লেখালেখিতে আমি জীবন, গণমানুষের অধিকার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকি- ফকির ইলিয়াস

একুশে গ্রন্থমেলার লেখক-পাঠকের অপূর্ব মিলনমেলা। আমরা সিলেটটুডে২৪.কমের পক্ষ থেকে মুখোমুখি হয়েছি লেখক-প্রকাশকদের সাথে। এবারের পর্বে কথা বলছেন কবি, প্রাবন্ধিক ফকির ইলিয়াস

 প্রকাশিত: ২০১৫-০১-১০ ২২:১১:১১

 আপডেট: ২০১৫-০১-১০ ২২:২৪:৩৩

নিউজ ডেস্ক:



সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে আপনার কী বই আসছে?


ফকির ইলিয়াস: মহান একুশে বইমেলা ২০১৫ উপলক্ষে আমার এপর্যন্ত তিনটি বই প্রকাশিত হচ্ছে।দু'টি কবিতার। একটি প্রবন্ধের। 'গৃহীত গ্রাফগদ্য' (কাব্যসংকলন)-প্রকাশ করছে অনুপ্রাণন প্রকাশন,ঢাকা। 'অনির্বাচিত কবিতা'(কাব্যসংকলন)-প্রকাশ করছে প্রিয়মুখ প্রকাশন,ঢাকা। একই প্রকাশনা সংস্থা 'প্রিয়মুখ' থেকে বের হচ্ছে আমার প্রবন্ধের বই -'মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্র ও স্বাধীনতার উত্তরাধিকার'। আরেকটি কবিতার বই - 'মেঘবাদকদের আর্কাইভ' হতে পারে। এখনও প্রকাশকের সাথে কথাবার্তা চলছে।



সিলেটটুডে২৪: আপনার প্রকাশিত বই সংখ্যা কত?


ফকির ইলিয়াস: আমার প্রকাশিত বই এযাবৎ ১২ টি। প্রথম বই- 'বাউলের আর্তনাদ(বাউল গান-১৯৮৫)।এর পরে ক্রমশঃ বেরিয়েছে- 'হৃদে গাঁথা মালা (বাউল গান-১৯৮৯), 'এ নীল নির্বাসনে'( যৌথ,কবিতা ১৯৯১), 'অবরুদ্ধ বসন্তের কোরাস'(কাব্যগ্রন্থ ১৯৯৭), 'বৃত্তের ব্যবচ্ছেদ'(কাব্যগ্রন্থ ২০০১), 'অনন্ত আত্মার গান (বাউল গান-২০০২),'দাক্ষিণ্য বিষয়ক দিন'(কাব্যগ্রন্থ-২০০৬), 'কবিতার বিভাসূত্র'(কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন ২০০৯), 'চৈতন্যের চাষকথা' (গল্প সংকলন ২০১০),'গুহার দরিয়া থেকে ভাসে সূর্যমেঘ'(কাব্যগ্রন্থ ২০১১), 'ছায়াদীর্ঘ সমুদ্রের গ্রাম'(কাব্যগ্রন্থ-২০১২), 'গৃহীত গ্রাফগদ্য'(কাব্যগ্রন্থ-২০১৪)।

 


সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার প্রত্যাশা কী?


ফকির ইলিয়াস: প্রত্যাশা অনেক। আমি তো বিদেশে থাকি। তাই মেলায় আসা হয়না। কিন্তু আমি নিয়মিত আপডেট পড়ি, দেখি। নির্বাচিত বইগুলো আমি বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করি। আমার প্রধান চাওয়া হচ্ছে- ভালো বই বের হোক। মননশীল পাঠক তৈরি হোক।



সিলেটটুডে২৪: অমর একুশে গ্রন্থমেলা কিভাবে আরো আকর্ষণীয় করা যায়?


ফকির ইলিয়াস: অদরকারী স্টলগুলোর বরাদ্দ কমাতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কেউ স্টল পাবে, আর লিটল ম্যাগাজিনগুলো স্টল পাবে না- তা তো হয় না। সৃজনশীল বইয়ের পৃষ্টপোষকতা বাড়াতে হবে। সরকারী-বেসরকরী লাইব্রেরী গুলোতে যদি বই কেনা হয় রীতিমতো, তাহলে তো প্রকাশরাও বাঁচতে পারেন। বাঁচতে পারেন লেখকরাও।

 



সিলেটটুডে২৪: একুশে গ্রন্থমেলায় নিয়মিত যান? কী কারণে?


