প্রকাশিত: ২০১৫-০৯-২২ ০১:২৫:৩৯
আপডেট: ২০১৫-০৯-২২ ০১:৩৯:৫৮
মাসকাওয়াথ আহসান:
৫৭ ধারা: গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে মিলে গেলে তা কাকতালীয়।
ডা চতুর হাটের সবচেয়ে বড় গরুটা কিনেছেন। গরু কিনে সদলবলে ফেরার সময় নিজেকে তার আরো একবার ক্লাসের ফার্স্টবয় মনে হচ্ছিল। ডাক্তার সাহেবের ফূর্তি দেখে গরুটিরো নিজেকে ফার্স্ট কাউ মনে হয় ক্রমশ।
মিসেস চতুর ডিপফ্রিজ খালি করার অর্ডার দিয়েছেন আদুরীকে। সারা বছরের মিট আইটেম স্টক করতে হবে। মোবাইলে রিমাইন্ডার বেজে ওঠে; পারসোনায় স্পা নিতে যেতে হবে। ওদিকে ডা চতুর ফিরেছেন বঙ্গবিজয় করে। মিসেস চতুর টাচস্ক্রীণে আদর বুলিয়ে গরু আর চতুরের ছবি তুলে ফেসবুকে স্টেটাস আপলোড করে দেন। ফিলিং হ্যাপি উইদ মাই ফার্স্ট বয় এন্ড দ্য কাউ।
ডাক্তার চতুর আজ রোগী দেখছেন না; দিনমান লনে বসে বাজারের সেরা গরুটিকে দেখছেন। আব্দুল কিছুক্ষণ পরপর চতুর ও গরুটিকে গ্রীণ টি আর খড় বিচালি দিয়ে যাচ্ছে। আব্দুলের আপাতত ছুটি নেই। ঈদের পর মিসেস চতুর তার ডিপফ্রিজে সেরা মাংস সংরক্ষণের পর যা থাকে; তাই পলিথিন ব্যাগে ভরে আব্দুল গ্রামে নিজের বাড়ীতে যাবে 'কুরবানীর গোশত' ভেবে।
আদুরী মশলা পিষছে। এবার আব্দুল ছুটিতে যাচ্ছে বলে আদুরী ছুটি পাচ্ছে না। আদুরীর ভাই আসবে 'কুরবানীর গোশত' সংগ্রহ করতে। ডা চতুরকে এক এমপি সাহেব ফোন করে, কনগ্রাচুলেশন বন্ধু ফেসবুকে তোমার গরুর পিক দেখলাম। বেস্ট কাউ। লাইক দিছি! চতুর আনন্দে কুলুকুলু হয়ে যায়। মিসেস চতুর চিৎকার করে ওঠে,এই দেখে যাও ইউ এন্ড দ্য কাউ গট সো মেনি লাইকস।
বাজারের সেরা গরু দেখতে দেখতে আরাম কেদারায় ঘুমিয়ে পড়ে ডাক্তার চতুর। ঘুমের মধ্যে একটি ছাগু এসে ম্যা ম্যা করে কাঁদতে থাকে। চতুর চিনতে পারে গতবছর এই ছাগুটিকে কুরবানী দিয়েছিল সে। বাজারের সেরা ছাগু; দ্য বেস্ট গোট। চতুর জিজ্ঞেস করে, কাঁদছো কেন ছাগল ভাইয়া। ছাগু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে, ডাক্তার সাহেব আমিতো বেহেশতে যেতে পারলাম না। চতুর অবাক হয়, তোমাকে বেহেশতে যেতে কে মানা করেছে। ছাগু কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আমার একটা ঠ্যাং এখনো আপনার ডিপফ্রিজে। প্লিজ বেগম সাহেবাকে বলেন, আজকেই রান্না করে খেয়ে ফেলতে। ঐ একটা ঠ্যাং-এর জন্যই আমার বেহেশতে যাওয়াটা আটকে আছে!
