প্রকাশিত: ২০১৬-০৫-০৯ ১২:৩৫:৪০
মনোজিৎকুমার দাস:
বিদ্যাসাগরে লেখা দ্বিতীয় ভাগের কথা -দুর্বলের রাগ বৃথা।প্রাজ্ঞজনের আপ্তবাক্য কখনোই অসত্য হতে পারে না। গল্পের শিরোনামের চার যুবতীর মধ্যে দুজন সবল ও তেজী নারী, আর দুজন নারীকে দুর্বল বললেও তারা রাগী যুবতী।
দুজন সবল নারী যুবতীর নাম মনে করেন অমলা ও বিমলা।আর তাদের স্বামীর নাম অমল, বিমল অন্যদিকে আর দুজন রাগী দুর্বল যুবতী শিবানী ও মালতী।তারা চারজনই বিবাহিতা। সফল দুজন নারী তাদের স্বামীদেরকে হাতের মুঠো মধ্যে রাখে।অমলের বৌ অমলা রাগী মহিলা।তার কথায় স্বামী বেচারা উঠ বস করে।বিমলা কিন্তু অমলার আপন বোন।অন্যদিকে বিমলার স্বামী বিমল অমলের আপন ভাই। ওদের মা ভেবেছিল দুই ভাই আপন দুই বোনকে বিয়ে করায় তার ছেলে দুটো মিলেমিশেই থাকবে বোনে বোনে সহমতের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটাই ঘটলো।
দুবোনের সম্পর্ক দাকুমড়োর। কে কাকে টিক্কা দিতে পারে এটাই তাদের উদ্দেশ।অমল ও আমলা তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকে সিলেটে, অমল ওখানে চা বাগানের ম্যানেজার। অন্যদিকে, বিমল সরকারী বড় মাপের অফিসার। বিমল আর বিমলা তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকে ঢাকার মিরপুরে।অমল ঢাকায় এলে ওঠে হোটেলে।অমলা তার সোয়ামীকে বলে দেয় বিমলার বাসায় ওঠার খবর পেলে সে তার সোয়ামীর ঠ্যাঙ ভেঙে দেবে। ছোট ভাইয়ের বাসায় যাবার ইচ্ছে থাকলেও বৌ এর ভয়ে ছোট ভাইয়ের বাসায় যাবার কথা ভাবতে পারে না।অন্যদিকে আমলার ছোট বোন বিমলা অমলা চেয়ে এক কাটি উপরে।
দুই বোনের একটা বিষয়ে বড় একটা মিল কিন্তু আছে। উভয়েই শাশুড়িকে দুচোখে দেখতে পারে না। শাশুড়ি সবই বুঝতে পারে। সে ভাবে, কার্তিক ঠাকুরের মতো সুদর্শন ছাওয়ালের সাথে কী দেখে যে অমলের বাবা মর্দ পুরুষের মত মেয়ের সঙ্গে ছাওয়ালের বিয়ে দিয়েছিল! ছোট ছাওয়াল বিমল অমলের চেয়েও সুদর্শন। তুই কী দেখে অমলার ছোট বোন বিমলার পিরিতে মজে বিয়ে করলি! দ্যাশে কী মেয়ে ছিলো না।
দুই বোনের মিল না থাকলেও তাদের অভিযোগ তাদের শাশুড়ি তিন মেয়ের বাড়িতে ধান চাল আর টাকা পয়সা পাচার করে দেয়। একথা ভেবে দুই বোন সিলেটে আর ঢাকায় বসে শাপের মত ফোঁসফাস করে সোয়ামীদের উপর চড়াও হয়। অমল ঢাকায় এলে বিমল বৌকে না জানিয়ে গোপনে হোটেলে দাদার সঙ্গে দেখা করে ভয়ে ভয়ে, না জানি বৌ ঢের পেয়ে না যায়। ওদের শাশুড়ি ভাবে বৌ দুটো যেন সাপের পাঁচ পা দেখেছে! বিমলের বোন মানে বিমলার ননদ কাত্যায়নীর ডায়াবেটিসের বাড়াবাড়ি দেখা দিলে তার সোয়ামী বৌকে বারডেম হসপিটালে ভর্তি করানোর জন্য ঢাকায় গিয়ে প্রথমে বিমলের বাসায় ওঠে।
বিমলা তার সোয়ামী বিমলকে বলে, " মরণ আর কাকে বলে! ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে আমাদের বাসায় উঠার কী দরকার ছিল! বিমল ও তোমার বোন হতে পারে তাই বলে রোগ ব্যাধির সাথে আত্মীয়তা নেই।"বৌয়ের কথা শুনে বিমল যেন গাছ থেকে পড়ে যাবার মত অবস্থা হয়। সে বৌকে বোঝানোর চেষ্টা করে এই বল যে ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে রোগ নয়। সোয়ামীর কথা শুনে বৌ বিমলা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে, " তুমার কথা শুনে তুমার মুখে ঝাঁটা মারতে ইচ্ছে করছে, আমি গদা ডাক্তারে মেয়ে, “ আমাকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করো না। আমি ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাস করি তাতো ..."