ফকির ইলিয়াস: থাকি বিদেশে। তবে পুরো মাস জুড়েই আমি আত্মা দিয়ে মিশে থাকি। খোঁজখবর রাখি ভালো বইয়ের।



সিলেটটুডে২৪: লেখালেখিতে কোন বিষয়টিকে আপনি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন? কী যুক্তি এর পেছনে?


ফকির ইলিয়াস: আমি কবিতা লিখি। কলাম লিখি নিয়মিত। কলামের পাঠক অনেক বেশি। কলাম, রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা মানুষের কথা বলে সরাসরি। লেখালেখিতে আমি জীবন, গণমানুষের অধিকার, পরিবেশবাদ, সমাজ, বিশ্বশান্তি ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।এর কারণ আমি একটি বৈষম্যহীন বিশ্ব চাই। চাই উজ্জ্বল প্রজন্ম।

 



সিলেটটুডে২৪: আপনার বই আর পাঠক এবং আপনি আর অন্যান্য বই এ সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন?


ফকির ইলিয়াস: পাঠক আমার বই পড়েন- এটা আমার জন্য আনন্দের কথা। অনেকে বলেন- আমি বেশি লিখি। হয়তো হতেও পারে। অনলাইন লেখালেখির দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, প্রতিদিন কিছু লিখি। তবে বই করতে গেলে আমি আমার বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ লেখাটিই দিতে চাই। আমি আমার 'কবিতার বিভাসূত্র' (কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ ২০০৯,ভাষাচিত্র)লিখতে সময় নিয়েছিলাম দশ বছর।পাঠক ভালো বইয়ের মূল্যায়ন করেন, এটা আশার কথা। আমি একজন ভালো পাঠক।বেছে বেছে দেশী-বিদেশী বই পড়ি।বিশ্বাস করি একটি বই মানুষের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়।



সিলেটটুডে২৪: বই প্রকাশে আপনি কী ধরণের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন? কিভাবে উত্তরণ ঘটল?


ফকির ইলিয়াস: এমন বিশেষ কোনও প্রতিবন্ধকতা আসেনি আমার। অনেক সুহৃদ, প্রকাশক বই প্রকাশে আগ্রহ দেখিয়েছেন শুরু থেকেই। বাউল গান লেখা দিয়ে শুরু করেছিলাম। সময়ে এখন প্রকাশকরা আমার বই প্রকাশে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইউরোপ- আমেরিকায় আমার একটি ভাল পাঠকশ্রেণী গড়ে উঠেছে। যা আমার বইয়ের কাটতিতে সাহায্য করছে।



সিলেটটুডে২৪: প্রকাশিত, প্রকাশিতব্য বই আর প্রকাশক(দের) সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন 


ফকির ইলিয়াস: এটা আশার কথা, এখন ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম,সিলেট,রাজশাহী- তেও প্রকাশনা সংস্থা গড়ে উঠেছে- সে সংবাদ মিডিয়ায় দেখছি। তারা ভালো বই বের করবেন, সেটাই আমার প্রত্যাশা।আমার কথা কটাই- তারা যেন মানসম্মত বই প্রকাশে এগিয়ে আসেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে। এটার যেন খেলাপ না হয়। তারা যেন লেখক রয়ালিটির বিষয়টি বিবেচনার সাথে দেখেন। কারণ বই বিক্রি করে কেউ ফুলে ফেঁপে উঠবেন- আর লেখক তার সম্মানী পাবেন না, এটা অন্যায় ও অমানবিক।


সিলেটটুডে২৪: সিলেটটুডে২৪.কম’র পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।


ফকির ইলিয়াস: আপনাদেরও অশেষ ধন্যবাদ। আমার একটা পরিচয় আছে, আমি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী একজন বাঙালী। আমি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের টীমে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই চেতনা থেকে বলি-সিলেটটুডে২৪.কম যেন মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অবিচল থাকে। শুভকামনা। 

আপনার মন্তব্য