জার্মান রোমান্টিক কবি হাইনরিশ হাইনের কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৭-০৩-২৯ ১৯:১৪:২০

 আপডেট: ২০১৭-০৩-৩০ ০১:০১:২০

মোনাজ হক:

একজন বাঙালির কাছে যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একই সময়ে সাহিত্য ও জীবনের প্রতীক। তেমনি একজন জার্মানের কাছে হাইনরিশ হাইনে ছিলেন "রোমান্টিক যুগের" প্রেম ও সুন্দরের কবি। এখানে রোমান্টিক যুগ বলতে ইউরোপের রেনেসাঁ আন্দোলনের ঠিক পরবর্তী সময়টাকে বোঝায়। রোমান্টিক একটি সাংস্কৃতিক-ঐতিহাসিক যুগ যা মূলত ১৮ শতাব্দীর প্রথমার্ধে (১৭৯০ থেকে ১৮৫০) জার্মানিতে তথা ইউরোপে একাধারে শিল্পবিপ্লব ও রোমান্টিক সাহিত্য-শিল্প চর্চার উন্মেষ ঘটায়।

জার্মান কবি হাইনরিশ হাইনে'র (জন্ম: ১৩ ডিসেম্বর ১৭৯৭ মৃত্যু: ১৮৫৬) তাঁর সাথে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের কম্পারেটিভ (তুলনামূলক) আলোচনা একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ বটে। হাইনের মৃত্যুর ৫ বছর পরে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়, এই দুজন মহাপুরুষকে এক করে দেখবার কোনো সুযোগ নেই, তবুও কোথায় যেন একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

জার্মান "রোমান্টিক যুগের" কবি হাইনরিশ হাইনে যখন "মাত্র" ৩৫০ টি কবিতা রচনা করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন ঠিক তার পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৩৫০০ এর বেশি কবিতা ও গান লিখে প্রেম, ঐশ্বরিক পূজা ও প্রকৃতির কবি হয়ে বাংলা সাহিত্যে একটা বিরাট অংশ জুড়ে আসন গেড়েছেন। এর প্রকৃত কারণ হলো, হাইনরিশ হাইনে একা ছিলেন না, তাঁর সময়োপযোগী রোমান্টিক যুগের আরো অন্যান্য কবি সাহিত্যিক যেমন নোভালিস, প্রিন্স হার্ডেনবার্গ, হাইনরিখ ফোন ক্লাইস্ট, আইসেনডর্ফ, হফম্যান, বেটিনা ফোন অর্নিম তাদের সাথে একত্র হয়েই রোমান্টিসিজম এর চর্চা করেছেন আর রবীন্দ্রনাথ বলতে গেলে প্রায় একাই বাংলাসাহিত্যে একটা বিরাট সময় জুড়ে মানুষের মনোজগতে জায়গা করে নিয়েছেন। কাজেকাজেই এই দু'জন কবির সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্র ও প্রকাশ আলাদা, মিলটা শুধু মানুষের গ্রহণযোগ্যতায়।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির পুরো কীর্তিটাই (নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পূর্ব অবধি) ভারতবর্ষেই পেয়েছেন, অন্যদিকে হাইনরিশ হাইনে সেসময় বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন তাঁর ধর্ম-সমালোচনায় ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কট্টর সমালোচক হিসেবে। এমনকি হাইনে জন্মগত ভাবে ইহুদি হয়েও খ্রিস্ট ও ইহুদি ধর্মের সমালোচনায় ছাড় দেননি। সেই অপরাধেই একসময় তাঁকে জার্মানি ছেড়ে প্যারিসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়েছিল।

স্বপ্নদ্রষ্টা
হাইনরিশ হাইনে

আমি স্বপ্নে দেখলাম কি শোকার্ত চোখে তাকিয়ে আছে চাঁদ
কি অদ্ভুত করুণ চাকচিক্য হীন ভাবে জ্বলছে নক্ষত্ররাশি
আমাকে নিয়ে যাও সেই শহরে যেখানে সুদর্শনাদের বাস,
সহস্র মাইল দূরে অন্ধকার থেকে আলোর ঝর্ণাধারায়।

স্বপ্নশেষে আজ আমি তার ঘরের দুয়ারে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
আমার ওষ্ঠে সেই পাথর ছুঁয়েছি যে পাথরের সিঁড়িবেয়ে
তার চঞ্চল চরণ দুখানি নৃত্যের ছন্দে উপরে উঠেছে
আর মসৃণ সান্ধ্য পোশাকের ঝালর স্পর্শ করেছে।

শীতের হিমেল রাত ছিল দীর্ঘ শান্ত আর মৌনতায় ভরা
রাতের বাতাস ছিল মৌন, যেন হিমগিরির শীতল পাথর
জানালায় ফিকে আলোয় চোখেপড়ে ফ্যাকাসে মুখশ্রী,
চৌকাঠে হেলান দিয়ে চাঁদ ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগেই।
[কবিতাটি জার্মান ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন মোনাজ হক]

আপনার মন্তব্য