয়সীদের কাছে ঘেঁসতে পারছে না। কারণ তারা উত্তেজনায় পাকিস্তানী মিলিটারীর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে যোগ করছে স্থানীয় কুখ্যাত খিস্তিগুলো। শুধু দূর থেকে তারা হাঁক পারছেন—এই তরা অহন বাড়িত যা—ঘুমা গিয়া---রাইতভর জাগন রইছস—

কিছুদিন যাবত এসব অঞ্চলে লবণের অভাব একটু একটু করে বোঝা যাচ্ছিলো। এখন মোটামুটি কেরোসিন আর লবণের আকাল শুরু  হয়েছে। স্থানীয় বাজার আজ বসার কথা। স্নান খাওয়া করে দিবাকর ঘুমোচ্ছে। রোদটা পড়লে ডেকে দিতে হবে বাজারে যাওয়ার জন্য। আর যা কিছু হউক, লবণ ছাড়া খাওয়া ক্যামনে --! এরমধ্যে সাধু জেডা এসে উপস্থিত---কী মাইয়া আছ কেমন---ক’দিন খুজখবর নিতাম পারি নাই---ভাবলাম যাই আজ একবার দেইখ্যা আসি---রবীন্দ্র’দার খবর পাইছ? নিয়তি বললো—হ ,জেডা মশয়, খবর পাইছি—তেনারা ভালামতে এলংবাজার গিয়া উটছেন। অইডা ইন্ডিয়া। --উত্তরে সাধু—মাথার উপর দু হাত তুলে বললেন জয় রাধা মাধবের জয়—সবই তার ইচ্ছা—কৃপাসিন্ধু তিনি, তিনিই সবাইরে রক্ষা করবেন। বিভিন্ন খবরে মানুষ এতটাই একই সঙ্গে আস্থাবান এবং আস্থাহীন যে, এখন কিছুদিন মধুসাধু গ্রাম বেঁধে দেয়ার জন্য হাততালি দিয়ে প্রদক্ষিণ আর করেন না। সাধুজেডাকে এগিয়ে দেয়ার সময় নিয়তি বললো—কাইল যোগেশদারে একটু এইহানে আইতে কইবেন। নেত্রকোণার থাইক্যা ফিরনের পর কিছুদিন পা ফোলাডা কম আছিল। অহন আবার বাড়তাছে। দেহি যোগেশদা কী কয়-- ।  

সন্ধ্যার পর পর দিবাকর বাজার থেকে ফিরলো। ফিরলো একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে। লবণ কেরোসিন নিয়ে বাজারে গন্ডগোল। বাজারে টহল দেয়া রাজাকার বাহিনি আজ আবার বাজারে আসে। তাদের দাবী লবণ কেরোসিন যতটা তারা কিনতে চাইবে ততটাই দিতে হবে। বাজারের মানুষ রাজি হলোনা। এককথা দুকথায় হাতাহাতি থেকে লাঠালাঠি। রাজাকার লোকদের একজনের হাতে আজও বন্দুক ছিল। সে বন্দুক তাক করে ভয় দেখাতে শুরু করলো। লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দিল। কিন্তু কোথা থেকে তিন জন রাইফেলধারী ছেলে হঠাৎ এসে বাজারে উপস্থিত। তারা এসে বন্দুকওলা রাজাকারকে ধরে প্রচন্ড মার দিল। বাকি ক’জন পালাতে গিয়েও পালাতে পারলোনা । মানুষজন তাদের ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেললো। মারমুখী মানুষজনকে রাইফেলধারীরা নির্দেশ দিল কোনরকম গন্ডগোল না করতে। অবশ্য ইতিমধ্যেই তাদেরকে যথেষ্ট মারা হয়ে গেছে। আরো মারতে চাইছে কেউ কেউ। এর জন্য দু একবার জোর ধমকও  শোনা গেল।তাতে কাজ হলো। তাদের একজন একটা টুলের উপর দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো যে সবাইকে আধা সের করে লবণ আর আধ বোতল করে কেরোসিন বিক্রি করতে হবে। আজ যারা পাবে না কাল আবার তাদের দেয়া হবে। কথা শুনে  মানুষজন অবাক। এরা কারা? পরিচয় জানতে চেয়ে কে একজন ফিস ফিস করছিল। তাকে এদের একজন বলেছে একটু পরেই দেখতে পাবেন। সত্যি দেখা গেল। রাজাকারের দলটির চারজনকে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে নিয়ে তারা চলে গেল। বাঁধা দেয়ার কেউ ছিল না। যাওয়ার সময় বলে গেল বাজার রোজ বসবে। তারা একটি নৌকা করে চলে গেল।  নৌকাটিতে আরও অন্তত ছয় জন অপরিচিত ছেলে বসেছিল। আগে কেউ তেমন লক্ষ্য করেনি। দলটি চলে যাওয়ার পর বাজার জুড়ে উল্লাস। যেন দেশে আর রাজাকার বা পাকিস্তানী মিলিটারী কেউ নাই। কেরোসিন লবণ দুটোই দিবাকর পেয়েছে। তবে ভিড়ের ধাক্কাধাক্কিতে তার এই দশা। দশা যাই হউক মনে মনে সে খুব খুশি। নিয়তি লক্ষ্য করলো তার চোখে মুখে বেশ উত্তেজনা।
[চলবে...]

আপনার মন্তব্য