ডিপফ্রিজ খালি করতে ডাক্তার চতুরের বাড়িতে আজ বার কিউ এর দাওয়াত। গত বছর কুরবানী দেয়া ছাগুর প্রত্ন ঠ্যাং-টি আজ সাঁঝে মুক্তি পাবে। চতুর বুদ্ধি করে আওয়ামী লীগের এমপি বন্ধু ও বিএনপির মেয়র বন্ধুকে সস্ত্রীক দাওয়াত করেছে। আর তারপর থেকেই নিজেকে কেন যেন 'ড্যান মজিনা' বলে মনে হচ্ছে চতুরের। আবদুল বার-বি-কিউ চুলা রেডি করছে। আদুরী ম্যারাথন মশলা পিষে চলেছে।
ছাগুর প্রত্ন ঠ্যাং-টা ডিফ্রস্ট হতে সময় নিচ্ছে। মিসেস চতুর হঠাত এই বার বি কিউ-এর ঝামেলায় কিঞ্চিত বিরক্ত। ডাক্তার চতুর মুচকি হেসে বলে; সরকারী চাকরির পাশাপাশি নিজের ক্লিনিক চালাতে গেলে রুই-কাতলাদের দাওয়াত করে খাওয়াতে হয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে আজ ঐকমত্যের ছাগুর ঠ্যাং খাওয়াবো। চিন্তা করে দেখো!
ধোপদুরস্ত সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরে ডাক্তার চতুর বার-বি-কিউ তদারকি করে। লনের হেলান চেয়ারে বসে দুই বেয়াইয়ের মত কুটকুট করে গল্প করছেন আওয়ামী লীগের সাংসদ ও বিএনপির মেয়র। চতুর পানীয় হিসেবে পরিবেশন করেছে তরমুজের জুস; হালাল বিধায়। অবশ্য পরিবেশনের সময় চতুর চোখ টিপে শফি হুজুরের ভঙ্গিতে বলেছে; এটা নাকি মৃত সঞ্জীবনী সুধার মত কাজ করে। বিএনপির মেয়র দুষ্টু হেসে বলেছে, ইলেকশনের আগে আমাদের কোন সুধাতেই কাজ হবে না ডাক্তার।
এমপি সাহেব সাঁজিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা গরুটির দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়। চতুর প্রাইস ট্যাগের মতো বলে ওঠে দুই লাখ। মেয়র চোখ কপালে তুলে বলে করছেন কী ভাই? চতুর অতিরিক্ত তরমুজের জুস খেয়ে হঠাত ক্ষুব্ধ হয়ে বলে, একটা সরল অংক কষেন মেয়র সাহেব। বউয়ের পিছে খামাখাই মাসে দুই লাখ টাকা খরচ করি। গরুর পিছনে বছরে দুইলাখ খরচ করতে পারবো না! গরুটি আতংকিত বোধ করে।
ডাক্তার চতুরের সঙ্গে লম্বা আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে মেহমানরা। গত কুরবানীর ঈদের ছাগলের শেষ ঠ্যাংটা খেয়ে সবাই প্রশংসা করেছে। লনে বেঁধে রাখা এবারের কুরবানীর গরুটি প্রতিশ্রুতিশীল; এর শেষ ঠ্যাংটি হয়তো ২০১৫'র কুরবানীর ঈদের আগের রাতে বার-বি-কিউ করা যাবে; এমন রূপকল্পের কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি সাহেব।
আব্দুল লনে বসে কুরবানীর প্রস্তুতি নিতে রামদা-চাপাতি ধার দিচ্ছিল। কথা বলতে... বলতে হঠাত থেমে যান এমপি সাহেব। বিএনপির মেয়র সাহেব বেয়াইয়ের মতো জড়িয়ে ধরে বলেন, ইনশাল্লাহ বলেন ভাইজান। চতুর ভাবীজানদের দেখে মুগ্ধ; দুজনেই আবায়া পরা; পর্দানশীন নারী। চতুর কটমট করে তাকায় মিসেস চতুরের দিকে, যে মাথায় কাপড় দেবার প্রয়োজনও অনুভব করে না।
চতুর বিছানায় একাকী শুয়ে শুয়ে বেদনায় কুঁকড়ে যায়। লাউঞ্জে বসে হাই ভলিউমে হিন্দী সোপ দেখছেন মিসেস চতুর আর হা হা করে হাসছেন। চতুরের ঝিমুনি মতো আসে;গতবছরের কুরবানীর ছাগুটা বেহেশতে যাবার পথে বিদায় নিতে এসেছে। থ্যাংকস ডাক্তার সাব আমার ফোর্থ ঠ্যাঙ-টা ফ্রি করে দেবার জন্য। ছাগুটি দ্রুত লনে চলে যায়।
কুরবানী সম্ভবা গরুটি তখন ঘুমাচ্ছিল। ছাগু কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে; ডিপফ্রিজ মুবারক। দুই বছর পর বেহেশতে দেখা হবে।
আপনার মন্তব্য