গালিবনামা-৩

 প্রকাশিত: ২০১৮-০৩-০২ ২২:১৭:১৫

মাসুদ পারভেজ:

গালিব ৩
জীবনের পালাবদলে সস্তায় বিকোয় স্বপ্নজাল।
আধমরা স্বাদের কবি, জানতে চায় ও জীবনের সারমেয়
গালিব, তন্দ্রাচ্ছন্ন এই মোহে কোথায় গিয়ে;
থামাবে গাড়ি।
বিভ্রমের ভ্রান্তিপাঠ, পথ চলি হন্য হয়ে
ঠাহর হলেই তো দেখি, ও পথ যাচ্ছে বেড়ে।
আলো হাতে চলা মশালের দল,
জানতে চেয়ো না তব ;
বুনোমোষ বাঁচে কতদিন
শেকল ছুঁয়েছে মনের অন্দরমহল
যদিওবা ঠায় নেই সদরে,
কেইবা জানে বারুদে ঠাসাঠাসি এই বন্দর।

৩.১
ঠোঁটেঠোঁটে চুমুর আবাহন:
ও ঠোঁটের চুমু কেড়ে নিলে কিইবা করতে পার তুমি
ও চোখের দৃষ্টিসীমার বাইরে, যদি দেখা হয় আয়নার জলছাপ, কি করবে তুমি
গভীর সংরাগে আমি বশবর্তী হয়েছি অনুরাগে
তুমি আমায় ছুঁয়ে দাও গালিবীয় হাতে,
রাগে-অনুরাগে। আবেগের মাথায় উঠে,
সমীকরণের বাইরে গিয়ে।
ঠিক-বেঠিকের অর্গল পেরিয়ে।
আমি তো মজেছি তোমার পেয়ালায়
তোমাতে ঝরে পড়া মদিরাফোটার কসম :
এ মনের আরাধনা, শুধু তোমায় জানিয়ে গেলাম
প্রেমিকার মত, উর্বশী আমার গালিব
ছলে-বলে কৌশলে ভেড়ায় তরী, নোঙর তোমার অনাবাদী জমিনজুড়ে
চাষাবাদ করে যায় অনবদ্য ছলে;
এ বুকের জমিনজুড়ে আজবহাজতবাস

৩.২
ঐশ্বরিক ইন্দ্রজাল ফুটো করে কাটিয়েছি তন্দ্রা
ঘোর কেটে গ্যালে ঘোর লেগে যায় সহসা,
কোন অমর্ত্যের ইশারায়, কোন সে জাদুতে করেছ বশ
জানিনা তার ভিত্তিমূল!
বৃত্তে বৃত্ত ভাঙি
ভালোবাসা ফুরালে বাঁধি গান।
জীবন ফুরিয়ে গ্যালে কি হবে, তব
গালিব, তোমার চেয়ে আর কেইবা সুধায় ভালো
কোন সে কণ্ঠস্বর, তবে করেছে দেওয়ানা
গলগল করে গিলছো সুরা,
কলহাস্য তব কিসের, গালিব
আলক্ষ্য ভাঙে জীবনের ফোয়ারা
সবকিছু ভেঙে গ্যালে, চল
শুরু করি নতুন দিগন্তে -
গেলাসে গেলাসে হতাশা পান করার দিন ফুরাল তব!

৩.৩
শাণিতচোখের চাকুর নিচে মরণ আমার
ও দুটো চোখ পোড়ায় তাই অনবধি।
শয্যাকীটের মত লেপ্টে আছ গোলাপের কাঁটায়
হুল ফুটিয়ে যায় তব মধুরতম লোভে।
ভাঙনের সুরে সওয়ার হয়ে, হন্য হয়ে কে যায়
পথের বন্ধুরতা সম্পর্কে সে কি জানে!
গালিব, বদ্ধ দরোজায় কড়া নাড়ে মদের কুসুম
খুলে গ্যালে খুলে যাক তব ঘুম-বালিশের সুর।
বাজুক বীণা নবোপ্রাণে, আসুক গাঙে জোয়ার
এ জীবনের সাঙ হল বুঝি এবার।
যদি তাই হয়, এসো তবে
প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে নিই,
ওষ্ঠের ছোঁয়ায় বাজুক সানাই
জানো না সখা, তোমার বুকেই আমার আশ্চর্য সেলাই।

