ফকির ইলিয়াস এর পাঁচটি কবিতা

 প্রকাশিত: ২০১৫-০৮-১৬ ২৩:২০:০০

কে আছো কোথায়, চালাও তলোয়ার জাগাও মানুষ, হে সিপাহশালার খুলে দাও দ্বার...:

নুপুর, যতদূরে যাই
পালক পৃথিবী হয়ে উড়ে যাচ্ছে আমাদের মন
এই মেঘমুখ- এই মনমৃত্তিকা ছোঁবার প্রত্যয়
নিয়ে আমরা সাজাচ্ছি নৌকো। পার হবো, দেবো
পাড়ি, কালের দারিদ্র্য- আর ক্ষুধার বিবাদ, মানুষের
সাথে। একটা বকুলগুচ্ছ দেবো সাজিয়ে এই পথের
চূড়ায়। তুমি আসবে তাই- বদলে দিতে ঘোরের নিয়ম।

তারপর আমাদের ছাপাখানা থেকে ছেপে নিয়ে একটি
পোষ্টার- বিলি করে যাবো এই নগরে।আরেকটা সূর্যের
মুখ দেবে উঁকি, এমন দৃশ্য বন্দনায় নত হবে ভোরের ছটা।

আবাদি আলোর খোঁজে যাবো বহুদূরে, নুপুর- নেবো
তোমাকেও সাথে, বাজতে ও বাজাতে এই নবম ঘুঙুর।



ঝড় ভেঙে, ঋতুদের খোঁজে
আলোর ইশারা পেয়ে যে জীবন শুরু করে দিন
তাকেই স্বাগত সুরে করে যাই বিনীত প্রকাশ
অনাদি প্রেমের কাছে যে হৃদয় থেকে যায় দাস
আমি তার পাশে থেকে এই মাটি করি প্রদক্ষিণ।

একদা সমুদ্র ছিল, আকাশের প্রথম নীলিমা
চাঁদের দুপাশে মেঘ করেছিল সুদূর ভ্রমণ
এবং ভাবের দেশে সেরেছিল সব আয়োজন
মেঘের নিরিখে মন খুঁজেছিল তার প্রিয়তমা।

সকল গন্তব্য এসে এভাবেই মিলায় ফাগুনে
বসন্ত বিভায় জাগে কলমের প্রাচীন উন্মেষ
প্রণয় পাঁজরে আঁকা হয়ে উঠে প্রণীত স্বদেশ
কালের প্রহরগুলো ছুটে চলে নদীদের টানে।

ক্রমশ বৃষ্টির মতো ঝরে প্রেম পাপড়ির বীজে
মানব-মানবী যায় ঝড় ভেঙে, ঋতুদের খোঁজে।



কিছু জল, কিছু যাত্রা
জানি গান গাও তুমি। যাত্রা দলে। জল ছিটিয়ে এই
রাতকেও করে তুলো মহিমান্বিত। গীতল ভোর এসে
নিয়ে যাবে সাথে, সে আশায় বাঁধো বুক। আমরাও
বাঁধ দিতে জানি। বন্যা ঠেকাতে। কয়েকটা মাটির পুতুল
আর কিছু কংকালসার মানুষেরা দাঁড়িয়ে থাকি রাতের পর
রাত। বান আসার আগে, আমরাই যেনো বুক দিয়ে সামাল
দিতে পারি সকল অসুর।

জানি তুমি নাচো। এবং নাচাতেও পারো। আমিও জানি
জলের কৌশল। জানি ঢেউয়ের ঢং কিংবা জং ধরা মনের
ভ্রূণগুলোকেও। এই পথ দিয়ে যেতে, অথবা তোমাদের
যাত্রাপালায় নবাব সিরাজদৌলার অভিভাষণ শোনতে শোনতে
আমিও শিখে নেবো ওসব সংলাপ !

'কে আছো কোথায়, চালাও তলোয়ার
জাগাও মানুষ, হে সিপাহশালার
খুলে দাও দ্বার...

 

প্লাবনের প্রতিশব্দ
ভাসা'ই নিয়তি জানি। ঢেউলাগা রোদের পরাণ এসে
ছুঁয়ে যায় ভাদ্রের মুখ। মমি হাতে দাঁড়িয়ে থাকি আলোর
সান্নিধ্যে। কাছে থাকলে, জোসনাকেও মনে হয় শিরার
আয়তন। নিজের মতো করে, পাওয়ার প্রতাপ। অথবা
প্লাবিত পাঁজরের কাছে রেখে যাওয়া একটি গোলাপ।

খুঁজে ফিরে ধাবমান ঝড়ের প্রতিশব্দ। জল উপাসনায়,
কুমারী বৃষ্টিও যায় কলসী কাঁখে, এলোমেলো দূর যমুনায়।


বিচরণগ্রহ
কেবলই শংকিত হই। শঙ্খনিনাদের সুরে
ডুবে মন। ক্ষণ আর দ্রোহের ভোরে সাজাই
বাগান। মানুষের বিচরণগ্রহ। একটা পাপড়ির
পরিণত পতন। আর শান্তি কামনায় মাতৃরূপা
ধরণীর ঢেউ। জানি, হন্তারকরাই প্রধান নিয়ন্ত্রক,
তারপরও প্রজন্মবিভায় জাগবে পৃথিবী
ফুল নিয়ে এগিয়ে আসবে কেউ... অন্য কেউ...

আপনার মন্তব্য