নন্দিতা অধিকারীর ৩ কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৭-০৪-০৪ ০০:১৫:২২

 আপডেট: ২০১৭-০৪-০৪ ০০:২০:১৭

চিত্রকর: ফ্রান্সিসকো বাসোলেত্তি

নন্দিতা অধিকারী:

দ্বান্দ্বিক সমাস

একলা মৃদু মন্দ বাতাসের সাথে ঝড়ো হাওয়ার দ্বন্দ্ব ছিল।
ঝিলে থাকা শালুক এর সাথে আয়েশি অর্কিডের এখনও অনেক বোঝাপড়া বাকি।
দু কপালের মাঝের তিলটি দ্বন্দ্বের মধ্যে আছে,
সীমানার কতোটুকু তার।

শ্রমিক - জোতদার দ্বন্দ্ব ... সেকথা অনেক পুরনো
একটি চাকচিক্য বুদ্ধিজীবী চেহারা ছাড়া আর কিছুই সে আমাকে জোটাতে পারে না ।
ভাবুক কবিরা চিরকালই কোট পরা গোলামের শত্রু
লাস্যময়ী যুবতীর সাথে ছন্নছাড়া প্রেমিকের অনেক হিসেব মেলানো বাকি ;-
'বাম হাতের কাজ ' বলে জন্মের পর থেকেই গাল খেয়েছে বাম হাতটি
মনে তার বড্ড ক্ষোভ, বড্ড অভিমান।

এই চিরন্তন দ্বন্দ্বরা আমাকে এখন সভাসদ করেছে ...
খুব শীঘ্রই সাময়িক থেকে চিরন্তন দ্বন্দ্ব হয়ে উঠবো আমি
এই চাকচিক্য আবরণ ভেঙ্গে দেখ ,
কি নিদারুণ ভাবে ভাঙ্গছি প্রতি ক্ষণে

মুহূর্ত থেকে মুহূর্তে আমি রঙ পাল্টাই-
আমাকে ভেবে দেখতে পার ;
সভ্যতার নতুন আশ্চর্য হিসেবে
কি অন্তহীন গোলকধাঁধায় হারাচ্ছি অবিরাম ...!




নাগরিক কৃষ্ণচূড়া গাছ


নাগরিক কৃষ্ণচূড়া গাছ ,
আজ শুধু তোমার কথা বল ।
কোন শিল্পীর ধূসর কল্পনায় অথবা কবিতার ছেড়া ফাটা জালে তুমি আটকে পড় ।
তুমি আস্তাকুড়ের জঞ্জাল হয়ে ওঠ বৈদ্যুতিক তারের ভারে ।
তোমার শরীর এখন নাগরিক ফুল ফোটায় ...
ওদের রঙ কৃত্তিম , জীবন বাণিজ্যিক ।

শরীর বদ্ধ প্রেম তোমার ছায়াকে কলুষিত করে ,
তোমার দেহ জুড়ে অমরত্ব খোঁজার চেষ্টা কৃত্তিম প্রেমিক যুগলের ।
অথবা , তুমি দেখ , বার্ধক্যের জিইয়ে রাখা জীবনের আঁশ
নাগরিক বৃষ্টি তোমার শরীরে দগদগে ঘা জন্মায়

তুমি এখন সৌন্দর্যের অতীত
কালশিটে ধোঁয়ার পর্দা তোমার শিরাবিহিন পাতায়
তুমি শৈশব খোঁজ , যেমনটি খুঁজি আমি ,
পথনাটকের দর্শক নাগরিক কৃষ্ণচূড়া গাছ ,
আজ না হয় , তুমিই আমার জন্য একটি কবিতা লেখো।

পরাহত

এই শহর আমাকে  শান্তি দেয় না।
কাঠখোট্টা দেয়ালের ফাঁকে মৃত রোদ দিনরাত আমার স্বপ্ন চুষে  খেয়েছে।
আমার ছন্নছাড়া আবেগ খুব হিসেবে মেলানো নিউরনের মাঝে ঠাই করে নেয় নি।
তাদের হৃদয় মৃতপ্রায় হয়েছে বহুদিন।

আমিও আজকাল দাঁড়িপাল্লা মেপে স্বপ্ন বেচাকেনা শিখেছি সবে ,
তবু দীর্ঘশ্বাসের কুয়াশার বুনট তুলে রোজ রাতে ঘুমোতে যাই।
কখনো কখনো ভালবাসার রোদ ভুল করে বারান্দায় এলে
আমি পুরু করে হৃদয়ের পর্দা টেনে দেই।
আমার বড্ড ভয় হয়।

মিঠেকড়া রোদ হয়ে এসে ওরা আমায়  ভর্ৎসনার আগুনে  ভস্ম করে।
এরপর এক পশলা বৃষ্টি হয়ে আমায় সতেজ করবে বলে বাঁধভাঙ্গা প্লাবনে একূল ওকূল দুকূল ভাসায়।
আমি দিশেহারা কৃষাণীর মত চেয়ে থাকি দিক - কুল  হীন সীমান্তে।
ভিটেহারা মানুষের স্বপ্ন নিংড়ে তবু তাদের আশ মেটে না।

শহরের প্রান্তে হৃদয়ের ছিন্ন ভিন্ন টুকরোগুলো আরও দূরে ছিটকে পড়ে।
ক্লান্ত  চোখ ঘুরঘুরে স্মৃতির শহর খোঁজে।
এই বাতাসেও প্রেমের ঘ্রাণে গুনগুন গানে মত্ত হয়ে,
এই পথের ধুলোবালি পায়ে মেখে তুমি আমি দুই দিকে।
আমি আজন্ম পরাহত সৈনিক।
তবু অনেক ছায়ার মরীচিকায়  তোমাকে খুঁজে
এই স্মৃতির শহরকেই আঁকড়ে ধরে বেচে থাকি।



আপনার মন্তব্য