গালিবনামা-২

 প্রকাশিত: ২০১৮-০২-০২ ১২:০২:৩৬

 আপডেট: ২০১৮-০২-০২ ১২:০৬:০৪

মাসুদ পারভেজ:

২.১

এ কি গালিব, শুনি, জীবনের পরাজয়

ভাবলে হুশ হারায়, বিলক্ষণ তাই আবার ভাবায়
সুরা ছেড়েছি আমি, নয়তো হৃদয়
সবটুকু উদারতা নিয়েও ক্যানো সাগর শুকোয়
মাহফিলের এন্তেজাম ফুরিয়ে আসে
দোলাচলের দোলে দোলে
সবুজ পাখিটার কণ্ঠ রোধ হয়ে যায় ;
মাসুদের অবিন্যস্ত ভুলে
বাগিচায় আজ কতই না বুলবুলি
সুরার আর সুরের মেলা
মেঘেরমায়ায় কেন তব গালিব -
জীবনকে হেলায় ফেলা
আজ তব চলো দুরের সঙোপনে
মশালের আলো নিভে যাওয়ার অন্তে
হাতে নিই তব বিজয়রেণু, উল্লাসে মাতি সবে

২.২
মেঘমালার প্রণয় ভেঙে নেমে আসে গালিব,
আকাশের কান্না আর থামে না
বিরহপ্রাদোষে, বাগানে আজ নব কুসুম
বুলবুলিটা মুখ লুকিয়ে যায় সময়ের নির্ঘণ্টে
সুরা তো নই আমি, কেন তব এত আকাঙ্ক্ষা
ডুবে আছি যদিও দিবানিশি তার আবাহনে
এ কি গালিব, প্রাণ বেরিয়ে যায় মান্না দে শুনলে,
কেন এত প্রাণ মিলিয়ে যায় কথামালার কথায়
আড়ালের আড়ালে অলক্ষ্যে কে মুখ লুকায়
এসো হে প্রণয়িনী ;
বিস্মরণের তাক সাজায়

২.৩
এ কি গালিব, মরা মানুষের ছোঁয়া লেগে রয় মনেপ্রাণে
সুরের তানে মন বেঁকে যায় কলরবে
জীবনের এ কোন বৈঠকখানায় আনলে গালিব ;
তীর্থে যায় শুনলে হাসি-কান্নার রোল পড়ে যায় বেদম
ও ঘরে তো যায় না আমি রোজ
না গ্যালেও গোলাপসহযোগে নেই না কেউ খোঁজ
আজ তব মাহফিলে বেজায় লোক, হন্য হয়ে
ভিড় ঠেলে যায় মাসুদ
আশা-যাওয়ার এ পথে কত পথিক
হারায় পথ, সে হিসেব তব রেখেছে কারা
গালিব, শুধোও তব, খোল দোর
আজন্ম পাপির হোক ভোর

২.৪
পিঁপড়ের ডিমের মত নয়তো আমার আকার
কেন নিজেকে মনে করছো আমার তুচ্ছ শিকার
ছেড়েছি মদের পেয়ালা তোমাকে তো নয়
তোমার হৃদজমিনে তব আমার রক্তিম বাসর
শোনো মাসুদ, বলে গালিব,
চাষাবাদ করো চাষাবাদ করো
অনাবাদী মনের জমিনজুড়ে আজব হাজতবাস
দ্বীপপুঞ্জ করেছি তোমার মানসে
বাগিচায় ফুটিয়েছি কত কুসুম
মধুপানে এসো উর্বশী মধুপানে এসো
হৃদয়ে আজ সুরার মাতম

২.৫
মরা ভাতের মত ফুলেফেঁপে উঠি রোজ
এই গন্ধ, দুর্গন্ধতার মূর্খতায় তোমায় এড়িয়ে যায়,
যেন আমার মরা মাছের চোখ
এইসব ছা-পোষা জীবন, জীবনের কেরানিগিরি
হা-হুতাশের রাজ্যে আনবে না তব নব প্রাণ
জিহ্বা পুড়ে খাক হয়ে যাক আমার অবচেতন
এইসব সামাজিকতা, অর্গলের নির্বুদ্ধিতা
গালিব, পেয়ালায় কি মিলবে তব সুরতহাল রিপোর্ট
শোন হে মাসুদ, গালিব বলে-
আরও দাও তব বেদনা
আমি হবো নীলাভ আনন্দ
দু:খ ও সুখ তো দিনান্তে আনন্দই

২.৬
ভালোবাসার মাহফিলে মূক কেন গালিব
দখিণা বাতাস বয়ে যায় তব
বাগে এসেছে নতুন কেতন
খুলেই দ্যাখো মনের অর্গল
আজ কেন রিক্তবেদনায় পথচলা
গতকাল ও ছিল যেথায় মদিরায় রমরমা
ভ্রান্ত নয় তো মাসুদের পথ
খুঁজে জীবনের পরিক্রমা, পেলেই
জীবন সাঙ হবে
বন্ধ হবে বেচাকেনা

২.৭
ফড়িঙ জীবনে গরল হলে তুমি
মদের পেয়ালা তো নয়।
মাথার উপরে আকাশ ভেঙে পড়ুক
তাতে কীইবা আমার আসে যায়
আমি আর গালিব কাঙ্গাল যত প্রেমের
সেদিন দেখি বেয়ে পড়ছে
অনল যত দ্রোহের, অনল ঝরে কামের।
প্রিয়, মরা মাছের চোখে দেখি জিলেপি ছলে
ধুতরাফুলের স্বাদ কেমন, কি হবে তা জেনে
অভিলাষে তুমি কল্পপ্রলয়ভিড়ে
বুনোহরিণের চোখ ছুঁয়েছে মাসুদ,
এ জীবনের অভিলাষ গিয়েছে জেনে।

২.৮
গালিব, জীবনের এ কোন এন্তেজাম
জানার পথে কিছুদূর গিয়ে মনে হয়
কিছুই তো জানা হল না
বিপুলা বসুন্ধরায় কীইবা আর জানি
ঠাহর করেও বুঝতে পারি না জীবনের কল্পকাহিনী
এখনও অবুঝ মাসুদ
না বুঝে প্রণয় না বুঝে বেদনা
রিক্তসিক্ত হয়ে ঝাঁপ দেয় মদিরায়
ক্লান্ত হয়ে আসে যখন দুটি আঁখি
নিমীলিত স্বরে দেখি জীবনটাই ফাঁকি
বেদনায় জর্জরিত জীবন, তব
আয়োজন হোক বিরহোৎসবের
অর্গল পেরিয়ে এসো,
জীবনে লাগুক নব ফাগুন

২.৯
প্রণয়ের চোরাআঘাতে উদ্ধতস্বভাব নিয়ে বসে
পেয়ালায় কসম খেয়েছি সু-গভীর নির্জনতায়
করোটিতে সানাইয়ের নব জাগরণের হিড়িক
চোখেমুখে লেগে আছে নবোদ্বারের সুবাস
বদ্ধ কপাটজুড়ে দখিণা সমীরণ
গাও তব হে গালিব;
শোনাও জীবনের গান
যে জীবন ছিল ভীষণ বিভীষণ
ছিল আনন্দ-বেদনার যুগ্ম- সম্মিলন
আজ এত শতবর্ষ পরে তোমায় সুধায় গালিব
আমরা করেছি তোমায় অলক্ষ্যে পান
হয়েছি মাতাল বিভোর তরঙ্গে
বাজিয়েছি সানাই আপনা মনে
তোমারেই তব করিয়াছি জীবনের আলোকলতা

আপনার মন্তব্য