জহির আশফাক’র পাঁচটি কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৫-০৫-২৭ ০০:২৮:১২

অসম্ভবের উপমা কি? কাকে মানায়? আজ আমি এই প্রশ্নের উত্তর পেতে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি, আজ আমি মরিয়া, আম:

আফিম সংসার

আমি তার ছোঁয়া পেতে হাত বাড়ালেই শূন্যে ছুঁয়ে আসে এই হাত
আমি তার দেখা পেতে চোখ মেলি
সহস্র মাইল জুড়ে ঘাম ঝড়ায়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত।
নন্দিত তলপেটে কান পাতে বধিরের দল।
আর দৃশ্যপটে ঐ যে ঈশ্বর! তাতে কী আসে যায় ?
আমার পৃথিবী আজ আপেক্ষিক।
আমার জন্য আজ সব কিছু নশ্বর।

আমাদের দিন কাটে দিনের মত
রাতও কাটে। সময়ের হিসেবে সেসবে ছাপ পড়ে না।
আর এই টেনে নেয়া গান বহুকণ্ঠে শিস দিয়ে বলে, যে কোন সংকটে
ঘোলা জলে
যে মাছ আকালের তার ছায়াও মেলে না।

আমি তবু হাল না ছেড়ে বসে আছি, একা এবং এককমতে
যদি একদিন অবগাহনে।
সে আমার হাত ধরে বলে, তোমার ঐ ঈশ্বর গেছে জঙ্গলে। গেছে নির্বাসনে।

এখানে এখন সিদ্ধি পোড়ায় সাধু।
নষ্ঠ ভ্রষ্ট কষ্ট বোনা আফিম সংসারে তাই উৎসবে মেতেছে আজ
দৈব ধর্মঘট।

আমার একজন ঈশ্বর ছিল শিশুকালে !
আমার সত্যিই একজন ঈশ্বর ছিল শিশুকালে
ইদানিং সেসব ধুয়ে গেছে কাদামাখা জলে। আজ কেও কারো না।
আমার ভালোবাসা জানে
ঈশ্বর ও মানুষ আজ আফসোসের জীবন টানে, এক সমানে।


আমি বর্তমানে আছি, আমাকে আর অতীতে টেনো না

সকালে ঘুম থেকে ওঠা হয়েছে?
বাজার যেতে হবে? বাচ্চার ইস্কুলে আজ বেতন দেবে?
আজকে থাক, পরের মাসে ঈদ বোনাস এলে একসাথে দেব, অস্বস্তি পাবে?
বউ ওঠো, আমার অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।
আজ শরীর ভালো লাগছে না?
এই এই কি হয়েছে তোমার?

বাবা কেমন আছো? আমার তো চলছেই না, আচ্ছা দেখি কত পাঠাতে পারি,
মা ভালো আছে?
ইদানিং রাস্তায় অনেক গাড়ী, কারা কেন?
ওহ!! বাসগুলো কেন যে এমন ঘর্মাক্ত হয়? এই ড্রাইভার এখানে আর কতক্ষণ?
ও সরকারপ্রধান যাচ্ছেন, আচ্ছা আছা, আমার সময়ের দাম নেই জানি,
আজ অফিসে দেরী হবেই হবে।

এটা কি মাছ না সোনার ডিম পাড়া হাঁস শুনি? আচ্ছা কিছুটা কাঁচকিই দেও।
কবে আবার ডায়াবেটিস বাসা বাধে, আজ বরং হেটেই বাসায় ফিরি,
বাসায় কি ফিরতেই হবে? ইস সবার মত আমিও যদি অতীতে ফিরে যেতে পারতাম,
শিশুকালে। কি দরকার জঞ্জালের, এই বর্তমানের।

এ কি!! আগুন জ্বলছে কেন? কাগজ পোড়া গন্ধই তো মনে হচ্ছে!
কী!! ইতিহাস ক্ষুণ্ণ হয়েছে?
ইতিহাস নিকুচি করেছে। আমার বর্তমান খেয়ে ইতিহাস আজ উপহাস হয়েছে।


আমি ঈশ্বরের কথা শুনিনি

আমার ঈশ্বর চাননি আমি তোমাকে ভালোবাসি,
আমি ঈশ্বরের কথা শুনিনি।
খুব পচা হাতের লেখা নিয়ে সেই কবে থেকে বলছি, 'ভালোবাসি'।
লেখাটা সুন্দর না?
চোখ আটকে থাকে
আটকে থাকে হৃদয়
শরীর শরীরে থাকে না।
যে বোবা সে চোখ দিয়ে বলবে, 'ভালোবাসি'
যে অন্ধ সে ছোঁয়া দিয়ে বলবে, 'ভালোবাসি'
আর আমি?
খুব পচা হাতের লেখা নিয়েই বলবো,
'যদি ভালোবাসা বনবাসে যায়, আমিও যাব।
যদি নির্বাসনে যায়
যদি নির্বাচিত দেশে যায়
যদি কুঁকড়ে যায়
যদি সে পথের মোড়ে দাড়িয়ে অপেক্ষায় থাকে অসম্ভবের?
যদি সে ভালোবাসে?"