৩.৪
বোজা চোখে আকাশ দেখি
উতলা হইয়ো না, হে নীল গগন।
মাহফিলে আর জৌলুশ নেই, আছে গুণগান
গালিব, এ আরাধনার শেষ দেখাও।
সবুজের সবুজ নিমিষেই উধাও হয়ে যায়
শহুরে সবুজ পাখি তাই আজ মুখ ফেরায়।
জীবনের লেনাদেনায় ব্যস্ত সওদাগর,
সনদবিহীন প্রেমের কসম জেনো।
হ্রদয়ের সাধাসাধিতে ক্ষত-বিক্ষত, ঠোঁটেঠোঁট
মাসুদ জানো না হে, জীবনের রহস্যে বেজায় ভাব

৩.৫
দাও হে প্রিয়া, তব, উপশমের হেমলকনামা
অনড় প্রবঞ্চনাটুকু স্মরিত হোক।
ঈর্ষালু হই নিজের উপর
ভেবে ভেবে ক্ষয়ে যায়।
এ আর তব এমন কি:
নাইবা রইলাম সূর্যোদয়ে।
দাও হে গালিব, পথের নিশানা
ও পথ ধরে যাব ভিড়ে,
অন্যরকম কোলাহল হোক অস্তাচলের শেষটুকুতে।

৩.৬
তোমার আঁজলাভরা সাকিতে প্রণয়প্রশ্রয়
আমার কেবলি দেরি হয়ে যায়
গালিব, বড্ড অসময়ে আমার ওষ্ঠাগতপ্রাণ যায় যায়
তোমার চক্ষুকর্ণাদি ঠিকরে পড়ছে অযত্নে আর হেলায়
তবুও, বিরান চোখে কোমল সারস খেলা করে
ডানা ঝাপটানোর বিশদ শব্দে ;
নরোম, কোমল হেমলক খেলে যায়
গালিব, আমার কেবলি দেরি হয়ে যায়
বিষাদের ছায়া ধরে পিছু নিই যার
সে তো খেলে যায়, সে তো কেবলি খেলা করে যায়

৩.৭
নিজেকে জানার দু:সহ যাতনায়
অপার আনন্দে ভেসে উঠি
দিনমান সাঙ্গ হয়ে আসার এই উদোমতায় ;
গালিব, চুমুক দিতে মন চায় সক্রেটিসের পেয়ালায়।
সে এক বিবমিষার উপাখ্যান
মন্দিরের ভাবনায় যত নিরাকার।
তবুও অসীম ছুঁয়ে যায়, অন্দরমহল
ভেবে যায় শব্দের নৈ:শব্দে,
ঈশ্বরের হাতটা ঠিকই রয়ে যায়।
প্রার্থনার ভিন্ন অবয়বে
মন করে উচাটন
সফেদ ভাবনায় নিকষ কালো
উৎসারিত হয় হ্রদয়ের গহীন অরণ্যে

৩.৮
কিছুটা কূটকৌশল শিখেছি
ভালোবেসে হয়েছি কাঙ্গাল
আশায় তব আছি ;
হবে অনিরুদ্ধ সকাল।
কিছু ভোর বিষাদ বয়ে আনে
কিছু ভোরের পাখি গেয়ে উঠে না জাগরণের গান
কিছু কিছু ভোরে প্রাণ আমার খোলস ছেড়ে যায়
কিছু রাত বেদনাময় হয়ে উঠে
আন্ধারে হারিয়ে যায়,
হাতড়ে বেড়ায় আপনজন
তখনি এসে ধরা দেয় ;
সুহ্নদ আমার, আছে যতজন
এমনি এক রাতে:
গালিব এসেছিল হাসিমুখে
হিজলের বনে প্রাণ উপচে পড়া সে রাতে
আমি সফেদ আকাশ দেখেছিলাম:
হাতের কাছে।

৩.৯
শেষ বিকেলের মেয়ে, তুমি ভেঙো না মদের গেলাস
হ্রদয়ের বরাতে হবে তোমার সর্বনাশ
গালিব বলে, গেলাসের শরীর জুড়ে তৃপ্তির ঢেকুর
উতলা হওয়া দিনমানে, ভাবছো কি হে মেয়ে :
আঁজলা ভরা সাকিতে
এ ভব সাঙ্গ হলে, তব, কি হবে তোমার?
নেশায় মিশে যায় চক্ষুজোড়া
ঠিকরে পড়লে যত অভিমান
মাসুদ, লেখা হচ্ছে তোমার সমাধিফলক :
ভেবে দেখো তব, অর্জনের খেরোখাতা

আপনার মন্তব্য