বিমল টাই গলায় না বেঁধেই ঘর থেকে বের হয়ে গেলে বিমলা চিৎকার করে বলে, "যাও তুমার চা বাগানের গোমস্তা ভাইয়ের মত পোশাকে। আমি দেখতে চাই তুমাকে সুটেডবুটেড। আমাকে দেখেও তুমি বোঝ না, আমি কেমন সেজেগুজে যুবতী হয়ে থাকি।"
কীভাবে যেন অমলা জানতে পারে বিমল অমলের হোটেলে এসেছিল। এতে অমলা তার সোয়ামী অমলের উপর রেগে বলে,"তলে তলে তূমাগেরে পিরিত আছে, আমরাই বুনি বুনি ফ্যাসাদ করে মরতিছি। এবার তুমাকে এক কথায় বলছি বাড়ির জায়গা জমি, গাছগাছালি বিক্রি করে আনো সুমায় থাকতি।" বৌয়ের কথা শুনে অমলের রাগ হয় না, কারণ রাগী বৌয়ের সাথে সে বাদানুবাদ করতে চায় না। তবে সে ভাবে, জমিজিরাত বিক্রি করে এলে মা কোথায় যাবে ? একথাটা বৌকে বলতে সে সাহস পায় না। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে অমলা বলে, "আমার শাশুড়ি ঠাকরুন নাকি ঢাকায় বিমলাদের ওখানে মাস খানেক থেকে গেছ, বড় ছাওয়ালের পর দরদ থাকলি পারে সিলেটে না এসে পারত!"
একদিন বিমলা তার সোয়ামী বিমল বলল যে সে তার সাথে দিল্লি গিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করায়ে আসবে। বুক আর মুখের প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে এসেছে উপরের ফ্লাটের অনামিকা বৌদি, বিমলের চেয়ে তার সোয়ামী কমই কিন্তু আয় উপার্জন করে! রাতে বিমল তার বৌ এর স্তন দুটোয় হাত দিতে চেষ্টা করলে বিমলা এক ঝটকায় সোয়ামী হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,“ দিল্লি থেকে প্লাস্টিক সার্জারি করায়ে না এনে তুমি আমার বুকে হাত দেবে না কিন্তু! অনামিকা বৌদির স্তনের প্লাস্টিক সার্জারি করার পর ও দুটো যে কী সুডোল হয়েছে আমার ঝোলা লাউ----’ বৌয়ের কথা থামিয়ে দিয়ে বিমল বলে, “ঠিক আছে আগামী সপ্তাহেই তোমাকে নিয়ে দিল্লি যাবার ব্যবস্থা করছি।’
এবার বলতে হয় শিবানী ও মালতীর গল্প। দুই জনই রাগী যুবতী। তাদের সোয়ামীর আয় উপার্জন ভাল না। অভাবের তাড়নায় তারা সব সময়ই রেগে থাকে। তাদের সোয়ামীরা কিন্তু অমল বিমলের উল্টো।বৌরা রাগ দেখালে তাদের সোয়ামীরা তাদের চেয়ে বেশি মাত্রায় রেগে যায়। আর রেগে গিয়ে তাদের মৃদু প্রহারও করে। এমনটা ঘটলে শিবানি রাতের এক সময় ভাবে, সোয়ামীর রাগ যেন পয়মন্ত। আদর সোহাগে বৌদের মান ভাঙিয়ে সোহাগে সোহাগে ভরিয়ে দেয়। শিবানীর সে সময় খুব মজা লাগে। তার জানতে ইচ্ছে হয় তার দিদি মালতির কেমন লাগে।
উপসংহার: মালতি ও শিবানীরাও আপন দুই বোন, আবার তাদের সোয়ামীরাও আপন দুই ভাই। বোনে বোনে মিলমহব্বত অসীম। একই পরিবারে গ্রামে থাকে তো তারা। রাগী হলেও তাদের রাগ এক সময় অনুরাগে রূপ নেয়।
আপনার মন্তব্য