যদি সে ভালোবাসে, আমি ঈশ্বর হবো!

 

এইখানে, এইখানে

পরিপূর্ণ সন্ধ্যা শেষে
ঐ দ্যাখো পাখা মেলেছে প্রেম নির্লজ্জের ঘরে
এইখানে আমি থাকি
এইখানে আমি তোমার অপেক্ষায় থাকি।

এইখানে
বইয়ের প্রতিটি পাতায় আমার ছাপ আছে। কোনায় কোনায় ভাঁজ নিয়ে
অনেক পাতা কুঁকড়ে আছে। এইখানে আমার চিহ্ন আছে।
আর কারো নেই।
আমার কোন বারান্দা নেই।
বারান্দায় কোন ইজিচেয়ার নেই
ইজিচেয়ারে কেউ বসা নেই।
থাকলে নির্দ্বিধায় বলা যেত, অমন মনুমেন্ট মানুষ দ্বিতীয়টি নেই।

এইখানে
আমি যখন তোমার অপেক্ষায় থাকি, আমার ইন্দ্রিয়রা জানে
আমার যৌনতার কোন প্রতিশব্দ নেই।
আমার নগ্নতার কোন আয়না নেই।
এমন নির্লজ্জতা আর কারো নেই।
আমি দেখি না তাই, নিজেকে ডেভিড ভাবতে আমার কোন কুণ্ঠা নেই এইখানে।
অথচ
আমাকে বয়স্ক বলা মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে প্রতিদিন।
এতে কোন আদালত অবমাননা নেই
নকশিকাঁথার মানহানি নেই
কবিতা নেই এইখানে।

আমার তবু দিন চলে যায়।
এমনি এমনি আমার সময় চলে যায়।
একটা বেজে যায়।
দুইটা বেজে যায়।
পরিপূর্ণ জীবন চেয়ে, জীবনের বউনি অপচয়।


অসম্ভবের দরোজায় টোকা

আমার বয়স কত হবে? আজ আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইচ্ছে করছে না, আমাকে দেখায় কেমন? এমন ছেলেমানুষি প্রশ্ন এখন আর আমাকে মানায় না। স্পষ্টতই আমি বুড়ো হতে চলেছি, তবু আমি চাইছি এই অসম্ভব মুহুর্তে কেও এসে এর ইতিবাচক দিকটি ধরিয়ে দিয়ে বলুক, আমি অভিজ্ঞও হচ্ছি বটে। আমি চাইছি, কেও একজন অপার্থিব ভালোবাসার দৃষ্টিতে আমার চোখে চোখ রেখে অন্ধ করে দিক চারদিক, তারপর পরম মমতায় আমার হাত তার দু’হাতে তুলে নিয়ে পথ চলুক নিজের মত।

আমার খুব জানার ইচ্ছে সে কত দিন ধরে রাখে ওই হাত। আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়, কতখানি বেদনা সে ধারণ করতে পারে, কতদিন তার ভালোবাসাময় মুহুর্তের অপ্রাপ্তিকে সে অগ্রাহ্য করতে পারে, আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়, ঠিক কখন সে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। জানতে ইচ্ছে হয়, তার যুবতী হয়ে ওঠা শরীরের সশব্দ কথামালা কিভাবে প্রকাশিত হয়, তার অস্থিরতা, কম্পমান অনিশ্চয়তার দরোজায় টোকা আলতো নাকি তার ভালোবাসার মত প্রচন্ড হয়? আদিম ভালোবাসায় সিক্ত হলে তাকে কি স্নিগ্ধ দেখায়?

অসম্ভবের উপমা কি? কাকে মানায়? আজ আমি এই প্রশ্নের উত্তর পেতে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি, আজ আমি মরিয়া, আমি অবাক বিস্ময়ের ঘোর মাথায় নিয়েই জানতে চাই, এক মেয়ে কখন এত অসম্ভব হয়?

আপনার মন্তব্য